খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | 

খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি
খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি

খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি

: ভূমিকা : আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাসে বিখ্যাত খলিফা হারুন-অর-রশীদের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে তারই দুইপুত্র আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ আব্বাসীয় শাসনামলের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ৮০৯ খ্রিস্টাব্দে পিতা হারুনের মনোনয়ন অনুযায়ী আল আমিন সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

এদিকে পূর্বাঞ্চলের অধিপতি আল মামুনও ভাইয়ের প্রতি সহৃদয় প্রকাশ করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে বিলাস-ব্যসনে মত্ত আমিন আমিরদের চক্রান্তে পড়ে মামুনের বিরুদ্ধে এমন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেন যা দুই ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধকে অবশম্ভাবী করে তোলে ।

→ আমিন ও মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণসমূহ : আমিন ও মামুনের মধ্যে যুদ্ধকে সংঘটিত গৃহযুদ্ধের জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী ছিল। নিম্নে এ সংঘষের মূল কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. হারুনের মনোনয়ন ও সাম্রাজ্য বিভাগ : খলিফা হারুন-অর- রশীদ একাধিক্রমে তার তিন পুত্রকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান এবং সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়ান্যের জন্য সাম্রাজ্য তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে দেন। প্রত্যেক উত্তরাধিকারীকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা দিয়ে প্রকারান্তরে তিনি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেন। যার পরিণতি আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধ।

২. আমিন ও মামুনের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য : আমিন ও মামুনের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য উত্তরাধিকার যুদ্ধের অন্যতম কারণ। আমিন ছিল চঞ্চল, আরামপ্রিম, অনভিজ্ঞ ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ। তিনি প্রজাদের সুখ-সাচ্ছন্দ্যের প্রতি ছিলেন উদাসীন। কেবল নিজের আরাম-আয়েশ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। 

অপরদিকে, মামুন ছিলেন শিক্ষা-দীক্ষায় পারদর্শী, ধীরস্থির সচ্চরিত্রের অধিকারী, কর্মঠ ও প্রজাহিতেষী নির্বুদ্ধিতার জন্য আমিন প্রজাসাধারণ থেকে দূরে সরে পড়তে থাকে। আর চারিত্রিক উৎকর্ষতার জন্য মামুনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এতে আমিন ক্রোধান্বিত হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন ।

৩. মামুনের নিকট পিতৃপ্রদত্ত সম্পদের দাবি : খোরাসান অভিযানকালে হারুনের নিকট যে অর্থ ও সৈন্য বাহিনী ছিল তা তিনি মামুনকে প্রদান করেছিলেন। এতে আমিন মনঃক্ষুণ্ণ হন এবং সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি পিতৃপ্রদত্ত সম্পদের হিসাব- নিকাস দাবি করে মামুনের নিকট এক পত্র লিখেন। এতে উভয়ের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়।

৪. আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব : খিলাফতের এ সময়ে আরব-পারসিক মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। একদিকে আমিন তার বংশগতির দিক থেকে ছিলেন পুরোপুরি আরব বংশোদ্ভূত, অন্যদিক মামুনের মাতা ছিলেন পারসিক মহিলা। 

সুতরাং সংগত কারণেই আরবরা আমিনের এবং পারসিকরা মামুনের পক্ষাবলম্বন করেন। এ জাতিগত দ্বন্দ্ব পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে ।

৫. আমিনের কুশাসনে সাম্রাজ্যের দুরবস্থা : খলিফা আমিন প্রধানমন্ত্রী ফজর-বিন রাবীর উপর শাসনভার ন্যস্ত করে অন্দরমহলে নৃত্য, সংগীত, দজলায় জলক্রীড়া এবং অরণ্যে মৃগয়ায় ব্যস্ত থাকতেন। ফলে ফজল-বিন-রাবীর কুশাসনে সাম্রাজ্য দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতে থাকে।

৬. মামুনের জনপ্রিয়তা : মামুন খুব জ্ঞানী ও কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। তার বিভিন্ন জনহিতৈষী কার্যে জনসাধারণ সন্তুষ্ট ছিল এবং দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। মামুনের এ জনপ্রিয়তা আমিনের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে ।

৭. ফজল ইবনে রাবীর চক্রান্ত : প্রাচ্যদেশে মামুনের সুশাসনে ঈর্ষান্বিত হয়ে উজির ফজল-বিন-রাবীর চক্রান্তে আমিন মামুনকে বাগদাদে ডেকে পাঠান। মামুন প্রাচ্যদেশ ত্যাগ করতে অস্বীকার করলে রাবীর চক্রান্তে তাকে পদচ্যুত করা হয়। এতে আমিন ও মামুনের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

৮. মামুনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ ও পুত্রদ্বয়কে হত্যার পরামর্শ : খলিফা আমিনের উজির ফজল-বিন-রাবী পিতা হারুন কর্তৃক মামুনকে প্রদত্ত ১,০০,০০০ দিরহাম ও তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং উজির ফজল রাজধানীতে অধ্যয়নরত মামুনের দু'পুত্রকে হত্যা করার পরামর্শ দেন। অবশ্য আমিন এতে কর্ণপাত করেননি। এ ষড়যন্ত্র ফাঁস হলে মামুনের মনেও ঈর্ষা সৃষ্টি হয়।

→ গৃহযুদ্ধের ঘটনা : বিভিন্ন কারণে ৮১১ খ্রিস্টাব্দে আমিন ও মামুনের মধ্যে গৃহযুদ্ধ অবশ্যম্ভবী হয়ে পড়ে। খলিফা আমিন আলী ইবনে ঈশার নেতৃত্বে মামুনকে মোকাবিলা করার জন্য ঐ বছর ৫০,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। 

মামুনও এ যুদ্ধের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত ছিল। যুদ্ধে মামুনের সেনাপতি তাহির-বিন-হুসাইন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করেন এবং এতে আমিনের সেনাপতি আলী ইবনে ঈশা পরাজিত ও নিহত হন। এরপরও আমিন কয়েকটি অভিযান প্রেরণ করেন কিন্তু প্রতিটি যুদ্ধেই আমিন পরাজিত হন। 

ফলে সমগ্র আরব ও ইরাক মামুনের অধিকারে আসে। পরবর্তীতে আমিন সেনাপতি হায়সামার নিকট আত্মসমর্পণ করেন । কতিপয় পারসিক উগ্রপন্থিদের হাতে আমিন নিহত হলে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

→ মামুনের সাফল্যের কারণসমূহ : বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমিনের বিরুদ্ধে মামুনের গৃহযুদ্ধে সফলতা লাভ করেন। নিম্নে মামুনের সাফল্যের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : আমিন ও মামুনের চরিত্রগত পার্থক্য যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেছিল। মামুনের চরিত্রে বিভিন্ন গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। অপরদিকে আমিনের চরিত্র ছিল নানারূপ দোষে পরিপূর্ণ। মামুনের সদগুণাবলিই তাহাকে জয়ের মালা পরিয়ে দিয়েছিল।

২. মামুনের যোগ্যতা : আমিন অপেক্ষা মামুন ছিলেন যোগ্য, কর্মঠ ও সুদক্ষ শাসক। তার উজির ফজল-বিন-সাহল এবং সেনাপতি তাহির-বিন-হুসাইন ছিলেন অত্যন্ত কুশলী ও সুদক্ষ যোদ্ধা । স্বীয় যোগ্যতা বলেই মামুন ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন ।

৩. গণসমর্থন : অন্যায়-অত্যাচারের জন্য আমিন জনপ্রিয়তা হারান। অপরদিকে, জনকল্যাণমূলক কাজ, সৎ ও নিষ্ঠার জন্য মামুনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এ গণসমর্থনও মামুনের সাফল্যের একটি অন্যতম কারণ।

৪. মাওয়ালি শক্তির প্রাধান্য : আরবীয় ও পারসিক জাতিগত দ্বন্দ্ব, গৃহযুদ্ধের একটি কারণ ছিল। এ জাতিগত পারসিক বা মাওয়ালিরা শক্তিশালী ছিল। মামুনের বিজয়ের কারণ হিসেবে এ শক্তিও কাজ করেছিল ।

৫. আমিনের কর্মচারী ও সেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতকতা : আমিনের প্রতি সেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতক এবং আমিনের পতনের পূর্বে ক্ষমতালিপ্সু ফজল-বিন-রাবীর পলায়ন আমিনের পতন ত্বরান্বিত করে ।

৬. আমিনের অদূরদর্শিতা : মামুনের জয়লাভের অন্যতম কারণ ছিল আমিনের অদূরদর্শিতা। আমিন রাজধানীর শাসনভার পরিচালনা করলেও তিনি ছিলেন অকর্মণ্য, অদূরদর্শী ও আরামপ্রিয়। তিনি দূরদর্শিতার সাথে মামুনের মোকাবিলা করতে সক্ষম হননি ।

৭. আমিনের দুর্বল সেনাবাহিনী : হারুনের সাম্রাজ্য তিন অংশে বিভক্ত হওয়ায় আমিন বাগদাদের শাসন ভার গ্রহণ করা সত্ত্বেও তার সামরিক ক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। তাছাড়া সেনাপতি আলী ইবনে ঈশা ছিলেন তুলনামূলক অদক্ষ ।

৮. মামুনের সুদক্ষ সেনাপতি : মামুনের সেনাপতি তাহির-বিন- হুনাইন হারসামা এবং জুহাইর ছিলেন সুদক্ষ সমরকুশলী। তাদের বীবত্বপূর্ণ অভিযানে বাগদাদ অবরুদ্ধ ও সহজেই অধিকৃত হয় ।

৯. মামুনের সমরকুশলতা : মামুন ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও সমরকুশলী। তিনি কুশলের আশ্রয় নিয়ে প্রথমে পূর্বাঞ্চল, তারপর উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল দখল করে শেষে রাজধানী বাগদাদ অবরোধ করে সহজেই জয় করতে সক্ষম হন।

১০. আমিনের বিলাসিতা : আমিন ছিলেন বিলাসপ্রিয় লোক । তিনি কবিতা আবৃত্তি শুনে ইব্রাহিম ইবনে আল মাহদীকে ৩ লক্ষ দিনার উপহার দেন। আমিনের বিলাসিতা ও অমিতব্যয়িতা তার রাজত্বের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছিল। যার মধ্যে তার পরাজয়ের কারণ নিহিত ছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আমিন ও মামুনের মধ্যকার গৃহযুদ্ধ ইসলামের ইতিহাস তথা আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা ও রাজ্যের অমাত্যবর্গের চক্রান্তই আমিন ও মামুনের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মূল কারণ। 

মামুন ছিলেন অপেক্ষাকৃত বিচক্ষণ, প্রজারঞ্জক, সমরকুশলী। আর এ অনন্য গুণাবলিই তার সাফল্য নিশ্চিত করে। তবে এ গৃহযুদ্ধ আব্বাসীয় খিলাফতের ভিতকে বহুলাংশে দুর্বল করে দেয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা আল আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের বর্ণনা দাও | মামুনের সাফল্যের কারণ কি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ