বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ ।

বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ
বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ

বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খেলাফতে বার্মাকিদের উত্থান ইসলামের ইতিহাসে অন্যরকম একটি ঘটনা। আব্বাসীয়রা সুন্নি ছিল এবং বার্মাকিয়রা ছিল শিয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আব্বাসীয় আন্দোলন ও বংশ প্রতিষ্ঠায় এবং বিদ্রোহ দমন ও সুশাসন কায়েমে সবসময় দারুণ ভূমিকা পালন করেন। 

বার্মাকিয়দের সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ বলেন, প্রায় টানা সতেরো বছর বার্মাকি পরিবার, বিশ্বস্ততা ও অসাধারণ দক্ষতা দ্বারা আব্বাসীয়দেরকে সাহায্য করে থাকেন । নিম্নে তা প্রশ্নালোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১. বাৰ্মাকি : উমাইয়া বংশের পর আব্বাসীয় বংশ ক্ষমতায় আসে। আব্বাসীয় রাজবংশের সাথে বার্মাকিদের যোগসূত্র অনেক আগে থেকেই। এ যোগসূত্রের প্রথম পুরুষ হলেন খালিদ-বিন- বার্মাক । 

খালিদ একজন পারসিক ছিলেন। তার পরিবার বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। ৭০৫ খ্রি. উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের খিলাফতকালে সেনাপতি কুতায়বা কর্তৃক বলখ বিজয় করার সময় খালিদের মাতাকে যুদ্ধ বন্দিনী হিসেবে দামেস্কে আনা হয়। 

তিনি ছিলেন অত্যন্ত রূপবতী। বন্দি হওয়ার সময়েই তিনি ছিলেন সন্তানসম্ভবা। দামেস্কে আসার পর ভাই আব্দুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে থাকার সময় খালিদের জন্ম। তার প্রতিষ্ঠিত বংশই ইতিহাসে বার্মাকি হিসেবে খ্যাত।

২. বার্মাকিদের উত্থান : বার্মাকিদের উত্থানের হাতিখড়ি হয় খালিদের দ্বারাই । কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভূমিকা ছিল তার পুত্র ইয়াহইয়ার। ইয়াহইয়া ছিলেন অত্যন্ত সুদক্ষ, বুদ্ধিমান, চতুর ও কর্মপরায়ণ একজন ব্যক্তিত্ব। তার দক্ষতায় আকৃষ্ট হয়ে আব্বাসীয় খলিফা তাকে আর্মেনিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। 

তৃতীয় খলিফা আল মাহাদি ক্ষমতায় আসার পর ইয়াহইয়াকে তার পুত্র রশিদের গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। যুবরাজ হারুন আর রশিদ তার শিক্ষককে অনেক শ্রদ্ধা করতেন এবং তাকে পিতা ডাকতেন। 

আল মাহাদি তার উত্তরাধিকারী হিসেবে রশিদের পরিবর্তে জাফরকে মনোনয়ন করতে সচেষ্ট হলে হারুন তার প্রতিবাদ করেন। আর তাকে কারাবন্দি করেন। আল মাহদীর আকস্মিক মৃত্যুতে পরবর্তীতে হারুনকেই খলিফা বানানো হয় এবং খলিফা হারুন খালিদকে প্রধান উজির নিযুক্ত করলেন। এ থেকেই বার্মাকিদের উত্থান শুরু।

৩. ইয়াহইয়া শাসনকালে ফজলের কৃতিত্ব : ইয়াহইয়া যখন আব্বাসীয় খেলাফতের প্রধান উজির এবং শাসনের একচেটিয়া অধিকার লাভ করেন তখন তিনি আব্বাসীয় খেলাফতের সুনাম সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য মনোনিবেশ করেন। 

এক্ষেত্রে খলিফার মাতা ইয়াহইয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর খলিফা রাজকীয় সিলমোহর গ্রহণ করে ফজল বিন রাবির হাতে তা অর্পণ করেন।

৪. বার্মাকিদের বিকাশে ফজলের অবদান : ইয়াহইয়ার পর তার সুযোগ্য চার সন্তান ফজল, হাসর, মুসা ও মুহাম্মদ বার্মাকিদের পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসেন। 

বিশেষ করে ইয়াহইয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান ফজলের কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য হারুন প্রথমে তাকে খোরাসানের এবং পরে মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। 

দাইলামে আলী বংশীয় ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ফজল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাকে পরাজিত করে খ্যাতি লাভ করেন।

৫. ফজলের উজির পদ লাভ : ইয়াহইয়া যখন উজির পদ থেকে অবসর নেন তখন তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ফজলকে প্রধান উজিরের পদে বসান। ফজল তার ভাই মুসা, মুহাম্মদ ও জাফরকে নিয়ে আব্বাসীয়দের মর্যাদা বৃদ্ধিতে চেষ্টা চালিয়ে যান।

৬. জাফরের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ : ফজলের ছোট ভাই ইয়াহইয়ার দ্বিতীয় পুত্র জাফর বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে যোগ্যতার পরিচয় দেন। তিনি শুধু একজন দক্ষ শাসকই নয়, বরং তিনি একজন সমরনেতাও ছিলেন। 

তার পিতা বার্ধক্যবশত ইয়াহইয়া প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নিলে খলিফা জাফরকে তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন।

৭. বার্মাকিদের প্রভাব : বিশেষ করে আব্বাসীয় খলিফা- হারুন অর রশিদের সময়ে ইয়াহইয়া ও জাফরের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ এবং অন্যান্য বার্মাকিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠান বার্মাকিদের বিপুল ধন-সম্পদ, ক্ষমতা ও বিত্তের অধিকারী করে। 

তারা বাগদাদের পূর্বদিকে আল-ফাকরী নামক স্থানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে প্রায় রাজকীয় জাঁকজমক ও বিলাসিতার বসবাস করতেন। বার্মাকিদের দলে সাম্রাজ্যে অসংখ্য মাদ্রাসা, মসজিদ এবং প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, খাল, নালা ইত্যাদি নির্মিত হয়।

৮. বার্মাকিদের পতন : বার্মাকিরা আব্বাসীয় খিলাফতে অনেক ঊর্ধ্বে গমন করলেও কিছু কারণে তাদের পতন হয়। তা হলো :

(ক) শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব : আব্বাসীরা ছিলেন সুন্নি আর বার্মাকিরা ছিলেন শিয়া, সুন্নিদের সাথে শিয়াদের দ্বন্দ্ব মুসলিম সাম্রাজ্যের চিরন্তন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। 

তা সত্ত্বেও শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী বার্মাকিরা তাদের যোগ্যতার রাজদরবারে আসন করে নিয়েছিল, তা সত্ত্বেও শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী বার্মাকিরা তাদের যোগ্যতার রাজদরবারে আসন করে নিয়েছিল।

(খ) পারস্য প্রভাব : বার্মাকিরা প্রথমে বৌদ্ধাধর্মাবলম্বী ছিলেন। পরে ইসলাম গ্রহণ করলেও তারা আব্বাসীয় রাজ দরবারে পারস্য প্রভাবের আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদির প্রচলন করে। এতে মুসলমানরা ক্ষেপে যায়। এটা তাদের পতনের অন্যতম কারণ।

(গ) ষড়যন্ত্রের অভিযোগ : শেষের দিকে বার্মাকিরা আলী বংশীয় লোকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা শুরু করে। তারা বার্মাকি প্রধানমন্ত্রী জাফরের বাসভবনে গোপনে মিলিত হয়ে নানারকম গোপন আলোচনা করতেন। আর এ সফল ষড়যন্ত্রের জন্য খলিফা বার্মাকিদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে সচেষ্ট হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উত্থানের পরেই পতন। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, যে কোন বংশের উত্থান হলে পতনের স্বাদ তাদের গ্রহণ করতেই হয়। এটা চিরাচরিত নিয়ম। 

ঠিক এভাবেই উত্থান হয়েছিল বার্গাকিদের তারপর পরই আবার পতন। তবে আব্বাসীয় খিলাফতের উন্নতিতে বার্মাকিদের অবদান অস্বীকার করার মতো নয়, সাম্রাজ্যের সুনাম খ্যাতি তাদের ছিল অসামান্য কীর্তি।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বার্মাকিদের উত্থান সম্পর্কে যা জান লিখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ