শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান কি বিস্তারিত জেনে নিন

ইসলাম ধর্মে আল্লাহর কাছে মহা পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মাস হলো রমাদান বা রমজান। 

এই রমজান প্রতিটি মুসলমানের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত খুবই বেশী। 

আর এই রমজানের মূল হলো শেষ রাতের সেহরি। আর এই সেহরি এমন একটি বিষয়, যার সম্পর্কে আমরা অনেকেই বিস্তারিত জানি না।

শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান কি
শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান কি

তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারব সেহরি খাওয়ার বিধান কী? সেহরি খাওয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব। তাহলে আসুন শুরু করি। আশাকরি বন্ধুরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা অনেক কিছুই শিখতে পারবেন, যার অনেক কিছুই আমরা জানতাম না।

সেহরি কী

প্রতিটি ইমানদার মুসলিমকে রোজা রাখার  উদ্দেশ্যে শেষ রাতে বা সুবহে সাদিকের আগে খাওয়া খাবারকে আরবিতে বলা হয়  সাহুর কিংবা সুহুর। রাতের শেষ সময়ের খাবারকে আরবিতে বলা হয় আস-সাহুর। 

এই হিসাবে শাব্দিক অর্থ বিবেচনা করলে শেষ রাতের খাবারকে সাহুর, সুহুর বা সাহরি ইত্যাদি বলা যায়। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশেরও বেশি মানুষ আমরা এই খাবার খাওয়াকে বলে থাকি  সেহরি। 

যা আরবি শাব্দিক অর্থের সাথে মিলে না। আর তাই এই শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা  এই সেহর শব্দের আসল অর্থ হলো জাদু। 

সাহরি গ্রহণের বিধান - সেহরি খাওয়ার বিধান কি

আমরা ছোট বেলা থেকেই সাহরি খেয়ে রোজা রাখলেও শেষ রাতের খাবার গ্রহণ বা সাহরির বিধান কী? তা অনেকেই জানি না। 

একইভা‌বে  ইসলামি শরিয়তে শেষ রাতে সাহরি খাওয়া, রোজাদারের জন্য কি  ফরজ, নাকি ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক কিনা, তাও জানি না। এও জানি না  রোজার বিশুদ্ধতাদর জন্য শেষ রাতের এই  সাহরি গ্রহণের পূর্বশর্ত কী?

আসুন আমরা উপরোক্ত এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করি।  হলো-

প্রথম কথা হচ্ছে, রোজা রাখার জন্য রাতের শেষ সময় সাহরি খাওয়া বা খাবার গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। 

কারো যদি রোজা রাখার উদ্দেশ্য থাকে, এবং সে এই উদ্দেশ্যে  রাতের শেষ সময় সুবহে সাদিকের আগে খাবার গ্রহণ করে তবে সেই ব্যক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত আদায় করার জন্য  সাওয়াব পাবেন।

সাহরির ইসলামি বিধান ও সুন্নাতি দিকনির্দেশনা 

রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাত্রি বা সুবহে সাদিকের আগে খাবার খাওয়া সুন্নাত। পবিত্র হাদিস শরিফে একাধিক বিভিন্ন ঘোষণায় এসেছে যে, সাহরিতে রয়েছে অনেক কল্যাণ ও বরকত। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা সাহরি খাও। কেননা, "সাহরিতে রয়েছে  বরকত।" (মুসলিম শরিফের হাদিস)

অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, "সাহরি খাওয়া হচ্ছে একটি বরকতময় কাজ। সুতরাং তোমরা এই সাহরি খাওয়া পরিত্যাগ করো না। একদম কম করে হলেও এক ঢোক পানি হলেও সাহরি খাও। 

কেননা যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন একইসাথে ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।" (হাদিসটি মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ইবনে হিব্বান গ্রন্থে এসেছে)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে এসেছে, সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো এই যে,  আমাদের মুসলমানদের রোজা এবং আহলে কিতাবি তথা ইয়াহুদি ও নাসারাদের (খ্রিস্টানদের) রোজার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। 

এর অর্থ হলো আমরা  মুসলমানরা শেষ রাতে সাহরি খেয়ে থাকি কিন্তু ইয়াহুদি আর খ্রিস্টানরা শেষ রাতে সাহরি খায় না।" এই হাদিসটি এসেছে, মুসলিম শরিফ এবং নাসাঈ শরিফে

সাহরি খাওয়ার সময়

সাহরি খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো ভোর রাতের শেষ মুহূর্তে খাওয়া। আর এই সাহরি যে পেট ভরে খেতে হবে এমন কিছুই নয়।  বরং প্রয়োজনে অল্প করে খেলেও তা অনেক বরকত ও কল্যাণের হবে। 

যদি এমন হয়, রাতে এমন খাওয়া হয়েছে যে, শেষ রাতে আর খেতে পারছে না। তাহলে তার উচিত হবে  অন্তত এক ঢোক পানি হলেও পান করা। 

এতে করেও সাহরি গ্রহণ করা হয়ে যাবে যা বরকতের।একটি হাদিসে এসেছে, যা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। 

যে হাদিস যায়েদ বিন সাবেত তাকে জানিয়েছেন। তাঁরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাহরি খেয়ে (ফজরের) নামাজ পড়ার জন্য উঠে গেছেন। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কাছে জানতে চাইলেন, ‘সাহরি খাওয়া ও ফজরের আজান হওয়ার মধ্যে ব্যবধান কতটুকু সময়ের? 

এর উত্তরে যায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জানান, "৫০ অথবা ৬০ আয়াত পড়ার জন্য যতটুকু সময় লাগে ততটুকু। এই হাদিসটি বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি শরিফে এসেছে। 

এখানে জেনে রাখা জরুরী যে, মধ্যরাত থেকেই সাহরি খাওয়ার সময় শুরু হয়। আর এই সময় শেষ হয় ফজরের সুবহে সাদিকের আগে। 

তবে সবচেয়ে ভালো হয় ফজরের ওয়াক্তের আগে তথা শেষ রাতেই সাহরি খাওয়া সর্বোত্তম। কেননা এটাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। আরও জানা দরকার যে, কেউ  যদি মধ্যরাত হওয়ার আগে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ে; তবে তার সাহরি খাওয়ার জন্য শেষ রাতে উঠা জরুরী। 

আর এটা ভালো হয় যে,  মধ্য রাতের পর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। এতে সাহরি খাওয়ার বরকত ও হুকুম উভয়ই আদায় করা হয়ে যাবে।

আর যদি কারো রোজা রাখার কোনো উদ্দেশ্য নেই অর্থাৎ নিয়ত নেই, এমনিতেই স্বাভাবিকভাবে রাতের শেষ সময় খাবার খান। তবে তার রোজা হবেনা না। কেননা সে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সাহরি খায়নি। বরং এমনিতেই রাতের শেষে খাবার খেয়েছে। 

যার ইবাদতের উদ্দেশ্য নেই তার ইবাদতও নেই। কেননা আমরা জানি প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।

বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ জানলাম সাহরি খাওয়ার বিধান সম্পর্কে। অর্থাৎ ইসলামে সেহরি খাওয়া কতটুকু জরুরী, কখন সেহরি খেতে হবে, সেহরি খাওয়ার সুন্নাত কী ইত্যাদি। 

এছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা রাতে ঘুমানোর পর আর শেষ রাতে জাগতে পারে নাই। কিন্ত তার রোজা রাখার নিয়ত ছিলো। 

অথচ সে ভোর রাতে উঠে খেতে পারে নাই। তাহলে তার সেহরি না খেলে কি রোজা হবে? এই প্রশ্ন আজ আমাদের অনেকের মনেই হতে থাকে। আসুন আমরা জেনে নিই সেহরি না খেলে কি রোজা হবে কিনা।

সেহরি না খেলে কি রোজা হবে

আমরা ইতিমধ্যে এই আর্টিকেল থেকে জেনে গেছি যে, শেষ রাতে সেহরি খাওয়া কোনো ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং তা সুন্নাত বা  সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর তাই শেষ রাতের এই  সেহরির গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। 

এই শেষ রাতের খাবার সিয়াম পালনের জন্য সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোন কারণে শেষ রাতে সেহরি খেতে না পারলে, কখনোই সিয়াম পালনে বা রোজা রাখায় কোনো ধরনের অসুবিধা বা আপত্তি হতে পারে না। 

এমনকি শুধু তাইনয় ভুল করা ছাড়াও, কেউ ইচ্ছা করেও যদি শেষ রাতে সেহরি না খায় তবুও তার রোজা বা সিয়াম হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরী যে, যেই উদ্দেশ্যে এই সাহরি খাওয়া অর্থাৎ সেহরির বরকত ও ফজিলত, এই থেকে সে বঞ্চিত হবে। 

একইসাথে ইচ্ছাকৃতভাবে (সুযোগ থাকার পরও) সেহরি না খেয়ে সুন্নাহকে অবমাননা করার কারণে হয়তো সে গুনাহগার হতে পারেন। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর হাদীস ও সুন্নাহ হলো সেহরি খাওয়া। তাই সুন্নাহকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিহার করা কখনোই গ্রহণযোগ্য কাজ নয়।

এখানে আরো জেনে রাখা জরুরী যে, সেহরি খেতে খেতে আযান হয়ে গেলে। তাহলে সাথে সাথেই মুখের খাবার ফেলে দিতে হবে। এমনকি আযান চলাকালীন সময়েও আর খাবার গ্রহণ করা যাবে না। 

আবার এমনও ভাবা যাবে না যে, আযান হয়ে গেছে কম খাবার খেয়েছি তাই রোজা ছেড়ে দিলাম। এমনটা করা যাবে না। এতে করে রোজা ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দেওয়ার কারণে গুনাহগার হবে। একইসাথে এই রোজার কাযা আদায় করতে হবে। 

আর্টিকেলের শেষকথাঃ শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান কি

বন্ধুরা আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান কি বিস্তারিত জেনে নিন/ আশা করি আমাদের আজকের এই আরটিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে এখনি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর এই রকম নিত্য নতুন আরটিকেল পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ