মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি
মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি

মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি

  • অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রকৃতি আলোচনা কর।
  • অথবা, মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
  • অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র কি কি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী? বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : প্রত্যেক দেশের সংবিধানের কতকগুলো বিশেষ ধরন এবং নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সংবিধানের সামগ্রিক পরিচয় নিহিত থাকে। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোচনা থেকেই দেশের শাসনব্যবস্থায় মূল চরিত্রটি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। আবার বৈশিষ্ট্যগুলোর উল্লেখ্য বিষয় অন্যান্য দেশের সংবিধানের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা করলে এর সঠিক স্বরূপটি বুঝা যাবে। মার্কিন সংবিধানের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

→ মার্কিন সংবিধানের বৈশিষ্ট্য : মার্কিন সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. জনগণের সার্বভৌমত্ব : জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি মার্কিন সংবিধানের উল্লেখযোগ্য প্রথম বৈশিষ্ট্য। মার্কিন সংবিধান শুরু হয়েছে “আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ” এই কথাগুলোর দ্বারা।

 সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই রকম; উল্লেখ জনগণের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট স্বীকৃতির পরিচায়ক। 'Lord Bryce -এর মতানুসারে মার্কিন সংবিধানের উল্লিখিত জনগণের সার্বভৌমত্বই হলো গণতন্ত্রের ভিত্তি ও মূলমন্ত্রস্বরূপ।

২. লিখিত সংবিধান : মার্কিন সংবিধান হলো বিশ্বের প্রাচীনতম একটি লিখিত সংবিধান। মার্কিন সংবিধানই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে পরিচিত। এই সংবিধানে দেশের শাসনতান্ত্রিক আইনসমূহ লিখিতভাবে সন্নিবিষ্ট আছে। 

যেকোনো দেশের লিখিত সংবিধান একটি নির্দিষ্ট সংস্থার দ্বারা বিধিবদ্ধ এবং গৃহীত হয়। মার্কিন সংবিধান ফিলাডেলফিয়ার সাংবিধানিক সম্মেলনে প্রণীত ও গৃহীত হয়েছে।

৩. সংবিধানের প্রস্তাবনা : ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রচিত ও গৃহীত মার্কিন সংবিধানেই সর্বপ্রথম একটি প্রস্তাবনা সংযুক্ত করা হয়। এর আগে সংবিধানে প্রস্তাবনা | সংযোজনের কোনো নজির নেই। 

মার্কিন সংবিধানের পর থেকেই বিভিন্ন দেশের লিখিত সংবিধানের শুরুতেই একটি প্রস্তাবনা সংযোজন বর্তমানে একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিধানই হলো পথ প্রদর্শক।

৪. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা মূলত যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই মার্কিন সংবিধানই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় বলতে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন, লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান এবং তার প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের কর্তৃত্ব। দ্বৈত নাগরিকতা মূলত এই চারটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত শাসনব্যবস্থাকে বুঝায়।

৫. সংবিধানের প্রাধান্য : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার অন্যতম | বৈশিষ্ট্য হিসেবে সংবিধানের প্রাধান্যের কথা বলা হয়। মার্কিন সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃতি হয়েছে। 

মার্কিন সংবিধানের ৬ ধারায় সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং উভয় সরকারের সংস্থাসমূহ এবং প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংবিধানের অধীন।

৬. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : দুষ্পরিবর্তনীয় যুক্তরাষ্ট্রের | সংবিধানের একটি অন্যতম শর্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। শুধু লিখিত নয়। বিশেষভাবে দুপরিবর্তনীয় বটে। 

সংশোধন পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো একটি সংবিধান সুপরিবর্তনীয় বা দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। যে সংবিধানে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় না, তার জন্য এক বিশেষ জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে।

৭. সংক্ষিপ্ত সংবিধান : মার্কিন সংবিধানে কেবলমাত্র শাসনব্যবস্থার মূল নীতিগুলোরই উল্লেখ আছে। কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজ নিজ আলাদা সংবিধান থাকার জন্য মার্কিন সংবিধানের আয়তন বৃদ্ধি পায়নি। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে গৃহীত মূল সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা ও মাত্র ৭টি ধারা ছিল।

৮. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মার্কিন শাসনতন্ত্রের রচয়িতাগণ ঔপনিবেশিক শাসনের স্বৈরাচারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য করেছিলেন। 

মার্কিন শাসনতন্ত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নীতিটি শাসনতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়

৯. রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইনগত এবং বাস্তব উভয় বিচারেই সরকারের শাসন বিভাগীয় প্রধান ও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। 

সংবিধানের ২ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতির হাতে মার্কিন শাসন-বিভাগের যাবতীয় 'ক্ষমতা ন্যস্ত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির একক শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১০. মার্কিন কেবিনেট ব্যবস্থা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো একটি কেবিনেট আছে। তবে মার্কিন কেবিনেটের প্রকৃত কোনো ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব নেই। মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি অধস্তন কর্মচারী মাত্র। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে দায়িত্বশীল থাকেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিযুক্ত করেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের বরখাস্তও করতে পারেন ।

১১. প্রজাতান্ত্রিক প্রকৃতি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা প্রজাতান্ত্রিক। মার্কিন রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য একটি নির্বাচন সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হন। 

কংগ্রেসের দুটি কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি সভার সদস্যগণ ও নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে যথাক্রমে দু'বছরের জন্য নির্বাচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর সরকারও প্রজাতান্ত্রিক।

১২. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় রচিত অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত। 

এর উচ্চকক্ষের নাম Senate এবং নিম্নকক্ষের নাম House of representatives। উচ্চকক্ষ সিনেট প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়।

১৩. মৌলিক অধিকার : নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিখিতভাবে বিধিবদ্ধ করার রীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই সর্বপ্রথম চালু হয়। 

মার্কিন সংবিধানেই সর্বপ্রথম নাগরিকদের কতকগুলো মৌলিক অধিকার লিখিতভাবে স্বীকার করা হয়েছে।

১৪. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দল ব্যবস্থা ব্রিটেনের মতো দ্বি-দলীয়। মার্কিন রাজনীতি প্রধান দুটি দল- 

(i) Democratic party ও 

(ii) Republican party। 

এই দুটি প্রধান দলের আদর্শ ও কার্যসূচিগত গুরুত্বপূর্ণ কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন সংবিধান হলো প্রাচীনতম সংবিধান। এই সংবিধান সংক্ষিপ্ত থাকায় লিখিত এই সংবিধানের মাধ্যমেই নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানে সংযোজিত হয়। সুতরাং বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একটি উত্তম সংবিধান।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি। যদি তোমাদের আজকের মার্কিন সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি কি পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ