সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর |
সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর
- অথবা, মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন একজন সামরি বিজেতা- কথাটি বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরী কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা : মহাশক্তিশালী বীর যোদ্ধা মুহাম্মদ ঘুরী ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে মুসলিম শাসনের সূচনাকারী হিসেবে পরিচিত। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দ্বারা ভারত অভিযান সফল করে ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত তৈরি করেন।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তার প্রচেষ্টাতেই ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি রাজনীতিবিদ ও দূরদর্শী রাষ্ট্র পরিচালক ছিলেন।
ভারতের হিন্দু রাজাদের বিশৃঙ্খল অবস্থার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে তরাইনের প্রান্তরে হিন্দুদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে উত্তর ভারতে মুসলিম রাজ্যের ভিত গড়ে তোলেন।
বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব : ১১৭৩ সালে মুহাম্মদ ঘুরী পানির শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী ও প্রতিভাবান সুলতান। নিচে বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো :
১. মুলতান বিজয় : মুহাম্মদ ঘুরী ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ভারত অভিযানের উদ্দেশ্যে পূর্ণোদ্যমে সৈন্যসহ অগ্রসর হলেন। ঐ সময় মুলতানের ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমগণ ইসলাম ধর্মমতের বিরুদ্ধবাদী ছিল এবং সেখানে তাদের খুব প্রাধান্য ছিল।
মুহাম্মদ ঘুরী প্রথমেই এই ইসমাইলিয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মুলতান অধিকার করলেন।
২. উচু দুর্গ বিজয় : অতঃপর ১১৭৫-৭৬ সালে সিন্ধুর উচ্ দুর্গটি অতি সহজে অধিকার করেন।
৩. আনহিলওয়ার অভিযান : ১১৭৮ সালে গুজরাটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তিনি গুজরাটের বাঘেলা বংশের রাজা ভীম এর রাজধানী আনহিলওয়ার দখল করতে ব্যর্থ হন এবং দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি মূল রাজ্যের নিকট চরম পরাজয় বরণ | করে সর্বপ্রথম পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হন।
৪. পেশোয়ার অধিকার : মুহাম্মদ ঘুরী গুজরাটের পরাজয়ে নিরুৎসাহী হওয়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি শক্তি সামর্থ সঞ্চয় করে পুনরায় ১১৭৯ সালে পেশোয়ার আক্রমণ করে গজনি বংশের শেষ সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করেন। আর খসরু মালিকের কাছ থেকে পেশোয়ার জয় করে নেন। রু মালিক তার হাতে বন্দি হন।
৫. পাঞ্জাব বিজ্ঞায় : পাঞ্জাব বিজয় ছিল মুহাম্মদ ঘুরীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাঞ্জাব ছিল ভারতের প্রবেশদ্বার। ১১৭৯ সালে মুহাম্মদ ঘুরী খাইবার গিরিপথের মধ্য দিয়ে লাহোরের দিকে অগ্রসর হলেন।
প্রথমে পেশোয়ার ও শিয়ালকোট অধিকার করে পরে পাঞ্জাবে শাসনরত গজনি বংশের সর্বশেষ রাজা সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করে লাহোর হস্তগত করেন।
পাঞ্জাব মুহাম্মদ ঘুরীর আয়ত্তাধীনে আমার ফলে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অপরাপর প্রদেশ জয় করে সম্র স্থাপনের পথ তার নিকট সহজ হয়।
৬. তরাইনের প্রথম যুদ্ধ : গজনিদের পতনের পর মুহাম্মদ ঘুরী রাজপুতদের বাধার সম্মুখীন হন। ১১৯০-৯১ সালে শেষের দিকে তিনি দিল্লি ও আজমিরের চৌহানরাজ পৃথ্বীরাজের রাজ্যের ভাতিন্ডা দখল করেন।
বিজয়ী মুহাম্মদ ঘুরীর শক্তি সামর্থ্যের কথা শুনে পৃথ্বীরাজ বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে মুহাম্মদ ঘুরীকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হলেন।
উত্তর ভারতের হিন্দুরাজাগণ একত্রিত হয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনীসহ বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন। থানেশ্বরের নিকট তরাইন নামক স্থানে উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরী পরাজিত হন এবং স্বদেশ ফিরে যান।
৭. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : মুহাম্মদ ঘুরীর তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মোটেই বিচলিত হননি, বরঞ্চ পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠলেন। তাই পরের বছরই ১১৯২ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তরাইনের প্রান্তরে উপস্থিত হন।
মুহাম্মদ ঘুরীর বিশাল বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক লক্ষ বিশ হাজার, অশ্বারোহী সংখ্যা ছিল বারো হাজার। পৃথ্বীরাজের নেতৃত্বে ভারতীয়দের সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মুহাম্মদ ঘুরীর সৈন্যবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়।
মুহাম্মদ ঘুরী রাজপুতদের এই মিলিত বাহিনীকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। পৃথ্বীরাজ মুসলিমদের হাতে বন্দি ও নিহত হন।
৮. কনৌজের জয়চাদের বিরুদ্ধে অভিযান : মুহাম্মদ ঘুরী পুনরায় ভারতে এসে জয়চাঁদ এর বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। এ অভিযানে কুতুবউদ্দিন আইবেক মুহাম্মদ ঘুরীকে সাহায্য করেন।
চান্দাওয়ারের যুদ্ধে জয়চাদ পরাজিত হলে মুহাম্মদ ঘুরী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তার সুযোগ্য প্রতিনিধি কুতুবউদ্দিন আইবেক বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখেন।
৯. কালিঞ্জর জয় : কুতুবউদ্দিন আইবেক ১২০২ সালে চান্দেল রাজবংশের পরমার্দি দেবের রাজধানী কালিঞ্জর আক্রমণ করে তা অধিকার করেন। এভাবে সমস্ত উত্তর ভারত মুসলমানদের শাসনাধীনে চলে আসে।
এদিকে কুতুবউদ্দিন আইবেক যখন উত্তর ভারতে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করছিলেন তখন তার অন্যতম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১২০৩ সালে বিহার এবং ১২০৪ সালে বাংলা (নদীয়া) আক্রমণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুহাম্মদ ঘুরী তার ভারত অভিযানের শুরু থেকেই একটি স্বপ্ন নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। আর তা হলো ভারতে স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি অভিযানে কয়েকবার পরাজিত হলেও মোটের ওপর তিনি ছিলেন বিজয়ী অভিযাত্রী। ভারতে একে একে সাম্রাজ্য দখল করে তিনি নিজ অধিকারে নিয়ে আসেন।
পাঞ্জাব অধিকার ছিল তার সবগুলো অভিযানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জাব দখলের পর ভারতে অপরাপর সাম্রাজ্য দখল করা মুহাম্মদ ঘুরীর কাছে - সহজ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা পাঞ্জাব ছিল ভারতের প্রবেশদ্বার ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের সামরিক বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর মূল্যায়ন কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।