আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে যা জান তা লেখ ।

আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

  • অথবা, আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে যা জান তা লেখ।
  • অথবা, চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলিম মনীষী জাবির ইবনে হাইয়ানের অবদান আলোচনা কর।
  • অথবা, আব্বাসীয় আমলে মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞান কিভাবে বিকশিত হয়েছিল? আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্যে মুসলমানরা বিশ্বকে নেতৃত্ব প্রদান করে। এজন্য অনেক ঐতিহাসিক এই যুগকে ইসলামি সভ্যতার 'স্বর্ণযুগ' বলে অভিহিত করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিকাশ ও উন্নতি সাধনে আব্বাসীয় শাসকরা ব্যাপক অবদান রাখেন। 

এইসময় চিকিৎসাশাস্ত্রের উপর অসংখ্য বই রচিত হয়। ইবনে সিনা, জাবির ইবনে হাইয়ান, আর-রাজী প্রমুখ বিজ্ঞানী চিকিৎসাশাস্ত্রে এক নব-দিগন্তের দ্বারা উন্মোচন করেন।

→ আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান : বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির পথে আব্বাসীয়দের অবদান অপরিসীম। কেননা ওইসময় অনেক বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আবির্ভাব ঘটে। তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করেন। 

এমনকি আব্বাসীয় শাসনামলে প্রথম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু তাই নয়, ঔষধ প্রস্তুত প্রণালি ও ঔষধ শিল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক কার্যকলাপ আব্বাসীয় খলিফাগণ নিয়ন্ত্রণ করেন। আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন 'বায়তুল হিকমাহ' প্রতিষ্ঠা করেন। এই গবেষণাগারে গ্রিক চিকিৎসাবিদ গ্যালেন, হিপোক্রেটিস ও অন্যান্য চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করা হয়। 

এছাড়া প্রখ্যাত পণ্ডিত হুনাইন ইবনে ইসহাকশতাধিক মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা ও অনুবাদক ছিলেন। এভাবে আব্বাসীয় যুগে চিকিৎসাশাস্ত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এ সময় যেসব প্রভাবশালী ও বিচক্ষণ, মুসলিম পণ্ডিত চিকিৎসাশাস্ত্রে অসামান্য অবদান রাখেন, তাদের সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা তুলে ধরা হলো :

১. আর-রাজী : আর-রাজী পারস্যের একজন বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ ছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর অবদান অপরিসীম আর-রাজী চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত ১১৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি হাম, শিশু চিকিৎসা, নিউরোসাইকিয়েটরিক ইত্যাদি চিকিৎসা সম্পর্কে নতুন মতবাদ প্রচার করেন। 

আর-রাজী ৩৫ বছর চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থেকে জনগণের খেদমত করে দেন। তাঁর চিকিৎসা বিষয়ক সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হচ্ছে কিতাব-আল-মানসুরী। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থ হলো জুদরী ওয়াল হাসবাত ।

২. জাবির ইবনে হাইয়ান : জাবির ইবনে হাইয়ান একজন বিখ্যাত রসায়নবিদ ছিলেন। তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর পিতা একজন চিকিৎসক ছিলেন। জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর পরবর্তী মুসলমানদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ প্রদান করেছেন।

৩. ইবনে সিনা : চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে ইবনে সিনা এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী নাম। তিনি একাধারে দার্শনিক, গাণিতিক, চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তবে তাঁর মূল অবদান ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রে। তিনি চিকিৎসাবিষয়ক “আল-কানুন ফিত-তিব" নামক গ্রন্থ লিখেন । এই গ্রন্থকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা হয়।

আরবিতে ইবনে সিনাকে “আল শায়খ আল রাঈম” তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি বলা হয়। ইউরোপে তিনি আভিসিনা (Avicenna) নামে সমধিক পরিচিত। “আল-কানুন ফিত তিব" গ্রন্থে ইবনে সিনা ক্ষয় রোগের সংক্রামক প্রতিক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াও ৭৬০ প্রকার ঔষধ প্রস্তুতির নিয়ম আলোচনা করেন। আব্বাসীয় শাসনামলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অবদান ছিল সর্বাগ্রে 

৪. হুনাইন ইবনে ইসহাক : প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদ হুনাইন ইবনে ইসহাক শতাধিক মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা ও অনুবাদক ছিলেন। চক্ষু চিকিৎসা উপর তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। চক্ষুর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে তিনি বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে চিকিৎসাশাস্ত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেন ।

৫. আলী আত-তাবারী : খলিফা মুতাওয়াক্কিলের আমলে আলী-আত-তাবারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি “ফেরদৌস আল হিকমা” নামক একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থ চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা।

৬. আলী বিন ঈসা : আলী-বিন ঈসা একজন বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি চক্ষু চিকিৎসার উপর ৩২টি গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে তাজকিরাত আল-কাহহালিন সবচেয়ে মূল্যবান। এই গ্রন্থটি ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় অণুদিত হয়েছে। এই বইয়ে মোট ১৩০টি চক্ষুরোগের বর্ণনা বিদ্যমান ।

৭. যুহান্না বিন মাসওয়া : আব্বাসীয় যুগে মৌলিক গ্রন্থ প্রণয়নকার ও গ্রিক অনুবাদক পণ্ডিতদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন যুহান্না বিন মাসওয়া। তিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চক্ষুরোগ সম্পর্কে তিনি “দাগলুল আইন” নামক একটি গ্রন্থ রচনাও করেছেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতায় আব্বাসীয় যুগ গৌরবোজ্জ্বল যুগ। চিকিৎসাবিজ্ঞান এই যুগে বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করে। আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন বাগদাদে বায়তুল হিকমা নামে একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কৃত, ফারসি ও সিরীয় প্রভৃতি ভাষায় লিখিত পুস্তকাদি অনুবাদ করা হতো। 

জাবির ইবনে হাইয়ান, ইবনে সিনা, আর-রাজী, আলী আত তাবারী প্রমুখ প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ আব্বাসীয় যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে এক চরম উৎকর্ষে উন্নতি করেন। যার ফলে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে আব্বাসীয় যুগ আজো অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে যা জান তা লেখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলিম মনীষী জাবির ইবনে হাইয়ানের অবদান আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ