১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর ।

১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর
১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

  • ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানকে কেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
  • অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধান সম্পর্কে বিস্ত ারিত আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : সংবিধান একটি রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক বিধিবিধান ও আইনকানুনের মূল উৎস। এ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধান সমগ্র জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। 

পাকিস্তান যেখানে তার পৃথক সংবিধান রচনা করতে প্রায় নয় বছর এবং ভারত প্রায় তিন বছর সময় নেয় সেখানে বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসে জাতিকে একটি আদর্শ সংবিধান উপহার দিতে সক্ষম হয়। 

যে সংবিধান ছিল জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আমরা জানি, পৃথিবীর প্রতিটি সংবিধান নির্দিষ্ট কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। 

বাংলাদেশের সংবিধান ও এর ব্যতিক্রম নয়। আর এসব বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সংবিধানকে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিল যা এখানো অটুট আছে ।

→ ৭২ এর সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণ : ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনকালে বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক বিধান সংবলিত একটি দলিল প্রণয়ন করা হয়েছিল । 

যা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। নিচে '৭২-এর সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণ আলোচনা করা হলো :

১. প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত। 

প্রজাতন্ত্র আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বে যেসব এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল, স্বাধীনতার পর সেসব এলাকা নিয়েই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠিত হবে। 

এভাবে সংবিধান কর্তৃক প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত যা সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করে ।

২. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪টি আদর্শকে গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ । 

এর মূল লক্ষ্য ছিল এ এক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। 

এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় যা ‘৭২ এর সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।

৩. মৌলিক অধিকার : বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মৌলিক মানবাধিকার সংযোজন সংবিধানের তৃতীয় ধারায় নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উম্মুক্ত করার তাগিদে কতকগুলো মৌলিক অধিকার সংবিধানের লিপিবদ্ধ করা হয়। 

যেমন- সাম্যের অধিকার, চলাফেরা, সভা-সমাবেশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা বাকস্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক ও স্বাভাবিক মানবিক অধিকারগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। 

এভাবে সংবিধান কর্তৃক মানবাধিকার স্বীকৃতি পৃথিবীর অন্যান্য সংবিধান থেকে একে শ্রেষ্ঠ বলার অন্যতম কারণ ।

৪. সংসদীয় পদ্ধতির সরকার : ১৯৭২ সালের সংবিধানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। এ সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত করে। 

উক্ত সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে উপাধিসর্বস্ব করে। সংবিধানে একটি এক কক্ষ বিশিষ্ট এবং ৩০০ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত ১৫ জন মহিলো সদস্য সমন্বয়ে আইন সভা গঠনের বিধান করা হয়। 

আইনসভার নাম দেওয়া হয় জাতীয় সংসদ। সংবিধানে বলা হয় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ একক ও যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন ।

৫. লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় : ১৯৭২ এর সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় । ১৯৭২ এর সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত। 

তবে কোনো বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধনগত দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়। 

সংবিধান সংশোধনের দরকার হলে সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট প্রয়োজন পড়ে এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য 'এটি দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির।

৬. স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা : সংবিধানে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বলা হয় যে, মুক্ত ও স্বাধীন একটি বিচার বিভাগ গঠনের লক্ষ্যে, সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিগণ স্বাধীন অবস্থায় থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। 

বাংলাদেশ সংবিধানের বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট নামে অভিহিত হবে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত এ সুপ্রিম কোর্ট শাসন বিভাগ থেকে পৃথক হবে।

৭. সংবিধানের সার্বভৌমত্ব : বাংলাদেশ সংবিধানে শাসনতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের বিধান রয়েছে। এখানে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রই হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের আইনই সর্বশেষ আইন বলে স্বীকৃত হবে। 

তাই সংবিধানের সাথে সঙ্গতিহীন যেকোনো আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। এভাবে ‘৭২ এর সংবিধানে শাসনতন্ত্রকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দলিল হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং সকল আইনের ঊর্ধ্বে তাকে স্থান দেওয়া হয় ।

৮. ' জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ | সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবেন এবং তাদের এ নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। 

সংবিধানে দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। 

এভাবে '৭২-এর সংবিধানে জনগণের জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হয় যা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সংবলিত।

৯. নারী অধিকারের বিধান : বাংলাদেশ সংবিধানে জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলা নাগরিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা রয়েছে। 

সংবিধানের ১৯ ধারা অনুযায়ী জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হবে। 

এছাড়া কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদান করবে না বলে বলা হয়। 

২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে এবং জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

১০. সার্বজনীন ভোটাধিকার : ভোটাধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে সংবিধান জনগণের সেই সার্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। 

বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী ন্যূনতম আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার যোগ্য। 

নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে বলে বলা হয় ‘এক ব্যক্তি এক ভোট' এ নীতিই বাংলাদেশ সংবিধানের সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তি।

১১. প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল : সাধারণ বিচার বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড ও কর্মের মেয়াদ রাষ্ট্রয়াত্ত উদ্যোগ ও সম্পত্তি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহের ওপর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার থাকবে। এ সমস্ত বিষয়ে সাধারণ আদালতগুলোর কোনো এখতিয়ার থাকবে না ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হলো বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল লিখিত দলিল। 

এতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, শাসক-শাসিতের সম্পর্ক অধিকারের প্রশ্নই মৌলিক অধিকার, নারীর অধিকার, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগের প্রাধান্য, সার্বজনীন ভোটাধিকার, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। 

তাই বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধানের একটি। এটি ছিল “একটি ব্যাপক সুলিখিত দলিল, এবং এ উপমহাদেশের অন্যান্য সংবিধানের তুলনায় উন্নতমানের। 

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব বা দুর্বলতা থাকলেও এ সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বহুলভাবে প্রতিফলিত করেছিল । তাই ১৯৭২ এর বাংলাদেশ সংবিধান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ