মুসলমানদের সিন্ধু মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুসলমানদের সিন্ধু, মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুসলমানদের সিন্ধু, মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুসলমানদের সিন্ধু মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর |
মুসলমানদের সিন্ধু মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর থেকেই ইসলামের মহান বাণী প্রচারের ধারা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতবর্ষে কয়েকটি অভিযান প্রেরিত হলেও তা নানা কারণে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে ৭১২ সালে উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফের জামাতা ও ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মদ- বিন-কাসিমের নেতৃত্বে আরবগণ সিন্ধু ও মুলতান জয় করতে সক্ষম হয়।
এ বিজয় সম্পর্কে আর. সি. মজুমদার বলেছেন, “মুসলমানগণ কর্তৃক ভারতবর্ষ বিজয় অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা, যা পরবর্তী সময়ের ওপর একটি স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করেছে।”
মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিষয়ের প্রেক্ষাপট : মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিষয়ের প্রেক্ষাপট ইসলামের আবির্ভাবের পরে আরব জাতির একত্ববাদ, ন্যায়বিচার ও সাম্যের পতাকা তুলে দিগ্বিদিক অভিযানে ছুটে চলার ব্যাপক প্রচেষ্টাই ফল।
বস্তুত আরব বণিকগণ এবং তাদের সাথে আগত সুফি-দরবেশগণই ভারতবর্ষের উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে ইসলাম প্রচার করেন জাতিভেদ প্রথার জাঁতাকলে নিষ্পেষিত এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নিপীড়নে অতিষ্ঠ হিন্দুগণ মুসলমানদের প্রচারিত শক্তি ও সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।
৬৩৬-৩৭ সালে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আমলে মুসলমানগণ ভারত অভিযানের প্রথম প্রচেষ্টা শুরু করে। কিন্তু তখন তা সফল হয়নি। সুরাভিযানে বিপদ এবং দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে খলিফা ওমর (রা.) পরবর্তী অভিযান বন্ধ করে। দেন।
চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) এবং উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া (রা.)-এর খেলাফতকালে পরিচালিত অভিযানসমূহ সফলতা লাভ করতে পারেনি। এরপর মুসলমান সৈন্যবাহিনী পরবর্তী কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় ছিল।
কিন্তু উমাইয়া বংশের খলিফা আল-ওয়ালিদ-বিন-আবদুল মালিকের সিংহাসনারোহণের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামি খেলাফত বিস্তারের নতুন অধ্যায় সংযোজিত হয়।
তার বিখ্যাত সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর সমগ্র উল্লো আফ্রিকা অধিকার করেন এবং তার সৈন্যাধ্যক্ষ তারিক বিন যিয়াদ স্পেন জয় করেন।
সেনাপতি কুতাইবা-বিন-মুসলিম মধ্য এশিয়া এবং ইরাক প্রদেশের শাসনকর্তা হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ-বিন-কাসিমের নেতৃত্বে ভারতের সিন্ধু ও মুলতান অঞ্চলে মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের উদ্দেশ্য। আরবগণ কর্তৃক সিন্ধু ও মুলতান অভিযানের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্যসমূহকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ এ দুভাগে ভাগ করা যায়।
নিয়ে মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের উদ্দেশ্যগুলো আলোচনা করা হলো :
> পরোক্ষ উদ্দেশ্য সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের পরোক্ষ উদ্দেশ্যগুলো হলো :
১. প্রাথমিক অভিযানের সফলতা বাস্তবে রূপায়ণ : খলিফা ওমর (রা.) ও ওসমান (রা.) এর রাজত্বকালে মুসলমানগণ সর্বপ্রথম ভারত অভিযান করেন। এ অভিযানগুলোর সফলতা হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফকে উৎসাহিত করে এবং তিনি তা বাস্তবে, রূপায়ন করতে সচেষ্ট হন।
২. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ : ভারতবর্ষের অপরিসীম ধনরত্নের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আরবগণ দীর্ঘদিন ভারতবর্ষে ব্যবসা- বাণিজ্য করে আসছিল। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, অফুরন্ত সম্পদ আহরণ, সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে ভারতবর্ষ আক্রমণ করে।
৩. মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রসার : খলিফা আল-ওয়ালিদের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার এক বিরাট অংশে বিস্তার লাভ করে। এ সময় তারিক বিন যিয়াদ ইউরোপের স্পেন এবং মুহাম্মদ-বিন-কাসিম ভারতের সিন্ধু জয় করেন।
৪. পারস্য বাহিনীকে সহায়তার প্রতিশোধ গ্রহণ : মুসলমানদের পারস্য অভিযানের সময় সিন্ধুর শাসনকর্তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পারসা বাহিনীকে সহায়তা করে। ফলে মুসলমানগণ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয় বিধায় সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের মাধ্যমে তার প্রতিশোধ নেয়।
৫. অরক্ষিত সীমান্ত রক্ষা : মুসলমানদের পারস্য বিজয়ের পর মুসলিম রাজ্যের সীমানা রাজা দাহিরের অতি সন্নিকটে এসে পড়ে। তাই মুসলিম রাজ্যের সীমানা সুরক্ষিত করার জন্য সিছু বিজয় অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
৬. আরব বিদ্রোহীদের আশ্রয়দান : হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফের কঠোর শাসনে কতিপয় আরব বিদ্রোহী সীমান্ত পার হয়ে রাজা দাহিরের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। হাজ্জাজ তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু সিন্ধুর রাজা হাজ্জাজের দাবি উপেক্ষা করে। ফলে হাজ্জাজ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
৭. ইসলামের প্রচার কতিপয় : ঐতিহাসিকের মতে, আরবদের সিন্ধু অভিযানের পশ্চাতে ধর্মীয় উদ্দেশ্যও বিদ্যমান ছিল কারণ তাদের মতে অষ্টম শতকে বিশ্বে ইসলামের জয়জয়কার অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর এ জয়ের ধারাবাহিকভাবেই তারা ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে।
> প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য : সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্যগুলো হলো :
১. সামুদ্রিক বাণিজ্য নিশ্চিত করা : পশ্চিম ভারতের কতিপয় অঞ্চলে জলদস্যুদের উৎপাতে আরব বণিকগণ শংকিত হয়ে ওঠে এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় বাণিজ্য বন্ধ হবার উপক্রম হয়। এসব জলদস্যুদের শায়েস্তা করাই ছিল মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।
২. জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ সুষ্ঠন : সিন্ধুর সমুদ্রবন্দর দেবলের সন্নিকটে সিন্ধু জলদস্যুগণ কর্তৃক আরবদের আটটি জাহাজ লুণ্ঠনই ছিল সিন্ধু বিজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সিন্ধুরাজ দাহির হাজ্জাজের ক্ষতিপূরণ দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দাহিরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অভিযান প্রেরণ করেন।
৩. জলদস্যুদের শিক্ষা প্রদান : জলদস্যুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ভারতে মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু অভিযান পরিচালনা করেন। জলদস্যুদের শিক্ষা দেয়াই ছিল সিন্ধু বিজয়ের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ।
উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্যগুলোর প্রেক্ষিতে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের অনুমতিক্রমে হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ সিন্ধু রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে পরপর দুটি অভিযান প্রেরণ করে ব্যর্থ হন। অতঃপর ৭১২ সালে মুহাম্মদ-বিন কাসিম রাজা দাহিরকে পরাজিত করে সিন্ধু বিজয় সম্পন্ন করেন।
সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের তাৎপর্য বা ফলাফল আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিষয়ের তাৎপর্য বা ফলাফলকে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এ পাঁচ ভাগে আলোচনা করা যায়। নিম্নে সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের তাৎপর্য বা ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
রাজনৈতিক তাৎপর্য বা ফলাফল : সিন্ধু ও মুলতান বিষয়ের রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে মতভেদ থাকলেও এর ফলাফল ছিল পরবর্তী ইতিহাসের জন্য সুদূরপ্রসারী।
নিয়ে সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের রাজনৈতিক ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা : আরবগণ কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল সম্পর্কে যথেষ্ট মতভেদ থাকলেও ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে সিন্ধু বিজয় নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
২. টডের মন্তব্য : ঐতিহাসিক টড তার রচিত রাজস্থানের ইতিহাস গ্রন্থে আরবদের সিন্ধু বিজয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন।
৩. লেনগুলের বক্তব্য : ঐতিহাসিক স্টানলি লেনপুল বলেন, আরবগণ সিন্ধু বিজয় করেছিল। কিন্তু উক্ত বিজয় ভারতবর্ষ ও ইসলামের ইতিহাসে ছিল একটি উপাখ্যান বিশেষ এবং নিষ্ফল বিজয়।
৪. স্থায়ী শাসনব্যবস্থা : যদিও মুহাম্মদ-বিন-কাসিমের সিন্ধু অভিযান রাজনৈতিকভাবে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেনি। তবুও সিন্ধু ও মুলতানে দেড়শত বছর পর্যন্ত মুসলিম শাসন বলবৎ ছিল।
তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদ ও মুহাম্মদ ঘুরী ভারতবর্ষে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে। তাই একে নিষ্ফল বিজয় বলে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
→ সামাজিক তাৎপর্য বা ফলাফল : পরবর্তী ভারতীয় মুসলিম ও হিন্দু সমাজে এ বিজয়ের ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ।
নিম্নে সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের সামাজিক ফলাফল ব্যাখ্যা করা হলো :
১. সম্পর্ক স্থাপন : সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরব ও ভারতীয়নের মাঝে একটি অন্তরঙ্গ যোগসূত্র স্থাপিত হয়। একে অপরের সংস্পর্শে এসে একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আরব বণিক ও সৈন্যবাহিনীদের অনেকেই হিন্দু রমণীদের পাণিগ্রহণ করেন। ফলে আর্য ও সেমেটিক জাতির সংমিশ্রণে একটি নতুন জাতির উদ্ভব হয়।
২. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টি : মুসলিম বাহিনী কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের ফলে সিন্ধু ও মুলতানের বেশিরভাগ জনগণ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। কালক্রমে এ অঞ্চল উপমহাদেশের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
৩. জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে : সিন্ধু বিজয়ের ফলে মুসলমানরা প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে।
৪. মুবাল্লিগগণের ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস : ঐতিহাসিক টড বলেন- এ. বিজয়ের ফলে অনেক আরব মুবাল্লিগ, মুজাহিদ ও ব্যবসায়ী স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করতে থাকেন এবং মুজাহিদ বাহিনীর একটি অংশ দ্বীন প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন।
→ অর্থনৈতিক তাৎপর্য বা ফলাফল : অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের তাৎপর্য ছিল ব্যাপক। নিম্নে এর অর্থনৈতিক ফলাফল ব্যাখ্যা করা হলো :
১. বাণিজ্যিক যোগসূত্র : ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন “সিন্ধু বিজয়ের ফলে ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের ঘনিষ্ঠ এক বাণিজ্যিক যোগসূত্র স্থাপিত হয়।”
২. সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ : আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের উপকূলভাগ তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উপকূলে আরব মুসলমানদের সামুদ্রিক বাণিজ্য একচেটিয়াভাবে প্রসার লাভ করে।
৩. সমৃদ্ধশালী নগর প্রতিষ্ঠা : আরবদের সিন্ধু বিজয়ে সিন্ধু ও মুলতানের বিভিন্ন স্থানে বহু সমৃদ্ধশালী নগরী গড়ে ।
৪. বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা : আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে সিদ্ধ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সংখ্যক বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়
ধর্মীয় তাৎপর্য বা ফলাফল : ভারতে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে নিম্ন বিজয়ের ধর্মীয় ফলাফল ব্যাখ্যা করা হলো
১. ইসলাম প্রচার : সিন্ধু বিজয়ের পরবর্তী সময়ে অসংখ্য পীর ও মাশায়েখ, ওলামা ইসলাম প্রচারের জন্য ভারত উপমহাদেশে আগমন করতে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক শতক পরে খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি (রহ.), বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.), হযরত শাহজালাল (রহ.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য আলেমগণ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন।
ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেন, “আরব বণিক ও ঐশী প্রেমে শান্ত এ সমস্ত পীর-দরবেশের প্রচারের ফলে ইসলাম ধর্ম ভারতবর্ষে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছিল।"
২. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : ড. তারাচাঁদ বলেন, আরব শাসনে নিম্নশ্রেণির হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে ইসলামের একত্ববাদে তারা আকৃষ্ট হয়।
পীর- দরবেশদের প্রভাবে দলে দলে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। বর্তমান পাকিস্তান এলাকায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতাও এই আরব অভিযানেরই ফল।
→ সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বা ফলাফল : মুসলমানদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ করা যায়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। নিম্নে সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের সাংস্কৃতিক ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সুদূরপ্রসারী বিজয় : সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরবদের সিন্ধু ও মূলতান বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “মুসলিম সংস্কৃতির ওপর এ বিজয়ের ফলাফল ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী। এর ফলে উপমহাদেশে দুটি ভিন্নধর্মী ধর্ম ও সভ্যতা একে অপরের সংস্পর্শে আসে।"
২. প্রভাব বিস্তার : আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে ভারতীয় -সভ্যতা ও সংস্কৃতির বহু উপাদান আরবিয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। সেগুলো হলো হিন্দু ধর্ম, দর্শন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, সাহিত্য, দাবা, স্থাপত্য প্রকৃতি
৩. অনুবাদ কার্যাবলি : আব্বাসীয় খলিফাগণ ভারতীয় জ্ঞান- বিজ্ঞানের গ্রন্থগুলোকে আরবিতে অনুবাদ করে এক স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। তারা ভারতীয় হিন্দু পণ্ডিতদের বাগদাদে নিয়ে যায়। আরবিয় পণ্ডিতরাও ভারতে এসে জ্ঞানচর্চা করেন।
৪. ভক্তি আন্দোলন : হিন্দু ও মুসলমানদের মিলনের প্রতীক “ভক্মিনীতি” যা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা এবং সহাবস্থান নীতির সূচনা করে। আরবদের ধর্মীয় সহিঞ্চুতার ফলে এদেশে ভক্তি আন্দোলন ও ব্রাহ্মসমাজ গড়ে ওঠে
৫. বিভিন্ন নীতির সাথে পরিচিত : আরবদের এ বিজয়ের ফলে ভারতীয়গণও আরবদের ধর্ম, মতবাদ, আদর্শ, আচার- অনুষ্ঠান প্রভৃতির সাথে পরিচিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের প্রত্যক্ষ তাৎপর্য বা ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের মধ্য দিয়ে হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়।
সিন্ধু ও মুলতান বিজয়ের সূত্র ধরেই ভারতবর্ষে ইসলামের বীজ রোপিত হয়। তাই আর. সি.মজুমদার বলেছেন “মুসলমানগণ কর্তৃক ভারতবর্ষ বিজয় অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা।”
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুসলমানদের সিন্ধু, মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুসলমানদের সিন্ধু, মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের মুসলমানদের সিন্ধু, মুলতান বিজয়ের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।