শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি | Sobe Borat er Namaj Koto Rakat

পবিত্র "শবেবরাত"  উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দিবস। যা উপমহাদেশসহ বিশ্বের অনেক জায়গায় পালন করা হয়। 

যদিও শবেবরাত নিয়ে কিছু কিছু ইসলামী চিন্তাবিদদের আপত্তি রয়েছে। তারপরও আমরা যারা যুগযুগ ধরে শবেবরাত পালন করে আসছি তাদের জন্য এই রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আর এই গুরুত্বপূর্ণ রাতের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম কাজ হলো, এই রাতের নামাজ এবং রোজা। 

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি | Sobe Borat er Namaj Koto Rakat
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি | Sobe Borat er Namaj Koto Rakat

আজ আমরা শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি এবং কীভাবে তা আদায় করতে হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

শবে বরাত কি

শবেবরাতের নামাজ সম্পর্কে জানার আগে আসুন আমরা একটু জেনে নিই শবেবরাতের আসল অর্থ কী। 

আমাদের উপমহাদেশে আমরা যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদায় বিশ্বাসী, তারা শাবান মাসের পনেরতম রাত্রিতে শবেবরাত পালন করে থাকি। 

যা "শবে" ও "বরাত" দুটি শব্দে বিভক্ত। এই শব্দ দুটি এসেছে ফার্সি থেকে। ‘শব’ শব্দের এর অর্থ হয় রাত। আর "বরাত" শব্দের অর্থ হচ্ছে "সৌভাগ্য"। এই দুটোকে মিলিয়ে বলা হয় সৌভাগ্যে রাত বা রজনী। 

আমাদের উপমহাদেশে এই রাতকে বিশেষ মর্যাদায় পালন করে। যার অন্যতম হচ্ছে এই রাতের নামাজ। আসুন আমরা এই নামাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

শবেবরাতের নামাজ সম্পর্কে জানার আগে আসুন আগে জেনে নিই হাদিসে শবেবরাতের নামাজ সম্পর্কে কী বলা আছে। 

আমরা একটি হাদিস দেখতে পাই যা হযরত আলী হতে বর্ণিত, যেখানে তিনি রাসুল সা. এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড় এবং এর দিনে রোজা  রাখো। 

কেননা এই দিন সূর্য ডুবার সাথে সাথে আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিক প্রত্যাশী আমি তাকে রিযিক দান করবো। 

কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে সুস্থতা দান করবো। এভাবেই আল্লাহ ফজর হওয়া পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ ১৩৮৮)

হাদিসটি সম্পর্কে অনেক আলেমগণ জাল কিংবা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারপরও বড় বড় আলেম উলামারা এই হাদিসের রেফারেন্সে শবেবরাতের নামাজ নির্ধারন করে থাকেন। আসুন আমরা শবেবরাতের নামাজ সম্পর্কে জানি। 

শবেবরাতের নামাজ বছরে একবার পড়তে হয় বলে, অধিকাংশ মুসল্লি এই রাতের নামাজ সম্পর্কে ভুলে যায়। 

যদিও এই নামাজ অন্যান্য নফল নামাজের মতোই। তাই এই নামাজের সাথে অন্য নামাজের মধ্যে তেমন কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই। 

রাসুলুল্লাহ সা. থেকে বিশেষ কোনো পদ্ধতির শবেবরাতের নামাজ পাওয়া যায় না। আমরা সাধারণ নফল নামাজের মতোই চাইলে শবেবরাতের নামাজ আদায় করতে পারি। 

শবে বরাতের নফল নামাজ

সাধারণত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, সূরা ফাতেহার সাথে যেকোনো একটি সূরা কিংবা যেকোনো একটি সূরার যেকোনো তিন আয়াত মিলানো। সুতরাং শবেবরাতের নামাজেও আমরা এই নিয়মে নামাজ আদায় করলে তা ইনশাআল্লাহ কবুল হবে।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি | Sobe Borat er Namaj Koto Rakat

কুরআন হাদিসের কোথাও নির্দিষ্ট করে শবেবরাতের নামাজের রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা নেই। তাই একজন ব্যক্তি চাইলে সারারাত নফল নামাজ পড়তে পারে। 

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

আমরা যারা আরবি জানি তারা এভাবে নিয়ত পড়তে পারি, "নাওয়াইতুআন উছল্লিআ লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই সালাতি লাইলাতিল বারাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।"

আর আমরা যারা আরবি পারি না তারা বাংলায় নিয়ত করলেও চলবে। কেননা নিয়ত হচ্ছে মনের ব্যাপার। এটা আরবিতে পড়তেই হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। 

তাই আরবি না জানলে আমরা বলবো, ‘আমি শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলা মুখী হয়ে আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।’

কি কি নফল নামাজ রয়েছে 

শবেবরাতের রাতের সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর হায়াৎ, বরকত, ইমান ইত্যাদির উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য একইসাথে জীবনে অন্যের মুখাপেক্ষী না থাকার জন্য দুই দুই  রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামাজ আদায় ভালো।

এরপর ইশার নামাজ জামাতে আদায় করার পর সারারাত দুই দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করবো। একইসাথে চেষ্টা করবো নিজেদের জীবনে কাজা হওয়া নামাজ গুলো যাকে আদায় করতে পারি।

সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ‘সালাতুল তাসবীহ" এর নামাজ আদায় করা। এই নামাজের অসংখ্য অসংখ্য ফজিলত হাদিসে রয়েছে বলে আলেম উলামারা বর্ণনা করেন।

এছাড়াও আমাদের চেষ্টা করা উচিত তাহাজ্জুদ অথবা কিয়ামুল লাইল আদায় করা। আর এই নামাজের ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে দীর্ঘ সূরা তেলাওাত করা। যদি  লম্বা সূরা জানা না থাকে যা আমরা পারি সেইসব সূরাই পাঠ করা। প্রয়োজনে এক রাকাতে ২ /৪ টা সূরা পাঠ করে হলেও রাকাত লম্বা করা।

শুধু নামাজ পড়লে সারারাত জেগে থাকা সম্ভব হয় না। তাই শুধু নামাজ না পড়ে, দু চার রাকাত নামাজের ফাঁকে ফাঁকে দোয়া, দরুদ, তাসবি, তাহলিল, জিকির, আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করা উত্তম। 

একইসাথে কুরআন এবং হাদিসের বাংলা পড়া সবচেয়ে বেশী উত্তম। কেননা আমরা নামাজ পড়লেও নামাজে কী পড়ছি তা কিছুই অধিকাংশ মানুষ জানি না। তাই এই দিনে আমাদের উচিত হবে কুরআনের অনুবাদ এবং তাফসির পড়ার চেষ্টা করা।

বিতরের নামাজ

অনেকেই আছেন সারারাত নফল নামাজ পড়েন, কিন্তু বিতিরের নামাজ পড়তে ভুলে যান। কিংবা বিতিরের নামাজ ইশার নামাজের পরই আদায় করে ফেলেন। যার কোনোটাই উচিত নয়। 

বিতরের নামাজের পর আর কোনো নফল নামাজ নেই। তাই আগে নফল আদায় করে, সুবহে সাদেকের আগে বিতির শেষ করতে হবে।

শবে বরাতের রোজা

অনেকেই শবেবরাতের নামাজ পড়লেও এই দিনে রোজা রাখে না। তবে আমাদের সকলের উচিত নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা। 

কেননা হাদিসে আছে প্রতি মাসের মধ্যে তারিখে যথা ১৩, ১৪ ও ১৫ দিনে রোজা রাখা উত্তম। যাকে আইয়্যামে বীজের রোজা বলা হয়। তাই শবেবরাতের সাথে এই রোজাও রাখা হয়ে গেলে উত্তম। 

এই রাতে আমাদের করণীয় বর্জনীয়

আমাদের অধিকাংশ মুসলমান এই রাতে নামাজ কালাম ছাড়াও এমন কিছু কাজ করে, যা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে এইসব অনৈইসলামিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা। 

বিশেষকরে, অনেকে রয়েছেন কবরস্থানে গিয়ে তাদের মৃত আত্মীয়স্বজনের কবরে মোমবাতি আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালান। যা কখনোই উচিত নয়। 

একইসাথে অধিক নেকীর  আশায় এই দিনেই বেশি বেশি পরিমাণে দান খয়রাত করেন। সেইসাথে  কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করেন। 

যার সওয়াব থাকলেও এই রাতের সাথে কোনোমতেই সম্পৃক্ত নয়। শুধু তাইনয় অনেকে ইবাদত বন্দেগী ছেড়ে বিভিন্ন কবর ও মাজারে গিয়ে জিয়ারত করেন। যার সাথে শবেবরাতের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এছাড়াও আমাদের উপমহাদেশের রীতিনীতি হচ্ছে এই রাতে হালুয়া, রুটি তৈরি করে এবং গরু কিংবা মুরগীর মাংস রান্না করে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করে। যার কোনো ভীত্তি নেই। 

অনেকে আছেন যারা হিন্দুদের দীপাবলির সাথে মিলিয়ে সারা বাড়ি ও মসজিদ ইত্যাদি নানান আলোকসজ্জাসহ পটকা ফাটিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। যা কখনোই ইসলামী সংস্কৃতি নয়।

শেষ কথা: শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি | Sobe Borat er Namaj Koto Rakat

আমাদের অধিকাংশ ভাই বোনই নিয়মিত নামাজ আদায় করে না। যা খুবই দুঃখজনক। তাই আমাদের নিয়ত থাকা উচিত নিয়মিত নামাজ আদায় করার। একইসাথে অনেক মুসল্লি সারারাত  শবেবরাতের নামাজ পড়লেও ফজরের নামাজ ঘুমের জন্য পড়তে পারে না। 

যা খুবই লজ্জ্বাজনক। কেননা এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সওয়াব হাজার রাকাত নফল নামাজ দিয়ে আদায় করা যাবে না। তাই চেষ্টা থাকতে হবে অবশ্যই অবশ্যই ফজরের নামাজ আদায় করা। 

একইসাথে আমরা যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করি না বা করতে পারি না, তারা এই শবেবরাতের নিয়ত করি। যেন এই শবেবরাত থেকে আমরা নিয়মিত নামাজ আদায় করবো ইনশাআল্লাহ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ