আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের কারণগুলো বর্ণনা কর ।

আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর
আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর

আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীতে এমন কোন জাতি নেই যার উত্থান ঘটেছে, কিন্তু পতন ঘটেনি। উত্থান, বিকাশ ও পতন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যার উত্থান ঘটে, তার পতন অনিবার্য। এ প্রক্রিয়াতেই খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফাহ কর্তৃক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় বংশের উত্থান ঘটেছিল। 

আব্বাসীয় খলিফাগণ জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন করে সাম্রাজ্যকে সুদীর্ঘ ৫০০ বছর টিকিয়ে রেখেছিলেন। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিঃশত্রু আক্রমণের ফলে আব্বাসীয় বংশের পতন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতঃপর ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল নেতা হালাকু খান কর্তৃক আক্রমণের ফলে আব্বাসীয় শাসনের অবসান ঘটে।

→ আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ : আব্বাসীয় বংশ পতনের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণগুলো তুলে ধরা হলো :

১. ঐতিহাসিক কারণ : প্রখ্যাত খালদুনের মতে, কোন রাজ বংশ একশত বছরের অধিককাল শৌর্য-বীর্যের সাথে রাজত্ব করতে পারে না। তিনি বলেন, রাজ বংশকে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজ্যের বিকাশ সাধন ও পতন এই তিনটি অধ্যায়কাল অতিক্রম করতে হয়। 

এ নীতি অনুসারে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফাহ কর্তৃক আব্বাসীয় বংশের উত্থান ঘটে। বিভিন্ন খলিফাগ সাম্রাজ্যের উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে সুদীর্ঘ ৫০০ বছর স্থায়ী থাকার পর ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল নেতা হালাকু খান কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ।

২. উত্তরাধিকার নীতির অভাব : আব্বাসীয় শাসনামলে উত্তরাধিকার নীতির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। উত্তরাধিকার নীতির অস্পষ্টতার কারণে রাজকুমারদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। 

যেমন- খিলাফতকে কেন্দ্র করে আল মামুন ও আল আমিনের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী।1

৩. খলিফাদের দুর্বলতা : আব্বাসীয় খিলাফত পতনের অন্যতম কারণ ছিল উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতা, অযোগ্যতা এবং অকর্মণ্যতা আব্বাসীয় বংশে সর্বমোট ৩৭ জন খলিফা ছিলেন। তাদের মধ্যে আবুল আব্বাস, আল মনসুর ও হারুন অর রশীদ ব্যতীত সবই ছিলেন দুর্বল ও অযোগ্য শাসক।

খলিফাদের দুর্বলতার ফলে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। সেনাবাহিনী উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠে এবং আমিরদের স্বার্থপরতা আব্বাসীয় বংশ পতনের দিকে ধাবিত করে ।

৪. মন্ত্রীদের অযোগ্যতা : অযোগ্য খলিফাগণ তাদের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব অদক্ষ এবং অযোগ্য মন্ত্রীদের হাতে অর্পণ করে বিলাসব্যসনে মত্ত হয়ে পড়েন। এমনকি, কোন কোন খলিফার সময় সম্পূর্ণ ক্ষমতা মন্ত্রীর হাতে চলে যায়। এসব মন্ত্রীদের স্বার্থপরতা এবং অযোগ্যতা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী ।

৫. ত্রুটিপূর্ণ শাসন কাঠামো : আব্বাসীয়দের শাসন কাঠামোটি ত্রুটিপূর্ণ। আব্বাসীয় খলিফাগণ প্রাদেশিক সরকারকে এক বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। এতে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ রাজত্ব এর সামরিক বিভাগে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে । 

প্রাদেশিক সরকার অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করে এবং সামরিক শক্তিতে স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্বীকার করে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

৬. খলিফাদের ভোগ-বিলাসিতা : আব্বাসীয় বংশ পতনের আরেকটি কারণ খলিফাদের ভোগ-বিলাস। তারা অযোগ্য মন্ত্রীদের হাতে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে থাকতেন। মদ, ক্রীতদাস এবং বন্দিদের সাথে অবাধ মেলামেশার ফলে তাদের রক্তের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যায়।

৭. সামরিক কারণ : আব্বাসীয় খলিফাগণ রাজ্য বিস্তারের চেয়ে জ্ঞানবিজ্ঞান, কৃষ্টি ও সভ্যতায় বেশি মনযোগী হয়ে উঠেছিলেন। সামরিক বিভাগের উপর তাদের কোন নজর ছিল না।

 সামরিক বিভাগের প্রতি তারা ছিলেন উদাসীন। এই উদাসীনতার কারণে সৈন্যগণ শৌর্যবীর্য ও সামরিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে সাম্রাজ্যে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলেও সৈন্যগণ প্রতিরোধ করতে পারেনি।

৮. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বংশের উত্থান : আব্বাসীয় বংশের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান। দুর্বল ও অযোগ্য খলিফাদের শাসনব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে এসব বংশের উৎপত্তি হয়েছিল। 

যেমন : ইদ্রিসীয় বংশ, সাসানীয় বংশ, বুয়াইয়া বংশ, সেলজুক বংশ এবং ফাতেমীয় বংশ প্রভৃতি বংশের উত্থান ঘটে। এসব বংশগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন ও অর্ধস্বাধীন রাজ্য গড়ে তুলেছিল। এ সমস্ত ক্ষুদ্র রাজ্যের উত্থান ও বিকাশ আব্বাসীয়দের পতনের কারণ ।

৯. সাম্রাজ্যের বিশালতা : আব্বাসীয় সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর থেকে সিন্ধু নদ এবং কাস্পিয়ান সাগর থেকে নীল নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বিশালতার জন্য রাজধানী বাগদাদ থেকে সকল অঞ্চলে সুষ্ঠুভাবে শাসন করা সম্ভব হয়নি। 

তাছাড়া কোথাও কোন বিদ্রোহী রাজবংশ গড়ে উঠলে তার সংবাদ সহজেই পওয়া যেত না এ কারণে সঠিক সময়ে খলিফাগণ বিদ্রোহী অঞ্চলে অভিযান প্রেরণ করতে পারতো না। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করেছিল।

১০. তুর্কিদের প্রাধান্য : তৎকালীন আব্বাসীয় সময়ে সামরিক বিভাগে তুর্কিদের প্রাধান্য ছিল। কারণ খলিফাদের আরব চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল না। ফলে তারা তুর্কিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল হয়ে সেনাবাহিনী গঠন করেন। 

যেমন : খলিফা মুসতাসিম তুর্কি সেনাবাহিনী গঠন করে তাদের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করে মারাত্মক ভুল করেন। এ কারণে সামাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল এবং খলিফার প্রাধান্য ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছিল।

১১. দলগত শত্রুতা : প্রাক ইসলামি যুগ থেকেই আরবে দলগত কোন্দল চলছিল। কিন্তু আব্বাসীয় শাসন আমলে আরব, অনারব, মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে দলগত শত্রুতা মারাত্মক রূপ ধারণ করে । 

অতি প্রাচীনকাল থেকেই পারসিকগণ আরবদের কর্তৃত্ব স্বীকার করেনি। আরবগণ সব সময়ই অনারবদের বিরোধিতা করতো। এ সমস্ত কারণে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী

১২. স্বৈরতান্ত্রিক শাসন : আব্বাসীয় খিলাফত স্বৈরতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তারা জনগণের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিত না। এ কারণে পরবর্তীতে তারা জনগণের সমর্থন হারায়। স্বৈরতন্ত্রের অস্তিত্ব মূলত শাসকের ব্যক্তিগত চরিত্র, ব্যক্তিত্ব ও সামরিক ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।

১৩. ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উত্থান : আব্বাসীয় বংশের পতনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল সাম্রাজ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উত্থান। যেমন- শিয়া, সুন্নি, মুতাজিলা, কারা মাতীয়ান, ইসমাইলী, এসাসিন প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটেছিল। তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ সাম্রাজ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিল ।

১৪. রাজকোষ শূন্যতা : খলিফাগণ বিলাসব্যসনে মত্ত হয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনের জন্য ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছিল। ফলে আব্বাসীয় রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে । আর রাজকোষে শূন্যতা আব্বাসীয় বংশ পতনের অন্যতম কারণ ছিল।

১৫. আমির ওমরাহদের ঔদ্ধত্য : খলিফাগণ সামরিক বিভাগ ও রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আমির ওমরাহদের নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। এসময় আমির ওমরাহণ পূর্ণ ক্ষমতা সঞ্চয় করে আল মুত্তাকী এবং আল মুসতাককীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। 

তারা ঔদ্ধত্যের চরম সীমায় আরোহণ করেছিল আল রাজিবের (১৯৩৪-৪০ খ্রি.) রাজত্বকালে এমনকি তারা খুতবায় খলিফার নামের সাথে নিজের নাম পাঠের ব্যবস্থা করেছিল।

১৬. হালাকু খানের আক্রমণ : আব্বাসীয় বংশ পতনের

প্রত্যক্ষ কারণ ছিল মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের আক্রমণ। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান আব্বাসীয় বংশের শেষ খলিফা আল মুসতাসিম কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। খলিফাকে হত্যা করার মধ্য দিয়েই আব্বাসীয় বংশের সূর্য অস্তমিত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় বংশ পতনের পেছনে অনেকগুলো কারণ সক্রিয় ছিল। শাসনকার্যে | অবহেলা,বিলাস-ব্যসন, খলিফাদের দুর্বলতা, মন্ত্রীদের অযোগ্যতা এবং গৃহদ্বন্দ্ব প্রভৃতি কারণে আব্বাসীয়দের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। তারা মদ ও নারীর পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে রাজকোষ শূন্য করে ফেলে। 

রাজকোষ শূন্য হওয়ার ফলে সেনাবাহিনীদেরকে উপযুক্ত বেতন প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বহিঃশত্রু আক্রমণ করলেও সৈন্যগণ প্রতিহত করেনি। তাছাড়া আব্বাসীয় খিলাফত উত্থান ও পতনের চিরাচরিত ও অমোঘ নিয়ম থেকে রক্ষা পায়নি।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের কারণগুলো বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলের পতনের কারণগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ