পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।

পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর
পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : প্রতিটি বৃহদায়তন সংগঠনে পদক্রমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অধ্যাপক মুনি (Mooney) এর মতে, তিক্রম হচ্ছে প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যতম নীতি ।

" সংগঠনের কর্তৃত্ব কোনো না কোনো স্তরে অবশ্যই ন্যস্ত থাকবে। এই দিক হতে বিচার করলে দেখা যায় যে, পদক্রমিক সংগঠনের কয়েকটি বাস্তব সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে । 

পদসোপান ন্যাস্ত পদসোপান বা Hierarchy এর আক্ষরিক অর্থ হলো উচ্চতর স্তর কর্তৃক নিচতর স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করা। 

প্রশাসনের ক্ষেত্রে পদসোপান বলতে পর্যায়ক্রমিক স্তরবিশিষ্ট কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেখানে নিচুস্তরে কার্যরত ব্যক্তিগণ তাদের ঠিক ঊর্ধ্বস্তরে কার্যরত ব্যক্তিদের আদেশে সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

পদসোপানের বিভিন্ন রূপ দায়িত্ব এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের বেতনের বিভিন্নতার কারণে পদসোপান নীতিতে একটি উর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) এর মতে, "Hierarchy consists in the universal application of superior subordinate relationship through a number of levels of responsibility reaching from top to the bottom of the structure " 

অর্থাৎ, পদসোপান নীতি এমন একটি সাংগঠনিক রূপ নির্দেশ করে যা মূলত এক সর্বজনীন ঊর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্কের ভিত্তিতে দায়িত্ব এবং কর্তৃত্বের বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় এবং যা সংগঠনের ওপর হতে নিচ পর্যন্ত অতিক্রম করে।

বি. পি. ভামগ্রি (B. P. Bhambri) এর মতে, "Hierarchy is a system of interlocking superior subordinate relationship from top to bottom." অর্থাৎ পদসোপান হলো ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্তৃপক্ষের উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যন্ত আদেশ দান ও লাভের সম্পর্ক।

পদসোপান নীতির সুবিধাসমূহ : পদক্রম বা পদসোপান নীতির সুবিধাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. আদেশ দান : আদেশ দানে পদসোপান নীতির গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। এ নীতির মাধ্যমে যথার্থভাবে আদেশ প্রদান করা হয় । 

পদসোপান নীতি আদেশ প্রদানের প্রধান উপায় । এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের আদেশ প্রদান করে থাকে। 

২. কর্তৃত্ব অর্পণ : পদসোপান নীতি হলো কর্তৃত্ব অর্পণের একটি বিশেষ মাধ্যম। এ নীতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। 

পদসোপানের পথ ধরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে সংশ্লিষ্টদের নিকট অর্পণ করা হয়। এ ধরনের কর্তৃত্ব ঊর্ধ্বতন থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।

৩. সঠিক যোগাযোগ : সঠিক যোগাযোগ পদসোপান নীতির একটি অন্যতম সুবিধা। এর মাধ্যমে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে একটি যোগসূত্র তৈরি হয় । 

আরো পড়ুনঃ চলক কাকে বলে

পদসোপান নীতি যোগাযোগের প্রধান নীতিরূপে কাজ করে। বিশ্লেষকদের মতে, "Hierarchy or social system serves as an instrument of integration and coexistence in an organization."

৪. দায়িত্ববোধ সৃষ্টি : দায়িত্ববোধ সৃষ্টিতে পদসোপান নীতির গুরুত্ব অনেক। এ নীতির মাধ্যমে সংগঠনে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। কেননা এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ইউনিটকে স্ব স্ব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রত্যেক ইউনিট ও ব্যক্তি দায়িত্ববান হয়ে ওঠে।

৫. প্রশাসন পরিচালনা : প্রশাসন পরিচালনা পদসোপান নীতির একটি ইতিবাচক দিক। এ নীতির মাধ্যমে প্রশাসনকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। 

পদসোপানের মাধ্যমে উচ্চস্তরের আদেশ নিম্নস্তরে আসে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণের সঠিক নেতৃত্বে নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়িত হয়।2006

৬. কর্মের সমন্বয় : কর্মের সমন্বয় সাধনে পদসোপান নীতির গুরত্ব অনেক। এটি পদসোপান নীতির একটি উল্লেখযো সুবিধা। 

পদসোপান ব্যবস্থা সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সংগঠনকে একটি সাধারণ কর্ম ইউনি পরিণত করতে সাহায্য করে। 

কর্মকে বিভিন্ন স্তরে বিভাজন করা হয়। সঠিকভাবে সংশ্লিষ্টকে দায়িত্ব প্রদান করা হত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কর্মের সমন্বয় সাধন করেন।

৭. চিরন্তন ব্যবস্থা : পদসোপান নীতি চিরন্তন ব্যবস্থা ৰূপে চিহ্নিত। Prof. J. D. Mooney এ নীতিকে সংগঠনের চিরন্ত নীতি রূপে অভিহিত করেছেন। শ্রমবিভাগের কারণে সংগঠনকে বিভিন্ন ইউনিটে বিভক্ত ও ঐক্য তৈরি হয়।

৮. কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব : এ ধরনের নীতির মাধ্যমে সংগঠনে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব গড়ে ওঠে। উচ্চস্তরের কর্মকর্তাগণ সাধারণত কেন্দ্রে অবস্থান করে। অবশ্য উচ্চ স্তরের কর্মকর্তাগণ ক্ষমতাকে বিভিন্ন স্তরে বন্টন করেন। তবে মূল ক্ষমতার অধিকার হলো কেন্দ্র। কেন্দ্রকে ভিত্তি করে সব ক্ষমতা আবর্তিত।

৯. কর্মদক্ষতা : কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির একটি অন্যতম উপায় হলো পদসোপান নীতি। কর্ম বিভাজন নীতি অনুসারে কর্মকে বিভিন্ন ইউনিট ও ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করা হয়। পদসোপানের মাধ্যমে কর্তৃত্ব অর্পণ, শ্রমবিভাগ ও বিশেষীকরণের বিধান প্রতিষ্ঠা পায় ।

অসুবিধা : পদসোপান নীতির কতিপয় ইতিবাচক দিক রয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ নীতিটি সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। এর কতিপয় অসুবিধা তথা সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। নিম্নে পদসোপান নীতির অসুবিধা উল্লেখ করা হলো :

১. লাল ফিতার দৌরাত্ম্য :  লাল ফিতার দৌরাত্ম্য পদসোপান নীতির একটি বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা। পদসোপান নীতিৰ প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফাইল বিভিন্ন টেবিলে দেখা যায়। এতে অনেকে সিদ্ধান্ত দিতে বিলম্ব করে। অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয়। এটি একটি গুরুতর অসুবিধা ।

২. প্রশাসনিক জটিলতা : পদসোপান নীতির একটি গুরুতর সমস্যা হলো প্রশাসনিক জটিলতা। লাল ফিতার কারণে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। এরূপ বিলম্বের ফলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। এ অবস্থা প্রশাসনের জন্য শুভকর নয়। 

৩. অনমনীয়তা : পদসোপান বিধিটি অনমনীয় দোষে দুষ্ট। এক্ষেত্রে Proper Channel Unit of Command এর বিধি- নিষেধ কঠিনভাবে অনুসৃত হয়। সংশ্লিষ্টরা সাধারণ বিধি বিধানের বাইরে যেতে চায় না। এ ধরনের মানসিকতা গণতন্ত্রের জন্য যথার্থ নয়।

৪. কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব হ্রাস : পদসোপান নীতির একটি অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব হ্রাস। এ নীতির মাধ্যমে কেন্দ্রের ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইউনিটের নিকট হস্তান্তরিত করা হয়। ফলে কেন্দ্র অনেকটা কর্তৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। 

৫. অনুষ্ঠান সর্বস্ব : পদসোপান নীতি অনুষ্ঠান সর্বস্ব দোষে দুষ্ট। এতে প্রশাসনিক বিধি বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। 

প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানকে বেশি প্রাধান্য দেন। এতে অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা অপেক্ষা অনুষ্ঠান সর্বস্ব আচরণই বেশি প্রতিফলিত হয়।

৫. ফাঁকির প্রবণতা : পদসোপান নীতির ক্ষেত্রে ফাঁকির প্রবণতার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। 

ঊর্ধ্বতনদের আদেশ অবিকল রূপে মান্য করা হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৭. স্বেচ্ছাচারিতা : পদসোপান নীতির একটি অন্যতম নেতিবাচক দিক হলো স্বেচ্ছাচারিতা। ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা অধস্তন কর্মচারীদের অনেক বিষয়ে বাধ্য করে। ফলে স্বৈরাচারী অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । 

৮. সময়ের অপচয় : সমালোচকদের দৃষ্টিতে পদসোপান নীতিতে সময়ের অপচয় ঘটে। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেকের মতামতের প্রয়োজন হয়। এটি কাম্য নয়।

৯. মানবিকতা উপেক্ষা : মানবিকতা উপেক্ষা পদসোপান নীতির একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা । কারো কারো মতে, এক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্যবস্থাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে বিষয়বস্তুর প্রকৃত আবেদন ও মানবিক দিকটা বেশি উপেক্ষিত হয়। 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পদসোপান নীতির নানাবিধ সুবিধা ও অসুবিধা বিদ্যমান। তবে নানাবিধ অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও পদসোপান নীতি প্রশাসনিক সংগঠনের অপরিহার্য নীতি। 

এ নীতির মাধ্যমে যেকোনো সংগঠনের কাজকে বিভিন্ন অংশ বা স্তরে সাজানো হয়। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি যেকোনো সংগঠনেই পদসোপান নীতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পদসোপান নীতি কি। পদসোপান নীতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ