বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা কর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা কর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

  • মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা কর 
  • অথবা, '৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নেই পাকিস্তানের স্বপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি ঘোষণা করে। তারা গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি তারা দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের অখণ্ডতার নামে স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা অগণতান্ত্রিক শক্তির স্বপক্ষে। 

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন-কিসিঞ্জার নিয়ন্ত্রিত মার্কিন নীতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পরিচালিত হয়।

→ মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

১. মৌন ভূমিকা গ্রহণ : ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাত থেকে শুরু করে ১০ জুলাই ১৯৭১ সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে না জড়িয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। 

১০ জুলাই থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের শেষ দিক পর্যন্ত সময়কালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে পাকিস্তানের সহায়তায় চীন সফর করেন। 

ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী চুক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। 

এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করে এবং ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায় ।

২. নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ : প্রথম পর্যায়ে মার্কিন নীতির প্রকৃতি ছিল কৌশলগত নিরপেক্ষতা। এ সময় মার্কিন সরকার বাংলাদেশ সমস্যাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে অভিহিত করে। 

কিন্তু গোপনে পাকিস্তানের জন্য সমরাস্ত্র সরবরাহ ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে জনতার চাপে এ উদ্যোগ বাতিল হয়। কিন্তু অস্ত্র সাহায্য বন্ধ থাকলেও গোপনে প্রচুর মার্কিন অস্ত্র পাকিস্তানে আসে। 

জুনের শেষ নাগাদ মার্কিন সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের যে ৪.৩ মিলিয়ন ডলারের দুটি অর্থ চুক্তি হয়েছিল তা বাঙালি হত্যাযজ্ঞে ব্যবহৃত হয়। তবে এসময় মার্কিন সরকার ভারতের শরণার্থীদের জন্য ভারতকে ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার সাহায্য দেয়। 

এ যেন ‘চোরকে চুরি করতে বলা আর বাড়ির মালিককে সাবধানে থাকার' মতোই প্রহসনমূলক ভূমিকা গ্রহণ করার সামিল।

৩. কূটনৈতিক তৎপরতা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন নীতির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় জুলাই মাসে। এ পর্যায়ে মার্কিন নীতির দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, 

(১) রাশিয়াকে প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে স্বীকৃতি এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এ উদ্দেশ্যে হেনরি কিসিঞ্জার বেইজিং সফর করে। 

(২) যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা হয়েছিল যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জুলাই মাসে রুশ-ভারত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। তাই এ পরিকল্পনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র তৎপর হয়। 

দ্বিতীয় পর্যায়ে পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের অধীনে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এবং যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া ।

৪. পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি গ্রহণ : মার্কিন নীতির তৃতীয় পর্যায় নিক্সন প্রশাসন আরও বেশি পাকিস্তানপন্থি নীতি অবলম্বন করে। কলকাতায় অবস্থানকারী বাঙালি নেতৃবৃন্দের একাংশের সঙ্গে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে। 

এছাড়াও পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের জন্য চাপ দেয়। যদিও মুজিবনগর ও ভারত উভয় সরকার মার্কিন এ উদ্যোগের প্রত্যাখ্যান করে। 

এমনকি ৫-৮ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ওয়াশিংটন সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানপন্থি নীতি থেকে সরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। ফলে একটি যুদ্ধ যে অনিবার্য তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

৫. পাকিস্তানকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান : মার্কিন নীতির চতুর্থ পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। 

পাকিস্তানকে যাবতীয় নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থনদানের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন হেনরি কিসিঞ্জারকে নির্দেশ দেন। নিক্সনের এ নীতিকে 'Tilt Polices' নামে অভিহিত করা হয়েছে। 

৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য ৮৬.৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই সাথে পাকিস্তান সমর্থন প্রত্যক্ষ রূপ ধারণ করে।

৬. জাতিসংঘে বাংলাদেশ বিরোধিতা : ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ ভারতকে প্রথম আক্রমণকারী বলে উল্লেখ করেন। 

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহূত অধিবেশনে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সংবলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। 

নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা, ভারত-পাকিস্তানের সৈন্য স্বস্ব সীমান্তের ভেতরে ফিরিয়ে নেয়া এবং সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করে। 

সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাবকে একতরফা বলে অভিহিত করেন। যুদ্ধ বিরতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ৪ ও ১২ ডিসেম্বর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় মার্কিন যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ভেটোর কারণে তা নাকচ হয়।

৭. বাংলাদেশের বিপক্ষে নৌবহর প্রেরণ : জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহার করা যাচ্ছে না দেখে যুক্তরাষ্ট্র তখন নৌ কূটনীতির আশ্রয় নেয়। 

তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে আনতে বাধ্য করা, পাকিস্তানকে রক্ষা করা, মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করা, ৯ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন ইউ এস এস এন্টারপ্রাইজকে বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন করে। 

এন্টারপ্রাইজ ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর গন্তব্যে পৌছায়। অবশ্য সোভিয়েত রাশিয়ার তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি টাস্ক ফোর্স - ৭৪ ভারত মহাসাগর ত্যাগ করে ।

৮. বেসরকারি পর্যায়ে ভূমিকা : নিক্সন প্রশাসন বাংলাদেশের = মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও মার্কিন । সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় সর্বস্তরের মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা - পালন করেছিল। 

মার্কিন শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা নানাভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। আমেরিকার নাগরিকরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গঠন করে বিভিন্ন সংগঠন। 

সুতরাং দেখা যায় মার্কিন সরকারি পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা হলেও বেসরকারি পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ছিল ব্যাপক সহানুভূতি ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানের দুটি অংশের বিরোধ ও বৈষম্যের ফসল নয়; এর সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ওতেপ্রোতভাবে জড়িত। 

আর এই বিশ্ব রাজনীতির ঘেরাটোপে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আবদ্ধ ছিল। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে পাকিস্তানকে সহায়তা প্রদান করে তখন একই সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান করে। 

তবে বৈরী ভূমিকা যতটা না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটেছিল তার চেয়ে বেশি ছিল জাতীয় স্বার্থ রক্ষাকে কেন্দ্র করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এ নীতির বাইরে যেতে পারেনি যে কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধে বৈরী ভূমিকা গ্রহণ করে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ