প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর।

প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের শিল্প-সাহিত্যে, শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান তথা সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তৎকালীন বিশ্ব সভ্যতার চরম শিখরে উন্নতি হয়। 

এ কারণেই আব্বাসীয় যুগকে মুসলিম সংস্কৃতি ও রাজ্য সম্প্রসারণনীতি বাদ দিয়ে তারা ভূগোল, ইতিহাস, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, ফলিত জ্যোতিষ্ক, গণিতশাস্ত্র, স্থাপত্য, ধর্মতত্ত্ব, চারুশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানগণ গবেষণা পরিচালনা করে এবং বিশ্বসভ্যতা অনবদ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। 

এ কারণেই ঐতিহাসিক পি, কে হিট্টি আব্বাসীয় যুগকে The golden age of civilization বলে অভিহিত করেন ।

→ আব্বাসীয় যুগে জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে মুসলমানদের  অবদান : আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের সভ্যতা, কৃষ্টি এবং জ্ঞান অনুশীলন বিশ্ব সভ্যতার শীর্ষে ছিল। তাই এটাকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। নিয়ে আব্বাসীয় যুগে জ্ঞানবিজ্ঞান সংস্কৃতিতে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করা হলো :

১. ভূগোল শাস্ত্র :  কিবলা নির্ধারণ, পবিত্র হজ্জ পালন, নৌ- বাণিজ্য ও বিভিন্ন কারণে সমুদ্র পাড়ি দেবার প্রয়োজনেই মুসলমানগণ ভূগোল চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। আব্বাসীয় যুগের ভূগোল শাস্ত্রের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। 

খাওয়ারীজমের ৬৯ জন পণ্ডিতের সহযোগিতায় খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে “যুবাত আল আরদ” নামে প্রথম পৃথিবীর একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন। ইসলামের এ সর্বপ্রথম মানচিত্র পরবর্তী চতুর্দশ শতক পর্যন্ত মুসলিম ভূগোলবিদগণ ব্যবহার করেন। এ যুগের অনন্য ভূগোলবিদদের মধ্যে ছিলেন ইবনে বতুতা, আল ইদ্রিসী, আল ইয়াকুব প্রমুখ ।

২. ইতিহাস চর্চা :  গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের পর আরবগণই এমন ইতিহাস রচনার অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং আব্বাসীয় যুগে তা বিজ্ঞানসম্মত করেন। খলিফা মামুনের রাজাকালে ঐতিহাসিক ওয়াকিদি ইসলামের বিজয়কে কেন্দ্র করে একটি মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। 

পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ৯১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইতিহাসের উপাদান খুঁজার জন্য তিনি পারস্য, সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও মিশর ভ্রমণ করে সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর গবেষণা করে ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।

৩. দর্শন শাস্ত্র : মানব মনীষীদের প্রয়োগে জড়জগৎ সৃষ্টির কারণ নির্ণয়ই আরব দর্শনশাস্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । আরব দর্শন মূলত কুরআন ও হাদিসের আলোকে হলেও গ্রিকরা পরবর্তীতে পারস্য দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনি শিক্ষাকে ভিত্তি করে তারা মৌলিক চিন্তাভাবনা প্রসারিত করে।

 আল-কিন্দি, আল-ফারাবী, আল-গাজালী ও ইবনে সিনা ছিলেন আরব দার্শনিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল-কিন্দি ৮১৩-৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম দর্শনের সাথে গ্রিকদের সামঞ্জস্যের বিধান করেন ।

৪. চিকিৎসাশাস্ত্র : অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিক রচনা ও গ্রিকগ্রন্থ থেকে অনুবাদের ফলে একটি নবদিগন্তে র সূচনা হয়। এযুগে চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ লিখে অনেকে খ্যাতি অর্জন করেন। 

ইসলামি বিধানে নিষেধজ্ঞার কারণে সব দেহ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। অবশ্য চক্ষু রোগের ওপর গবেষণা চলে । চিকিৎসাবিদদের মধ্যে আলী আত তাবারী, আলরাজী আলী, ইবনে আল আব্বাসী, ইবনে সিনাহ উল্লেখযোগ্য ।

৫. জ্যোতিষ শাস্ত্র :  মুসলমান বিজ্ঞানীগণ জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রভূত উন্নতি সাধন করে । খলিফা আল মামুনের সময় ভারতে রচিত জ্যোতিষ শাস্ত্র “সিদ্ধান্ত” গ্রন্থটি আরবিতে অনুবাদ করেন মুহাম্মদ আল ইব্রাহিম আল ফারাজী। 

অবশ্য পরবর্তীতে গ্রিক দার্শনিকদের প্রভাব অনুপ্রবেশ করে বিশেষ করে গ্রিক টলেমির “আলসাজেস্ট” অনুবাদ। মূলত আব্বাসীয় আমলে জ্যোতিষশাস্ত্রের উৎকর্যের মূলে ছিল মানমন্দির নির্মাণ।

৬. গবেষণা ও যন্ত্রপাতি : স্পেনীয় জ্যোতির্বিদ মাসলামা আল-মাজরিতি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত সারণি বিশোধিত করেন। খলিফা মুতাওয়াক্কিলের আমলে ফেসওয়াতে একটি নিলোমিটার প্রতিষ্ঠিত হয় । বুয়াইয়া আমলে বাগদাদে যে মানমন্দির তৈরি হয় সেটাতে আব্দুর রহমান, আল-সুফী, আহম্মদ আল-সাজানী ও আবু ওয়া গবেষণা চালায়। 

আল সুফী খনিজ ক্রান্তিবৃত্তের বক্রান্ত সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। আল-বেরুনী, ওমর খৈয়াম, আল-তুসী এবং আল-মাশার, টলেয়ির সূত্রের পরিবর্তন করে চন্দ্র ও সূর্যের কক্ষপথ সম্পর্কে অভিনব তথ্য দেন।

৭. গণিতশাস্ত্র : জ্ঞানবিজ্ঞানের অপরাপর ক্ষেত্রের মতো গণিত শাস্ত্রেও মুসলমানদের অবদান অনেক। আল ফারাজী কর্তৃক “সিদ্ধান্ত” গ্রন্থটা অনুবাদের ফলে মুসলমানরা অঙ্কশাস্ত্র, ভারতীর সংখ্যারীতি এবং শূন্যের ব্যবহার শিখেন। 

একাদশ শতাব্দীতে আল ফারাজী তার “আল ফাফি ফিল হিসাব” গ্রন্থে সংখ্যাগুলো শব্দের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করেন। আর আল খাওয়ারিজমী প্রাচীন অঙ্ক ও বীজগণিতীয় সূত্রগুলোকে সুসমন্বিত করে।

৮. রসায়নশাস্ত্র : আব্বাসীয় আমলে মুসলিম মনীষীগণ রসায়নশাস্ত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। জাবের ইবনে ইহয়ান তার বাইশখানা গ্রন্থে রসায়নশাস্ত্রের বিষয়গুলো বিস্তারিত গবেষণাধর্মী আলোচনা করেন। 

এদের মধ্যে “কিতা আল-রাহমা”, কিতাব আল-তাজমী এবং আল-জীবাক সারকী” প্রকাশিত হয়। পাশ্চাত্যের পণ্ডিতগণ একবাক্যে স্বীকার করে জাবের অনেক রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি করেন।

৯. সাহিত্যে : এ যুগে আরবি, ফারসি সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। আরবি সাহিত্যে আবুল ফারাজ, ইবনে খল্লিকান, আবু নাওয়াস, উতবী এবং আবু তাম্মাম কর্তৃত্ব অর্জন করেন। 

আব্বাসীয় যুগে আরবি কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে পারস্যবাসী যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা “শুবিরাহ” নামে পরিচিত। সাহিত্যে চর্চাই ছিল এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।

১০. স্থাপত্য শিল্প : আব্বাসীয় স্থাপত্য কলা উমাইয়া স্থাপত্য কলা গুণগত মানের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উমাইয়াদের সময় স্থাপত্যশিল্প বাইজান্টাইন স্থাপত্যের প্রভাব ছিল। 

কিন্তু আব্বাসীয়দের সময় স্থাপত্যশিল্পের এক অভিনব যুগের সূচনা ঘটে এবং পারস্য স্থাপত্যরীতির প্রভাব প্রকট হয়ে পড়ে। খলিফা মুতাসিমের সময়কাল কাওয়ারা প্রাসাদ এবং মুতাজিদের তাজ প্রাসাদ উল্লেখযোগ্য।

১১. সুকুমার শিল্প : ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আব্বাসীয় আমলে চিত্রকালা'র উন্মেষ ঘটে এবং বাগদাদে প্রথম মেসোপটেমীয় চিত্রকলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আল আমিন ও টাইগ্রিস নদীতে পশু পরীক্ষার আকারে প্রমোদতরী নির্মাণ করেন এবং আল মুকতাদিরের আমলে সামরেরা প্রাসাদে নারীর নগ্ন মূর্তি অঙ্কিত হয়।

১২. হস্তলিখন শিল্প : খলিফা আল মামুনের সময় হস্তলিখন শিল্প উন্নতি লাভ করেছিল। তার শাসনামলে আর রায়হান নামে এক ব্যক্তি এ প্রকার লেখন পদ্ধতির উন্নতি ঘটায়। তার নামানুসারে আররি লেখন পদ্ধতির নাম “রায়হানী” প্রবর্তিত হয়।

১৩. শিক্ষাব্যবস্থা : আব্বাসীয় আমলে শিক্ষা-দীক্ষার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। খলিফা আল মামুনের সময় ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ছিল “বায়তু হিকমা”। আব্বাসীয় আমলে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বাগদাদে “নিযামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়”। 

এ শিক্ষায়তনে শাফেয়ী ও আশয়ারী পদ্ধতি সম্পর্কে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হতো। কুরআন ও প্রাচীন কবিতাই ছিল পাঠ্য তালিকার বিষয়বস্তু ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিশ্ব সভ্যতায় আব্বাসীয়দের অবদান অতুলনীয়। এ সময় মুসলিম মনীষীগণ জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রত্যেক শাখায় অবদান রেখেছিলেন। এ্যালজেবরার জ্ঞানও তারা মুসলমানদের নিকট থেকে পেয়েছিল। এর মাধ্যমে বিশ্ব সভ্যতার বুকে মুসলিম একটি উন্নত জাতি হিসাবে পরিচিত লাভ করেছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রথম আব্বাসীয় যুগের খলিফাদের সময় জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকাশে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ