১৩টি বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর সহ জেনে নিন

১৩টি বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর সহ জেনে নিন
১৩টি বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর সহ জেনে নিন

প্রশ্ন-১. ‘আমরা অনশন ভাঙব না’– উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট পালন করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বন্দি ছিলেন । সেখানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন জনাব মহিউদ্দিন আহমদ । 

রাজবন্দিদের বিনাবিচারে আটক রাখার প্রতিবাদে তাঁরা অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে অনশন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাই আলোচ্য উক্তিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য লেখকের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে ।

প্রশ্ন-২. 'যদি এ পথে মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে'- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: প্রশ্নের উক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক। ‘বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায় বর্ণিত হয়েছে, ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার বিনা বিচারে এদেশের অনেক নেতাকর্মীকে জেলে আটক করে রাখে। 

পাকিস্তান সরকারের এমন নীতির প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

সরকার যতদিন না এদেশের নেতাকর্মীদের মুক্তি দেবে ততদিন তাঁদের এই অনশন ধর্মঘট অব্যাহত রাখতে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। আর এজন্য প্রয়োজনে তাঁরা জীবন দিতেও প্রস্তুত। এ বিষয়টি বোঝাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।

প্রশ্ন-৩, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল পরিবর্তন করতে দেরি করেছিলেন কেন?

উত্তর: নিজেদের জেলখানা পরিবর্তনের খবর অন্যদের জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল পরিবর্তন করতে দেরি করেছিলেন। 

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদকে জেল পরিবর্তন করে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি নানা রকম বাহানায় দেরি করতে থাকেন যাতে জাহাজ ফেল হয়। 

নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের এ খবর ঢাকার নেতাকর্মীদের কাছে পৌছানোর জন্য তিনি বুদ্ধি ও কৌশল করেন এবং জাহাজ ফেল করাতে সক্ষম হন। এরপর সহকর্মীরা খবর পায় এবং পরবর্তী জাহাজে তাঁরা ফরিদপুর যান ।

প্রশ্ন-৪. “বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।” ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেরি করে জাহাজ ঘাটে যাবার জন্য কৌশল করে ট্যাক্সিচালককে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদকে গোপনে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চাচ্ছিলেন এই খবর নেতাকর্মীরা যেন জানতে পারে। 

ট্যাক্সিচালক খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন রাতের জাহাজ ধরার জন্য। বঙ্গবন্ধু কৌশল করে ট্যাক্সি ধীরে চালাতে বলেন, যেন জাহাজ ধরতে না পারে। 

কেননা, জাহাজ ছেড়ে দিলে নেতাকর্মীদের কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর তাই দেরি করে যাবার জন্য বঙ্গবন্ধু কৌশল করে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন ।

প্রশ্ন-৫. ‘অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে'— লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?

উত্তর: অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে নিজের সহকর্মীদের উদ্দেশে লেখক এ কথা বলেছিলেন ।

‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী এক মহান নেতা । 

মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা পোষণ করতেন তিনি। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে জীবন দেওয়াকে গৌরবজনক বলে মনে করতেন। তাই মৃত্যুকে তিনি ভয় করতেন না। উদ্ধৃত উক্তিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বিশ্বাসই ধ্বনিত হয়েছে।

প্রশ্ন-৬. ‘নাশতা খাবার ইচ্ছা আমাদের নাই’– কে, কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন?

উত্তর: নাশতা করার বাহানায় সহকর্মীদের নিজের অবস্থান জানানোর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৌশল করে নাশতা করার কথা বলেছিলেন।

শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনা বিচারে রাজবন্দিদের আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমদ ঢাকা জেলে অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নেন। 

বিষয়টি জানতে পেরে কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ফরিদপুর জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় । 

এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর নাশতা করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন, তাঁদের স্থানান্তরের কথাটি নেতাকর্মীদের জানানোর জন্য একটি বাহানা আবশ্যক। তাই তিনি সুবেদারের কাছে বাইরে নাশতা করতে যাওয়ার আবদার করেছিলেন।

প্রশ্ন-৭. শেখ মুজিব কেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনটি কাটিয়েছিলেন?

উত্তর: দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শেখ মুজিব উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনটি কাটিয়েছিলেন ।

সরকার ২১শে ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। শেখ মুজিব জানতেন বাংলার দামাল ছেলেরা এ নির্দেশকে অমান্য করে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। 

তাই তিনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন। আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন।

প্রশ্ন-৮. বঙ্গবন্ধুর মতে মুসলিম লীগ কী অপরিণামদর্শিতার কাজ করল? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ভাষা আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যা করাটা মুসলিম লীগের অপরিণামদর্শী কাজ বলে বঙ্গবন্ধু মনে করেন।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলন গড়ে তোলে। মেডিকেল কলেজের হোস্টেল এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার না করে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে । 

পৃথিবীতে আর কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয়নি। তাই বঙ্গবন্ধুর মতে এটি মুসলিম লীগের অপরিণামদর্শী কাজ ।

প্রশ্ন-৯. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে'— কোন প্রসঙ্গে লেখক একথা বলেছিলেন?

উত্তর: পাকিস্তান সরকার ভাষা আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করার পরিবর্তে গুলি করে হত্যার অপকৌশল গ্রহণ প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোত্ত কথাটি বলেছিলেন।

১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাজপথে নামে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। 

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে প্রতিহত করতে এমন ঘৃণ্য অপকৌশল গ্রহণ করলে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি এদেশের মানুষের ঘৃণা বাড়তে থাকে। 

এরকম প্রেক্ষাপটে 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার লেখক শেখ মুজিবুর রহমান মনে করেন, পাকিস্তান সরকারের এ ধরনের অপকৌশলই তাদের পতন ত্বরান্বিত করবে।

প্রশ্ন-১০. শেখ মুজিবের আব্বার চোখে পানি এসেছিল কেন?

উত্তর: শেখ মুজিবের করুণ অবস্থা দেখে তাঁর আব্বার' চোখে পানি এসেছিল।

অনশন শুরু করার পর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। 

দিনের পর দিন জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে না খেয়ে থাকতে থাকতে শেখ মুজিবের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, তাঁকে দেখে তাঁর আব্বার চোখে পানি এসে যায়। -

প্রশ্ন-১১. মহিউদ্দিনের মুক্তির অর্ডার না আসাটা শেখ মুজিবকে পীড়া দিয়েছিল কেন?

উত্তর: মহিউদ্দিনের প্রতি শেখ মুজিবের বিশেষ টান ছিল বলে তাঁর মুক্তির অর্ডার না আসাটা শেখ মুজিবকে পীড়া দিয়েছিল ।

শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন একসাথে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। দুজন একসাথে অনশন শুরু করেছিলেন। জেলে সবসময় পাশাপাশি থাকতেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ হৃদ্যতা ছিল বলে মহিউদ্দিনের মুক্তির অর্ডার না আসাটা শেখ মুজিবকে পীড়া দিয়েছিল ।

প্রশ্ন-১২. 'ভরসা হলো, আর দমাতে পারবে না' – বিশ্লেষণ করো? 

উত্তর: বাংলা ভাষা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে যাচ্ছে— এমন দূরদর্শী ভাবনা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত মিছিলে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির খবর গ্রামগঞ্জে পৌছালে সেখানেও প্রতিবাদ শুরু হয়। 

মানুষ বুঝতে পারে, শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। অধিকার আদায়ে তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। বাঙালির এই জাগরণ দেখে দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু এই ভেবে ভরসা পান যে, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের আর দমাতে পারবে না। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে তাদের আর কোনো উপায় নেই ।

প্রশ্ন-১৩. রাজনৈতিক কর্মীরা কেন নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের কথা ভুলতে পারবে না?

উত্তর: নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের অপরিসীম ত্যাগের জন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মী তাদের কথা ভুলতে পারবে না ।

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার নারায়ণগঞ্জবাসীর ওপর শোষণ-নিপীড়ন চালিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। তা সত্ত্বেও তারা নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের দমাতে পারেনি। 

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এবং রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য তারা সংগ্রাম চালিয়ে যায় এবং হরতাল পালন করে। দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের ত্যাগ অপরিসীম। তাই রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের ভুলতে পারবে না।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 14 August

    Sekh mujid is a Dictator, he had killer, he killed many people

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ