ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

ভূমিকা: প্রত্যেক দেশের সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ধারণা ছাড়া সেই দেশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায় না। 

ভাড়া এই বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতেই অন্যান্য দেশের শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনামূলক আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়। 

তাই যেকোনো দেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত আলোচনা, অপরিহার্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। একথা ব্রিটিশ সংবিধানের সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে প্রযোজ্য। তাই ব্রিটিশ সংবিধান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত আলোচনা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

→ ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ : ব্রিটিশ সংবিধানের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 

১. মূলত অলিখিত : বিশ্বের শাসনতন্ত্রগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র হলো অলিখিত সংবিধানের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ব্রিটিশ সংবিধানকে অলিখিত বলা হয়, কারণ সেখানে কোনো একক দলিল বা দলিল সমষ্টি নেই, যাতে ব্রিটিশ সংবিধানের মূল কাঠামো ও কার্যধারা সম্পর্কিত বিধানাবলি সন্নিবেশিত হয়েছে। 

কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো গণপরিষদ কর্তৃক এ সংবিধান রচিত হয়নি। বিভিন্ন সাংবিধানিক রীতিনীতি, সংস্কার, নজির, প্রথা প্রভৃতির মধ্যে এ সংবিধানকে মূল নীতিগুলো ছড়িয়ে আছে।

২. এককেন্দ্রিক : ব্রিটিশ সংবিধানের কাঠামো এককেন্দ্রিক। ব্রিটেনে আইন প্রণয়ন এবং শাসন বিভাগের ক্ষমতা যথাক্রমে পার্লামেন্ট ও মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত। 

ব্রিটেনের আঞ্চলিক, স্বায়ত্তশাসন সংস্থা থাকলেও তারা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা ন্যস্ত হয়। তবে কোনো কোনো ব্যাপারে উত্তর আয়ারল্যান্ড করে, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা ভোগ করে, যেটি এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবুও ব্রিটেনের সংবিধান এককেন্দ্রিক।

৩. নমনীয় : ব্রিটেনের সংবিধান অত্যন্ত নমনীয় প্রয়োজনানুসারে আইন প্রবর্তনের পদ্ধতিতেই তাকে পরিবর্তিত করা চলে। এতে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয় না। 

শাসনতান্ত্রিক আইন ও সাধারণ আইনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে মতবাদের দিক দিয়ে ব্রিটেনের সংবিধানকে নমনীয় বললেও কার্যত ইংরেজদের রক্ষণশীলতার জন্য তা তেমন সুপরিবর্তনীয় নয়।

৪. সংসদীয় গণতন্ত্র : ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রয়েছে। পার্লামেন্টীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দুটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো। 

(ক) নিয়মতান্ত্রিক শাসক ও প্রকৃত শাসনের মধ্যে পার্থক্য এবং 

(খ) পার্লামেন্ট বা আইনসভার নিকট প্রকৃত শাসকের সায়িত্বশীলতা। ব্রিটেনে নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন রাজা বা রানি এবং প্রকৃত শাসনবর্গ হলেন মন্ত্রিসভা।

৫. বিবর্তনশীল : এ সংবিধান একদিন বা এক নির্দিষ্ট সময়ে৷ গড়ে ওঠেনি অথবা কোনো মতবাদ থেকেও উৎপত্তি হয়নি। যুগ যুগ ধরে স্বাভাবিক নিয়মে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এর বর্তমান রূপ সুস্পষ্ট হয়েছে। 

ক্রমিক ধারাবাহিকতায় এ সংবিধান অন্যান্য ব্রিটিশ সংবিধান বিশেজ্ঞ অধ্যাপক জেনিংস (Jennings) বলেন, “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি করা হয়নি, ধীরে ধীরে তা জন্মলাভ করেছে।" এটি বিবর্তনের উত্তম ফসল।

৬. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতি : ব্রিটিশ সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্থান নেই। কারণ এখানে আইন বিভাগ ও শাসনবিভাগ পরস্পর হতে স্বতন্ত্র এবং পারস্পরিক প্রভ হতে মুক্ত নয়।

 তাই ব্রিটেনে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতাই প্রাধান্য অর্জন করেছে। অধ্যাপক রবসন বলেন, “ব্রিটেনে শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিশেষ কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না।”

৭. ক্ষমতার সমাবেশ : ব্রিটেনে শাসনব্যবস্থার ক্ষমতার সমাবেশের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আইন বিভাগ ও শাসনবিভাগ এক সাথে কাজ করে। পার্লামেন্ট ও কেবিনেট একসূত্রে গাঁথা।

৮. সরকারের দায়িত্বশীলতা : ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সরকারের দায়িত্বশীলতা। মন্ত্রিপরিষদ আইন পরিষদের নিকট দারী থেকে শাসনকার্য নির্বাহ করে। 

আবার মন্ত্রিপরিষদ জনসাধারণের নিকট পারী রয়েছে। রাজার নিকটও মন্ত্রিসভা দায়ী। সুতরাং দায়িত্বশীলতা ব্যতীত তা অনুধাবন করা অত্যন্ত কঠিন।

৯. সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রাধান্য : ব্রিটিশ সংবিধান এখানেই অসাধারণ যে, এর সাংবিধানিক রীতিনীতি সংখ্যায় অনেক বেশি। সাংবিধানিক রীতিনীতি ব্রিটিশ সংবিধানের প্রকৃতিকে অনেকাংশে পরিবর্তন করেছে। 

এর উপস্থিতির জন্যই ব্রিটেনের সংবিধানকে অলিখিত সংবিধান বলা হয়। ব্রিটেনের সংবিধানের কাঠামো এ সাংবিধানিক রীতিনীতির উপর গড়ে উঠেছে।

১০. প্রথার প্রাধান্য : ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রথার প্রভাব বিভিন্ন পর্যায়ে হাজারো প্রথা ব্রিটিশ সংবিধানকে সমৃদ্ধ করেছে। প্রথার প্রভাবের ফলে এ সংবিধান মূলত অলিখিত | সংবিধানে রূপান্তরিত হয়েছে।

১১. অগণতান্ত্রিক উপাদান: ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হলেও এতে অগণতান্ত্রিকতার ছাপ লক্ষ করা যায়। ব্রিটেনে রাজতন্ত্র অন্যতম অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। 

অবশ্য বলা হয় যে, রাজা বা রানি নিয়মতান্ত্রিক শাসক মাত্র কোনো প্রকৃত ক্ষমতা তার হস্তে নাই। আবার লর্ডসভা আরেকটি অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, কারণ এর সদস্যদের উত্তরাধিকার সুত্রে নিয়োগ লাভ করে।

১২. নাগরিক অধিকার : অন্যান্য উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ন্যায় ব্রিটেনেও নাগরিক অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। ব্রিটেনের সংবিধান মূলত অলিখিত। 

তাই ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকারসমূহ সংবিধানের দ্বারা সুনির্দিষ্ট ও সুরক্ষিত নয় তবু ব্রিটিশ নাগরিকগণ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় অধিক নাগরিক অধিকার ভোগ করেন।

১৩. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা : ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থা কার্যকরী দ্বি- দলীয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ব্রিটেনের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলে হলো রক্ষণশীল দল (Conservative party) এবং শ্রমিক দল (labour party)।

নির্বাচনি রাজনীতি এবং সরকার গঠনে অন্যান্য দলের ভূমিকা অত্যন্ত গৌণ। ব্রিটেনের সংসদীয় রাজনীতি রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করেই অবর্তিত হয়।

১৪. পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব : এ শাসনতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব। প্রয়োজনানুসারে যে। কোনো আইন প্রবর্তন, সংশোধন ও পরিবর্তন পার্লামেন্ট করতে পারে। সমস্ত ক্ষমতার প্রতীক রাজা বা রানি, তাই দেশের শাসনব্যবস্থাকে রাজকীয় প্রজাতন্ত্র নামে অভিহিত করা হয়।

১৫. তত্ত্ব ও বাস্তবতার ব্যবধান : এ সংবিধানের মূল বক্তব্য ও তার প্রয়োগের মধ্যে আশ্চর্য রকম বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তাই বেজহট (Bagehot) বলেন, “এখানে যা মনে হয় তা যথার্থ নয় এবং যা যথার্থ তা কখনো মনে হয় না।”

১৬. আইনের শাসন : আইনের শাসন (Rule of law) ব্রিটিশ ব্যবস্থাকে মহীয়ান করে তুলেছে। সুতরাং আইনের শাসন ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় ।

১৭. মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার : ব্রিটিশ সরকার যথার্থই মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ ব্রিটেনের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে কমন্সসভার আস্থাভাজন হয়ে তা ক্ষমতা প্রয়োগ করে। 

পার্লামেন্টের আস্থা হারালে মন্ত্রিপরিষদ ক্ষমতাচ্যুত হয়। অন্যদিকে, মন্ত্রিপরিষদ, জনগণও রাজা বা রানির নিকট দায়ী থাকে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনের সংবিধানকে কতকগুলো সাধারণ ও মৌল বৈশিষ্ট্য দান করেছে। ব্রিটিশ সংবিধান বিশ্বের অন্যতম সংবিধান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানের ব্রিটিশ সংবিধানের প্রভাব লক্ষ করা যায়। 

তবে ব্রিটিশ সংবিধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, 'গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশের মতো লিখিত না হলেও এ সংবিধানে যুগের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। যদি তোমাদের আজকের ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ