আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ ।

আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ
আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ

আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ

উত্তর : ভূমিকা : খলিফা হারুনের মৃত্যুর পর তার নির্দেশ মতই আল আমিন বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করলেন এবং আল মামুন খোরাসানের প্রকৃত শাসক হয়ে বসলেন। মামুন তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা আল আমিনের অনুগত্য গ্রহণ করলেন। 

কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্ররোচনায় খলিফা আর আমিন তার ভ্রাতা মামুনের সাথে বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়। আর এ বিরূপ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়।

→ খলিফা আল আমিন ও আল মামুনের মাঝে সংঘটিত গৃহযুদ্ধের কারণসমূহ : আল আমিনের শাসনকাল গৃহযুদ্ধেই অতিবাহিত হয়। খলিফা আল আমিনের রাজত্বকাল আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে সংঘটিত হওয়া গৃহযুদ্ধের মাধ্যমেই কলুষিত হয়।

 আর আব্বাসীয় খিলাফতে সংঘটিত হওয়া এ গৃহযুদ্ধের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. চরিত্রগত পার্থক্য : খলিফা আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে চারিত্রিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তারা উভয়ই যদিও একই পরিবেশে শিক্ষা লাভ করেছে কিন্তু জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে ভিন্নতা দেখা যায়। 

মামুন ছিলেন সকল বিষয়ে পারদর্শী কিন্তু খলিফা আল আমিন আমোদ প্রিয় এবং চঞ্চল চরিত্রের অধিকারী হওয়ার কারণে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারেননি। 

ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উভয়ের চরিত্রে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যা গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার অন্যতম কারণ।

২. আরব-পারস্য দ্বন্দ্ব : খলিফা আল আমিনের শাননকালে আরব- পারস্য দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। কেননা, আল আমিন ছিলেন পিতা ও মাতার দিক থেকে আরব অপর দিকে আল মামুন ছিলেন, মাতার দিক থেকে পারসিক। 

ফলে পারসিকরা আল মামুনকে পুরো সমর্থন দিলে আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরো তীব্র আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় যে, খলিফা আল আমিনের রাজত্বকাল আরব বনাম পারস্য দ্বন্দ্বে পরিণত হয় ।

৩. ফজলের চক্রান্ত : খলিফা হারুন-অর রশীদ খোরাসানে বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন। এ সময় তিনি অসুস্ত হয়ে পড়লে সাথে নিয়ে আসা অর্থ ও সেনা আল আমিনের নামে নিয়ে উইল করে দেন, 

কিন্তু আল আমিনের রাজত্বকালে প্রাক্তন খলিফার উজিরে ফজল বিন রাবী ব্যক্তিগত স্বার্থে ঐ সকল সেনাদেরকে দুই বছরের অগ্রিম বেতন ও উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে খলিফা আল আমিনের অধীনে নিয়ে আসেন।

 ফজল এতে করে প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভে সক্ষম হন। আর আল আমিন ও আল মামুনের মাঝে দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করে ।

৪. আমিনের কুশাসন ও অমিতব্যয়িতা : খলিফা আল আমিন, রাজ্যের সকল দায়িত্ব তাঁর প্রধানমন্ত্রী ফজলের উপর অর্পণ করে নিজে বিলাসিতায় মগ্ন ছিলেন। তিনি রাজদরবারে প্রায়ই রাজ্যের সুন্দরী নর্তকী ও গায়িকাদের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। 

আর রাজদরবারে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি নর্তকী ও গায়িকাদের পিছনে প্রচুর অর্থ খরচ করেন। এভাবে বিলাসিতারয় খলিফা আল আমিন রাজদরবারের প্রচুর অর্থ খরচ করে ফেলেন।

৫. মামুনের সুশাসন ও জনপ্রিয়তায় আমিনের ঈর্ষা : খলিফা আল আমিনের রাজত্বকালে রাজ্যের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে ‘পড়ে। কিন্তু একই সময় আল মামুন তার রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। 

তিনি তার চরিত্র ও শাসনের মাধ্যমে রাজ্যে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন। ফলে খলিফা আল আমিন তার জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে আল মামুনের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করতে থাকেন।

৬. ফজলের স্বার্থপরতা : ফজলে বিন রাবী খোরাসারে সৈন্যবাহিনীকে খলিফার পক্ষে এনেই ক্ষান্ত হননি; বরং তিনি নিজ ক্ষমতাকে অব্যাহত রাখার জন্য তথা রাজ্যের ক্ষমতা নিজের অধীনে রাখার জন্য রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে আল মামুনের পরিবর্তে খলিফা আল আমিনের পুত্রকে মনোনীত করা পরামর্শ দেন। 

তাছাড়া আল আমিন মামুনকে বাগদাদে ডেকে পাঠালে তিনি আসতে অস্বীকৃতি জানালে খলিফা আল আমিন কুমন্ত্রণায় পড়ে আল মামুনকে অপসারণ করেন।

৭. চুক্তির শর্তভঙ্গ : খলিফা আল আমিন ফজল বিন রাবীর প্ররোচনায় তার উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীয় পুত্র মুসাকে মনোনীত করেন। এমনকি এর কিছুদিন পরেই তার আরেক পুত্রকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। 

এভাবে খলিফা আল আমিন তার পিতার চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন। এমনকি তিনি কাবাঘরে সংরক্ষিত প্রতিজ্ঞাপত্র এনে ছিড়ে ফেলেন। এসকল বিষয়কে কেন্দ্র করে খলিফা আল আমিন ও আল মামুনের মাঝে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল আমিন ও আল মামুনের মাঝে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পিছনে আল আমিনের চরিত্র ও কার্যাবলিকে দায়ী করা যায়। তাহাড়া তিনি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফজল বিন রাবীকে নিয়োগ দেন। 

যিনি সবসময় নিজ স্বার্থের জন্য খলিফা আল আমিনকে কুমন্ত্রণা দিতো এবং তার ভ্রাতা আল মামুনের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষিপ্ত করে তুলতো। এভাবে খলিফা আল আমিন নিজের ও অন্যের খারাপ কথা ও কার্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মামুনের বিরোধিতা শুরু করে। যা পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে রূপলাভ করে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ