বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

  • ভারত কি স্বার্থহীনভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল ব্যাখ্যা কর
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কি নিঃস্বার্থ ছিল?-ব্যাখ্যা কর ।
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান মূল্যায়ন কর ৷ 
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আলোচনা কর । 

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে গবেষক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে দু ধরনের মতামত রয়েছে। একদল এতই আবেগপ্রবণ যে, তারা কিছুতেই স্বীকার করতে চান না, জাতীয় স্বার্থে ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। 

দ্বিতীয় একদল বলতে চান বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে ভারতের সৃষ্টি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন তাদের মানবিক, সামরিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা যে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। 

তবে ভারত রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও মতাদর্শগত কারণেই যে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল একথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা একেবারে নিঃস্বার্থ না হয়ে মিশ্র ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়।

→ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিঃস্বার্থ ছিল কিনা : আন্ত র্জাতিক পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিটি রাষ্ট্রই জাতীয় স্বার্থকেই প্রথমে প্রাধান্য দেয়। ভারতও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। 

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কাছে পররাষ্ট্রনীতিরই একটি বিষয় ছিল। ফলে ভারত সে দৃষ্টিকোণ থেকে যোদ্ধকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছে। নিম্নে যুদ্ধে ভারত নিঃস্বার্থ ছিল কিনা তা বিচার করা হলো :

১. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সমর্থন দান : ভারতের বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধকে সমর্থন দান বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নরকম ছিল। 

প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিল মাসের 5 শেষ দিক পর্যন্ত সময়কালে ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামরিক ব্যক্তিকে আশ্রয়দানের সুযোগ দেয়। 

কলকাতায় একটি প্রবাসী সরকার গঠনের ব্যবস্থা করে। এছাড়া পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য স্বল্প পরিমাণে সামরিক সহায়তা দিতে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার জন্য ভারত কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে ।

২. জনসমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান : ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আকুণ্ঠ সহানুভূতি প্রকাশ করে। 

সরকারি দল কংগ্রেস ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি, জনসংঘ মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠন ও শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য দিয়ে, সহায়তা করে সর্বস্তরের ভারতীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

বুদ্ধিজীবীরা “শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি' গঠন করে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও জনমত সৃষ্টিতে অবদান রাখেন। পণ্ডিত রবিশঙ্কর জনসমর্থন ও অর্থ আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। 

‘বাংলাদেশ সেবা সংঘ’ স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম সহায়ক সমিতি নামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।

৩. শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান : প্রথম পর্যায়ে ভারতের সরকারি মহল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণার ব্যাপারে কিংবা বাংলাদেশকে সরাসরি সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। 

এ পর্যায়ে ভারত সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়, বাংলাদেশ সরকারকে অবাধে ভারতীয় এলাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দেয়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ২০-৪৫ হাজার অসহায়, নিরস্ত্র মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। 

মে মাসের প্রথম থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে। 

ভারত সরকার এই বিপুল শরণার্থীদের থাকা ও খাবারের বন্দোবস্ত করে মানবিক কাজ সম্পন্ন করে যা মুক্তিযুদ্ধের সময় খুবই প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। ভারত সরকারের হিসেবে শরণার্থীদের পিছনে ভারতের খরচ হয় ৩৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।

৪. মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং প্রদান : এপ্রিলের শেষ নাগাদ বাঙালি যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়া শুরু হয় ভারতের মাটিতে। এছাড়া ভারত এসময় হালকা অস্ত্রও দেয়। RAW এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় 'মুজিব বাহিনী'। 

জুনে এদের ট্রেনিং শুরু হয় এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এছাড়া অসংখ্য বেসামরিক লোককে ভারত সরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

৫. কূটনৈতিক সহযোগিতা : জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হেনরি কিসিঞ্জার ভারত সফর করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সহযোগিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করলে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করেন। 

এতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মধ্যস্থতার পথ রুদ্ধ হয় এবং এর ফলে ভারত তার নিজস্ব বিবেচনায় চলতে থাকে। জুলাই মাসে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান সহযোগিতায় পৌঁছালে সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে ভারত। 

৯ আগস্ট রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ সংক্রান্ত ভারতের নীতি ও কর্মসূচির পরিবর্তন দেখা যায়। ইন্দিরা গান্ধী সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফর করলে মস্কো-দিল্লি চুক্তির আওতায় ভারতকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। ফলে বাঙালি বিরোধী যেকোনো আন্তর্জাতিক সমাধানের বিরুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তৎপর হয়ে উঠে।

৬. সামরিক অভিযান প্রেরণ : জুলাই মাস থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি নিয়মিত ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত পূর্ব বাংলার সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে সামরিক প্রচেষ্টা জোরদার করে। 

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল পূর্ব বাংলায় মোতায়েন করা হয়। ভারত কর্তৃক প্রেরিত তিনটি সৈন্যবহরের দুটি ছিল সপ্তম পদাতিক, একটি ছিল নবম পদাতিক যাদেরকে ভারত পূর্ব বাংলার সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করে। 

২৩ নভেম্বর ইয়াহিয়া খান ১০ দিনের মধ্যে যুদ্ধে শুরুর ঘোষণা দিলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তান বিমান হামলা চালালে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়। ভারত স্থল, নৌ ও বিমান পথে যুদ্ধ শুরু করে এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। 

পাকিস্তান প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়। ভারতীয় মিত্র ও বাঙালি মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা পৌছে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সামরিক অভিযানের সমাপ্তি ঘটে।

৭. স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান : ভারতই প্রথম দেশ যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত আরও দৃঢ় হয়। 

ভারতকে অনুসরণ করে ৭ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এভাবে ভারতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একে একে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, পরাশক্তি, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। 

যার ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অগ্রগণ্য ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস শরণার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে, প্রবাসী সরকার গঠনে সহায়তা করে, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করে, সর্বোপরি চূড়ান্ত পর্বে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তবে এসবের পিছনে নিছক ভালোবাসা বা সহানুভূতির অনুভূতিই যে প্রধান ছিল একথা সত্যি নয়। এর পিছনে ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিও অনেক ক্ষেত্রে জড়িত ছিল, যা ভারতকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ত্বারিত করেছিল ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ