শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.

শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর
শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর

শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর

  • অথবা, দিল্লি সালতানাত সুদৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর ।
  • অথবা, দিল্লি সালতানাত সুদৃঢ়করণে গিয়াসউদ্দিন বলবনের অবদান লিখ।

উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্যযুগের ইতিহাসে গিয়াসউদ্দিন বলবন নিঃসন্দেহ একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি (রক্তপাত ও কঠোর নীতির) দ্বারা সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন করেন এবং দেশকে বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেন। 

তাই ড. মজুমদার, রায় চৌধুরী ও দত্তেরা মতে, সুলতান হিসেবে বলবনের জীবন ছিল অভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং বৈদেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রামের জীবন।

গিয়াসউদ্দিন বলবন বলবন ছিলেন জন্মসূত্রে ইলবারি তুর্কি। তার প্রকৃত নাম ছিল বাহাউদ্দিন এবং বলবন তার উপাধি। 

যৌবনে তিনি মোঙ্গলদের হাতে বন্দি ও বিক্রীত হয়ে ১২৩২ সালে ইলতুৎমিশের দরবারে আসেন। তিনি বিখ্যাত চেহেলগান নামে পরিচিত ইলকৃমিশের তুর্কি ক্রীতদাস বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

নিজের গুণ ও যোগ্যতাবলে তিনি সুলতান নাসিরউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। নাসিরউদ্দিনের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি তার উত্তরাধিকারী মনোনীত হন এবং ১২৬৬ সালে গিয়াসউদ্দিন নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব : আপন মহিমায় যে কয়জন শাসক ভারতীয় উপমহাদেশে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন তাদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন বলবন ছিলেন অন্যতম। নিম্নে শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো-

১. রাজকোষ পুনর্গঠন : রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং বিশাল সৈন্যবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বলবন রাজকোষ পুনর্গঠিত করে দেশে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন করেন।

২. সামরিক সংস্কার : গিয়াসউদ্দিন বলবন একটি সুদক্ষ ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করে অভিজ্ঞ ও সুযোগ্য সেনাপতির ওপর দায়িত্ববার অর্পণ করেন। তিনি সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদেরকে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন এবং সামরিক স্পৃহা অটুট রাখার জন্য তিনি তাদের মধ্যে জায়গীর প্রথার স্থলে নিয়মিত বেতন পানের প্রচলন শুরু করেন।

৩. আকর্ষণীয় রাজদরবার : সুলতানের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ও ভীতি সৃষ্টির জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন পারস্য ও গজনির অনুকরণে জমকালো ও আকর্ষণীয় রাজদরবার রক্ষার ব্যবস্থা জন্য তার রাজসভায় হাসি-ঠাট্টা, নৃত্য-গীত, জুয়াখেলা, মদ্যপান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করেন এবং নীচ জাতির লোকদের সাথে উঠাবসা ও উপহার গ্রহণ বন্ধ করে দেন।

৪. গুপ্তচর প্রথা : সাম্রাজ্যের গোপনীয় প্রতিবেদন সংগ্রহের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন একটি শক্তিশালী গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন। তারা অভিজাত সম্প্রদায় এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কার্যকলাপের গোপনীয় সংবাদ সুলতানের নিকট পেশ করত।

৫. সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ : গিয়াসউদ্দিন বলবন শরিয়ত অনুযায়ী শাসন কায়েম করেন এবং সৎ, ধর্মপরায়ণ ও যোগ্য লোকদের রাজকার্যে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। তার রাজকীয় মর্যাদাজ্ঞান এতই প্রখর ছিল যে, তিনি তার স্বী ভৃত্যদের সম্মুখে কখনও সাধারণ পোশাকে বের হতেন না।

৬. ন্যায়পরায়ণতা : গিয়াসউদ্দিন বলবন স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব নীতির ঊর্ধ্বে থেকে ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে কার্য সম্পন্ন করতেন।

৭. মেওয়াটীর দস্যু দমন : দুর্ধর্ষ মেওয়াটী রাজপুত্র দস্যুরা পথিকদের সর্বস্ব লুটতরাজ করতো ও নিরীহ পল্লীবাসীদের উৎপীড়ন করে সমগ্র মেওয়াটী অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলে গিয়াসউদ্দিন বলবন মেওয়াটি দস্যুদের দমন করেন।

৮. দোয়াবের বিদ্রোহ দমন : বলবন দোয়াব অঞ্চলের দুর্ধর্ষ দস্যুদের দমনের দিকেও নজর দেন। তারা বাংলার সাথে দিল্লির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করত। 

সুলতান ১৯৬৭ সালে কাম্পিল, পাতিওয়ালা ও ভোজপুর প্রভৃতি স্থানে তাদের প্রধান ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে বাংলা ও দিল্লির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কন্টকমুক্ত করেন।

৯. পার্বত্য উপজাতি ও রোহিলাখণ্ডের বিদ্রোহী দমন : সুলতান গিউয়াউদ্দিন বলবন ক্ষুধ পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতীয়দের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন এবং রোহিলাখণ্ডের হিন্দুদের বিদ্রোহ দমন করে সেখানে শান্তি স্থাপন করেন।

১০. চল্লিশ চক্রের বিদ্রোহ দমন : গিউয়াউদ্দিন বলবন সুলতান ইলতুৎমিশ ক্রীতদাসদের মধ্যে হতে যে ৪০ জন বিশ্বস্ত ক্রীতদাসকে সংঘবদ্ধ করে একটি চল্লিশ চক্র গঠন করেছিলেন যারা পরবর্তীতে দুর্বল সুলতানদের শাসনামলে রাজ্যের মধ্যে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। ফলে বলবন কঠোর হস্তে তাদের ক্ষমতা খর্ব করেন।

১১. মোঙ্গল আক্রমণ রোধ : পিউয়াউদ্দিন বলবনের রাজত্বকালে মোঙ্গল দস্যুরা প্রায়ই দিল্লির উপকণ্ঠে আক্রমণ করত। মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বলবন একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। 

মোঙ্গল আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি সীমান্তে অনেক দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন এবং সে সকল দুর্গে ভার পুত্র মুহাম্মদ এবং বুগরাখানকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

১২. বাংলার বিদ্রোহ দমন : গিউয়াউদ্দিন বলবনের মোঙ্গল- আক্রমণের সুযোগে বাংলার শাসক ভূমিল খান সুলতান মুগিসউদ্দিন উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বলবন তাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন এবং পুত্র বুগরা খানকে বাংলার সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

১৩. মুসলিম সভ্যতা রক্ষা : পিউয়াউদ্দিন বলবন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি ও রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মধ্য এশিয়ার তুর্কিস্তান, ট্রান্স, অক্সিয়ানা পারস্য, খাওয়ারিজম, গজনি প্রভৃতি ১৫টি দেশ হতে বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি ও রাজন্যবর্গদের দ্বারা দরবার অলংকৃত করেন। 

ভারতের তোতা পাখি নামে পরিচিত আমির খসরুও তার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। বলতে গেলে তার শাসনামলে দিল্লিতে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং এজন্য বলবন মুসলিম সভ্যতার রক্ষক হিসেবে খ্যাত ছিলেন।

১৪. কৃতিত্ব মূল্যায়ন : গিউয়াউদ্দিন বলবন অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করেন। তিনি গভীর কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করেন, এজন্য তিনি Blood and Iron policy গ্রহণ করেন। 

তিনি গভীর কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করেন। প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সংস্কার সাধন করে দিল্লি সালতানাতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক, নিষ্কলুষ ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশে শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেও বলবন সাম্রাজ্যের সকল প্রকার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যার সমাধান করেন। 

এজন্য তাকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত সংরক্ষণকারী বলা হয়ে থাকে। তিনি সুদীর্ঘ ৪০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিল্লি সালতানাতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। 

এজন্য ঐতিহাসিক ভি. ডি. মহাজন বলেন, ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে বলবন একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের শাসক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভূমিকা আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ