মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
- অথবা, আমেরিকার শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রকরণ নীতির প্রয়োগ আলোচনা কর।
- অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ক্ষমতা। মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার পরই ক্ষমতা ও রাজনীতি এক ব্যাপক আলোচ্য বিষয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা একদিকে সরকার স্বেচ্ছাচারী করে তোলে অন্যদিকে নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করে। তাই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন।
গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্ব প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি উদ্ভাবন করলেও মন্টেস্কু এ নীতির ভিত্তি মজবুত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ দেখা যায়। বস্তুত রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ক্ষেত্রেই এ নীতির প্রয়োগের আদর্শ দৃষ্টান্ত মেলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বর্তমান। ঐ দেশের সংবিধান প্রণেতারা মন্টেস্কুর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের সংবিধানে এ নীতির সংযোজন করেন । বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সর্বাধিক বলে মনে হয়।
মার্কিন সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে হ্যামিলটন, ম্যাডিসন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে জোরালো যুক্তি প্রদান করেন। তার ফলে নীতিটিকে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা হয়।
সরকারের তিনটি বিভাগ পরস্পরের প্রভাবযুক্ত অবস্থায় যাতে নিজ নিজ বিভাগীয় দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে সে বিষয়ে মার্কিন শাসনতন্ত্রের প্রণেতাগণ সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মার্কিন সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ২নং অনুচ্ছেদে শাসনবিষয়ক সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে নাস্ত করা হয়েছে এবং সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদে বিচার সংক্রান্ত সকল ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
এভাবে আইন সংক্রান্ত, শাসন সংক্রান্ত এবং বিচারবিষয়ক ক্ষমতা তিনটি বিভাগের হাতে আলাদাভাবে ন্যস্ত করা হয়েছে এবং এক বিভাগ অপর বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব থেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত আছে কংগ্রেসের হাতে। কংগ্রেস গঠিত হয় সিনেট ও প্রতিনিধি সভাকে নিয়ে। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অধিবেশন এবং কার্যকাল নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের সদস্য নন এবং কংগ্রেসের কোনো কক্ষ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। মার্কিন কংগ্রেস সকল বিলের ব্যাপারেই উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং আইন প্রণয়ন করে।
রাষ্ট্রপতি, কোনো বিলের ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারেন, কিন্তু আইন | প্রণয়নে কংগ্রেসকে বাধ্য করতে পারে না। আবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেসের কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত নয়।
তেমনি আবার রাষ্ট্রপতি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের সকল ক্ষমতার অধিকারী। প্রশাসনিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করার জন্য সচিবদের নিযুক্ত করা হয়। এদের নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি নিজে।
এরা হলেন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা এবং কর্মচারী। রাষ্ট্রপতি এদের পদচ্যুত করতে পারেন। এরাও কংগ্রেসের সদস্য নন। কংগ্রেসের কাছে এদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।
রাষ্ট্রপতি বা তার সচিবরা কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে পাবেন না বা কংগ্রেসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না। অনুরূপভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবিষয়ক যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদন করে সুপ্রিম কোর্ট এবং অধঃস্তন আদালতসমূহ।
সুপ্রিম কোর্টের উপর কংগ্রোস বা রাষ্ট্রপতির কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিচার সংক্রান্ত কাজকর্ম সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীনভাবে সম্পাদন করে। বিচার বিভাগের উপর রাষ্ট্রপতি বা কংগ্রেসের কোনো প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না।মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির
পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটেনি। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি প্রথাগত রীতিনীতি, রাজনৈতিক দলব্যবস্থার উদ্ভব প্রভৃতি কারণে মার্কিন শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বহু বিচ্যুতি দেখা হয়। মার্কিন সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় কাজকর্ম সম্পাদন করে না।
প্রতিটি বিভাগের উপর অপর দুটি বিভাগের কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকে। আইন প্রণয়নের সকল ক্ষমতা মার্কিন কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত থাকলেও রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের অনুরোধ সম্বলিত বাণী (Presidential message) কংগ্রেসে পাঠাতে পারে।
আবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কংগ্রেসে কর্তৃক পাস করা বিল আইনে পরিণত হয় না। এভাবে শাসন বিভাগীয় ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি হলেও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বরাদ্দ মঞ্জুরির ক্ষমতা আছে কংগ্রেসের হাতে।
আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট (Senate) এর অনুমোদন সাপেক্ষ। সিনেটের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদসমূহে কাউকে নিযুক্ত করতে পারেন না।
অতি সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রপতির জর্জ বুশ মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পদে জন টাওয়ার এর নাম প্রস্তাব করেন। সিনেট এ প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে বাতিল করে দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টও আইনের ব্যাখ্যা ও বিচার বিভাগীয় পুনৰীক্ষণ (Judical review) এর মাধ্যমে কংগ্রেস প্রণীত আইনকে বাতিল করে দিতে পারে এবং রাষ্ট্রপতির নির্দেশও বাতিল করতে পারে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যথাযথভাবে স্বীকৃতি ও প্রযুক্ত হয়েছে। এই একটি ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ বহুলাংশে দেখা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন শাসনব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বহু ক্ষেত্র রয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতির প্রয়োগের ফলে প্রতিটি বিভাগই অপর দুটি বিভাগের দ্বারা অল্পবিস্তর নিয়ন্ত্রিত হয়।
বস্তুতপক্ষে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিপূর্ণ প্রয়োগ বাস্তব ক্ষেত্রে যে অসম্ভব এ বিষয়ে মার্কিন সংবিধানের অভিজ্ঞ রূপকারগণ সম্যকরূপে অবহিত ছিলেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মকর্তাদের পৃথকীকরণ ঘটেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও। যদি তোমাদের আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ দেখাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।