ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর ।

ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর
ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর

ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : পবিত্র ভূমি জেরুজালেম রক্ষার জন্য মুসলমানদের মাঝে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে তাই ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত। মুসলমানদের প্রতি খ্রিস্টানদের হিংসা বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ যুদ্ধের মাধ্যমে। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় দুইশত বছর স্থায়ী ছিল এ যুদ্ধ। 

জেরুজালেমের পবিত্র ভূমি রক্ষার জন্য মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে বারবার এ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে এবং মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এ যুদ্ধের পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনেকগুলো কারণ রয়েছে যার মাঝে ধর্মীয় কারণ মুখ্য । ক্রুসেডের গুরুত্ব বা ফলাফল সুদূরপ্রসারী।

→ ক্রুসেডের ফলাফল : নিয়ে ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করা হলো। 

১. ধর্মীয় ফলাফল : ক্রুসেডের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও মূল কারণ ছিল ধর্ম। ধর্মীয় ফলাফলগুলোর মধ্যে রয়েছে।

(ক) পেপের প্রতি আস্থা হ্রাস : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে পোপ ও ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা বহুল পরিমাণে হ্রাস পায় ।

(খ) ধর্মীয় বিদ্বেষ : ক্রুসেডের ফলে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে ধর্মীয় বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়, যা আজো শেষ হয়নি।

(গ) রোমান চার্চ : ক্রুসেডের ফলে রোমান চার্চের প্রতিপত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় ।

(ঘ) চার্চবিরোধী মনোভাব : রোমানদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ মানুষের মাঝে চার্চবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পায়, কারণ সাধারণ মানুষ পোপের এ যুদ্ধকে মানবতাবিরোধী বলে মনে করতো ।

২. রাজনৈতিক ফলাফল : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে ইউরোপের সামন্তপ্রথা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দুইশত বছর ব্যাপী ধর্মযুদ্ধের ব্যায় নির্বাহ করতে গিয়ে ইউরোপের নাইট ও ব্যারনগণ তাদের ধন সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপে সামন্তপ্রভুদের শক্তি লোপ পায়। তারা রাজনৈতিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

৩. সামাজিক ফলাফল ফলাফলগুলো হলো : 

(ক) সামন্ত প্রথার ভাঙন : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে সামন্তপ্রভুদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এতে তাদের অনেক ধন-সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। ধারাবাহিকভাবে সামস্তপ্রথা দুর্বল হয়ে যায়। তাদের অবসানে মধ্যযুগের অবতারণা ঘটে।

(খ) রেনেসাঁ বা নবজাগরণ : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে বাইজান্টাইনদের পরিবর্তে যুদ্ধে বা ক্রুসেডে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী পশ্চিম ইউরোপের ফ্রান্স ইউরোপীয় শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

৪. অর্থনৈতিক ফলাফল : এ যুদ্ধ ছিল ধর্মী উন্মাদনা,  ধর্মান্ধতা, অর্থহীন ও ব্যাপক ধ্বংসলীলার প্রতীক। নিম্নে এর অর্থনৈতিক ফলাফলগুলো আলোচনা করা হলো :

(ক) বাণিজ্যক্ষেত্র : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে প্রাচ্য প্রতীচ্যের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মাধ্যমে প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ইউরোপের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা পরবর্তীতে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো গতিশীল করে দেয়।

(খ) জাহাজ নির্মাণ : ক্রুসেডের মাধ্যমে উভয় অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা সুযোগ বৃদ্ধির জন্য অনেক জাহাজ নির্মাণ করতে হয়। এ ছাড়া ঐ সময় তীর্থযাত্রী বহন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়ায়। যা তাদের জাহাজ বা এ জাতীয় বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে দেয়।

(গ) যোগাযোগ বৃদ্ধি : উভয় অঞ্চলের মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি পায়, যার কারণে তাদের জাহাজ বা এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করতে জাহাজ নির্মাতাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করে তোলে।

(ঘ) নাইট ও ব্যারনদের ক্ষতি : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ছিল ব্যাপক ধ্বংসলীলার প্রতীক। এ যুদ্ধের ফলে ইউরোপের নাইট ও ব্যারনগণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। তারা তাদের ধন-সম্পত্তি বন্ধক বা বিক্রি করতে বাধ্য হন।

৫. সাংস্কৃতিক ফলাফল : এই যুদ্ধের ফলে পাশ্চাত্য দেশগুলো প্রাচ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। ফলে উভয়ের ধর্মপ্রচার ও সাংস্কৃতিক প্রসারতা লাভ করে।

৬. সামরিক ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে পশ্চিম ইউরোপ সামরিক কলাকৌশল উন্নত করার প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজন যেসব দুর্গ নির্মাণ করেছিল তা ইউরোপের সমর বিজ্ঞানে প্রভাব ফেলে, এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কলাকৌশল, যুদ্ধের নিয়মকানুন ইউরোপের সমর বিজ্ঞানে প্রভাব ফেলে।

৭. শিক্ষা ক্ষেত্রে : শিক্ষা ক্ষেত্রেও ক্রুসেড প্রভাব বিস্তার করে। প্রাচ্যের উন্নত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে সাথে ইউরোপ দারুণভাবে এগিয়ে চলে। যা তাদের আধুনিকতার রূপ দিতে সহায়তা করে। ঐতিহাসিক টয়েনবি যথার্থ বলেছেন, ক্রুসেডের ফলে আধুনিক ইউরোপ জন্মলাভ করেছে।

৮. কৃষিক্ষেত্রে : ক্রুসেড ইউরোপের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এ যুদ্ধের ফলে প্রাচ্যের বিভিন্ন ফলমূল ইউরোপে প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে এগুলো ব্যবহার তৈরিতে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে তাল, লেবু, চিনি, তরমুজ ইত্যাদি ।

৯. উভয় অঞ্চলের ব্যবধান :  ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক ধারার বিনিময় ঘটে। এছাড়া পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ভাবধারা মুসলিম সংস্কৃতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এটি মুসলমান ও খ্রিস্টানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হলেও বারবার আক্রমণে মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। 

অসংখ্য মুসলমানের প্রাণহানি ঘটেছে। এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি যুদ্ধের প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মাঝে ধর্মীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রভাবিত করে। এ যুদ্ধ সম্পর্কে M. Ahsanullah যথার্থতা বলেছেন, 

It is Struaknaked Picture of bigotry and religious intolerance and it may will be regarded as a deep disgrace upon the history of the world (History of the Islamic world new Delahit 1986-page-82.)

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ক্রুসেডের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ