আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর ।

আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর
আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর

আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : উমাইয়া বংশের পতনের পর ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় বংশের যাত্রা শুরু হয়। আবু মুসলিম খোরাসানীর অক্লান্ত পরিশ্রম কৌশল ও দূরদর্শিতার ফলে এই রাজবংশটি আপন মহিমায় স্থাপিত হয়। 

তাদের সুদৃঢ় শাসনের ফলে ৭৫০-১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তারা শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। আব্বাসীয় শাসন ক্ষমতা পরিচালনার সময় যেসব রাজবংশ প্রতিষ্ঠাতা লাভ করেছিল তাদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশ ছিল অন্যতম যেমন- ইদ্রিসীয় বংশ, আঘলাবী বংশ ইত্যাদি।

আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আব্বাসীয় রাজবংশের সাথে পশ্চিমা অঞ্চলের রাজবংশের যে সম্পর্ক আমরা লক্ষ্য করি তার বর্ণনা প্রদান করা হলো :

এই বর্ণনা প্রদান করার পূর্বে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানা দরকার ।

→ ইদ্রিসী রাজবংশের পরিচয় : ৭৮৫ সালে ইদ্রিস ইবনে আব্দুল্লাহ নামক হাসানের এক প্রপৌত্র মদিনায় বিদ্রোহ করেন এবং পরাজিত হয়ে মরক্কোতে পলায়ন করেন। এই সময় আব্বাসীয় খলিফা ছিলেন তৃতীয় খলিফা মাহদীর । 

আব্বাসীয়দের আধিপত্য স্বীকার করতো সমগ্র আফ্রিকা। ইদ্রিস আফ্রিকার মৌরতানিয়ায় আস্তানা গড়েন এবং এখানকার যে বার্বার জাতি ছিল তারা তাঁকে খলিফা হিসেবে স্বীকার করেন। 

তাদের সাহায্যে সেখানে তিনি একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন যেটি উত্তর আফ্রিকায় দীর্ঘকাল স্থায়ী ছিল। এই রাজবংশ ইতিহাসে প্রথম ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশ বলে জানা যায়।

→ আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে সম্পর্ক : ইদ্রিসীয় বংশের শাসকদের সাথে আব্বাসীয়দের যে সম্পর্ক ছিল তা হলো :

১. খলিফাদের সাথে সম্পর্ক : ইদ্রিসীয় বংশের শাসকগণদের সাথে আব্বাসীয় খলিফাদের সু-সম্পর্ক ছিল না। কারণ এরা নিজেদের ইচ্ছামতো শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করতেন।

২. স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন : ইদ্রিসী রাজবংশের শাসকগণ স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। তাদের উপর আব্বাসীয় খলিফাগণ চাপ প্রয়োগ করলেও তারা তা মানতেন না। যার জন্য তারা স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন।

৩. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : আব্বাসীয় খলিফাগণ ইদ্রিসী রাজবংশের খলিফাদের শাসনব্যবস্থায় মনক্ষুণ্ন হয়েও তাদের প্রতি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন না। কারণ এটি ছিল বাগদাদ থেকে অনেক দূরে ।

৪. আব্বাসীয় গুপ্তচরকে হত্যা : আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে ইদ্রিসীয় রাজবংশের শাসকদের সম্পর্ক এত অবনতি হয়েছিল যে তারা আব্বাসীয় গুপ্তচরকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করেন ।

৫. অন্যান্য সম্পর্ক : এছাড়াও তাদের মধ্যে অন্যান্য সম্পর্কগুলো যেমন- রাজ্য, প্রতিরক্ষা, কর ইত্যাদি ভালো ছিল না।

→ আঘলাবী বংশের পরিচয় : ক্ষুদ্র রাজবংশের মধ্যে যতগুলো রাজবংশ ছিল তার মধ্যে আঘলাবী বংশ ছিল প্রধান । প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইব্রাহীম ইবনে আঘলাব।

 তাঁর পিতা আল আঘলাব বিন সেলিম ৮০১ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয়দের ত বীনে চাকরি করতেন এবং তিনিই ৮০১ খ্রিস্টাব্দে এই ক্ষুদ্র রাজ্য বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা ছিলেন আরবীয় পরিবার। তাদের উৎপত্তি হয় ইফ্রিকিয়া হতে ।

শাসনকাল : ৮০১-৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মোট ১০৮ বছর। এই রাজবংশ শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করেন।

আধিপত্য : তিউনিশিয়ার একটি বিশাল এলাকা জুড়ে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।

খলিফাদের সাথে আঘলাবীদের সম্পর্ক আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে আঘলাবী রাজবংশের শাসকদের মধ্যে যে সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো :

১. শক্তি সঞ্চয় : আঘলাবী রাজবংশের শাসকগণ ক্রমে ক্রমে তাদের শাসন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং বিভিন্নভাবে তাদের শক্তি সঞ্চার করেন।

২. প্রভাব বিস্তার : আঘলাবীয় শাসকগণ তাদের নিজস্ব প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন ।

সেনাবাহিনীতে সৈন্য নিয়োগ : আঘলাবী শাসকগণ সেনাবাহিনীতে সৈন্য নিয়োগের নামে সৈন্য নিয়োগ দান করে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেন। কারণ যে সকল সৈন্য তারা | নিয়োগ প্রদান করতেন তারা ছিল তাদের আনুগত্য।

নিজেদের নামে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা : আব্বাসীয় খলিফাদের হাত থেকে আস্তে আস্তে শাসন ক্ষমতা সুদৃঢ় করে তারা নিজেদের নামে একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম আঘলাবীয় রাজবংশ ।

স্বাধীনতা লাভ : আঘলাবী রাজবংশ গ্রহণ করার পর তারা নিজেদেরকে স্বাধীন রাজবংশ হিসেবে ঘোষণা করেন ।

৩. তুলুনীয় বংশের পরিচয় : তুলুনীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। আহমেদ বিন তুলুন। এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হয় মিশরে। আহমেদ বিন তুলুন ছিলেন তুর্কিস্তানের কৃতদাস এবং সেই সাথে তিনি ছিলেন তাজিকিস্তানের উপজাতি। 

আব্বাসীয় খলিফা মামুন-এর শাসনকালে তাকে বুখারায় গভর্নর হিসেবে প্রেরণ করা হয়। আহমেদ বিন তুলুন তার নিজস্ব যোগ্যতা বলে তিনি আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থায় একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।তুলুনীয় বংশের শাসক ছিল ৬ জন। 

তুলুনীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ বিন তুলুন আব্বাসীয় খলিফাদের বশ্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু বাকি শাসকগণ খলিফাদের বশ্যতা স্বীকার করেন নি। তুলুনীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন আহমেদ বিন তুলুন। রাজ্যসীমা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

খলিফাদের সাথে সম্পর্ক : আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তুলুনীয় বংশের খলিফাদের সম্পর্ক ছিল বৈরী। কারণ তুলুনীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইবনে তুলুন-এর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকলেও বাকিদের সাথে তাদের সু-সম্পর্ক ছিল না। কারণ তারা আব্বাসীয় খলিফাদের আনুগত্য মানতে বাধ্য ছিল না।

স্বাধীনভাবে ক্ষমতা পরিচালনা : আহমেদ বিন তুলুন মিশরের ক্ষমতা লাভ করার পর তিনি স্বাধীনভাবে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে শুরু করেন। যার ফলে তিনি পরবর্তীতে একটি ক্ষুদ্র রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

কর প্রদান বন্ধ : তিনি মিশরের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর আব্বাসীয় খলিফাদের সকল প্রকার কর প্রদান করা বন্ধ করে দেন।

আহমেদ বিন তুলুনকে দমন করার জন্য সৈন্য প্রেরণ : আহমেদ বিন তুলুন যখন আব্বাসীয় খলিফাদের কর প্রদান করা বন্ধ করেন তখন আব্বাসীয় খলিফা তাকে দমন করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু তুলুন তাদের পরাজিত করে নিজেই ক্ষুদ্র রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন । 

অপরদিকে :

(i) খামারবাওয়াদের সাথে আব্বাসীয় খলিফার সু-সম্পর্ক স্থাপিত হয় ।

 (ii) আব্বাসীয় খলিফা নিরাপদ আদেশ প্রদং করেন। 

(iii) খামারবাওয়া তার নিজ কন্যাকে আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিমের সাথে বিবাহ দেন।

(iv) খলিফাদের সাথে শান্তি স্থাপন করেন।

কর প্রদান : ইখশিদি রাজবংশের শাসকগণ খলিফাদের সঠিকভাবে কর প্রদান করতেন ।

নির্দেশ অনুসারে রাজ্য পরিচালনা : আব্বাসীয় খলিফা ইখশিদি বংশের শাসকদের যে আদেশ প্রদান করতেন সেই অনুসারে ইখশিদি শাসকগণ রাজ্য শাসন করতেন ।

খলিফাদের বিপদ আপদে সাহায্যে প্রদান : আব্বাসীয় খলিফা ত্রিশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে ইখশিদি বংশের গভর্নর মুহাম্মদ বিন তুখজ খলিফাকে সাহায্য প্রদান করেন। এছাড়াও সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য প্রদান করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাসিদের পরবর্তী আব্বাসীয় খলিফাগণের শাসন আমলে রোমানদের সাথে তেমন কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয় নি। যদিও রোমানগণ মুসলমানদের চরম শত্রু ছিল। 

সাম্রাজের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মহানবি (স:)-এর আমল থেকে শুরু করে আব্বাসীয় শাসনকালের পতনের পূর্ব পর্যন্ত তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেন। 

শেষপর্যন্ত তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ তাদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করেন তাদের দমনের জন্য। ফলে রোমানদের উপদ্রব চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশের সম্পর্ক আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ