১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর ।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

  • অথবা, ভাষা আন্দোলনের পটভূমি এবং ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে আলোচনা কর।
  • অথবা, ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
  • অথবা, ভাষা আন্দোলনের বিবরণ দাও।
  • অথবা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বর্ণনা কর । 
  • অথবা, ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের উপর একটি নিবন্ধ লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাঙালি জাতি তার অধিকার আদায়ের জন্য যতগুলো আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভাষা আন্দোলন সেগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৫২ সালে বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল শ্রেণির মানুষ এ আন্দোলনের ডাকে সাড়া প্রদান করে। আর তাই জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তারা নিজ ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য পূর্ব পাকিস্তানিরা পশ্চিম পাকিস্ত ানিদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে গেছে। জীবন দিয়ে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গেছে।

→ ভাষা আন্দোলনের পটভূমি এবং ঘটনা প্রবাহ : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বাঙালি জাতির উপর অর্থাৎ তৎকালীন সময়কার পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে, শোষণ নিপীড়ন সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিলেও নিজের মাতৃভাষা বাংলাকেও যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা কেঁড়ে নিতে চেয়েছিল তখন তারা আর চুপ করে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের চেতনার উদয় ঘটে। ভাষা আন্দোলন সৃষ্টির পেছনে ব্যাপক ঘটনা বহুল বিষয় রয়েছে। আর এ বিষয়গুলো এবং ভাষা আন্দোলন সংঘটনের পটভূমি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :

১. পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে সমর্থন দান : পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু হবে এ বিষয়ে তৎকালীন সময়কার বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষিত মহলে একটা আলোচনার সৃষ্টি হয়। ১৯৪৭ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মনোনীত করলেও ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলা ভাষার পক্ষে তাঁর মতামত প্রকাশ করেন। ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছাড়াও তৎকালীন সময়ের অন্যান্য লেখকগণও বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নেন। আর এ কারণে পূর্ব বাংলার শিক্ষিত সমাজ এবং ছাত্রসমাজের মধ্যে একটি ভিন্ন ধরনের চেতনার উদয় ঘটে। এসময় অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর এ ঘটনাগুলো যেমন শিক্ষিত সমাজের নজর কাড়ে, তেমনি দেশের পত্র পত্রিকা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন বাংলাভাষা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমর্থন দেয়।

২. পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক যুবলীগের সমর্থন : পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ নামক সংগঠনটি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে সাদরে গ্রহণ করে। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর এক সম্মেলনে এ সংগঠনটি বাংলা ভাষার সপক্ষে যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এ সংগঠনটি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা, আইনকানুন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করার দাবি জানায়। এছাড়াও পাকিস্ত ানের রাষ্ট্রভাষা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব এবং অধিকার জনগণকে ন্যস্ত করার ব্যাপারেও উক্ত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও তমদ্দুল মজলিশ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও বাংলা ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সমর্থন দেয়।

৩. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি অগ্রাহ্যকরণ : তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা ছিল বাংলা, আর মাত্র ৩.২৭% অর্থাৎ সংখ্যালঘু মানুষ উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তা সত্ত্বেও আইন ব্যবস্থা, শিক্ষা ক্ষেত্রে, অফিস-আদালত ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এ ভাষা অর্থাৎ উর্দু ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। এমনকি পাকিস্তানের পাবলিক সার্ভিসের বিষয় তালিকা থেকে এবং নৌ-বিভাগ এবং অন্যান্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এসময় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক কাজ তথা বিভিন্ন বিভাগের; যেমন- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে উর্দু এবং ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবনার উপর একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা চলাকালীন সময়ে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি দেন। কিন্তু তিনি অমুসলিম বলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ তাঁর এ প্রস্তাবের মাঝে প্রাদেশিকতার ছায়া দেখতে পায়। আর তাই তার প্রস্তাবকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় গণপরিষদের অধিবেশনে লিয়াকত আলী খান বলেন যেহেতু পাকিস্তান একটি মুসলমান দেশ তাই এ রাষ্ট্রের সাধারণ ভাষা হবে উর্দু এবং উর্দু সরকারি ভাষা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবেই বাংলাকে গণপরিষদের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল। ফলে পূর্ব বাংলায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য গণ আন্দোলন সৃষ্টি হয় ।

৪. উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষনার প্রতিবাদ : লিয়াকত আলী খান উর্দুকে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার পর ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে। তারা রমনা এলাকায় ধর্মঘট চালায় এবং শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে। এ মিছিল এবং ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় তারা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি দেয়। তৎকালীন সময় পাকিস্তানের মুদ্রায়, টিকিটে, মানি অর্ডার ফরমে শুধু উর্দু ভাষা উল্লেখ করা হতো। কিন্তু বাংলা ভাষার কোনো উল্লেখ ছিল না। আর এর প্রতিবাদেও ঐ দিন ছাত্ররা মুখর হয়ে উঠে।

৫. রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ : বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন আরও জোরদার করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট আহ্বান করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। এ সময় ছাত্র ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং ৫০ জন ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। উক্ত সমাবেশে ছাত্ররা খাজা নাজিমউদ্দিন এবং তার মন্ত্রিসভার বিরোধিতা করে। এ আন্দোলনের পর সরকার ঘোষণা করে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষায় পরিণত করার আন্দোলন মূলত রাষ্ট্র বিরোধী এক গভীর ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত । কিন্তু তারপরও এ ছাত্র আন্দোলন থেমে যায়নি, বরং আরও শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছে যায় যে, নাজিমউদ্দিন ছাত্রদের কাছে হার মানে এবং ১৫ মার্চ তাদের সাথে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এ আলোচনা সভায় আট দফা কর্মসূচি গ্রহণ সহ নাজিমউদ্দিন রাষ্ট্রভাষার পক্ষে এ আন্দোলনকে সমর্থন জানান ।

৬. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পূর্ব বাংলায় আগমন : নাজিমউদ্দিনের আট দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তাঁর নেওয়া পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে জানতে ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ছাত্ররা এক সমাবেশের আয়োজন করলে উক্ত সমাবেশে পুলিশ গুলি কলে সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে নাজিমউদ্দিনের আহ্বানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব বাংলায় আসেন এবং ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা'। জিন্নাহ এরপর আন্দোলনকারীদের ‘পঞ্চমবাহিনী’ নামে অভিহিত করেন। তার এ ঘোষণা এবং স্বৈরাচারী মনোভাব পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষিত মহল তথা আপামর জনসাধারণের মনে কিছুটা অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয় ।

৭. জিন্নাহর আগমনের পর ভাষা আন্দোলন : জিন্নাহ পূর্ব বাংলা সফর করার পর ভাষা আন্দোলন থেকে অনেক নেতাকর্মী সরে আসে। কারণ জনগণের কাছ থেকে অগাধ বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। আর তাই ভাষা আন্দোলনকে তিনি পাকিস্তানের শত্রুদের বিদ্বেষের ফলাফল হিসেবে আপামর জনসাধারণের নিকট উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তমদ্দুন মজলিশ তার কথা অনুসারে ভাষা আন্দোলন থেকে বিছিন্ন হয়ে যায় । এ সময় ভাষা আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও থেমে যায়নি। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান বাংলা ভাষাকে আরবি ভাষায় রূপান্তরিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু এ প্রস্তাবের প্রতিবাদ করে বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ এবং ৯ মার্চ মাওলানা আকরাম খাঁ পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করে। এরই মধ্যে ১৯৪৯ সালের ৩১ মার্চ ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এ প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করলে সরকারের টনক নড়ে এবং তখনকার মতো বাংলা ভাষাকে আরবিকরণের প্রয়াস কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়। ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব আসে কিন্তু ৪ ও ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাকে সমর্থন জানায় পূর্ব পাকিস্তানিরা। কিন্তু এ সময় এ বিষয়টি চাপা পড়ে যায় ।

৮. পুনরায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন : ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবি ঢাকা পড়ে যায়। যার ফলে কিছু সংগ্রামী ছাত্ররা পুনরায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে যেটির আহ্বায়ক হিসেবে আবদুল মতিনকে নিযুক্ত করা হয় ।

৯. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা : ১৯৫২ সালে জানুয়ারির শেষের দিকে খাজা নাজিমউদ্দিনের একপাক্ষিক ভাষণ ভাষা আন্দোলনকে আরও জোরদার করে। তিনি পুনরায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অনুরূপ ভাষণ দেন। তাঁর এ ঘোষণায় ছাত্র-শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে এরই প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারিতে 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' ঢাকা | বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধর্মঘটের আয়োজন করে। এ সভায় ৪ জানুয়ারি তারিখে ছাত্র ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল এবং ছাত্র সভা করার ঘোষণা দেয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”। ভাষা আন্দোলনকে বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারিতে মওলানা আবদুল | হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে এক সভায় 'সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। উক্ত সভায় তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট, মিছিল, সভাকে সমর্থন জানায় এবং ২১ ফেব্রুয়ারিতে হরতাল, মিছিল এবং সভা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।

১০. পূর্ব পাকিস্তানে ১৪৪ ধারা জারীকরণ : ৪ ফেব্রুয়ারি সভা, ধর্মঘট, মিছিল সংঘটিত হওয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনকে সমর্থনকারী ইংরেজি পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার' -এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ২০ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।

১১. ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ : ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪৪ ধারা ভাঙার এবং না. ভাঙার বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত অন্যান্য ছাত্ররা, নেতাকর্মীরা ও যুবলীগ কর্মীগণ ১৪৪ ধারা ভাঙার লক্ষে পৃথক পৃথকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

১২. ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখের চূড়ান্ত আন্দোলন : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলার মানুষ তাদের ইতিহাসের সাথে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটায়। এ দিন সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্ররা বিভিন্ন সংগঠন থেকে দুজন দুজন করে সমবেত হয়। ঐ দিন বেলা ১১ টার দিকে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙতে ছাত্ররা উদ্যত হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ আন্দোলনে মুসলিম . লীগও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার উদ্দেশ্যে পথে নামলে পুলিশ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তারপরেও ছাত্র মিছিল বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন পুলিশ ছাত্র মিছিলের উপর লাঠি চার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। অবস্থায় ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং মেডিকেল কলেজের প্রাচীর টপকে মেডিকেল হোস্টেলের প্রধান ফটকে এসে সমবেত হয়।

১৩. ২১ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি : মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটক থেকে ছাত্ররা আবার মিছিল বের করার উদ্যোগ নেয়। তখন তিনজন তিনজন করে ছাত্র মিছিল বের করে। কিন্তু তারপরেও পুলিশ মিছিলের উপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে ছাত্ররা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সামনে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করে। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে ঘটনা স্থলেই আবদুল জব্বার এবং রফিকউদ্দীন আহমদ নিহত হন। ১৭ জন আহত হন যাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে আবুল বরকত রাত আটটার সময় শহিদ হন। এরপর ছাত্রছাত্রীদের উপর অতর্কিতভাবে গুলি চালানো হয় যাতে এক ভয়ানক পরিস্থিতির জন্ম হয় ।

১৪. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহিদ : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতেই যে শুধুমাত্র সকল শহিদ মৃত্যু বরণ করে তা নয়। ২২শে ফেব্রুয়ারিতেও অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। আবার আহতদের মধ্যে অনেকেই এ ঘটনার কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা শহিদ সালাম ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা শহিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহিদরা হলেন আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম, আবুল বরকত, শফিউর এবং আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে প্রথম ভাষা শহিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে সমগ্র বাঙালি জাতি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আর এ জাতি মায়ের ভাষাকে কলুষিত হতে দেয়নি । জীবন দিয়ে এ ভাষার সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখেছে। আর তাই আজ আমরা বাংলা ভাষায় স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। বাংলাদেশ আজ আমাদের মাতৃভূমি এবং আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র পরিচয় দিতে পারি। আর এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের ফলে। কারণ ভাষার জন্য লড়াই করে তারা বাঙালি জাতিকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ