আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর ।
![]() |
আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর |
আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয়দের সুদীর্ঘ পাঁচশ বছরের শাসনকাল মুসলিম শাসনব্যবস্থা ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ যুগ। এই যুগে উমাইয়া যুগের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে। উমাইয়া যুগটা যুদ্ধ বিগ্রহ ও রাজ্য বিস্তারের যুগ হলেও আব্বাসীয় যুগটা ইসলামি মননশীলতা ও শাসনতান্ত্রিক বিকাশের যুগ । আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের অনেক কিছু শুধু পরিবর্তনই করেনি বরং অনেক কিছু সংযোজন করেছে।
— আব্বাসীয়দের কেন্দ্রীয় দফতরসমূহ : আব্বাসীয় শাসনামলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক কার্যাবলি প্রধানত নিম্নলিখিত প্রশাসনিক বিভাগের ওপর ন্যস্ত ছিল।
১. দেওয়ানুল জুনুদ : দেওয়ান আল-জুনুদ হলো সামরিক বিভাগ। এই দপ্তরের কাজ ছিল সামরিক কর্মচারী নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতা বণ্টন ও যাবতীয় সামরিক চাহিদা মিটানো। এই বিভাগ মজলিশ আল-মুকাবাহ শাখায় সৈন্য নিয়োগ, মজলিশ আল চাকরীর শাখার সৈন্যদের বেতন-ভাতা বণ্টন এবং দেওয়ান আল- আরজ শাখা অস্ত্রাগারে সামরিক সাজ-সরঞ্জাম পরীক্ষা করতো।
২. দেওয়ান আল খারাজ : এ বিভাগ রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষমতাবান ছিল। রাজস্বনীতি নির্ধারণ, ধার্য, আদায় করা, রাজত্বের আয়-ব্যয়ের হিসাব রক্ষা করা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয়-বহন করা। যথা-সরকারি কর্মচারীদের বেতন- ভাতা বণ্টন এবং সরকারের সমুদয় উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজের অর্থ যোগান দেওয়া এই বিভাগের কাজ।
৩. দেওয়ান আল-বারিদ : খলিফা মুয়াবিয়াহ সামানীয়দের অনুসরণ করে মুসলিম শাসনব্যবস্থার প্রধান ডাক বিভাগ চালু করেন এবং ডাক বিভাগের তত্ত্বাবধানের জন্য দেওয়ান আল- বারিদ নামে রাষ্ট্রীয় ডাক বিভাগ চালু করে। আব্বাসীয় আমলে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসন কর্তাদের মধ্যে খবরা-খবর আদান- প্রদান, কেন্দ্রীয় সরকারকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অবহিত করার জন্য ডাক বিভাগ চালু করে ।
৪. দেওয়ান আল-রাসায়েল : আব্বাসীয় শাসনামলে দেওয়ান আল-রাসায়েল কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর হিসাবে কাজ করতো। এই বিভাগ থেকে সরকারি চিঠিপত্র, দলিল দস্তাবেজ বা রাজকীয় আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি খলিফা বা উজিরের অনুবাদের পর সীলসহরযুক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রেরিত হতো। এই বিভাগের প্রধান সাহবেই দেওয়ান আল-রাসায়েল ।
৫. দেওয়ান আল-মিযান : এই বিভাগ প্রাদেশিক সরকারের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সকল প্রশাসনিক বিভাগের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষণ করে দেখত। বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি দমনের জন্যই খলিফা আল মাহদী হিসাব নিরীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেন।
৬. দেওয়ান আল-কাজা : বিচার বিভাগের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য বাগদাদের প্রধান প্রধান শহরে এবং বিভিন্ন প্রদেশে কাজী নিযুক্ত করা হয় । কাজিউল কুজ্জাত ছিল প্রধান বিচারপতি। তিনি মসজিদে বসে বা অন্যান্য অফিসে বসে বিচার কাজ সম্পাদন করতেন। খলিফা ছিলেন রাষ্ট্রের বিচারের প্রধান ও শেষ উৎস।
৭. দেওয়ান আল-শুরতা : প্রদেশে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি, বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য রাজধানী ও প্রাদেশিক শহরগুলোতে পুলিশবাহিনী নিয়োজিত ছিল। তবে তারা জনগণের ওপর অত্যাচার করতেন না । এ বিভাগের প্রধানের নাম সাহিব আল শুরতা।
৮. দেওয়ান আল-আজিমা : দেওয়ান আল-আজিমা হলো কেন্দ্রিয় হিসাব নিরীক্ষণ বিভাগ। এই বিভাগের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্ৰীয় সরকারের কেন্দ্রীয় হিসাব সম্বন্ধীয় প্রাদেশিক বিভাগসমূহের আয়- ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করা। এই বিভাগের প্রধান উপাধি ছিল সাহিবই দেওয়ান আল-আজিমা।
৯. দেওয়ান আল-হিসবাহ : পুলিশ বিভাগের মতো এটি | একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এ বিভাগের কাজ ছিল ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ দমন করে নাগরিক জীবনে আইন-শৃঙ্খলার অগ্রগতি সাধন করা। এ বিভাগের প্রধান মহতোসিব নামে পরিচিত ছিল।
১০. দেওয়ান আল-নাফাকাত : এ বিভাগ রাজ দরবার ও রাজপ্রাসাদের যাবতীয় খরচ বহন করতো। খলিফার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনী, ব্যক্তিগত কর্মসচিব, রাজকীয় কোরআন পাঠক এবং চিকিৎসকের জন্য প্রচুর খরচ হতো। শুধু রন্ধনশালা ও রুটি-তেরি কারখানার জন্য ব্যয় ছিল দশ হাজার দিরহাম।
১১. দেওয়ান আল-তারকী : জনগণ খলিফার নিকট যে অভিযোগ বা আবেদন পেশ করতো এর ওপর খলিফা বা কর্মসচিবের সিদ্ধান্ত এই বিভাগে লেখা হতো। এর ওপর ভিত্তি করে সরকারি আদেশনামা লেখা হতো এবং তা সীলমোহরাঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হতো ।
→ অন্যান্য দপ্তরগুলো : অন্যান্য দপ্তরগুলো নিম্নরূপ-
১. দেওয়ান আল-দারীবা ।
২. দেওয়ান আল-খাতাম বা রেজিস্ট্রি বিভাগ ।
৩. দেওয়ান আল-আখরিয়া বা কৃষি বিভাগ ।
৪. দেওয়ান আল-বুসুকারিত খাত বা সরকারি সাহায্য বিভাগ ।
৫. দেওয়ান আল-মসাদেরিন বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বিভাগ
৬. দেওয়ান আল-মাওয়ালি বা গিলমান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় খলিফাগনের কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থাপনা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কেননা তাদের আটলান্টিক থেকে সিন্ধু নদ এবং কাস্পিয়ান সাগর থেকে নীলনদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আব্বাসীয় শাসকদের দক্ষতা ও প্রশাসনিক কৌশলের কারণেই তারা সফল হয়ে ছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।