১৩টি ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর


১৩টি ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. কবি কেন কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন?

উত্তর: আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন ।

প্রতিবছর শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। কবির মনে হয়, যেন ভাষা-শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের ত্যাগের মহিমা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে স্তবকে। 

তাই বলা যায়, একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেই কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন ।

প্রশ্ন-২. কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: কৃষ্ণচূড়া ভাষা আন্দোলনে নিহত শহিদদের রক্তদানের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয় বলে কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে। 

শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকে। কিন্তু এই কৃষ্ণচূড়া কবির কাছে অন্য ফুলের মতো সাধারণ কোনো ফুল নয় । 

কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় লাল রং যেন ভাষা আন্দোলনে, জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ। তাই কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-৩. ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং'- চরণটি দ্বারা ভাষা- শহিদদের আত্মত্যাগের তাৎপর্যকে বোঝানো হয়েছে ।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালি জাতি ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল । এ আন্দোলনের সময় ঢাকা শহরে ফুটেছিল রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া । টকটকে লাল রঙের এ ফুল কবির কাছে শহিদদের রক্তের রং বলে মনে হয়। এজন্যই কবি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলে অভিহিত করেছেন ।

প্রশ্ন-৪. চেতনার রঙের বিপরীত রং চোখে ভালো লাগে না কেন?

উত্তর: চেতনার রঙের বিপরীত রংটি অশুভ হওয়ায় চোখে ভালো লাগে না ।

একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রং এটি আমাদের স্বকীয়বোধকে জাগ্রত করে। কিন্তু অন্য রং সন্ত্রাস আনে এবং এই রঙের অশুভ ছায়ায় পথ, ঘাট এমনকি ঘাতকের অশুভ আস্তানাও ঢেকে যায়। সমস্ত জাতিকে নিমজ্জিত করতে চায় এই রং। এজন্যেই চেতনার রঙের বিপরীত রং চোখে ভালো লাগে না ।

প্রশ্ন-৫. ‘এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট' বলতে বাঙালির ওপর সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের শোষণের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতা লাভ করে বাঙালির ওপর শোষণ- নিপীড়ন, অন্যায়-অত্যাচার চালাতে থাকে। বাঙালির জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের শোষণের কালো থাবা বিস্তার লাভ করে। উল্লিখিত চরণে সেই বিষয়কেই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-৬. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? 

উত্তর: ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসনাধীন দেশকে কবি ঘাতকের অশুভ আস্তানা বলেছেন ।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অনাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষ ফুঁসে ওঠে। একুশের রক্তাক্ত চেতনা জনগণের মনে প্রেরণা জোগায়। 

কিন্তু এ চেতনার বিপরীত শক্তি সেসময় বাংলার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসররা এদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকে অবরুদ্ধ করে মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। ফলে পুরো দেশ যেন হয়ে ওঠে ঘাতকের অশুভ আস্তানা। 

প্রশ্ন-৭. ‘কেউ বা ভীষণ জেদি – কার কথা বলা হয়েছে?— ব্যাখ্যা করো । 

উত্তর: আলোচ্য উক্তিটিতে প্রতিবাদী বাঙালিদের কথা বলা হয়েছে । পাকিস্তানিদের জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নে বাঙালির জীবন বিপন্ন হয়েছিল। সেই বিপন্ন সময়টিতে কবির মনে হয়েছিল সারাদেশ যেন

ঘাতকের অশুভ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল ১৯৬৯ সালে। এসব প্রতিবাদী বাঙালির মধ্যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ভীষণ জেদ লক্ষ করা যায়। 'আলোচ্য উক্তিটির দ্বারা পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির এই দৃঢ়চেতা মনোভাবের কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-৮. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় মানবিক বাগান বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: মানবিক বাগান বলতে কবি মানবিক মূল্যবোধপূর্ণ পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন ।

মনুষ্যত্ব, ন্যায় ও মঙ্গলের জগৎ হলো মানবিক বাগান। মানুষের সুন্দর ও মহৎ চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে মানবিকতায়। সমস্ত সৎ গুণাবলির যথার্থ বিকাশ সাধিত হয় মনুষ্যত্বের উজ্জীবনে। আলোচ্য কবিতায় এ দিকটিকেই কবি মানবিক বাগান বলেছেন ।

প্রশ্ন-৯. ‘১৯৬৯' সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ| উত্তর: ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গে গণ-আন্দোলনের সূচনা হয় বলে ‘১৯৬৯' সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয়।

১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র- অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই

আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা দাবির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য। পরবর্তীতে এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘১৯৬৯’ সালটি চিরস্মরণীয় ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

প্রশ্ন-১০, বরকত ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে কেন?

উত্তর: বরকত মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে ।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে শহিদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত ও সফিউর। 

কবি ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনকে ৫২-র এই মিছিলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি মনে করেন, এই আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তারা যেন ভাষা-শহিদ বরকতের মতোই ঘাতকের থাবার মুখে নিজেদের সঁপে দিয়েছে। অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে বরকতের মতো তরুণরাই নিজেদের উৎসর্গ করেছে।

প্রশ্ন-১১. ‘সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা'- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: কবি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী বাংলাকে যেন ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালামের বিপ্লবী মুখাবয়বে খুঁজে পেয়েছেন । 

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার ওপর পাকিস্তান সরকারের অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন শুরু করে এবং বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে। 

এরই ধারাবাহিকতায় তাদের শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালাম, বরকতসহ অনেকেই ছিলেন এ আন্দোলনের মূল প্রেরণা। এ বিষয়টি বোঝাতে গিয়েই আলোচ্য চরণটিতে কবি বিপ্লবী ভাষা শহিদ সালামের প্রসঙ্গ টেনেছেন ।

প্রশ্ন-১২, ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় কবি বর্ণমালাকে অবিনাশী বলেছেন কেন?

উত্তর: ভাষা-শহিদদের আত্মত্যাগ অবিনশ্বর— এ কথা বোঝাতেই কবি বর্ণমালাকে অবিনাশী বলেছেন ।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালির পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। '৫২-তে ভাষা-শহিদ সালামদের রক্তে অর্জিত বাংলা ভাষাই ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে প্রতিবাদীদের মুখে ধ্বনিত হয়েছে। 

কবি দেখেছেন, ১৯৫২ সালের সংগ্রামের অর্জন ১৯৬৯ সালের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। তাই কবি বাংলা ভাষার প্রিয় বর্ণমালাকে অবিনাশী বলেছেন ।

প্রশ্ন-১৩. ‘শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায়'— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা শহিদদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির বিষয়টি যে একইসঙ্গে আমাদের আনন্দের ও দুঃখের দ্যোতনা দেয় সে দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তরুণদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। 

অনেক ত্যাগ ও সীমাহীন কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত এ সম্মান আমাদের মনে শিহরণ জাগায়। আমরা সে আনন্দে হাসি; কিন্তু পরমুহূর্তেই স্বজন হারানোর বেদনায় আমাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ