বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : সংবিধান একটি দেশের লিখিত দলিল, সমস্ত প্রকার আইনের প্রধান উৎস। এজন্য প্রত্যেক দেশেই রাষ্ট্রপরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে সংবিধানকে ব্যবহার করা হয়। 

এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশের জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধান লিপিবদ্ধ করার নিমিত্ত সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল তা একদিনে হঠাৎ করে হয়নি। 

এর পিছনেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিহিত ছিল । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদেশকে উপজীব্য করে ১৯৭২ সালে 'বাংলাদেশ সংবিধান' প্রণয়ন করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিবৃত্ত : নিম্নে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিবৃত্ত আলোচনা করা হলো : 

১. 'অস্থায়ী সংবিধান আদেশ' জারি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি 'অস্থায়ী সংবিধান আদেশ' জারি করেন। অস্থায়ী সংবিধান আদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। 

অস্থায়ী সংবিধান আদেশবলে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ 'গণপরিষদ আদেশ' ও 'বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য আদেশ' নামে ২টি আদেশ জারি করেন। 

গণপরিষদ আদেশের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণকে নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয় । গণপরিষদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা ।

২. গণপরিষদ গঠন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ‘গণপরিষদ আদেশ' জারি করেন । এটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির প্রথম পদক্ষেপ। 

এ আইনবলে ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে 'গণপরিষদ' গঠিত হয়। 

উল্লেখ্য, ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছিলেন ১২ জন, দালালি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ৫ জন, দুর্নীতি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল ৪৬ জন এবং পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন ২ জন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি নিয়েছিলেন ১ জন । 

ফলে অবশিষ্ট ৪১৩ জন সদস্য নিয়েই গণপরিষদ গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ৪১০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের, ১ জন ন্যাপের এবং অপর ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র ।

৩. গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন : ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। গণপরিষদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদের অধিবেশনে ঘোষণা দেন যে, 

“গণপরিষদ সর্বাধিক কম সময়ে একটি সংবিধান রচনা করবে, যার জন্য দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরগণ গৌরববোধ করবেন।” অধিবেশনের প্রথম দিনেই গণপরিষদ সদস্যগণ কর্তৃক শাহ আব্দুল হামিদ স্পিকার এবং মোহাম্মদউল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।

৪. খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন : ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল, অর্থাৎ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট 'খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি' গঠন করা হয়। 

এ কমিটির ৩৩ জন সদস্যই ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় গণপরিষদ সদস্য এবং ১ জন সদস্য ছিলেন ন্যাপ (মোজাফ্ফর) নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি ছিলেন একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য। 

এছাড়া একজন মহিলা গণপরিষদ সদস্য রাজিয়া বানুকেও এ 'খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে' অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কমিটিকে পরবর্তী ১০ জুনের মধ্যে গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া উপস্থাপন করতে বলা হয়।

৫. খসড়া সংবিধান কমিটির প্রথম বৈঠক : ১৭ এপ্রিল ১৯৭২ সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক বসে। কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত সদস্যদের নিকট খসড়া সংবিধান সংক্রান্ত নথি পেশ করে এর ওপর প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেন। 

কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ মের মধ্যে খসড়া সংবিধান সম্বন্ধে জনমত আহ্বান করা হয়। কমিটি বিভিন্ন স্তরের জনগণ ও সংগঠনের কাছ থেকে ৯৮টি প্রস্তাব ও সুপারিশ পান। ঐ বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট 

ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সংবিধান বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সংবিধান বিষয়ে প্রস্তাব আহ্বান করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এভাবে কমিটি তাদের ৪৭টি বৈঠকে মোট ৩০০ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে গণপরিষদে উত্থাপনের উপযোগী একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে।

৬. কমিটির রিপোর্ট পেশ : গণপরিষদ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ১০ জনের কমিটি প্রাথমিক খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে এবং গণপরিষদে উত্থাপন করে। এরপর কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন ভারত ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করেন এবং সংবিধান প্রণেতাদের সাথে আলোচনা করেন।

তাছাড়া সংবিধানটিকে ত্রুটিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ড. কামাল একজন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে। দেশে ফিরে অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। 

সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করার পূর্বে ৯ অক্টোবর তা আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে উপস্থাপিত ও আলোচিত হয়েছিল। 

১৯৭২ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মিলিত হয়ে খসড়া সংবিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

৭. চূড়ান্ত খসড়া গণপরিষদে উত্থাপন : ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধানটি কমিটির সভাপতি ও আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করেন। 

১৩ অক্টোবর গণপরিষদ নিজস্ব কার্যপ্রণালির বিধিমালা গ্রহণ করে। ১৮ অক্টোবর থেকে গণপরিষদে সংবিধান বিল সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর তা সমাপ্ত হয়। ৩১ অক্টোবর থেকে গণপরিষদে খসড়া সংবিধানের ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলে । 

আলোচনাকালে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যগণ কর্তৃক আনীত কতিপয় সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ৭৩নং অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কর্তৃক আনীত একটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। 

৮. গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধান গৃহীত : ৩ সপ্তাহব্যাপী ১৪৩টি অনুচ্ছেদ সংবলিত খসড়া সংবিধান বিল নিয়ে আলাপ আলোচনা শেষে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বেলা ১টা ৩০ মিনিটে বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধান চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। 

এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “একটি জাতি হিসেবে বাঙালিরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধান প্রণয়ন করলো।”

৯. সংবিধান কার্যকর : ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গৃহীত সংবিধানে চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করার জন্য গণপরিষদ সদস্যগণ পুনরায় মিলিত হন। 

ঐ দিন স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ সংবিধানের মূল বাংলা ও ইংরেজি লিপিতে স্বাক্ষর করেন। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, মন্ত্রিবর্গ ও অন্যান্য গণপরিষদ সদস্য সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। 

কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবিধানে স্বাক্ষর দানে বিরত থাকেন। একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ ও ৪টি তফসিল এবং ১৫৩টি অনুচ্ছেদবিশিষ্ট বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দীর্ঘ নয় মাসের চেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৭২ সালের যে পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করা হয় তা ছিল নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সমষ্টি। 

এ দীর্ঘ সময়ে সংবিধান প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণপরিষদের সদস্যবৃন্দ প্রমুখ ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মেধার ফলস্বরূপ যে সংবিধান প্রণীত হয় তা বাঙালির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ