আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর।

আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর
আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর

আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে জাবের যুদ্ধে উমাইয়াদের পতন ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় খিলাফতের উত্থান সূচনা করে এবং এর নায়ক ছিলেন আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ। তিনি ছিলেন, আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম খলিফা। 

তিনি খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে উমাইয়াদের সমূলে উৎখাত করার জন্য নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালান। এ জন্য তিনি আস-সাফফাহ রক্তপিপাসু উপাধি গ্রহণ করেন। বংশের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি যেকোনো নৃশংসতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিতে দ্বিধা করতেন না।

আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর পরিচয় : আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ছিলেন কুরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রের আলী | ইবনে আবদুল্লাহর পৌত্র এবং মুহম্মদ ইবনে আলীর পুত্র। রক্ত | সম্পর্কের দিক থেকে তিনি ছিলেন মুহম্মদ (সা.)-এর নিকটতম আত্মীয়। 

উমাইয়া বংশের পতনের পর তিনি ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সাম্রাজ্যের খলিফা নির্বাচিত হন। তিনি খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে উমাইয়াদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য এক নিষ্ঠুর হত্যালীলার আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং নিজে আস-সাফফাহ বা | রক্তিপিপাসু উপাধি গ্রহণ করেন ।

→ আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর চরিত্র ও কৃতিত্ব : ইতিহাসে আবুল আব্বাস অমানুষিক নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। তবে তাঁর কিছু সদগুণও ছিল। নিম্নে তার চরিত্র ও কৃতিত্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো :

১. সিংহাসনে আরোহণ : আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রধান সংগঠন আবু মুসলিম খোরসান ফারগনো কুফা প্রভৃতি অঞ্চল অধিকার করে ইব্রাহিমের পূর্ব মনোনয়ন অনুযায়ী কুফার মসজিদে ইব্রাহিমের ভ্রাতা আবুল আব্বাসকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। 

অতঃপর জনসাধারণ তার প্রতি অনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে। এভাবে কুফায়া আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তার স্থাপিত হয়। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে জাবের যুদ্ধে শেষ উমাইয়া খলিফা মারওয়ান পরাজিত ও নিহত হলে তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানের সিংহাসন অলঙ্কৃত করেন।

২. উমাইয়াদের ধ্বংস সাধন : খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই সর্বপ্রথম আবুল আব্বাস উমাইয়াদের সমূলে উৎপাটন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

তার নির্দেশে প্যালেস্টাইনের আবু ফুটস নামক স্থানে ৮০ জন উমাইয়া বংশের লোককে আমন্ত্রণ করে তাদের সবাইকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এখানে শুধু উমাইয়া বংশীয়দের হত্যা করা হয়নি, উমাইয়াদের সমর্থকদেরও নিধন করা হয়।

৩. বিদ্রোহ দমন : আব্বাসীয়দের এ নিষ্ঠুর প্রতিশোধমূলক আচরণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে উমাইয়াদের অনুকূলে ভাবান্তর পরিলক্ষিত হয় এবং ক্ষমতাচ্যুত রাজ-বংশের সমর্থকগণ দামেস্ক, হিমস, কিনিসিরিন, ফিলিস্তিন এবং মেসোপটেমিয়ায় আস-সাফফাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। 

জনগণ দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে আব্বাসীয় বংশের আনুগত্য অস্বীকার করতে থাকে। সুচতুর উপায়ে ভ্রাতা আবু জাফরের সহায়তায় আস-সাফফাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে এসব বিদ্রোহ দমন করেন ।

৪. রাজধানী পরবর্তন : খলিফা আবুল আব্বাস আলী বংশের সমর্থক এবং চঞ্চলমতি ইরাকবাসীদের মধ্যে কুফায় অবস্থান করা নিরাপদ মনে করলেন না। 

তাই তিনি কুফা থেকে হীরার নিকটবর্তী আল-আনবার নামক স্থানে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং সেখানে আবুল আব্বাস আল-হাশেমীয় নামে রাজপ্রাসাদ নামে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন।

৫. আবু সালামাকে হত্যা : আবুল আব্বাস শাসনকার্যের সুবিধায় জন্য আবু সালামাকে উজির নিযুক্ত করেন। কিন্তু আবু সালামার প্রতিপত্তি আবু মুসলিমের হিংসার উদ্রেক করে। 

তদুপরি আলী বংশীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে তাকে সন্দেহ করা হয় । তাই আবু মুসলিমের পারমর্শক্রমে খলিফা তাকে হত্যা করেন ।

৬. শাসনকর্তা নিয়োগ : আবুল সাবধানতার সাথে নিজ পরিবারের এবং বিশ্বস্ত লোকদের প্রাদেশিক শাসনকর্তা পদে নিয়োগ দান করেন। তিনি নিজ ভ্রাতা আবু জাফরের মেসোপটেমিয়া, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের এবং পিতৃব্য দাউদ ইবনে আলীকে হিজাজ ইয়েমেন এবং ইয়ামামার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এমনিভাবে সকল ক্ষেত্রেই তিনি অতিশয় বিশ্বস্ত লোকদের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন ।

৭. চরিত্রবান মানুষ : খলিফা আবুল আব্বাস শাসক হিসেবে নিষ্ঠুর ও বিশ্বাসঘাতক হলেও একজন চরিত্রবান মানুষ হিসেবে তিনি সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। 

আদর্শ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবেই খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ।

৮. স্নেহপ্রবণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ : উমাইয়াদের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর হলেও আবুল আব্বাস কিছু সদগুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি দয়াময়, সংযমী, স্নেহপ্রবণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি উপপত্নী গ্রহণ করে তার চরত্রেকে কলুষিত করেননি। 

তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য অনেক জনহিতকর কাজও করেছিলেন। কুফা থেকে বসরা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করে তিনি হজযাত্রীদের চলাফেরা করার সুযোগ করে দেন।

৯. সুদক্ষ শাসক : শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রেও তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। আব্বাসীয় প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ উজির ও জলাদের পদ তারই সৃষ্টি। শাসনকার্যে দক্ষ লোক নির্বাচনে তিনি অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দেন। 

অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী বার্মাকি বংশের উদ্ভব তার সময়ই সূচিত হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একটি স্থিতিশীল শাসনব্যস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১০. প্রজাহিতৈষী শাসক : আবুল আস-সাফফাহ ছিলেন প্রজাহিতৈষী শাসক। জনকল্যাণের প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি ছিল। তিনি কতকগুলো অট্টালিকা নির্মাণ করেন, কুফা থেকে মদিনা পর্যন্ত একটি সুদীর্ঘ, জনপথ নির্মাণ করেন এবং হজ্জ্বযাত্রীদের সুবিধার্থে রাস্তার দুইপাশে কিছুদূর অন্তর অন্তর সরাইখানায় অজু ও নামাযের ব্যবস্থা ছিল।

চরিত্র : প্রায় সাড়ে চার বছর রাজত্ব করে আবুল আব্বাস স্বীয় ভ্রাতা এবং ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী আবু জাফরকে উত্তাধিকারী এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ঈশাকে পরবর্তী ভাবী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। 

রক্তলোলুপতা এবং নৃশংসতার জন্য আবুল আব্বাসকে আস-সাফফাহ (রক্তপিপাসু) উপাধি প্রদান করা হয়। উইন বলেন “তিনি শুধু পাষণ্ডই ছিলে না, বরং মিথ্যা শপথকারী এবং কৃতঘ্ন ও বিশ্বাসঘাতকও ছিলেন।

” রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং আব্বাসীয় খিলাফতের স্থায়িত্বের জন্য তিনি কঠোর নীতি অবলম্বন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সংযমী, দূরদর্শী, বিচক্ষণ এবং কর্তব্যনিষ্ঠ। উম্মে সালমা নামে তাঁর একমাত্র পত্নী ছিলেন। 

জনহিতকর কার্যের জন্য তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন। হিট্টি যথার্থই বলেন, “আস-সাফফাহ ইসলামের সর্বাপেক্ষা গৌরবেজ্জ্বল দীর্ঘতম রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।"

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম খলিফা হিসেবে আবুল আব্বাস বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। উমাইয়াদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য তাকে এককভাবে দায়ী করা যায়না। 

স্বীয় ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার জন্য মধ্যযুগের আরো অনেক রাজা-বাদশাহই এরূপ নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রে যথেষ্ট মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, “আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ইসলামের সর্বাপেক্ষা গৌরবোজ্জ্বল এবং দীর্ঘতম রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।”

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফার নাম কি। তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ