বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইয়া শাসনে সংস্কৃতি পরিবর্তন বিষয়ে লিখ।

বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা কর
বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা কর

বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আলোচনা কর

  • অথবা, বুয়াইয়া শাসনে সংস্কৃতি পরিবর্তন বিষয়ে লিখ। 
  • অথবা, বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক অবস্থার বিবরণ দাও। 
  • অথবা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামল ছিল মুসলিম সভ্যতার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। স্থাপত্যশিল্প, সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানে এ যুগ ছিল অনন্য। আর আব্বাসীয় যুগের এই গৌরবের এক গর্বিত অংশীদার ছিলেন বুয়াইয়া সুলতানগণ । 

বুয়াইয়া সুলতানগণ শিক্ষা সংস্কৃতির উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের শাসনামলে সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক বিশাল অগ্রগতি সাধিত হয়। অনেক কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, চিকিৎসা ও গণিতবিদ বুয়াইয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন।

— বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক অবদান : বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক অবদান সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অবদান : বুয়াইয়া শাসকদের দুজন উজির ইবনুল আমাদ ও ইবন আব্বাস ঐ সময়ের আরবি ভাষার বিশেষ পণ্ডিত ছিলেন। বুয়াইয়াদের তত্ত্বাবধানে আবুল ফরাজ ইস্পাহানী তার প্রখ্যাত গ্রন্থ 'আল আগানী' সংকলন করেন। 

এটি ছিল একটি সংগীত গ্রন্থ। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক আন-নাদিম তার 'ফি হরিসত' রচনা করেন। এটি আরবি সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।

২. ইতিহাসশাস্ত্রে অবদান : ইতিহাসে বুয়াইয়াদের অবদান অসামান্য। এই যুগের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন আবু ইসহাক । তিনি অনেক ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন। 

এছাড়া ইবনে মিসওয়াকাহ ও ঐ যুগের একজন প্রথিতযথা ঐতিহাসিক ছিলেন। তিনি 'তাজরীবুল উম্মাহ'-এর লেখক ছিলেন।

৩. লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা : বুয়াইয়া আমলে অনেক লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। জ্ঞানার্জন এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। বিশেষত শিরাজ, রায় ও ইস্পাহানে যেসব লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে ।

৪. জ্যোতির্বিদ্যায় ভূমিকা : বুয়াইয়া শাসকগণ জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এ সময় রাজপ্রাসাদে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় ।

৫. অনুবাদ সাহিত্য : বুয়াইয়াদের তত্ত্বাবধায়নে অনেক গ্রন্থের অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। জ্ঞানার্জনে তাদের আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী। 

অনুবাদকর্মে যারা আত্মনিয়োগ করেছিলেন তাদের মধ্যে ইবনুল আমাদ ছিলেন অন্যতম। এছাড়াও ইবনুল আব্বাস একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অনেক অনুবাদকর্ম রেখে গেছেন।

৬. গণিতে অবদান : বুয়াইয়া শাসকগণ গণিত ও জ্যামিতিবিদ্যায় বিরাট অবদান রাখেন। আবুল কাসিম আল আনতাকী ছিলেন এই যুগের প্রথিতযথা গণিতবিদ। তিনি ইউক্লিডের ব্যাখ্যা সংকলিত একটি বই রচনা করেন। 

পাটিগণিতের উপরও তাঁর অবদান ছিল অনবদ্য। এছাড়। সাবুল ওয়াফা আল বুয়জানী, আবু নাসর আল- কালাওয়াদানী গণিতশাস্ত্রে বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন।

৭. নাসখী রীতির প্রবর্তন : বর্তমানে প্রচলিত লেখার রীতি হচ্ছে নাসখী রীতি। এই রীতির উদ্ভাবক ছিলেন; ইবনুল বাওয়ার। তিনি ছিলেন বুয়াইয়া শাসকদের অধীনে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

৮. ফারসি সাহিত্যে অবদান : বুয়াইয়া শাসকগণ ও তাদের মন্ত্রিবর্গ আরবি সাহিত্যে বিরাট অবদান রাখেন। পাশাপাশি তারা ফারসি সাহিত্যের বিকাশেও ভূমিকা রাখেন। বিশেষ বুয়াইয়া শাসনামলের শেষদিকের শাসকদের ফারসি সাহিত্যের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল।

৯. চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান : বুয়াইয়া শাসনকাল ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য এক স্বর্ণযুগ। অনেক প্রথিতযথা চিকিৎসাবিজ্ঞানী এ যুগে চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান রাখেন। 

আজম- উদ-দৌলায় আমলে হাসপাতালের পার্শ্বে একটি বিশাল Medical * School প্রতিষ্ঠিত হয়। আলী ইবনে আল আব্বাস ছিলেন এই যুগের বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ।

১০. শিক্ষার প্রসার : বুয়াইয়া শাসনগণ শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক অবদান রাখেন। বড় বড় মাদ্রাসা, মক্তব গড়ে ওঠে, বুয়াইয়া শাসক বাহা-আদ-দৌলা সাবুরের পৃষ্ঠপোষকতায় ৯৯৩ সালে “দারুল ইলম” নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় ।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল্লাহ কবির বলেন- "The academy of saber became a rendezvous for men engaged in literary pursuits."

১১. ব্যাকরণশাস্ত্রে অবদান : ব্যাকরণশাস্ত্রে বুয়াইয়া সুলতানদের অবদান ছিল অসামান্য। বিশেষ আরবি ব্যাকরণে তাদের ভূমিকা সাহিত্যই প্রশংসনীয় ঐ সময় ব্যাকরণ বিষয়ে অনেক বই প্রকাশ পায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো কিতাব আল হুজ্জা ফিল-কিরাত আল সাব'।

১২. মার্জিত বিনোদন : বুয়াইয়া যুগে মল্লযুদ্ধ, কবিতা রচনা ইত্যাদি ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে তাদের প্রতিভাও প্রকাশিত হতো ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুয়াইয়া শাসনামল ছিল মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অনন্য ধারক ও বাহক। মুসলিম সংস্কৃতির কিাশে বুয়াইয়া সুলতানদের অবদান ছিল অপরিসীম। 

ইতিহাস, জ্যোতির্বিদা, সাহিত্য, গণিতশাস্ত্র প্রভৃতিতে ব্রাপক অগ্রগতির ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। যায় ফলে বুয়াইয়া যুগ এখনো মুসলিম সংস্কৃতির এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বুয়াইয়াদের সাংস্কৃতিক অবস্থার বিবরণ দাও

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ