সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো।

সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো
সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো

সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান বিভিন্ন দিক হতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। স্বাধীনতা-উত্তর মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই এ সংবিধান প্রণয়নে বাংলাদেশের গণপরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। 

১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি একটি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন  এবং একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ 'বাংলাদেশ গণপরিষদ' নামে একটি আদেশ জারি করেন। 

পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের আসনসমূহে বাংলাদেশ হতে নির্বাচিত সব সদস্যের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। বাংলাদেশের এ সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠন : গণপরিষদ আদেশ অনুসারে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চের মধ্যবর্তী বিভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব জনপ্রতিনিধি সাবেক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন তাদের নিয়ে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়। 

স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত মোট সদস্যসংখ্যা ছিল (১৬৯ + ৩০০ = ৪৬৯) ৪৬৯ জন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু, ২ জনের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ, 

৫ জন দালাল আইনে আটক, আওয়ামী লীগ থেকে ৪৬ জনের বহিষ্কার ও ১ জনের বৈদেশিক সার্ভিসে যোগদানের কারণে ৬৬ জন সদস্য বাদ পড়েন। ফলে বাকি ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়। 

এদের মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ ১ জন ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) ও ২ জন স্বতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় গণপরিষদের দলীয় নেতা নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা : নিম্নে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

১. গণপরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। তদানুযায়ী ১০ এপ্রিল ঢাকায় গণপরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। 

এ অধিবেশনে গণপরিষদ সদস্যগণ দ্বারা শাহ আব্দুল হামিদ কর্তৃক স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন জনাব মোহাম্মদ উল্লাহ ।

২. সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন : ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল গণপরিষদে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। 

এ ৩৪ জনের মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় এবং ১ জন (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) দলীয় সদস্য। গণপরিষদের ৭ জন মহিলা সদস্যের মধ্যে একজনকে এ কমিটির সদস্য করা হয়। 

খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটিকে ১৯৭২ সালের ১০ জুনের মধ্যে একটি বিলের আকারে সংবিধানের খসড়া গণপরিষদে উত্থাপন করতে বলা হয়। ৩৪ সদস্যের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির ১২ জন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হতো অর্থাৎ ১২ জন হলে কোরাম হতো।

৩. খসড়া কমিটির প্রথম বৈঠক : খসড়া কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৭ এপ্রিল। উক্ত কমিটি সংবিধান সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রস্তাব আহ্বান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

তদানুযায়ী, ১৯৭২ সালের ৮মে বা তার পূর্বে এরূপ প্রস্তাব কমিটির নিকট প্রেরণ করতে বলা হয়। কমিটি এসময়ের মধ্যে মাত্র ১৮টি সুপারিশ বা প্রস্তাব পেয়েছিল। খসড়া কমিটি সর্বমোট ৪৭টি বৈঠকে ৩০০ ঘণ্টায় খসড়া চূড়ান্ত করে। 

১৯৭২ সালের ১০ জুন কমিটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করে। অতঃপর কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে সংবিধান প্রণেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। 

প্রস্তাবিত সংবিধানের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে আলোচনার পর ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর কমিটির শেষ বৈঠকে খসড়া সংবিধান চূড়ান্ত ৰূপে গৃহীত হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।। অধিবেশনে ড.

৪. গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন : ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এ কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করেন। 

১৯ অক্টোবর সংবিধানের ওপর প্রথম পাঠ শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এ পাঠ চলে। এতে সর্বমোট ১০টি বৈঠকে ৩২ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। অতঃপর ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পাঠ চলে। 

৪ নভেম্বর সংবিধানের ওপর তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠ আরম্ভ হয় এবং মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে তা সম্পন্ন হলে বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় ।

৫. আপত্তি ও সুপারিশ উত্থাপন : খসড়া সংবিধানের কোনো কোনো বিষয়ে বিভিন্ন আপত্তি ও সুপারিশ উত্থাপিত হয়। বিশেষ করে ৭০নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলত্যাগ, দল থেকে বহিষ্কৃত, দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কারণে সাংসদ পদ হারানোর বিরুদ্ধেই কমিটিতে বেশি আপত্তি উত্তাপিত হয়। 

কমিটির ৬ জন সদস্য খসড়া সংবিধানের বিধানাবলির প্রতি আপত্তি করেন এবং সে আপত্তি তারা কমিটি রিপোর্টে পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। ১১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে খসড়া সংবিধানের কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়। 

মতানৈক্যের ক্ষেত্রে কমিটি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । কমিটি মোট ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয় এবং খসড়া সংবিধান প্রণয়নে ৩০০ ঘণ্টা ব্যয় হয় ।

৬. গণপরিষদে সংবিধান বিধিবদ্ধকরণ : ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদ পুনরায় অধিবেশনে বসে । আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ঐ দিন গণপরিষদে খসড়া সংবিধান বিলের আকারে পেশ করেন । 

১৩ অক্টোবর গণপরিষদ কিছু সংশোধনীসহ নিজস্ব কার্য প্রণালির বিধিমালা গ্রহণ করে। ১৮ অক্টোবর গণপরিষদে সংবিধান বিল সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা শুরু হয় এবং সমাপ্ত হয় ৩০ অক্টোবর ১৯৭২। 

৩১ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের ধারাওয়ারি আলোচনা চলে গণপরিষদে। ১ নভেম্বর গণপরিষদে নয়টি সংশোধনসহ সংবিধানের আরও ২৬টি অনুচ্ছেদ গৃহীত হয়। 

৩ নভেম্বর সংশোধনীসহ খসড়া সংবিধানের সব অনুচ্ছেদ ও তফসিল গৃহীত হয়। ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জনপ্রতিনিধিগণ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থায়ী সংবিধান বিধিবদ্ধ করেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক রাষ্ট্রের সংবিধানের মতো বাংলাদেশের সংবিধানও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল । 

গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া অনুমোদিত হলে বিভিন্ন দল ও সংগঠন উক্ত সংবিধান সম্পর্কে তেমন জোরালো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। এ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে। ফলে জনসাধারণ সামগ্রিকভাবে উক্ত সংবিধান গ্রহণ করে নেয়। 

স্বাধীনতার মাত্র নয়-দশ মাসের মধ্যে গণপরিষদ জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিতে সক্ষম হয়। এটি বাঙালিদের জন্য একটি অহংকার ও গৌরবের বিষয় 1

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলোচনা করো। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ