জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
- অথবা, খলজি বংশের উৎপত্তি লেখ।
- অথবা, খলজি বংশের উত্থান আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পঙ্গু সুলতান কায়কোবাদ হত্যা ও তার শিশু পুত্র শামসউদ্দিন কায়ুমার্স প্রাণনাশ এবং তুর্কি মালিক ও আমিরদের দুর্বলতার সুযোগে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ ১২৯০ সালে দিল্লির সিংহাসনে বসেন এবং তিনি যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তাই ইতিহাসে খলজি বংশ নামে পরিচিত।
খলজি বংশ প্রতিষ্ঠা করে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি ভারতবর্ষের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। খলজি বংশ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার রাজত্বকাল ছিল ঘটনাবহুল।
খলজি বংশের পরিচয় : খলজি বংশের আদি পরিচয় সম্পর্কে মুসলিম ঐতিহাসিক ও আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতানৈক্য রয়েছে। নিজামউদ্দিন ও ফিরিস্তার মতে, খলজি বংশ তুর্কি জাতি হতে উদ্ভূত।
জিয়াউদ্দিন বারানির মতে, তারা ছিল তুর্কিদের হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতির লোক। কোনো কোনো আধুনিক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, খলজি বংশ মূলত তুর্কি জাতি হতে উদ্ভূত বটে, কিন্তু দীর্ঘকাল আফগানিস্তানে বসবাসের ফলে তারা আফগান জাতির বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেন। ভুলবশত অনেকে তাদেরকে আফগানিস্তানের অধিবাসী বলে অভিহিত করেছেন।
খলজিসের উত্থান : হঠাৎ করে খলজিদের উত্থান ঘটেনি। ধাপে ধাপে তাদের উত্থান ঘটে। নিচে খলজি বংশের উত্থানের কাহিনি আলোচনা করা হলো :
১. কায়কোবাদের দুর্বল শাসন : বলবনের মৃত্যুর পর বুঘরা খানের পুত্র কায়কোবাদ দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। অষ্টাদশ বর্ষীয় যুবক কায়কোবাদ ছিলেন শাসনকার্যে অনভিজ্ঞ ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ।
ফলে শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় কায়কোবাদ সামান প্রদেশের শাসনকর্তা জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহকে দিল্লিতে আসার আদেশ দেন।
২. জালালউদ্দিনের উচ্চপদ লাভ : দিল্লির শাসক জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহকে শায়েস্তা খাঁ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাকে নিকটবর্তী একটি প্রদেশের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
৩. তুর্কিদের অসন্তোষ : বলবনের আমলে অপর দুই সভালন আমির কাচান ও সুরখা যথাক্রমে বরবক ও উকিল পদে নিযুক্ত হন। জালালউদ্দিন ছিলেন শাসনকার্যে অভিজ্ঞ।
এছাড়া তিনি মোঙ্গলদের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে ইতোমধ্যে বহু কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। সুতরাং রাজদরবারে তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকলে তুর্কি আমিররা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে থাকে ।
৪. তুর্কিদের ষড়যন্ত্র : ইলবারি তুর্কিরা কায়কোবাদের শিশু পুত্র কায়ুমার্সকে সিংহাসনে বসান। ফলে দিল্লির আমিররা দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তুর্কি দল ও খলজি দল।
তুর্কিদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন কাচান ও সুরখা, আর খলজিদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। জালালউদ্দিন। কাচান ও সুরখা জালালউদ্দিনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে জালালউদ্দিন দিল্লি ত্যাগ করে বাহারপুরে আগমন করেন।
৫. তুর্কি খলজি সংঘর্ষ : কাচান একদল সৈন্য নিয়ে জালালউদ্দিনকে আক্রমণ করে নিজে নিহত হন। জালালউদ্দিনের পুত্ররা দিল্লি আক্রমণ করে কায়মুকে বন্দি করে বাহাপুরে নিয়ে আসেন।
সুলতানকে বন্দি করে স্থানান্তরিত করার বিরুদ্ধে দিল্লির নাগরিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে সুলতানকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য দলে দলে বাহাপুর অভিমুখে যাত্রা করেন।
দিল্লি নাগরিকদের নেতৃত্ব দেন সুরখা কিন্তু সুরখা যুদ্ধে নিহত হন। নেতার মৃত্যুতে দিল্লিবাসী হতাশ হয়ে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং অনেকে খলজি দলে যোগ দেন।
৬. কায়কোবাদের হত্যা : তুর্কি দলের পরাজয় এবং শিশুপুত্র সুলতান খলজিদের হস্তগত হওয়ায় তারা রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা হয়ে উঠে। জালালউদ্দিন তারকেশ নাসেরকে কিলোঘিরির রাজপ্রাসাদে পাঠান কায়কোবাদকে হত্যা করার জন্য।
সে সময় কায়কোবাদ মৃত্যু শয্যায় শায়িত, তারকেশ্ রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে তাকে যমুনার জলে নিক্ষেপ করেন। এভাবে ইলবারি বংশের অবসান হয়।
৭. জালালউদ্দিনের অভিষেক : ইলবারি বংশের পতন হলে জালালউদ্দিন কিলোঘিরিতে এসে ১২৯০ সালে নিজেকে দিল্লির সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন।
দিল্লির আমির নাগরিকরা তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেনি বলে তিনি কিলোঘিরিতেই অভিষিক্ত হন এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করেন।
অতঃপর জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি উপাধি ধারণ করে দিল্লির মসনদের আরোহণ করেন। তার ক্ষমতা লাভের মধ্যে দিয়ে খলজি বংশের উত্থান ঘটে।
৮. জালালউদ্দিনের অসুবিধা : প্রায় ৭০ বছর বয়সে ১২৯০ সালে জালালউদ্দিন খলজি বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে তিনি নানা অসুবিধায় পড়েন।
তুর্কি আমিরগণ খলজিদের নিম্ন বংশজাত বলে অভিহিত করেন। বিশেষত দিল্লির লোকেরা তার সিংহাসন লাভে অসুখী ছিলেন।
ফলে জালালউদ্দিন বেশ কিছুদিন দিল্লির শহরে বাস করতে পারেনি। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
৯. সাচ্চুর বিদ্রোহ : সুলতান জালালউদ্দিনের রাজত্বকালে বলবনের ভ্রাতুষ্পুত্র এবং কারা প্রদেশের শাসনকর্তা মালিক সাজ্জ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
তিনি সুলতান উপাধি ধারণ করে অযোধ্যার শাসনকর্তা হাতিমের সাথে যোগদান করে দিল্লিতে যাত্রা করেন। কিন্তু বদাউনের নিকটে যুদ্ধে বিদ্রোহীগণ সুলতানের পুত্র আরকলি খানের কাছে পরাজয়বরণ করেন।
১০. খলজি আমিরদের বিদ্রোহ : সুলতান জালালউদ্দিন সুলতান হওয়ার পূর্বে একজন সফল নায়ক ছিলেন। কিন্তু সুলতান হওয়ার পর তিনি রক্তপাত নীতি পরিহার করেন।
তাকে শাসনকার্যে কঠোর হওয়ার জন্য দিল্লির আমিরগণ পরামর্শ প্রদান করে কিন্তু তাদের কথা না শোনায় দিল্লির আমির ও ওমরাপণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
১১. চোরকে ক্ষমা প্রদর্শন : সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি সুলতান হওয়ার পর আক্রমণাত্মক নীতি পরিহার করেন।
তিনি কাউকে হত্যা করার জন্য সিংহাসন লাভ করেন নি বলে জানিয়ে দেন এবং একজন লোক হত্যার বিনিময়ে যুদ্ধে জয়লাভ করতে ইচ্ছা পোষণ ত্যাগ করেন।
একদা একদল চোরকে তার সামনে গ্রেফতার করে আনলে তিনি তাদের শান্তি দানের পরিবর্তে ক্ষমা প্রদর্শন ও উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দেন।
১২. মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ : মোগল নেতা হালাকু খানের পুত্র আবদুল্লাহর নেতৃত্বে লক্ষাধিক মোগল বাহিনী সিন্ধু নদী অভিক্রম অগ্রসর হলে সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।
১২৯২ সালে শেষের দিকে যুদ্ধ শেষে অধিকাংশ স্বদেশে ফিরে যান। মোঙ্গল নেতা উলুখ খানের নেতৃত্বে কতিপয় মোঙ্গল ইসলামধর্ম গ্রহণ করে।
১৩. সুলতানের অভিযান : ১২৯০ সালে সুলতান রণথম্রোর অধিকারের জন্য দুইবার অভিযান পরিচালনা করে ব্যর্থ হন। তবে তার ভ্রাতুষ্পুত্র আলাউদ্দিন মালব ও দেবগিরি রাজ্যের বিরুদ্ধে সফল অভিযান প্রেরণ করেন। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, "The sultan foreign policy was weak as his domestic policy."
১৪. শান্তিপ্রিয় শাসক : সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি ছিলেন একজন উদার, সহিষ্ণু ও শান্তিপ্রিয় শাসক। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সৎ, আল্লাহ ভীরু ও অতীব দয়ালু ছিলেন।
সুলতান হওয়ার পূর্বে তিনি একজন সফল সেনাপতি ছিলেন, কিন্তু সুলতান হওয়ার পর তিনি আক্রমণাত্মক নীতি পরিহার করেন এবং সকলের প্রতি সমঝোতা নীতি গ্রহণ করেন ।
১৫. বিদ্যোৎসাহী ও জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক : তথাকথিত দাস বংশের উপর খলজি বংশ প্রতিষ্ঠা করে সুলতান জালালউদ্দিন খলজি ভারতবর্ষের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
তিনি শিক্ষা- দীক্ষা ও সাহিত্য চর্চায় বড়ই অনুরাগী ছিলেন। তার রাজদরবারে বড় বড় আলেম পণ্ডিত, কবি সাহিত্যিক যেমন আমির খসরু ও মীর হাসান দেহলভীর মতো উল্লেখ্যযোগ্য লোকও ছিলেন। তারা তার রাজদরবারকে অলংকৃত করেন।
১৬. হিন্দুদের প্রতি সহনশীলনীতি : সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ হিন্দুদের প্রতি সহনশীলনীতি গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে অমুসলিমদের অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হতো।
তার সময় হিন্দুরা সুখী-সমৃদ্ধি জীবনযাপন করেন। তিনি উভয় সম্প্রদায়ের প্রতি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেন ।
১৭. সুলতানের বৈদেশিক নীতি : সুলতান জালালউদ্দিন খলজিনা বৈদেশিক নীতি তার অভ্যন্তরীণ নীতির ন্যায় দুর্বল ছিল। আর এ দুর্বলতার কারণে সুলতান তার বৈদেশিক ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রাসাদ বলেন, "The sultan foreign policy was weak as his domestic policy."
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তথাকথিত দাস বংশের ধ্বংসাবশেষের উপর সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
ঠিক তেমনি নিয়তির অমোঘ বিধানে ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা আলাউদ্দিন খলজির চক্রান্তের শিকারে পরিণত হয়ে জালালউদ্দিন খলজি জীবন হারান সর্বোপরি খলজি বংশের প্রতিষ্ঠা জালালউদ্দিন খলজির অবদান অনস্বীকার্য তবে এ বংশের উত্থান আশীর্বাদের ছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর । যদি তোমাদের আজকের জালাল উদ্দিন খলজির কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।