গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকার উক্তিটি কার

গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য জনগণের শাসন উক্তিটি কার
গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য জনগণের শাসন উক্তিটি কার

গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকার উক্তিটি কার

  • অথবা, “গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার, কিন্তু জনগণের দ্বারা পরিচালিত নয়।" আব্রাহাম লিংকন- উক্তিটি আলোচনা কর।
  • অথবা, “জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য ও জনগণের শাসনই হলো গণতন্ত্র” -উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, "গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা - ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্র সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছেন তা মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা: গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি উত্তম শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্র হলো জনগণ পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণের জয়গান করা হয়। 

এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এ সত্যটি উপলব্ধি করেছেন। আমেরিকার স্বনামধন্য প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। 

তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, জনগণের শাসনই হলো উত্তম শাসনব্যবস্থা যা গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণেই তিনি উচ্চারণ করেছেন, “জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য ও জনগণের শাসনব্যবস্থাই হলো গণতন্ত্র ।

— গণতন্ত্র : গণতন্ত্র শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Democracy যা লাটিন Demos এবং Kratin থেকে এসেছে। Demos শব্দের অর্থ জনগণ এবং Kratia শব্দের অর্থ ক্ষমতা। 

অর্থাৎ গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা অন্যভাবে বলা যায়, গণতন্ত্র হলো এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ থাকে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনসাধারণের উপর ন্যস্ত থাকে।

→ গণতন্ত্র সম্পর্কে আব্রাহাম লিংকনের মতবাদ: আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে এক জনসভায় বলেছিলেন, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য ও জনগণের শাসনব্যবস্থাই হলো গণতন্ত্র। তার এ ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে কতিপয় মৌলিক দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :

১. জনসম্মতি : তার প্রদত্ত সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলেই প্রথম জনসম্মতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার ধারণা মতে, গণতন্ত্র জনমতের উপর প্রতিষ্ঠিত। 

গণতন্ত্রের সরকার জনমতের ভিত্তিতে কাজ করে। জনমতের উপেক্ষা করলে পরবর্তী নির্বাচনে সরকারের পরিবর্তন সূচিত হয়। তাই গণতন্ত্র হলো জনসম্মতিভিত্তিক সরকার।

২. জনগণের সরকার: আব্রাহাম লিংকনের প্রদত্ত সংজ্ঞার অন্যতম দিক হলো জনগণের সরকার। তাঁর মতে, এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার। 

এ সরকার জনগণের কথা বলে, জনগণের সাথে থাকে, জনগণের স্বার্থে কাজ করে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এ সরকার পরিচালিত।

৩. যুক্তিপ্রসূত শাসনব্যবস্থা : গণতন্ত্র হলো একটি যুক্তিপ্রসূত শাসনব্যবস্থা। এ ধরনের শাসনব্যবস্থা জনগণের যুক্তি দ্বারা পরিচালিত। 

গণতন্ত্রে সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ থাকে। তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যুক্তিপ্রসূত সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ।

৪. দায়িত্বশীলতা : গণতন্ত্র একটি অধিকতর দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা। অন্যান্য শাসনব্যবস্থায় চেয়ে এ শাসনব্যবস্থা বেশি দায়িত্বশীল। 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সদস্যগণ জনগণের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে দায়ী থাকে। তার সংসদে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এ সরকার দায়িত্বশীল সরকার।

৫. জনকল্যাণ: এধরনের শাসনব্যবস্থায় জনকল্যাণকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। সরকার সর্বদা জনস্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে। 

আব্রাহাম লিংকন এ বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। জনকল্যাণ নিশ্চিত হলে নাগরিক জীবনের পরিবর্তন আসে।

৬. স্বাধীনতা সংরক্ষণ: আব্রাহাম লিংকন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার 'ক্যাখ্যা প্রসঙ্গে স্বাধীনতা বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। তার প্রদত্ত সংজ্ঞায় স্বাধীনতার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

৭. অধিকার ও স্বার্থসংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় কাজ করে। গণতন্ত্রে জনগণ, শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।

৮. শিক্ষাবিস্তার: গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহণ করে । জনগণ শিক্ষিত হলে কুসংস্কারমুক্ত ও আধুনিক মানসিকতার অধিকারী হয়। ফলশ্রুতিতে সরকারের পক্ষে কাজ করা সহজ হয়।

৯. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ব্যক্তিত্বের বিকাশের সুযোগ বেশি সরকার ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কাজ করে। জনগণ শাসনকার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠে।

১০. নারী উন্নয়ন : গণতান্ত্রিক সরকার নারী উন্নয়নে বেশ . কাজ করে। নারীরা জনগণের বিরাট অংশ তাদেরকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। গণতান্ত্রিক সরকার নারীসমাজ তথা জনগণের জন্য কাজ করে।

সমালোচনা গণতন্ত্র সম্পর্কে আব্রাহাম লিংকনের মতবাদ গৃহীত হলো তা সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তাঁর মতবাদ নিম্নোক্তভাবে সমালোচিত হয়েছে :

১. রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতির আশঙ্কা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আছে বহুদলীয় ব্যবস্থা। জনগণ তাদের নেতৃবৃন্দের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিজেদেরকে রাজনৈতিক আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে।

২. জনসংখ্যার আধিক্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা : কোনো কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনসংখ্যার আধিক্য দেখা যায়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

৩. আধুনিক বৃহৎ রাষ্ট্র পরিচালনার অনুপযোগী: আব্রাহাম লিংকনের মতবাদ নগররাষ্ট্রের জন্য উপযুক্ত হলেও তা বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য অনুপযুক্ত। দেশ পরিচালনা সমগ্র জনগণের অংশগ্রহণ বাস্তবসম্মত নয়।

৪. জনগণের মতামত নেওয়া দুরূহ : বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণের মতামত নেওয়া দুরূহ হয়ে যায়। যেমন- যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তখন লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৫. অবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণমূলক : আব্রাহাম লিংকন তাঁর মতবাদে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রদান করেননি। ফলে যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দুরূহ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্রাহাম লিংকন জনগণের অধিকার ও প্রত্যাশাকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করেছেন। কেননা তিনি আমেরিকার মতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

তাঁর মতবাদ ছোট ছোট রাষ্ট্রে কার্যকর হলেও তুলনামূলকভাবে সকল রাষ্ট্রে তাঁর মতবাদের কার্যকারিতা লক্ষ করা যায় না। 

অধ্যাপক লাস্কি তার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলেছেন, গণতন্ত্র হলো জনগণের সম্মতি দ্বারা পরিচালিত সরকার ব্যবস্থা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ