দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.

দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর
দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর

দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর

  • অথবা, সালতানাতকে সুদৃঢ়করণে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।
  • অথবা, দিল্লির সালতানাতকে দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর বিবরণ দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : তুর্কিস্তানের ইলবারী বংশোদ্ভূত বলবনের প্রকৃত নাম ছিল বাহাউদ্দিন। প্রথম জীবনে তিনি মোঙ্গলদের নিকট বন্দি হয়ে খাজা জামাল উদ্দিনের নিকট ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রীত হন। 

১২৩২ সালে জামাল উদ্দিন ক্রীতদাস বলবনকে নিয়ে দিল্লিতে আসেন এবং সুলতান ইলতুৎমিশের নিকট বিক্রি করে দেন। বলবন ইলতুৎমিশের চল্লিশ দাস গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য ছিলেন এবং স্বীয় বহুমুখী প্রতিভাবলে ক্রমে সুলতানের বিশেষ আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। 

১২৪৬ সালে নাসিরউদ্দিন দিল্লির সুলতান হয়ে বলবনকে তার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ১২৪৯ সালে বলবন স্বীয় কন্যাকে সুলতান নাসিরউদ্দিনের সাথে বিবাহ দেন এবং “উলুখ খান' উপাধি লাভ করেন।

১২৬৬ সালে মৃত্যুর পূর্বে নিঃসন্তান নাসিরউদ্দিন তার প্রধানমন্ত্রী ও শ্বশুর বলবনকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। ফলে ১২৬৬ সালে বলবন দিল্লির সালতানাতে বসেন।|

দিল্লি সালতানাত সুরুকরণে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের অবদান : দিল্লি সালতানাত সুদৃঢ়করণে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো ।

১. পারসিক কায়দায় শাসনব্যবস্থার বিন্যাস : সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন পারসিক কয়লায় তার শাসনব্যবস্থার বিন্যাস করেন। তার রাজদরবার ছিল পারসিকদের মতো জমকালো। 

সুলতান সর্বদা রাজকীয় পোশাকে সুসজ্জিত থাকতেন। তিনি তার রাজদরবারে হাসি-তামাশা ও আমোদ-প্রমোদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সুলতানের এসব ব্যবস্থা রাজদরবার ও জনগণের | মনে ভীতিমিশ্রিত আনুগত্য সৃষ্টি করেছিল।

২. সেনাবাহিনী পুনর্গঠন : বলবন সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি | করতে পেরেছিলেন যে, শক্তিশালী ও সুদক্ষ সেনাবাহিনী ব্যতীত সাম্রাজ্যে কর্তৃত্ব স্থাপন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। 

তাই তিনি প্রচলিত জায়গীর প্রথার অবসান ঘটিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সৈন্যবাহিনীতে নিয়োগ দান করেন এবং তাদের পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেন। 

তিনি 'আরিজ-ই-মামালিক' (সৈন্যবিভাগের কর্মকর্তা)-এর পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তাকে তার কর্তৃত্বাধীনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন।

৩. সুলতানের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার : সুলতান ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তার দুর্বল ও অযোগ্য উত্তরাধিকারীদের সময় শাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটলে সুলতানের ক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। 

বলবন রাজদরবারের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য 'রক্তপাত ও কঠোর নীতি" (Blood and iron policy) গ্রহণ করেন। 

তিনি সুলতানের প্রতি অভিজাতবর্গের মন থেকে মুছে যাওয়া শ্রদ্ধা ও ভীতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভীতি প্রদর্শন ও কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। 

এভাবে শীঘ্রই তিনি রাজকর্মচারী ও সকল শ্রেণির মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করে সুলতানের হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন।

৪. চল্লিশচক্রের বিদ্রোহ দমন : সুলতান ইলতুৎমিশ ক্রীতদাসদের মধ্য থেকে যে চল্লিশ জন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ক্রীতদাসকে সংঘবদ্ধ করেন তাদেরকে চল্লিশ চক্র' বা 'বন্দেগান- ই-চেহেলগান' নামে ডাকা হতো। 

ইলতুৎমিশের শাসনামলে 'চল্লিশ | দাস গোষ্ঠী' (চল্লিশচক্র) রাজ্যের উচ্চপদগুলো দখল করে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করে। 

বলবনের সময়ে এই ক্রীতদাসদের ক্ষমতা এত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, তাদের জন্য সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি তাদের জায়গীর বাজেয়াপ্ত করেন এবং অনেককে হত্যা করে শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেন।

৫. গুপ্তচর প্রথা প্রবর্তন ; সুলতান বলবন রাজপরিবারের সদস্যবৃন্দ, অভিজাত সম্প্রদায় ও অন্যান্য কর্মচারীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন। 

সমগ্র রাজ্য এই গুপ্তচরের ভয়ে কম্পমান থাকত। গুপ্তচরের প্রতি সবার ভীতি এতই প্রবল ছিল যে, যুবরাজ ও আমির-উলামাগণ পর্যন্ত নিরীহ ও অসহায় প্রজাদের নির্যাতন করতে সাহস করতেন না।

৬. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : সুলতান বলবন কঠোর ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ফলে সাম্রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করার সাথে সাথে সুলতানের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। 

বলবনের বিচারব্যবস্থা ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে অপরাধী চক্র তার বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্য করার সাহস পেত না। স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের প্রতিও তিনি কখনো পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করতেন না।

৭. রাজকোষ পুনর্গঠন : রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গঠিত বিশাল সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য বলবন রাজকোষ পুনর্গঠন করে অর্থনৈতিক | সাচ্ছলতা আনয়নের প্রয়াস চালান। তিনি রাজকোষ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতা লাভ করেন।

৮. মেওয়াটিসের বিদ্রোহ দমন : সুলতান ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর থেকে দিল্লির নিকটবর্তী এলাকায় ও দায়াব অঞ্চল মেওয়াটের দুর্ধর্ষ রাজপুত্র ও অন্যান্য দস্যু-অক্ষরের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনকালেও দুর্ধর্ষ মেওয়াটিরা তুরস্কের পথিকদের সর্বস্ব লুটে নিত ও নিরীহ পল্লীবাসীদের উৎপীড়ন করে সমগ্র মেওয়াটি অঞ্চল ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছিল এমনকি তারা দিল্লির উপকন্ঠে পর্যন্ত পাইকারীভাবে নরহত্যা, লুটতরাজ এবং অত্যাচার কার্য চালিয়ে জনজীবন বিপন্ন করে তোলে। সুলতান বলবন ১২৬৭ সালে মেওয়াটিদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করে তাদের ধ্বংস করেন।

৯. দোয়াবের বিদ্রোহ দমন : দোয়াবের হিন্দু দস্যু-তস্করেরা দোয়াব অঞ্চলে বে-আইনী কার্যকলাপ পরিচালনা করে জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছিল। তাদের অপকর্মের সুবিধার জন্য দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। 

এ জন্যে স্বয়ং সুলতান বলবন দোয়াবের দুর্ধর্ষ হিন্দুদের বিদ্রোহ দমনে অগ্রস হন। সুলতান ১২৬৭ সালে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে কাম্পিল, পাতিয়ালা এবং ভোজপুরে অবস্থিত তাদের শক্তিশালী দুর্গগুলো ধ্বংস করে দেন। এভাবে বলবন দোয়াবের বিদ্রোহ দমন করেন এবং বাংলার সাথে দিল্লি পর্যন্ত সড়কপথের নিরাপত্তা বিধান করেন।

১০. ভূধ উপজাতিদের বিদ্রোহ দমন : সুলতান বলবন জুধ পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতীয়দের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। 

সোহিলাখণ্ডের হিন্দুগণ বিদ্রোহের ধ্বজা উত্তোলন করলে বলবন তাদেরকেও সমুচিত শাস্তি প্রদান করে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর থেকে দিল্লি ও তার সংলগ্ন এলাকাসমূহ কখনো কোনো দস্যু-ডুস্করের হামলার শিকার হয়নি।

১১. মোগল অভিযান প্রতিহতকরণ : ১২৭৯ সালে মোঙ্গলগণ ভারত আক্রমণ করলে শাহজাদা মুরাদ ও বুঘরা খান এবং দিল্লির মালিক মোবারক সম্মিলিতভাবে তাদের পরাজিত করেন। কিন্তু ১২৮৫ সালে মোঙ্গলরা তামারের নেতৃত্বে পাঞ্জাব আক্রমণ করলে যুবরাজ মোহাম্মদ নিহত হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজ্যের স্থায়িত্ব ও সংহতি বজায় রাখার জন্য বলবন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার কার্যকর পন্থা অবলম্বন করে দিল্লি সালতানাতের স্থায়িত্বকে দীর্ঘস্থায়ী করেন। 

এজন্য বলবনকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত সংরক্ষণকারী বলা হয়। বিজিত রাজ্যের সংহতি বিধান ও সকল বিশৃঙ্খলার মূলোৎপাটন করে তিনি একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজন মেটাতে সমর্থ হন, যা সালতানাতের রাজ্য সম্প্রসারণের পরবর্তী পর্যায়ের পথকে প্রশস্ত করে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের দিল্লির সালতানাত দৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ