১৫টি আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

১৫টি আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
১৫টি আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

১৫টি আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ‘তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল'— বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তর: বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচারের ইতিহাস ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে বলেছেন। পরাধীনতার কারণে পূর্বপুরুষদের ওপর বারবার অমানুষিক অত্যাচার নেমে এসেছে। পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত বলতে পূর্বপুরুষদের পরাধীনতাকেই নির্দেশ করা হয়েছে। 

বিদেশি শত্রুরা আমাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করত। আর তাই, পূর্বপুরুষদের ওপর তাদের অত্যাচারের মাত্রা বোঝাতেই আলোচ্য চরণটির অবতারণা করা হয়েছে। 

প্রশ্ন-২. ‘অতিক্রান্ত পাহাড়' দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? 

উত্তর: ‘অতিক্রান্ত পাহাড়' দ্বারা কবি বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের সংগ্রামী ও সাহসী জীবনকে বোঝাতে চেয়েছেন ।

আমাদের পূর্বপুরুষেরা খুব পরিশ্রমী ও সাহসী ছিলেন। তাঁরা বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরে বেড়াতেন পাহাড়ে অরণ্যে। জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়কে তাঁরা নিজেদের চারণক্ষেত্রে পরিণত করতেন। ‘অতিক্রান্ত পাহাড়' দ্বারা কবি বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের এই সংগ্রামী জীবনকেই বোঝাতে চেয়েছেন ।

প্রশ্ন-৩. আমাদের পূর্বপুরুষেরা কীভাবে পতিত জমি আবাদ করতেন? 

উত্তর: আমাদের পূর্বপুরুষেরা বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে অক্লান্ত শ্রমনিষ্ঠা দ্বারা জমি আবাদ করতেন।

আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক পরিশ্রমী ছিলেন। তাঁরা বন পরিষ্কার করে হিংস্র প্রাণীকে বশ মানিয়ে জমি আবাদ করতেন। জমিতে বীজ বপনের জন্য পূর্বপুরুষেরা আকাশপানে বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা করতেন। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ঝড়বৃষ্টি সহ্য করে তাঁরা জমিতে ফসল ফলাতেন ।

প্রশ্ন-৪. যে কবিতা শুনতে জানে না, সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

উত্তর: যে কবিতা শুনতে জানে না, সে দিগন্তের বিশালতাকে নিজের ভেতর অনুভব করতে পারে না।

দিগন্ত বলতে আমরা বুঝি এমনই এক সীমানাকে যাকে কেবলই দেখা যায়, ছোঁয়া যায় না। দিগন্তের বিশালতাকে বাস্তবিকভাবে নয়, মাপা যায় নিজের মনের ঐকান্তিক আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে। কিন্তু যে কবিতা শোনার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত, সে দিগন্তের সেই ব্যাপ্তিকে নিজের মাঝে ধারণ করতে পারে না।

প্রশ্ন-৫. কবিতা মানুষকে ক্রীতদাসত্ব থেকে মুক্তি দেয় কীভাবে?

উত্তর: প্রেরণাদানের মাধ্যমে কবিতা মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয় । ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় কবি বলেছেন, যারা কবিতা শুনতে জানে না তারা আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে। 

তাদের মধ্যে কখনোই চেতনার সৃষ্টি হবে না। কারণ কবিতা সামাজিক কুসংস্কার ও শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এভাবে প্রেরণাদানের মাধ্যমে কবিতা মানুষকে ক্রীতদাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়।

প্রশ্ন-৬. ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় কবি কেন উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলেছেন?

উত্তর: 'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় মুক্তির স্বাদ নিয়ে, জীবনের সত্যকে উপলব্ধি করাতেই কবি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথাটি বলেছেন।

ঐতিহ্যসচেতন কবি মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তি প্রত্যাশা করেছেন। স্বপ্নময় জীবনে যে সত্যের দিকটি বিদ্যমান, তা কবি তাঁর সত্য বচনে উপস্থাপন করে থাকেন। 

মানুষ তার স্বপ্নের মতো বড় তখনই হবে, যখন সে কবিতায় উচ্চারিত সত্যের বলয়ে জীবনকে গড়ে তুলবে। এ কারণেই কবি তাঁর কবিতায় উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলেছেন ।

প্রশ্ন-৭. ‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি'— ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর: আগুনের উত্তাপে পরিশুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে আলোয় ভরা মুক্তজীবন প্রত্যাশা করেন বলে উজ্জ্বল জানালার অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন করি । 

আগুন বিভিন্ন বস্তুকে জ্বালিয়ে শুচি বা শুদ্ধ করে তোলে। যেমন— লোহাকে পোড়ালে তা থেকে মরিচা দূর হয়। তেমনি সত্য ও ন্যায়ের আগুনে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের মরিচাস্বরূপ জরাজীর্ণতা, কুসংস্কার ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেন। 

ফলে আমরা মুক্ত-স্বাধীন আলোকিত জগতে প্রবেশ করতে পারব। প্রশ্নোক্ত চরণ দুটিতে কবি সেই আলোকিত জীবনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ।

প্রশ্ন-৮. 'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের পরিচয়কে বোঝাতে চেয়েছেন ।

কবি বাঙালি জাতির পূর্ববর্তী জীবনের ঘটে যাওয়া, স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাসের প্রতি জোর দিয়েছেন। কবি এখানে তাঁর শিকড়ের সন্ধান করেছেন। তিনি পূর্বপুরুষদের পেশা ও জীবনযাপন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কবি বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা, যেমন: ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধের কথা বলেছেন। তাই বলা যায়, উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের পরিচয়বাহী নানা অনুষঙ্গের বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন ।

প্রশ্ন-৯. ‘আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি'— এখানে ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: এখানে ‘বিচলিত স্নেহ' বলতে আপনজনের উৎকণ্ঠা বোঝানো হয়েছে । কেউ সামান্য বিপদে পড়লে আপনজনের উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না। কবি সেই উৎকণ্ঠাকে স্মরণ করেন, যা এদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বজনদের মধ্যে অসংখ্যবার প্রকাশ পেয়েছে । আজ সেসব ইতিহাস । কিন্তু তাঁদের সেই দিনের উৎকণ্ঠা, আশঙ্কা, উদ্বিগ্নতা, অপত্যস্নেহ, ভালোবাসা আজও কবিকে আবেগতাড়িত করে । ‘বিচলিত স্নেহ' বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-১০. ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, কবিতায় বারবার কবিতা শোনার কথা বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: প্রেরণা লাভের জন্য 'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় বারবার কবিতা শোনার কথা বলা হয়েছে ।

কবিতা আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে সমরক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে শেখায়। আপনজনের দুঃখে কাতর না হয়ে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগায়। কবিতা শুনলে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। পূর্বপুরুষদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দর সাবলীল জীবনলাভে কবিতা শুনতে হবে। 

কেবল কবিতাই পারে মুক্তির বার্তা বয়ে এনে লাল- সবুজের পতাকা উত্তোলন করতে। আর এ কারণেই কবিতায় বারবার 'কবিতা শোনার' কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-১১. যারা কবিতা শোনে না তাদের অবস্থা কেমন

উত্তর: ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতা অনুসারে যারা কবিতা শোনে না তারা বন্দি ও স্বাধীনতার স্বাদ বঞ্চিত।

যারা কবিতা শোনে না তারা নির্জীব পাথরের মতো। পৃথিবীতে সুষ্ঠু- সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করার বদলে তারা প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে। অন্যের কেনা গোলাম হয়ে জীবন কাটানোই তাদের নিয়তি । এসব মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ বঞ্চিত হয়ে ক্রীতদাসের মতো দিন কাটায় ।

প্রশ্ন-১২. ‘যে মৎস্য পালন করে প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে'- পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন 

উত্তর: ‘যে মৎস্য পালন করে প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে’ পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি বাংলার জনজীবনে নদনদীর অকৃপণ দানকে বোঝাতে চেয়েছেন ।

যে ব্যক্তি নদীর প্রবাহকে বাধা না দিয়ে মাছ চাষের পরিকল্পনা করে, সকল স্নেহ-মমতা ঢেলে দেয়, নদী তাকে সমৃদ্ধ করে। নদী আজীবন স্বচ্ছন্দ গতিতে বহমান। এই গতিকে চিনতে পারলে চলমান নদী কখনো - বিশ্বাসঘাতকতা করে না, বরং মৎস্য সম্পদ দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করে । আলোচ্য পক্তিটি দ্বারা কবি এ বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-১৩. গাভীর পরিচর্যাকারীকে জননীর আশীর্বাদ কেন দীর্ঘায়ু করবে? 

উত্তর: যে গাভীর পরিচর্যা করবে জননী তাকে দীর্ঘায়ুর জন্য আশীর্বাদ করবেন।

গাভি এই অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের অন্যতম অবলম্বন। গাভী পরিচর্যার মাধমে কৃষিজীবী সমাজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধন করে। এখানে জননী বলতে 'গো-মাতা'কে বোঝানো হয়েছে। যে গো-মাতার পরিচর্যা করবে, গো-মাতা তার দীর্ঘায়ু কামনা করবে।

প্রশ্ন-১৪. ‘সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা’– বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তর: প্রশ্নোক্ত চরণটির মাধ্যমে মুক্তির লক্ষ্যে চালিত সশস্ত্র অভ্যুত্থানকে কবিতার পঙক্তিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

মুক্তির জন্য চাই যুদ্ধ। চাই সশস্ত্র অভ্যুত্থান। যুদ্ধ মানুষের জীবনে মৃত্যু আর হাহাকার নিয়ে আসে, আবার নিয়ে আসে স্বাধীনতার সৌন্দর্য, মুক্তির আনন্দ। জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন । তাই কবির মতে, সশস্ত্র অভ্যুত্থান সুন্দর দৃশ্য, যা কবিতার মতোই প্রাণসঞ্চারী ও শৈল্পিক । আলোচ্য লাইন দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে ।

প্রশ্ন-১৫. ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতার আলোকে বাঙালির বেদনাসমূহ উল্লেখ করো 

উত্তর: ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায় বাঙালির সংগ্রামের বেদনাবহুল চিত্র বর্ণিত হয়েছে।

আলোচ্য কবিতায় কবি আমাদের পূর্বপুরুষের সম্পর্কে বলেছেন, পরাধীনতার কারণে তাদের ওপর বারবার অমানুষিক অত্যাচার নেমে এসেছে। বিদেশি শত্রুরা তাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করত। বাঙালি জাতির ওপর পরিচালিত অত্যাচারের বেদনা ফুটে উঠেছে 'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ