ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল।

ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

ক্রুসেড শব্দের অর্থ কি | ক্রুসেড যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের ইতিহাসে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে সংঘটিত যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে ক্রুসেড ছিল ব্যাপক তাৎপর্যবহ। ধর্মের নামে বহু খ্রিস্টান যুবকদের বর্মে ক্রুশ চিহ্ন ধারণ করে এই ঘৃণ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে প্ররোচিত করা হয়েছিল। 

মূলত এটা ছিল আফ্রিকা এবং এশিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের বহু দিনের বিদ্বেষ ও কলহের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

ক্রুসেড : ক্রুসেড বলতে বুঝায় একটি ধর্ম যুদ্ধকে। মুসলমানদের কাছ থেকে যীশুখ্রিস্টের পবিত্র জন্মভূমি জেরুজালেম উদ্ধার করার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টান জগৎ মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রায় দুইশত বছর ধরে (১০৯৫-১২৯৫) যে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তাকে বুঝায়। 

খ্রিস্টানরা ধর্মের নামে এই যুদ্ধ করেছিল বলে একে ধর্মযুদ্ধও বলা হয়। মূলত খ্রিস্টান যোদ্ধারা তাদের বুকের উপর লাল ক্রুশ চিহ্ন ধারণ করে বলে এই যুদ্ধের নাম ক্রুসেড করা হয়।

→ ক্রুসেডের কারণ : ক্রুসেডের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. ধর্মীয় কারণ : মহানবি (সা.)-এর মিরাজে গমনের স্থান এবং মুসা ও হজরত দাউদের স্মৃতি বিজড়িত জেরুজালেম ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কাজেই যীশুখ্রিস্টের জন্মভূমি মুসলমানদের করতোলগত হলে খ্রিস্টান জগত অত্যন্ত মনক্ষুণ্ণ হয়।

২. আধিপত্য বিস্তারের সংগ্রাম : ইউরোপে খ্রিস্টানরা শুধু জেরুজালেমের উপর নয় তারা এটি দখলের মাধ্যমে সমগ্র প্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারের জন্য মনস্থির করেছিল। ফলশ্রুতিতে তারা এই যুদ্ধ সংঘটিত করেছিল।

৩. বাণিজ্যিক কারণ : ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল বাণিজ্যিক। ইউরোপের খ্রিস্টানরা ভূমধ্যসাগরে বাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইতালির ভেনিস, পিসা ও জেনোয়ার বণিকদের আর্থিক সহায়তায় ক্রুসেডে অবতীর্ণ হয়।

৪. খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের মিথ্যাচার : সেলজুক সুলতানদের আমলে জেরুজালেমে যে সকল তীর্থযাত্রীরা গমন করতো, তারা পথিমধ্যে দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হতো এবং তারা দেশে ফিরে সেলজুক সুলানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার রটাতো। ফলে ক্রুসেড ত্বরান্বিত হয়।

৫. ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিমের প্রতি ক্ষোভ : ১০০৯ সালে মিশরের ফাতেমীয় খলিফা আল হাকিম জেরুজালেমের পবিত্র গির্জা ধ্বংস সাধন করলে ইউরোপের খ্রিস্টানরা অত্যন্ত বিচলিত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা মুসলমানদের হাত থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য দৃঢ় সংকল্প করে। ফলে ক্রুসেডের সূত্রপাত হয় ।

৬. পার্থিব সুখের আশা : ইউরোপের ধর্মযাজক সম্প্রদায় প্রকাশ করেন যে, যতক্ষণ ইউরোপের যোদ্ধারা ক্রুশ চিহ্ন ধারণ করবে ততক্ষণ তাদেরকে কর এবং ঋণের মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হবে। উপরন্তু ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা পাপ থেকে মুক্তি লাভ করে স্বর্গ লাভ করবে।

৭. পোপের আহ্বান : ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান এক সম্মেলনে ইউরোপের খ্রিস্টান সমাজ এবং রাজন্যবর্গকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যোগদানের আহ্বান জানায় তিনি ঘোষণা করেন যে, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তা অবশ্যই স্বর্গ লাভ করবে। 

তার এই উত্তেজনাকর আহ্বানে ইউরোপে ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । ফলে ১০৯৫ সালে ১,৫০,০০০ খ্রিস্টান সৈন্য কনস্টানটিনোপলে সমবেত হলে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সূচনা হয় ।] 

ক্রুসেডের ফলাফল : মূলত জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য ক্রুসেড শুরু হলেও তা সফল হয়নি। এতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। নিম্নে ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. রাজনৈতিক ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে সামন্তপ্রথার ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। বহু জমিদার ক্রুসেডের অর্থ সংগ্রহের জন্য তাদের জমি এমনকি শহরগুলোর স্বত্ব বিক্রি করে দেয়। ফলে সমগ্র ইউরোপে সামন্ত প্রভু শ্রেণি ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

২. ধর্মীয় ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে ইউরোপবাসীর ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়। পোপ ও তার সহযোগীদের কার্যকলাপ নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়। ফলে সমগ্র ইউরোপ পোপের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।

৩. বাণিজ্যিক ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে ইউরোপবাসী মুসলমানদের নিকট থেকে মেরিনার্স কম্পাসের ব্যবহার সুগন্ধিদ্রব্য, মসলা, উন্নতমানের কৃষি পদ্ধতি ও শিল্পজাত দ্রব্যাদি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে এবং স্বদেশে ফিরে তারা প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে ।

৪. সাংস্কৃতিক ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে যে সামরিক সংঘর্ষ হয় তার মাধ্যমে ইউরোপের দেশসমূহ প্রাচ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। তার প্রাচ্যের বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় লাভ করে ।

৫. রেনেসাঁর সূত্রপাত : ক্রুসেডের ফলে ইউরোপে রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। টয়েনবি বলেন, “ক্রুসেডের ফলে আধুনিক ইউরোপের জন্ম হয়।" মুসলমানদের উন্নত ভাবধারার সাথে পরিচয় না হলে ইউরোপে নব যুগের সূচনা হতো কিনা সন্দেহ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইউরোপের খ্রিস্টানরা জেরুজালেম উদ্ধার অপেক্ষা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। কাজেই মুসলমানদের নিকট এটি ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। এই যুদ্ধে গাজী সালাউদ্দিন ও তার উত্তরসূরীরা যে ভূমিকা পালন করেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  ক্রুসেডের পরিচয় দাও। এর কারণ কি ছিল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ক্রুসেডের পরিচয় দাও। এর কারণ কি ছিল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ