মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য” নীতিটি বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, আমেরিকার সংবিধান কিভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির বিধান করে?
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি কিভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মার্কিন সংবিধানের রচয়িতাদের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ ও নিষ্ঠা বর্তমান ছিল । তাই তাঁরা ব্যক্তিস্বাধীনতার মূলমন্ত্র হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন।
কিন্তু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চরম প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধা এবং নীতিটির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাঁরা সতর্ক ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতিটি সফল হয়নি।
→ মার্কিন শাসনব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি : প্রস্তাবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কোনো না কোনোভাবে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এ নীতির ফলে প্রতিটি বিভাগের মধ্যে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এবং স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে।
তাই তাঁরা সরকারের বিভাগগুলোর স্বৈরাচারের প্রবণতা রোধ, পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ সংরক্ষণ এবং পারস্পরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে Checks and blances ও নীতির উদ্ভব হয়েছে।
→ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ নীতির প্রয়োগ : মার্কিন সংবিধানের বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। সরকারের বিভাগসমূহের কার্যাবলির ক্ষেত্রে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের সাহিত্যিক প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, শাসন আইন ও বিচার বিভাগ পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ক্ষমতা ও সুযোগ লাভ করেছে। নিম্নে এ নীতির প্রয়োগ দেখানো হলো :
১. কংগ্রেসের উপর অন্যান্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের কার্যাবলির উপর নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির প্রয়োগ হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস অধিবেশন আহ্বান করতে পারে।
কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির বাণী প্রত্যাখ্যান করতে পারে আবার কংগ্রেসের আইনে রাষ্ট্রপতি ভোট দিতে পারে। আবার কংগ্রেস কর্তৃক বিল বিচার বিভাগ পর্যালোচনা করে বাতিলও করতে পারে।
২. শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ : মার্কিন শাসন বিভাগের ওপর কংগ্রেস ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতিটি প্রয়োগ করে থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নয় ।
মার্কিন রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৪ বছর কিন্তু কংগ্রেস ইমপিচমেন্ট ক্ষমতার বলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদচ্যুত করতে পারে।
আবার মার্কিন শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কংগ্রেস অনুমোদন না করলে সরকারি তহবিল থেকে অর্থব্যয় কোনো কর আরোপ বা বিলোপ করা যায় না।
৩. বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ : সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্পত্তি সন্ধি এবং আদেশ নির্দেশের বৈধতা বিচার করতে পারে। অনুরূপভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও অন্য দুটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নয়।
রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। আবার কংগ্রেস সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারেন।
তাছাড়া কংগ্রেস সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিষয়ক ক্ষমতা জাতীয় আদালতের প্রক্রিয়ার অধস্তন আদালত গঠন ও বিলোপের ক্ষমতা রাখেন। বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতাও রাখেন।
৪. শাসন বিভাগের উপর আইন বিভাগের প্রাধান্য : মার্কিন শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়নি । অনেক সময় আইন বিভাগ শাসন বিভাগের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করেছে।
আবার কখনও শাসন বিভাগের উপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির বৈদেশিক সাহায্য, সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রস্তাব সিনেট অনুমোদন না করে প্রতাখ্যান করেছে। রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার ভারতকে জ্বালানি সরবরাহের ব্যাপারে সুপারিশ করলেও সিনেট তার অনুমোদন দেয়নি।
৫. আইন বিভাগের উপর শাসন বিভাগের আধিপত্য : ডেভিড আইসেনহাওয়ারের আমলে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব করেছে। Allen M. Potter এর মতানুসারে, জাতীয় সংকট প্রাক্কালে মার্কিন কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সহযোগিতা করেছে।
তাছাড়া ১৯৬১ সালে রাশিয়া EU-2 গোয়েন্দা বিমান দুর্ঘটনায় কেনেডি এবং ভিয়েতনাম সংকট নিরসনে কংগ্রেসের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। মার্কিন পুঁজিবাদ সমাজব্যবস্থায় সমস্যা শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার প্রভৃতির কারণে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের উপর আধিপত্য করার সুযোগ লাভ করে ।
৬. বিচার বিভাগের ওপর আধিপত্য : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগও প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। বস্তুত সুপ্রিমকোর্ট নিজেকে মার্কিন সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য সম্পর্কে বিচারপতি Huglees মন্তব্য করেছেন, "We are under the Constitution but the constitution is what the Judges say it is."
বিচার বিভাগ কংগ্রেস প্রণীত আইন এবং শাসন বিভাগীয় নির্দেশের বৈধতা বিচার করতে পারে। এই কর্তৃত্বের সূত্রে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগ এ ধরনের অধিপত্যমূলক স্বৈরাচারী ভূমিকা অর্জন করেছে।
নীতিটির কার্যকারিতা মার্কিন শাসনব্যবস্থার সরকারের বিভাগসমূহের মধ্যে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতিকে যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই নীতির প্রয়োগের সাথে অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তাছাড়া এই নীতির মাধ্যমে সরকারের বিভাগসমূহের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যতা রক্ষা করা যায়নি। মার্কিন সংবিধানে বলবৎ হওয়ার বছর কয়েকের মধ্যে নীতিটির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃত প্রস্তাবে যেকোনো নিয়মনীতির প্রয়োগ ও তার সাফল্য সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।
মার্কিন শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি ও এর ব্যতিক্রম হতে পারে না। অষ্টাদশ শতকে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা নিয়ন্ত্রণ ও তার সাম্য নীতিটির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিবর্তিত পরিবেশ নীতিটি তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।