আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিখন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিখন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি মুল্যায়ন কর।

আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিখন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর
আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিখন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর

আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিখন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি মুল্যায়ন কর।
  • অথবা, আব্বাসীয় আমলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামল ছিল মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক স্বর্ণযুগ। এ যুগে মুসলিম সংস্কৃতির এক বিপ্লব সাধিত হয়। এই ধারাবাহিকতায় আব্বাসীয় যুগে হস্তলিপি শিল্পের ব্যাপক উৎকর্ষ ঘটে। 

বিশেষ করে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে এ শিল্পচর্চার ব্যাপক বিকাশ সাধিত হয়। হস্তলিপি শিল্পে আব্বাসীয় শিল্পী ও কলাকুশলীগণ বিভিন্ন রীতি ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এবং নতুন যুগের সূচনা করেন। ফলে সারা বিশ্বেই তা ব্যাপকভাবেই সমাদৃত হয়।

→ আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি : আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ও উন্নতি সাধিত হয়। নিম্নে আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি আলোচনা করা হলো :

১. হস্তলিপি শিল্পের প্রচলন : হস্তলিপি শিল্পের প্রচলন ও অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য মুসলমানগণ শিল্প ও নান্দনিকতায় অদ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছেন। মুসলমানদের পূর্বে পৃথিবীর কেনো জাতিই লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে শিল্পচর্চা করেনি । 

মূলত, দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরি থেকে আল-কুরআনের আয়াত লিখিত রূপ দিতে গিয়ে হস্তলিপি শিল্পের প্রচলন শুরু হয়। সময়ের আবর্তনে এটি অভিজাত শ্রেণির শিল্প বিদ্যায় পরিণত হয়। হস্তশিল্পকে মুসলমানগণ অন্যান্য শিল্পকলার ন্যায় সমান গুরুত্ব দিতেন। 

২. ক্যালিগ্রাফী বা হস্তলিপির বিকাশ : ইসলামের প্রাথমিক হুগে ও আরবীয়দের নিজস্ব লিখনরীতি ছিল। তবে তার কোনো শিল্পসম্মত রূপ ছিল না। তাছাড়া ঐ সময় সমাজে এগুলোর তেমন কদরও ছিল না। কিন্তু আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি  শিল্প তার শিল্পমান লাভ করতে সক্ষম হয়। 

হস্তলিপির দুটি রীতি  ছিলা একটি স্মারকলিপি, অন্যটি টানালিপি। স্মারকলিপি বেদুইন | কবিদের নিকট সমধিক পরিচিত ছিল। এটি ভোজপাতা, তালপাতা, চামড়া প্রভৃতি নরম জিনিসের উপর লিখে জ্ঞানবিজ্ঞানের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সংরক্ষণ করা হতো। 

অন্যদিকে টানালিপির লিখনরীতিতে ব্যবহৃত হতো ধাতব পদার্থ, সমতল সাদা পাথর, কাঠ, উটের হাড় প্রভৃতি শক্ত জিনিস। আব্বাসীয় যুগে এসে এগুলো আরও বিকশিত হয়ে ওঠে।

৩. আব্বাসীয় শাসকদের অবদান : হস্তলিপি শিল্পের বিকাশে আব্বাসীয় শাসকদের অবদান ছিল অপরিসীম । বিশেষত খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে এ শিল্প ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করে। এছাড়া খলিফা আল মাহদী, হারুন রশীদ ও আমিন এ শিল্প বিকাশে বিশেষ অবদান রাখেন ।

৪. আব্বাসীয় শাসনামলে প্রখ্যাত হস্তলিপি বিশারদ : খলিফা আল মামুনের শাসনামলে আল-রায়হানী নামে একজন প্রখ্যাত লিপিকার ছিলেন। রাজদরবারের বিভিন্ন পত্রাবলির প্রথমে তিনি প্রচ্ছদ আঁকতেন। 

এমনকি বইপুস্তকের প্রথমে ও ক্যালিগ্রাফীর সৌন্দর্য ফুটে উঠতো। আব্বাসীয় উজির ইবনে মুকলার ও ক্যালিগ্রাফী শিল্পে ব্যাপক অবদান রাখেন

৫. আব্বাসীয় শাসনামলে বিভিন্ন ধরনের হস্তলিপি : আব্বাসীয় শাসনামলে নানা ধরনের হস্তলিপি রীতি প্রচলিত ছিল। যেমন :

(ক) মুকাল্লাহ্ রীতি : আব্বাসীয় শাসনামলে মন্ত্রী ছিলেন। ইবনে মুকাল্লাহ। তিনি একজন প্রথিতযশা হস্তলিপি শিল্পী। তাঁর ডান হাত কর্তিত ছিল। কিন্তু তিনি কর্তিত হাতের মধ্যভাগে কলম ধরে দ্রুত লিখতে পারতেন।

(খ) রায়হানী রীতি : আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে আল-রায়হানী নামক একজন শৌখিন হস্তলিপি বিশারদের আবির্ভাব ঘটে। তিনি আরবি লিখন পদ্ধতিতে এক নতুন রূপ দান করেন। এজন তার নামানুসারে রায়হানী শিল্পরীতির প্রচলন হয় ।

(গ) মুক্তা সিমী রীতি : সর্বশেষ আব্বাসীয় খলিফার রাজদরবারে লিপিকার আল-মুস্তাসিমী নসখ লিপিকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন ।

(ঘ) মুহাক্কাকী পদ্ধতি : ইবনুল বাউয়ার মুহাক্কাকী রীতির প্রচলন করেন। 

৬. হস্তলিপির মাধ্যমে পুস্তকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি : লিপি শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো সজ্জারীতি। এ লিপির মাধ্যমে পুস্তকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হতো। বর্ণসজ্জা, রূপসজ্জা ও পৃথক বা বাধাইয়ের কারণে গ্রন্থ অত্যন্ত আকর্ষণীয় রূপ লাভ করে। 

আব্বাসীয় শাসনামলের শেষভাগে পুস্তকের অঙ্গসজ্জার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । সেলজুক আমলে এগুলো আরও বিকশিত হয়।

৭. হস্তশিল্পীর প্রভাব : আব্বাসীয় শাসনামলে শিল্প, সাহিত্য ও কলার সমাদর বৃদ্ধি পায়। ফলে হস্তশিল্পীর সামাজিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় । সুলতানের রাজপ্রাসাদে তাদের জন্য সম্মানিত আসন বরাদ্দ ছিল। 

মিঞা খলিলুল্লাহ শাহ তার যুগের লিপিকারদের মধ্যে সবশ্রেষ্ঠ লিপিকারের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।তিনি ‘নু-রাস' (Nué-Ras) এর অনুলিপি প্রস্তুত করে সুলতান ইব্রাহীম আদিল শাহকে উপহার দেন। সুলতান তাঁকে ‘কলমের রাজা' উপাধি প্রদান করেন। 

তাঁর জন্য রাজদরবারের একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন রাখেন। এভাবে আব্বাসীয় যুগে হস্তলিপি শিল্প ও শিল্পীদের সামাজিক মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল অপরিসীম

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় শিল্পী ও কলাকুশলীগণ বিভিন্ন রীতি ও কৌশল উদ্ভাবন করে হস্তলিপি শিল্পের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। এজন্য আরব শিল্পের মধ্যে হস্তলিপি শিল্প এক সম্মানজনক আসন অলংকৃত করে রেখেছে। 

এমনকি বর্তমান আধুনিক বিশ্বে ও আব্বাসীয়দের ক্যালিগ্রাফী সৌন্দর্যচর্চার এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে সবার নিকট বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় শাসনামলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি মুল্যায়ন কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলে হস্তলিপি শিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ