সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।

সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও | সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টি হলো সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষ ও জাতির পরিচয় বহন করে । সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচনায় সংস্কৃতি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

মানুষের জীবনে সংস্কৃতির প্রভাব অনেক। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সংস্কৃতি আলাদা হয়ে থাকে। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপন বৈচিত্র্যময় সুন্দর এবং মার্জিত হয়। 

মানুষ তার প্রয়োজনে যা কিছু আবিষ্কার করে ও জ্ঞানের সংযোজন ঘটায় তার সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি চলতে পারে না। মানুষের জীবনধারায় সংস্কৃতির প্রভাব অনেক ।

→ সংস্কৃতি : সংস্কৃতি হলো আয়নার মত। আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন নিজের ছবি দেখা যায়, তেমনি সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতি ছবি দেখা যায় । নম্নে সংস্কৃতির সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :

শাব্দিক অর্থে : সংস্কৃতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Culture। এটি ল্যাটিন শব্দ Culture থেকে উদ্ভব। যার অর্থ কৃষ্টি । কৃষ্টি শব্দটি আবার চর্চা অর্থে ব্যবহৃত হয়। Culture শব্দটি ষোল শতকে ফ্রান্সিস বেকন প্রথম ব্যবহার করেন।

→ সংস্কৃতির সংজ্ঞা : সংস্কৃতি বলতে সাধারণ মানুষের জীবনাচরণকে বুঝায় । আবার সমাজ আকাঙ্কিত ধারা জীবনযাপন করতে গিয়ে মানুষ যা সৃষ্টি করে সেসবের সামাজিকতাকে সংস্কৃতি বলে ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সংস্কৃতির সংজ্ঞা সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ- বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে দিয়েছেন-

সমাজবিজ্ঞানী রস-এর মতে, “সকল বস্তু ও অবস্তুর কৌশল - হচ্ছে সংস্কৃতি ।”

ম্যাকাইভারের মতে, “আমরা মানুষ হিসেবে কি, সে হলো আমদের সংস্কৃতি।”

ম্যালিনোস্কির মতে, “সংস্কৃতি মানুষেরই সৃষ্ট, যার মাধ্যমে সে নিজের উদ্দেশ্য সাধন করে।”

নৃ-বিজ্ঞানী ই. বি. টেইনার এর মতে, “সংস্কৃতি হচ্ছে এমন একটি জটিল সামাজিক সত্তা, যার মধ্যে রয়েছে জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতিবোধ, আইন, প্রথা এবং সামাজিক মানুষের যাবতীয় কর্মদক্ষতা ও সৎ অভ্যাস।”

হার্বার্ট স্পেন্সার-এর মতে, “সংস্কৃতি হলো একটি অধিজৈবিক পরিবেশ যা জীবজন্তু ও বৃক্ষরাজির দ্বারা গঠিত জৈবিক অথবা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ভিন্ন।”

কার্ল মার্কস-এর মতে, “অর্থনৈতিক ভিত্তিক বিশেষ কাঠামোই হচ্ছে সংস্কৃতি।”

→ সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ : সংস্কৃতি হলো জীবন প্রণালি । সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। নিম্নে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো :

১. সংস্কৃতি শিক্ষণীয় বিষয় : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি শিক্ষণীয় বিষয়। এটি জৈবিক বংশগতির মাধ্যমে আসেন। এটি সমাজ "থেকে শিখতে হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে মানুষ সংস্কৃতি শিক্ষা লাভ করে থাকে ।

২. সংস্কৃতি মানবসৃষ্ট : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবসৃষ্ট। মানুষ তার প্রয়োজনে যা কিছু সৃষ্টি করে তাই সংস্কৃতি। মানবসৃষ্ট সব বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানই হলো সংস্কৃতি । মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্ন উপাদান সৃষ্টি করে ।

৩. সংস্কৃতি হলো সামাজিক : সংস্কৃতি হলো সামাজিক বিষয়। এটি সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমেই বিকশিত হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হয়। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতির উদ্ভব হয় ।

৪. সংস্কৃতি অংশীদারিত্বমূলক : সংস্কৃতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য অংশ হলো অংশীদারিত্বমূলক, সংস্কৃতি কারো ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নয়, এটি সবার অংশ গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হয়। 

যেমন- প্রথা, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, ধারণা ও নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাজ ও গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক।

৫. উদ্দেশ্য সাধনের উপায় : সংস্কৃতি অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক বিষয়। মানুষ তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যেসব কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন তাই সংস্কৃতি। 

উদ্দেশ্যহীন কোনো বিষয়ই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। মানুষ তার জীবনপ্রণালি পরিচালনার জন্য সমাজে যা কিছু করে তাই সংস্কৃতি ।

৫. উদ্দেশ্য সাধনের উপায় : সংস্কৃতি অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক বিষয়। মানুষ তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যেসব কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন তাই সংস্কৃতি। উদ্দেশ্যহীন কোনো বিষয়ই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। মানুষ তার জীবনপ্রণালি পরিচালনার জন্য সমাজে যা কিছু করে তাই সংস্কৃতি।

৬. হস্তান্তরযোগ্য : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো হস্তান্ত রযোগ্যতা। সংস্কৃতি এক প্রজন্ম হতে আরেক প্রজন্ম স্থানান্তরিত হয়। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি শিক্ষা দেয় । এর ফলে সংস্কৃতি প্রজন্ম হতে প্রজন্ম বিস্তার লাভ করে

৭. সংস্কৃতি সমাজভেদে ভিন্ন : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সমাজভেদে ভিন্ন হয়। বিভিন্ন সমাজে মানুষের আচার- আচরণ ভিন্ন হয়। তাদের জীবনধারা আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, মুসলমান, হিন্দু, চাকমা ইত্যাদি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি আলাদা ।

৮. পরিবর্তনশীলতা : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরিবর্তনশীলতা। সমাজ যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে সেহেতু সংস্কৃতি সমাজের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে আদিম সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। 

মানুষের জীবনধারা ও আচার আচরণ ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই বলা যায়, পরিবর্তনশীলতা সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।

৯. কাঠামোভিত্তিক সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো কাঠামোভিত্তিক। সংস্কৃতির একটি রূপ বিদ্যমান। সংস্কৃতি সাধারণত বস্তুগত ও অবস্তুগত হয়ে থাকে । এই রূপেই সংস্কৃতি প্রকাশ লাভ করে ।

১০. বিভাজনযোগ্য : সংস্কৃতি হলো বিভাজনযোগ্য। সংস্কৃতি একক কোনো বিষয় নয়। মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ডই সংস্কৃতির অংশ। স্থান, কাল, পাত্রভেদে এই বিভাজন লক্ষ করা যায়।

১১. পার্থিব ও আধ্যাত্মিক দিক : সংস্কৃতির দুইটি দিক আছে। যথা— পার্থিব ও আধ্যাত্মিক। মানুষ তার জীবনধারণের জন্য যেসব সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে, তার মাধ্যমে তার যে চাহিদা পূরণ হয় তা হলো পার্থিব চাহিদা। 

ব্যক্তি আরো কিছু চাহিদা অনুভব করে। যেমন ছবি আঁকা, সংগীত চর্চা, সাহিত্য রচনা ইত্যাদির মাধ্যমে তার মানসিক চাহিদা পূরণ হয়। এগুলো হলো তার আধ্যাত্মিক দিক।

১২. সংস্কৃতি হলো সঙ্গতিপূর্ণ ও সুসংহত : সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সঙ্গতিপূর্ণ ও সুসংহত। সংস্কৃতি তার নিজস্ব উন্নয়নের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার প্রবণতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে, সংস্কৃতি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংস্কৃতি হলো ব্যক্তি পরিচায়ক। এর মাধ্যমেই একটি জাতিকে জানা যায় । সংস্কৃতি ছাড়া কোনো জাতিকে কল্পনা করা যায় না । 

পৃথিবীর প্রতিটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান। যারা তাদের পরিচয় বহন করে থাকে। সংস্কৃতি হলো আয়নাস্বরূপ। এর মাধ্যমে কোনো জাতিকে উপলব্ধি করা সম্ভব । পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি আলাদা ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও  সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ