মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির কার্যকারিতা আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত। মার্কিন শাসনতন্ত্রের রচয়িতাগণ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে গ্রহণ করছেন।
এ সম্বন্ধে সমকালীন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ Montesquieu Blackstone প্রমুখের ধারণা অস্বীকার করা যায় না। বস্তুত ঐতিহাসিক কারণেই মার্কিন শাসনব্যবস্থায়" ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
→ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সংজ্ঞা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় আইন বিভাগকে, শাসনকার্য পরিচালনায় শাসন বিভাগকে এবং বিচারকার্যসম্পাদনের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য প্রদান করার নীতিকে বুঝায় ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন তাত্ত্বিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্বন্ধে মতামত ব্যক্ত করছেন। নিম্নে তাদের মতামত ব্যক্ত করা হলো :
Montesquien বলেন, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা অবশ্যই পৃথক হবে এবং কেউ যেন কারো কাজে হস্তক্ষেপ না করতে পারে।”
Blackstone বলেন, “যেখানে আইন তৈরির ক্ষমতা ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা একই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের হাতে ন্যস্ত থাকে সেখানে জনগণের অধিকার থাকতে পারে না।”
Lipson-এর ভাষায়, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ হলো সংবিধান অনুসারে সরকারের ক্ষমতা পৃথকীকরণের, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে প্রাযোজ্য।"
Madison-এর মতে, "ক্ষমতার পৃথকীকরণ হলো সরকারের তিনটি বিভাগের উপর ন্যস্ত ক্ষমতার পৃথক পৃথক ব্যবহার ও নিশ্চিত প্রয়োগ যেখানে একে অপরের এখতিয়ার হস্তক্ষেপযুক্ত।"
উপর্যুক্ত আলোচনায় বলা যায়, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হচ্ছে প্রত্যেক বিভাগ তাদের কাজ স্বতন্ত্রভাবে করবে কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বৈশিষ্ট্য : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. সরকারের তিনটি বিভাগ পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে।
২. এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজ করবে না।
৩. এক ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সাথে যুক্ত থাকবে না।
৪. এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।
→ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ : নিম্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ আলোচনা করা হলো :
১. সংবিধানের ১ নং ধারা : মার্কিন সংবিধানের ১নং ধারায় বলা হয়েছে, আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা থাকবে কংগ্রেসের হাতে। কংগ্রেস দুটি সভা সিনেট ও প্রতিনিধি সভা নিয়ে গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি কোনোভাবেই কংগ্রেসের কোনো বিভাগ ভেঙে নিতে পারবে না।
২. সংবিধানের ২ নং ধারা : মার্কিন সংবিধানের ২নং ধারায় = বলা হয়েছে, মার্কিন শাসন বিষয়ক ক্ষমতার অধিকারী হলো ■ রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সচিব নিয়োগ ন করেন। সচিত্রা তাকে সাহায্য করে।
৩. ব্যক্তিস্বাধীনতার চাবিকাঠি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাধীনতার " নিশ্চয়তা প্রদান করেন। মার্কিনরা ব্যক্তিস্বাধীনতার চাবিকাঠি হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে নির্ভর করেন।
৪. সরকারের ভিত্তি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভিত্তি হিসেবে তার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে বেছে নিয়েছে। শুধু কেন্দ্রে নয়, বরং প্রদেশগুলোতেও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
৫. নাতিদীর্ণ রচনা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি বেশি দীর্ঘ কোনো পদ্ধতি নয় তাই মার্কিনরা এটা গ্রহণ করেছে। সংবিধান প্রণেতাগণ এজন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর নাতিদীর্ঘ রচনা লিখেছেন।
৬. ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তারা বলেন, সরকারের প্রত্যেক বিভাগই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর আবদ্ধ। তারা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ করেন।
৭. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি চালু থাকলেও সরকারের এক বিভাগ অপর বিভাগের উপর নির্ভর করতে হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির বাণী প্রেরণের মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এবং বিলে ভোট প্রদানের মাধ্যমে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করে।
সমালোচনা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্বন্ধে অনেক মনীষী সমালোচনা করেছে। নিম্নে তাদের মতামতগুলো ব্যক্ত করা হলো :
১. রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ধারণা প্রয়োগের ফলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়ে। তাই বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
২. সুশাসনের পরিপন্থি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। কারণ এখানে প্রত্যেক বিভাগ স্বাধীন, কেউ, কোনো বিভাগে হস্তক্ষেপ করবে না, এতে কোনো বিভাগ সঠিকভাবে কাজটি করতে পারে না। ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা অকার্যকর ও অচল হয়ে পড়ে।
৩. আইন বিভাগের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে প্রত্যেক বিভাগ তার নিজ নিজ কাজ করবে, কেউ কারো কাজে মাথা ঘামাবে না। এ নীতির ফলে আইন বিভাগ অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।
৪. গণতন্ত্রের বিরোধী : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইন বিভাগ কখনো শাসন বিভাগের কাজ করে আবার বিচার বিভাগ কখনও আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
৫. স্বেচ্ছাচারিতার সৃষ্টি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সাথে প্রত্যেক বিভাগ তার নিজ নিজ কাজ করে এতে কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কতিপয় সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকটা কার্যকরী।
তবে একথা সত্য যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বর্তমানকালে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ এ নীতি বর্তমান শাসনব্যবস্থায় অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও। যদি তোমাদের আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।