গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর
গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

  • অথবা, "গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বা নয়” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক যুগে গণতন্ত্র একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সরকার ব্যবস্থা এতে শাসকের কর্তব্য ও শাসিতের অধিকার উভয়ই সমহারে রক্ষার বিধিবিধান নিহিত থাকে। 

সাধারণ মানুষের ইচ্ছানুযায়ী এ শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হলেও এ শাসনব্যবস্থার দোষ বা ত্রুটিগুলো এড়িয়ে চলার মতো নয়। তাই বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয়।

গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় : গণতন্ত্র একটি জনপ্রিয় আদর্শ হিসেবে শাসনব্যবস্থার জায়গা করে নিলেও অনেকেই মনে করেন গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয়। 

অধ্যাপক হেনরী মন্তব্য করেছেন, সকল প্রকার সরকারের মধ্যে গণতন্ত্রই সার্বিকভাবে কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপদানের জন্য প্রয়োজন শক্ত অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত উপকরণাদি।

 শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান থাকলে গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বলা হয়, গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয়।

লর্ড ব্রাইসের দৃষ্টিতে। লর্ড ব্রাইসের দৃষ্টিতেও সকল সরকার ব্যবস্থাই মূলত অভিজাততান্ত্রিক। তিনি মনে করেন বিশ্বে খুবই. কম সংখ্যক ব্যক্তির দ্বারাই পরিচালিত হয়।

মিসেলস-এর মতে মিসেলস এর দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক সাফল্য নির্ভর করে সংগঠনের উপর। আর সংগঠনকে এর দৃঢ়তার জন্য পদসোপানভিত্তিক হতে হবে এবং এটাকে একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনা করলে হবে না।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলো নির্দেশ করেছেন। তারা সকলেই প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, গণতান্ত্রিক সরকার একটি দুর্বল সরকার এবং এর বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কেন গণতন্ত্র একটি দুর্বল সরকার ব্যবস্থা এবং এর দুর্বল দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো : 

১. মূর্খ, অক্ষম ও অজ্ঞের শাসন : গণতন্ত্র হচ্ছে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। গণতন্ত্রে গুণ নয়, বরং সংখ্যার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। 

এ মিল ফ্যাগুলে বলেন, “গণতন্ত্র অক্ষমতার শাসনপ্রণালি। (The cult of incompetence) লেকীর মতে, “গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বাপেক্ষা দরিদ্র, অজ্ঞ ও কর্মন্য ব্যক্তির সরকার।"

২. স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না : গণতন্ত্র সাম্য, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের কথা বললেও বাস্তবে স্বাধীনতা হয় বিপন্ন। আইনের শাসনের পরিবর্তে হয় জোরের শাসন, পেশির শাসন। 

অনেক সময় দেখা যায়, ভোটের ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়। সুতরাং গণতন্ত্রের আদর্শ সাম্য, স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।

৩. গণতন্ত্রের ক্ষণভঙ্গুর শাসনব্যবস্থা : রাজনৈতিক দলাদলির জন্য জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। গণতন্ত্রে অনেক সময় জনমত বিভ্রান্ত হয়। 

মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে একটি দল সহজেই ক্ষমতায় আসতে পারে। সুতরাং গণতন্ত্রের আদর্শের পরিপন্থি কাজ গণতন্ত্রে করা হয়।

৪. সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের স্থান নেই : অনেকের মতে, গণতন্ত্রে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের স্থান হয় না। বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষ করা যায় যে, অযোগ্য, অসৎ ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরাই বারবার ক্ষমতায় আসে শুধু দলীয় মিথ্যা ও অবাস্তব আশ্বাসের ভিত্তিতে। এ শাসনব্যবস্থায় সৎ, যোগ্য ও আত্মত্যাগী মানুষের কোনো স্থান হয় না।

৫. স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি : বেশির ভাগ অল্পশিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে গণতান্ত্রিক সরকার পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। এরা স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি গণতান্ত্রিক সরকারকে পঙ্গু করে ফেলে। 

অর্থলিপ্সায় তারা আপাদমস্তক লিও থাকে। সুতরাং গণতন্ত্রের আদর্শের সাথে বাস্তব শাসনব্যবস্থার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই গণতন্ত্র আদর্শের মতো বাস্তব নয়।

৬. আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট থাকে না। ফলে তারা সরকারি আমলাদের উপর নির্ভর করে। 

সরকারি আমলারা এই সুযোগে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। ফলে শুরু হয় লালফিতার দৌরাত্ম্য। কিন্তু গণতন্ত্রের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করা। 

কিন্তু বাস্তবে গণতন্ত্রে দেখা যায় সব ধরনের জন হয়রানি। তারা পদে পদে হয়রানির শিকার হয়।

৭. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম : গণতন্ত্র হচ্ছে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে পরিচালিত সরকার। বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে তাই সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে। 

এছাড়া গণতন্ত্রে, যুদ্ধ, বহিরাগত আক্রমণ-অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, ভোটাভুটি ইত্যাদির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হয়।

৮. সংখ্যালঘুর স্বার্থ উপেক্ষিত হয় : অনেকেই মনে করেন গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হওয়ার সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। 

অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সংখ্যালঘু যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, আইনসভায় তাদের স্বার্থ সবসময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। তাদের অভাব অভিযোগ কেউ কর্ণপাত করে না।

৯. দলীয় শাসনের কুফল : রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমাগত ক্ষমতা লাভের দ্বন্দ্ব অনেক সময় সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়ে দেশের শাস্তি -শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। 

এছাড়াও নিজ দলের লোকদের প্রশাসনে এমনকি বিভিন্ন কাজে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়। দলের সদস্য ভারী করার জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিজ দলের লোকদেরকে দেওয়া হয়। সুতরাং গণতন্ত্র তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

১০. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যাহত হয় : গণতন্ত্রে অনেক সময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। সরকার বিভিন্ন ধরনের কালা-কানুনের মাধ্যমে বিচারকদের বিচারকার্যে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। বিচারকগণ যাতে স্বাধীনভাবে বিচারিক রায় প্রদান না করতে পারে তার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে।

১১. নৈতিক অবনতি ঘটায় : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় | নির্বাচনে জেতার জন্য অবৈধ উৎকোচ, নির্বাচনে কারচুপি প্রভৃতির আশ্রয় নেওয়া হয়। 

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নীতি | নৈতিকতাবিহীন কাজ কর্ম করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।

১২. জ্ঞান বিজ্ঞানের সহায়ক নয় : গণতন্ত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রসার ঘটে না। শিল্প সাহিত্য বিকাশের জন্য যেরূপ জ্ঞানী শাসকের প্রয়োজন তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মিলে না। ফলে জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে না।

১৩. অপচয়ের প্রশ্রয় : গণতন্ত্রে জাতীয় সম্পদের অপচয় হয় । কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়, অনেক সময় দেখা যায় তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। 

সরকার পরিবর্তন হলে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত সব পরিকল্পনা বাতিল করা হয় এবং নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়।

১৪. কালো টাকার নির্বাচন : কালো টাকার জোরে গণতন্ত্রে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। পুঁজিপতিরা টাকার জোরে এবং জনগণের দরিদ্রতার সুযোগে জনগণের রায় নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। 

অভাবের কারণে স্বভাব নষ্ট এই কায়দায় কালো টাকার জোরে নির্বাচনে জিতে যায়। এ শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্র একটি মহান আদর্শ কিন্তু এর বাস্তব রূপে সেভাবে দেখা যায় না। নানা ধরনের প্রতিকূলতার কারণে গণতন্ত্র আজ আদর্শচ্যুত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা বলতে পারি গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের গণতন্ত্র যতটা আদর্শ ততটা বাস্তব নয় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ