মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর ।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর

  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণ আলোচনা কর । 
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় এবং পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ কি ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছিল- যা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭১ সালে। 

৭১-এর ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর আক্রমণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যুদ্ধে দুটি পক্ষ নিজ নিজ শক্তিমত্তা নিয়ে অগ্রসর হয়। যুদ্ধে একপক্ষ শক্তিশালী ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। 

অপর পক্ষে অস্ত্র নেই আছে লড়াকু মানসিকতা। এই দুই অসম প্রতিদ্বন্ধীর মধ্যে নয়মাস ধরে যুদ্ধ চলে এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পরাজিত করে যুদ্ধে জয়লাভ করে। 

তুলনামূলক ছোট প্রতিপক্ষ হওয়া সত্বেও বাংলাদেশ এ যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। তবে বাংলাদেশের এ বিজয়ের পিছনে বেশ কিছু উপাদান সক্রিয় ছিল। যার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ বিজয়ী হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

→ ৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণ : ৭১ এর যুদ্ধের সূচনাতে বাঙালি ও পাকবাহিনীর শক্তিমত্তার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান থাকলেও যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এ ব্যবধান তেমন একটা ছিল না। 

ফলে বাঙালিরা বিজয় লাভ করতে সমর্থ্য হয়। নিম্নে ৭১ এর যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণ আলোচনা করা হলো :

১. ভৌগোলিক অবস্থা : পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব প্রায় ১০০০ মাইল। তিনদিকে শত্রুভাবাপন্ন ভারতীয় রাষ্ট্রসীমা দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান পরিবেষ্টিত। 

পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। যেখানে সহজেই ভারতীয় নৌবাহিনী প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। শুধু দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে বার্মার দিকে একটি ছোট মুখ খোলা আছে। এই অগ্রমুখ বরাবর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। 

এ অঞ্চলে কোনো সামরিক অপারেশন সম্ভব নয়। উপরন্তু রয়েছে বিপুল জলপথ। এছাড়া দক্ষিণ পশ্চিমে সুন্দরবন। 

বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদনদী পাকিস্তান বাহিনীর জন্য ছিল ত্রাস স্বরূপ। এরূপ ভৌগোলিক অবস্থা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। 

ফলে শুষ্ক পাকিস্তান অঞ্চলের লোকদের জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি এর মতো হয়েছিল। ফলে যুদ্ধে পাকিস্তান ভৌগোলিকভাবে পিছিয়ে ছিল ।

২. জলবায়ুগত কারণ : বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জলবায়ুর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে ৬টি ঋতু বিরাজমান এবং একেক ঋতু একেক ধরনের আবহাওয়া জলবায়ুর সমষ্টি। 

মে-সেপ্টেম্বর সাধারণতঃ বর্ষাকাল। মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত সৈন্য ও সমর সরঞ্জাম চলাচল প্রায় অসম্ভব। ফলে এসময় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের নৈতিক মনোবল ও কায়িক শক্তির ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। 

অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনীর নিজ ভূখণ্ড থেকে অভিযান করে আবার ফিরে যাওয়ার সুবিধা ছিল। এ অবস্থায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়পক্ষ মধ্য নভেম্বর অর্থাৎ শীত মৌসুমকে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য বেছে নেয়। 

বাংলাদেশের শীতল আবহাওয়া ভারতীয় বাহিনীর জন্য সুবিধাজনক হলেও পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য সুখকর ছিল না। 

কার্যত পাকিস্তানি বাহিনী জলবায়ুগত কারণে অভিযান পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় এবং পরাজয় ডেকে আনে । অর্থাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ু বাংলাদেশের বিজয়ের পিছনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।

৩. বিপুল সৈন্য সংখ্যা : ৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তান বাংলাদেশে ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্য নিয়োজিত করেছিল। অপরপক্ষে বাংলাদেশের ছিল ৭ কোটি মানুষ যাদের মধ্যে কিছু আবার সামরিক বাহিনীর সদস্য। 

বাকিরা সাধারণ নাগরিক হলেও যুদ্ধে পরোক্ষভাবে নিয়োজিত ছিল। তাছাড়া যুদ্ধে ভারত নিয়োজিত করে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার সৈন্য। 

বাংলাদেশের ছিল ১ লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও এর চেয়ে বেশি স্বেচ্ছাসেবক। ভারতের ৮ ডিভিশন, তিন ব্রিগেডের বিপরীতে পাকিস্তানের ছিল ডিভিশন ও ১টি ব্রিগেড। 

এরূপ বিপুল সংখ্যক সৈন্যের সমাবেশ স্বাভাবিকভাবেই বাঙালিদের মানসিকভাবে এগিয়ে দিয়েছিল যা যুদ্ধে জয়ের পিছনে ভূমিকা রেখেছিল ।

৪. ভারতীয় বাহিনীর উন্নত রণকৌশল : রণকৌশলগত দিক থেকেই ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর চেয়ে এগিয়ে ছিল। 

বিমান শক্তিতে দেখা যায় ভারতীয় দশ স্কোয়াড্রেনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে ছিল এক স্কোয়াড্রেন। 

ভারত পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনের জন্য একটি শক্তিশালী বিমানবাহী যুদ্ধে জাহাজ টাস্কফোর্স গঠন করে। অথচ আগস্ট মাস থেকে নৌ কমান্ডোরদের অভিযানের জবাব দেয়ার মতো পাকিস্তানের কার্যত কোনো নৌ শক্তি ছিল না। 

শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তাই বেশিক্ষণ পাকিস্তান টিকে থাকতে পারেনি। মাত্র তেরদিনের মধ্যেই পর্যদস্ত পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এসময় ভারত পাকিস্তানের ১৭৫টি ট্যাঙ্ক, ৮৩টি বিমান ধ্বংস করে। 

ভারতের যুদ্ধে ও কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোভিয়েত পরামর্শকের পরামর্শ। এছাড়া সহযোগিতা ছিল প্রায় প্রতিটি বাঙালির। অন্যদিকে দুর্বল সামরিক শক্তি, যুদ্ধে কৌশল এবং মার্কিন সপ্তম নৌবহরের প্রতি নির্ভরশীলতা এবং তা না আসায় পাকিস্তান বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায় ৷

৫. হানাদার বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা : হানাদার বাহিনী দীর্ঘদিন যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কারণে নৈতিক মনোবল হারিয়ে ফেলে। থাকায় ধৃত মুক্তিবাহিনীর কোনো বন্দী শিবির না পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নানা লোমহর্ষক বাহিনী সৈন্যদের শিবিরে ছড়িয়ে পড়েছিল। 

লে. জে. নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক সৈন্যদের দুর্বল মনোবল সম্পর্কে বলেন, “তাদের প্রশিক্ষণের সময় সমর উপকরণ ও নৈতিক মনোবল ছিল নিম্নস্তরের। 

তারা দীর্ঘ ৮ মাস যাবৎ যুদ্ধে নিয়োজিত। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। কয়েকমাস ধরে তারা বিশ্রাম পায়নি। তাদের অনেকেরই বুট আছে। 

কিন্তু মোজা বা শোয়ার চোওকি নেই। সবচেয়ে খারাপটি হলো অপারেশনে যাবার ব্যাপারে তাদের অনেকেরই মনের দিক থেকে সায় ছিল না। 

তাছাড়া দির্ঘদিন এসব সৈন্য পরিবারের বাইরে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে মানসিকভাবে অনেক সৈন্য ভেঙ্গে পড়েছিল । যার প্রভাব পড়েছিল যুদ্ধে।”

৬. পাকিস্তানের অর্থ-সংকট : সামরিক উপকরণ ও অর্থ সংকট পাকবাহিনীর পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে। পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রির উপর মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্য ও পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স ও কানাডার অর্থ সাহায্য বন্ধের ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। 

বিশ্বব্যাংক জুন মাস থেকে অনুদান স্থগিত করে। যুদ্ধের কারণে রপ্তানি হ্রাস। সব মিলিয়ে নগদ অর্থে বৈদেশিক মুদ্রায় অস্ত্র কেনার পথ বন্ধ থাকে। 

এরপর পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি আরব দেশের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হলেও তা ছিল অপ্রতুল। 

পাকিস্তানে এরূপ অর্থসংকটের প্রভাবে বাংলাদেশে নিয়োজিত সৈনিকদের নিয়মিত খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ করা দুরূহ ছিল। ফলে প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে পাকিস্তানি বাহিনী সম্পূর্ণভাবে আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়।

৭. বিশ্ব জনমতের প্রভাব: ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা চালায় তাতে সারা বিশ্বের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্ছার হতে থাকে। 

তাছাড়া নয় মাস ধরে চলমান মুক্তিযুদ্ধে সারা বিশ্বকে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সে দেশের জনগণ, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, শিল্পী সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন। 

ভারত, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, জাপানিসহ বিশ্বের বিশাল অংশ | মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জনমত গড়ে ওঠে। জাতিসংঘ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। 

ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এ বিশাল জনসমর্থন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করে এবং একই সাথে পাকিস্তানি বাহিনীকে বিবেকের দংশনে দংশিত করে।

৮.. প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রভাব : মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান, ১ কোটি শরণার্থীদের আশ্রয় ও ত্রাণ ব্যবস্থায় সহযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের প্রশিক্ষণ। 

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে । সরকার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসহ একটি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন হয় যা মুজিবনগর সরকারের ছিল। 

এছাড়া আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাঠামো এবং উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে এসরকার। বহির্বিশ্বে ব্যাপক তৎপরতার ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি জাগতে থাকে। 

এর ফলে মুক্তিযুদ্ধে গোড়ার দিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও অচিরেই এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের শেষদিকে জাতিসংঘ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে ।

৯. গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতির ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধে পারদর্শী ছিল। তাই তারা সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। 

গেরিলা যোদ্ধকৌশলে হঠাৎ অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুর বিনাশ সাধন করা হয়। এ যুদ্ধে নিহতের চেয়ে আহত হয় বেশি। ভারী অস্ত্র ছাড়াই হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে এ যুদ্ধে পরিচালনা করা হয়। 

এ যুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবহারের চেয়ে বড় কৌশলগত অবস্থান। বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা এ পদ্ধতি প্রয়োগে পারদর্শী ছিল। 

যেহেতু বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রাম এবং বনজঙ্গল, পাহাড়, মাঠ, নদী দ্বারা আকীর্ণ সেহেতু গেরিলা পদ্ধতি প্রয়োগ করে সহজেই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব ছিল এবং তা বাস্তবায়িতও হয়।

১০. পাকিস্তানিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের জেনারেল ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাঙালির বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাবলির ব্যাপারে ঐক্যমত্য সৃষ্টি হলেও ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট ছিল। 

পাকিস্তান পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ, জামায়েত ইসলামী, পিডিপির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট ছিল। ফলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যখন সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয় তার আগেই ইয়াহিয়ার বাহিনী পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। 

এভাবে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে সামরিক বেসামরিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুতে সামরিক মতৈক্য হলেও ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রায় নিশ্চিত তখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকটরূপ নেয়। 

যার প্রভাব পড়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীতে। কেননা সৈন্যরাও জাতিগতভাবে একেক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল ।

১১. গণযুদ্ধের প্রভাব : ৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং বাঙালির বিজয়ের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা যায় মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি গণযুদ্ধ। 

এ যুদ্ধে কতিপয় ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সকলেই ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। 

মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। এমনকি মহিলা, শিশু, কিশোররা এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নেয়। সমগ্র বাঙালি জাতি দুর্জয় দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, একাগ্রতার মাধ্যমে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধে করে। 

অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসতা, পাশবিকতাকে আশ্রয় করে লক্ষ্যহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ফলে যুদ্ধে বাঙালির জয় আর পাক বাহিনীর পরাজয় হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, নয়মাস ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের একাগ্রতা, দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের সাহায্য ও অনুপ্রেরণা, যুদ্ধকৌশল, ভারতীয় বাহিনীর উন্নত, রণকৌশল, বিশ্ব জনমতের প্রভাব, সর্বোপরি পাকিস্তানি বাহিনীর ভিতরকার অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং অর্থসংকট প্রভৃতি উপাদান পাকিস্তানের পরাজয় এবং বাংলাদেশের বিজয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল। 

তাছাড়া বাঙালিরা লড়াকু জাতি। তাদের মানসিক চেতনা গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, ঐতিহ্যগত সমৃদ্ধি থেকে এবং সুদীর্ঘ ইতিহাস চেতনা থেকে। 

যার ফলে প্রবল দেশপ্রেমে উজ্জীবিত বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণগুলো বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ