ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয় । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয় |
ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়
- অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি কী? কেন এগুলো মান্য করা হয়।
উত্তর : ভূমিকা : যেকোনো দেশের শাসনব্যবস্থায় সাংবিধানিক, মৌলিক ও বিধিবদ্ধ আইনসমূহের সঙ্গে সঙ্গে শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন রীতিনীতি গড়ে ওঠে। এখা আইনের কাঠামোকে পরিপূর্ণ করে।
প্রত্যেক দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে এই সমস্ত রাজনীতির সৃষ্টি হয়। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সামান্য বজায় রেখে বিভিন্ন সময়ে কতকগুলো রীতিনীতির উদ্ভব হয়েছে। ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রভাব।
সাংবিধানিক রীতিনীতির সংজ্ঞা : সাংবিধানিক রীতিনীতি বলতে বুঝায় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত এমন সমস্ত নিয়ম পদ্ধতিকে যা পারস্পরিক বুঝাপড়া ও চুক্তির মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছে এবং যা আদালত কর্তৃক আইন হিসেবে বলবৎযোগ্য না হলেও শাসন পরিচালনা কার্যে ব্যাপৃত সমস্ত ব্যক্তি বাধ্যতামূলক বলে স্বীকার করে নিয়েছে। বিভিন্ন চিন্তাবিদ সাংবিধানিক রীতিনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নরূপ।
এ. ভি. ডাইসি (A. V. Dicey) বলেছেন, "Conventions are rules for determing the mood in which discretionary poulens of the crown (or the Ministers as the servants of the crown) ought to be exercised." অর্থাৎ, রাজশক্তির স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতি নির্ধারণকারী বিধিসমূহই হলো সাংবিধানিক রীতিনীতি।
অধ্যাপক জগ (Ogg)-এর মতে, "Conventions consist of understanding practices and habits whichs alone regulate a large portion of the actual relations and operations of the public authorities."
এডমন্ড বার্ক (Admond Barke)-এর মতে, “আইনের বিধানসমূহের প্রয়োগ পদ্ধতি সাংবিধানিক রীতিনীতির মাধ্যমে স্বীকৃত হয়। "
ওয়েত ও ফিলিপস বলেছেন, “সাংবিধানিক রীতিনীতি হলো প্রথা এবং প্রয়োজনীয়তার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নিয়মাবলির সমষ্টি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের উৎস হলো মানুষের সুস্পষ্ট মতৈক্য।”
জি. সি. মার্শাল ও জি. মুভি বলেছেন, “সাংবিধানিক রীতিনীতি হলো সংবিধান সম্পর্কিত।"
আইভর জেনিংস বলেন, “সাংবিধানিক রীতিনীতি সংক্রান্ত ব্যবস্থা হলো ঐ রীতিনীতি আইনের শুভদেহ রক্ত মাংসে জীবন্ত করে তুলে।
তারা আইনের দলিলরূপে সংবিধানকে পরিনা এবং কার্যকর হতে সাহায্য করে।”ও. হুড ফিলিপস বলেন, “সাংবিধানিক রীতিনীতি বলতে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার নিয়মাবলিকে বুঝায়, যাদের ক্ষেত্রে ঐ নিয়মাবলি প্রযোজ্য তারাই ঐ নিয়মাবলিকে বাধ্যতামূলক বলে গণ্য করে।
কিন্তু ঐ নিয়মাবলি আইন নয়। কারণ আদালত এবং পার্লামেন্ট তাদের প্রয়োগ করতে বাধ্য নয় ।" সর্বোপরি সাংবিধানিক রীতিনীতি বলতে এমন সব অলিখিত নিয়মকানুন এবং পদ্ধতিকে বুঝায়, যা দীর্ঘকালের আচার-আচরণ এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে গড়ে ওঠেছে।
এ রীতিনীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যাদের কার্যাবলি এসব রীতিনীতির সাথে জড়িত একমাত্র তারাই এসব রীতিনীতিকে মেনে চলে বা তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে।
সাংবিধানিক রীতিনীতি মান্য করার কারণ : সাংবিধানিক রীতিনীতি ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা ও রীতিনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো আইন নয় আবার এগুলো আদালতগ্রাহ্যও নয় তা সত্ত্বেও সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো কঠোরভাবে মান্য করা হয়।
এগুলো অমান্য করা হলে আদালত গ্রাহ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। তাই সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করলেও শাস্তি ভোগ করার কোনো আশঙ্কা নেই। নিচে সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো মান্য করার কারণগুলো আলোচনা করা হলো।
১. জনমতের চাপ : ব্রিটেনে সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো মেনে চলার মূল কারণ হলো জনমতের চাপ। সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রতি ব্রিটেনের জনগণের আনুগত্য প্রদর্শন, এবং তাদের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত সরকারকে রীতিনীতি মান্য করতে বাধ্য করে।
ব্রিটেনের জনগণ প্রত্যাশা করে যে, পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশন আহুত হবে এবং কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। লিওক বলেন, “এ সকল প্রত্যাশা পূরণ না করা হলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, তাই এ সকল প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে।”
২. বাস্তব উপযোগিতা : ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার সাংবিধানিক রীতিনীতি ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় অনস্বীকার্য। এদের লঙ্ঘন ব্রিটেনে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতাকে ক্ষুণ্ণ করে।
তাছাড়া সাংবিধানিক রীতিনীতি সরকারকে সময়ের প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। তাই এ বাস্তব উপযোগিতার উপলব্ধি রীতিনীতিগুলোকে মান্য করতে উদ্বুদ্ধ করে।
৩. ইংরেজ জাতির রক্ষণশীলতা : সাংবিধানিক রীতিনীতির কারণ হিসেবে ইংরেজ জাতির রক্ষণশীল মানসিকতা ও ঐতিহ্যকে উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ জাতি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত।
তারা ঐতিহ্যের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তারা সাংবিধানিক রীতিনীতিকে সাংবিধানিক ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে মনে করে। স্বাভাবিকভাবেই রক্ষণশীল ইংরেজ জাতি এ রীতিনীতিগুলোকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী।
৪. সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা : সাংবিধানিক রীতিনীতির মাধ্যমে সংবিধানের ধারাবাহিকতা এবং পরিবর্তনশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। সাংবিধানিক রীতিনীতি অতীতের সাথে বর্তমান এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের সংযোগ রক্ষায় সাহায্য করেছে।
এসব রীতিনীতি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সমন্বয় সাধন করেছে। আর এভাবেই সাংবিধানিক রীতিনীতি সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাহায্য করে।
৫. আইনে পরিণত না হওয়ার আশঙ্কা : সাংবিধানিক রীতিনীতি অমান্য করা হলে তা আইনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সম্ভাবনাও সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলতে বাধ্য করে।
উদাহরণস্বরূপ ১৯০৯ সালে পর্তসত্তা সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে কমন্সসভা কর্তৃক গৃহীত রাজস্ব বিলকে অগ্রাহ্য করে। আর এ কারণেই কমন্সসভা লর্ডসভার ক্ষমতা হ্রাসের জন্য ১৯১১ সালে পার্লামেন্টারি অ্যাক্ট বিধিবন্ধ করে।
৬. শাসনব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষা : ব্রিটেনে শাসনব্যবস্থায় সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এ রীতিনীতিগুলো ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হলে শাসনব্যবস্থার ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সরকার অচল ও গতিহীন হয়ে পড়বে।
৭. রাজনৈতিক কারণে : দীর্ঘকাল ধরে সমাজে প্রচলিত প্রথা অমান্য করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এহেন পরিণতিতে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই প্রথাগত বিধান মেনে চলে।
৮. নমনীয়তা ও গতিশীলতার সঞ্চারণ : সाবিধানিক রীতিনীতি সাংবিধানিক আইনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নমনীয়তা ও গতিশীলতা সঞ্চারিত করে। আইনের কাঠামো জটিল।
সাংবিধানিক রীতিনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংবিধানের গতিশীলতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে পারেন। সাংবিধানিক রীতিনীতির সাহায্যে সংবিধান সহজেই পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে।
৯. জনগণের সম্মত্তি : সাংবিধানিক রীতিনীতি মান্য করার আরেকটি কারণ হলো জনগণের সম্মতি বা জনসমর্থন। যে মন্ত্রিসভা সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলোকে অমান্য করে সে মন্ত্রিসভাই জনমতের সমর্থন হারায়। তাই সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রধান উৎস হলো জনমত।
১০. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : সুদীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা প্রথা বা রীতিনীতি যে-ই অমান্য করুক না কেন জনগণ তাদের ঘৃণা করেন এবং আস্থা প্রত্যাহার করে নেয়। এরূপ মনস্তাত্ত্বিক কারণেও কেউ এ প্রথাকে অমান্য করতে সাহসী হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনে সাংবিধানিক রীতিনীতি সংবিধানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ব্রিটেনে সাংবিধানিক রীতিনীতি বা প্রথা প্রায় সবাই মেনে চলে তারা এই নীড়িগুলোকে ধর্ম হিসেবে মান্য করে।
কেউ এই প্রথা না মানলে তাকে সবাই ঘৃণা করে। এসব কারণে ব্রিটেনে সাংবিধানিক রীতিনীতিগুলো কঠোরভাবে মান্য করা হয়। কারণ এ নীতিগুলো ব্রিটেনের সাংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয় । যদি তোমাদের আজকের ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয় পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।