তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর  - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর  জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর  । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন। 

তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর
তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর 

তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর 

তৃতীয় আব্দুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি বর্ণনা কর

উত্তর : ভূমিকা : স্পেনের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক গোলযোগ তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন এবং এর ফলে স্পেনের মুসলিম শাসনের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। 

একদিকে খ্রিস্টান, ধর্মান্ধ খ্রিস্টান, বহিঃশত্রু, ইবনে হাফসুন এর ন্যায় দুর্ধর্ষ সমর নেতা ও খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র ও সামরিক অভিযানে আব্দুর রহমান প্রায় বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন ।

→ তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি : অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা ও পূর্ণনিরাপত্তা বিধান করে আব্দুর রহমান আল নাসির এক বলিষ্ঠ ও বন্ধু সুলভ বৈদেশিক নীতি প্রবর্তন করেন। নিম্নে আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতিসমূহ উল্লেখ করা হলো :

১. দ্বিতীয় ওরডোনা ও সাংকোর বিপর্যয় : ৯১৪ খ্রিস্টাব্দে লিওর অধিপতি দ্বিতীয় ওরডোনা মেরিদা প্রদেশ আক্রমণ করলে আব্দুর রহমান সেনাপতি আহমদ বিন আবু আবদারের নেতৃত্বে একটি বিশাল বাহিনী ওরডোনার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ওরডোনা তার মিত্র ন্যাভারের রাজা সাংকোর সহায়তায় তুদেলা ও ভালতিয়ারা বিধ্বস্ত করেন। 

৯১৮ খ্রিস্টাব্দে হাজিব বদরের নেতৃত্বে প্রেরিত বাহিনী ওরডোনার বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে। ৯২০ খ্রিস্টাব্দে আব্দুর রহমান স্বয়ং সৈন্য পরিচালনা করে ওরডোনাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন এবং সান ইসতেভান, ক্লুনিয়া ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অধিকার করেন। 

অতঃপর ন্যাভারের দিকে অগ্রসর হয়ে আব্দুর রহমান সাংকোকে পরাজিত করেন। আব্দুর রহমানের প্রেরিত বাহিনী ন্যাভারের রাজধানী প্যামপ্লোনা অধিকার করেন।

২. দ্বিতীয় রামীরো : দ্বিতীয় ওরডোনার মৃত্যুর পর গৃহযুদ্ধে ওরডোনার পুত্র দ্বিতীয় রামীরো জয়লাভ করে লিওর সিংহাসনে আরোহণ করে। সারাগোসার মুসলিম শাসনকর্তার সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে রামীরো আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। 

আব্দুর রহমান সারাগোসা দখল করে বিদ্রোহী গভর্নরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন । ন্যাভারের প্রতিনিধি রানি তোতা মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করলেও ৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে লিওর রাজা ও তার প্রতিনিধি রানিমাতা তোতা সালামানাকার দক্ষিণে সংঘটিত আল হানদেগা বা খন্দকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে।

৩. তৃতীয় ওরডোনা : ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দ্বিতীয় রামিরোর পুত্র তৃতীয় ওরডোন, আব্দুর রহমানের সাথে সন্ধি স্থাপন করেন। এরূপে আব্দুর রহমানের রাজ্য এব্রো নদী থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত এবং পীরেনীজ থেকে জিব্রাল্টার প্রণালি পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে ।

তৃতীয় ওরডোনার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী মোটা সাংকো তৃতীয় আব্দুর রহমানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে খলিফা আহমদ ইবনে ইয়ালাকে এক বিশাল বাহিনীসহ টলেডোয় প্রেরণ করেন। সাংকো পরাজিত হলে তার চাচাতো ভাই চতুর্থ ওরডোনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

চতুর্থ ওরডোনা পরাজিত হয়ে পলায়ন করে এবং লিওর ভূতপূর্ব রাজা চতুর্থ ওরডোনা ন্যাভারের রানিসহ কর্ডোভায় তৃতীয় আব্দুর রহমানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন ।

৪. ফাতিমীয়দের সাথে বিরোধ : উত্তর আফ্রিকার উবায়দুল্লাহ আল মাহদি ফাতিমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে স্পেন জয় করার জন্য স্বপ্ন দেখেন । তাই তিনি স্পেনের বিদ্রোহী নেতা ওমর ইবনে হাফসুনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। 

কর্ডোভার মরমী কবি ও দার্শনিক ইবনে মাসারা এবং প্রখ্যাত ভূগোলবিদ ইবনে হায়কালের প্রভাবে স্পেনে ফাতেমীয় সমর্থকদল গড়ে উঠে সেভিলের বনু ইসাহাক নেতা আহমদও এ দলে যোগদান করেন। এখানে খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান আহমদকে বন্দি করে দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান উবাদুল্লাহ আল মাহদির কার্যকলাপে দক্ষিণ সীমান্তের ভূমধ্য সাগরের উপকূলবর্তী দুর্গগুলোকে সুরক্ষিত করেন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করেন। কিন্তু ফাতেমীয় খিলাফতের সর্বশ্রেষ্ঠ খলিফা আল মুইজ তৃতীয় আব্দুর রহমানের সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। এ সময় তৃতীয় আব্দুর রহমান খ্রিস্টানদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। 

এ সময় সিসিলির গভর্নর স্পেন দখলের জন্য আল মুইজের জন্য একটি জাহাজ প্রেরণ করেন। কিন্তু এ জাহাজ আলেকজান্দ্রিয়ার স্পেনীয় জাহাজ কর্তৃক আক্রান্ত হয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আল মুইজ স্পেনের বন্দর লুণ্ঠন করার জন্য হাসান বিন আলীকে নির্দেশ দেন। 

হাসান স্পেনের আলমেরিয়া শহর আক্রমণ করে ব্যাপক লুণ্ঠন করেন। এ খবরে তৃতীয় আব্দুর রহমান সেনাপতি গালিবের নেতৃত্বে একটি নৌবাহিনী ফাতিমীয়দের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। 

কিন্তু গালিব ব্যর্থ  হলে আহমদ বিন ইয়ালাকে ৭০টি জাহাজসহ আফ্রিকার উপকূলে কয়েকটি স্থান দখল করেন। আসলে এ অভিযানগুলো আল মুইজ বা তৃতীয় আব্দুর রহমানের জন্য কোন সুফল বয়ে আনেনি ।

৫. বিভিন্ন দেশের সাথে দূত বিনিময় : আব্দুর রহমানের বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় দূত বিনিময়ের মাধ্যমে। দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের পর কনস্টান্টিনোপল ও কর্ডোভার মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। 

তার দরবারে কনস্টান্টিনোপল সম্রাট ৭ম কনস্টান্টাইন, জার্মান নৃপতি প্রথম অটো, ফ্রান্সের রাজা প্রোভেন্স ও ইতালির রাজাগণ দূত প্রেরণ করেন। ৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন দূত প্রথমবার কর্ডোভায় পৌঁছে এবং বিনিময়ে আব্দুর রহমান ক্যাথলিক বিশপ হিশাম ইবন হুদদাইলকে উপহার সামগ্রীসহ সম্রাটের নিকট প্রেরণ করেন। 

মৈত্রী বন্ধনে মূলত তিনি শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মধ্যযুগীয় খলিফা অপেক্ষা আধুনিক যুগের রাষ্ট্রনায়কদের দৃষ্টান্ত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তৃতীয় আব্দুর রহমান একজন দক্ষ সামরিক ও বিচক্ষণ প্রশাসনিক নেতা ছিলেন । তিনি রাজ্যের বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দূর করে বহিঃশত্রুদের সমুচিত শিক্ষা দেন। 

ফলে পরবর্তীতে খ্রিস্টানগণ তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে সাহস পায় নাই, বরং বিভিন্ন রাষ্ট্র তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দূত প্রেরণ করতে থাকে। ফলে তৎকালীন বিশ্বে তৃতীয় আবদুর রহমানের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর 

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তৃতীয় আব্দুর রহমানের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর  । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ