সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর |
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর
- অথবা, খলজি বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল আলোচনা কর।
- অথবা, আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব/অবদান মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সুলতানি যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন। রাজকীয় গুণাবলি সমৃদ্ধ সুদক্ষ ও সমরকুশলী, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, ন্যায়বিচারক, সুযোগ্য শাসক এবং বহুমুখী প্রতিভা ও কৃতিত্বের জন্য ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে তিনি এক গৌরবময় স্থান দখল করে আছেন।
আলাউদ্দিনের রাজত্বকালে এমন কতকগুলো উল্লেখযোগ্য ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল, যা অন্যকোনো যুগে ঘটেনি। পর্যটক ইবনে বতুতা তাকে One of the best Sultan বলে অভিহিত করেছেন।
মোঙ্গল আক্রমণকারী এবং অনেকগুলো নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনকারী হিসেবে তিনি শেরশাহ ও আকবরের অগ্রদূত ছিলেন।
শ্রেষ্ঠ সুলতান হিসেবে আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তার রাজত্বকাল ছিল | ঘটনাবহুল ও উদ্ভাবনকারী যুগ। নিম্নে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. সিংহাসন আরোহণ : খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহের হত্যার পর আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ সালে ১৯ জুলাই নিজেকে দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন। ক্ষমতা লাভ করে সুলতান তার সহযোগীদের পুরস্কৃত করেন।
২. আরকলি, রুকুনউদ্দিন ও আহমদ চ্যাপের বিদ্রোহ দমন : সুলতান ক্ষমতা লাভ করার পর আরকলি, রুকুনউদ্দিন ও আহমদ চ্যাপের বিদ্রোহ দমন করেন। তাদেরকে দমনের জন্য সুলতান ভ্রাতা উলুঘ খান ও উজির জাফর খানের নেতৃত্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে তাদের পরাজিত করেন।
৩. আকাত খান ও হাজিমাগুলাকে দমন : সুলতান আলাউদ্দিনের রাজত্বকালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো আকাত খান ও হাজি মাওলার বিদ্রোহ, সুলতান ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের অপরাধে স্বীয় ভ্রাতু আকাত খান এবং বিদ্রোহী হাজি মাওলাকে হত্যা করেন।
৪. উচ্চপনগোষ্ঠী আমিরদের দম : সুলতান জালাল ফিরোজ শাহের আমলে যারা উচ্চপদের লোভে তাকে সমর্থন করেছিলেন। তাই তিনি তাদের দমন করেন।
কারণ লোভী লোকদের বিশ্বাস নেই। তারা যেকোনো সময় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সুলতান আলাউদ্দিন তাদের দমন করেন।
৫. মোঙ্গল আক্রমণ রোধ : সিংহাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মোগলদের প্রতি দৃষ্টি দেন। বার বার মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য তিনি বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।
সীমান্ত অঞ্চলসমূহ সুরক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। তার এসব পদক্ষেপে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
৬. নও-মুসলিমদের বিদ্রোহ দমন ; সুলতান জালালউদ্দিনের আমলে উলুঘ খানের নেতৃত্বে কতিপয় যোঙ্গল নেতা ইসলাম গ্রহণ করে দিল্লির উপকণ্ঠে বসবাস করতে থাকে।
এরূপে নওমুসলিম নামে একটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। সুলতান তাদের ষড়যন্ত্র নির্মূল করার লক্ষ্যে এক আদেশ জারি করেন। ফলে একদিনে ২০-৩০ হাজার নও-মুসলিমকে হত্যা করা হয়।
৭. গুজরাট বিজয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি গুজরাটের বাঘেলা বংশীয় রাজ্য কর্ণদেবের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম অভিযান প্রেরণ করেন।
১২৯৭ সালে উলুম খান ও মন্ত্রী নসরত যান নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নিকট রাজা কর্ণনের পরাজয় বরণ করেন। তিনি কন্যা দেবলা দেবীসহ দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন।
৮. ক্যাগে বিজয় : গুজরাট বিজয়ের পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজির অনুমতিক্রমে তার মন্ত্রী নসরত খান ১৯৯৮ সালে ক্যামেকে দিল্লি সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত করেন।
৯. রণখণ্ডোর বিজয় : ১৯৯৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন কর্তৃক প্রেরিত বাহিনী রণথম্ভোর দুর্গ অবরোধ করে। দুর্গ অবরোধ পরিচালনাকালে নসরত খান নিহত হন। উলুঘ খান দুর্গ জয়ে ব্যর্থ হন।
সামরিক এ বিপর্যয়ের এক বছর পর সুলতান স্বয়ং অভিযান পরিচালনা করে হাম্বীর দেবকে পরাজিত করেন। রণখণ্ডোরের দায়িত্ব উলুখ খানের উপর ন্যস্ত হয়।
১০. চিতোর বিজয় : রণথম্ভোর বিজয়ের পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩০৩ সালে মেবারের রাজধানী চিতোর আক্রমণ করেন। মেবারের রাজা রতন সিং ও তার দু'ই সেনাপতি গোরা ও বাদল বীর বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করে যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পলায়ন করেন। বিজিত অঞ্চলের দায়িত্ব যুবরাজ বিজির খানের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
১১. মালৰ বিজয় গুজরাট, রণদন্তোর, চিতোর বিজয় ; করার পর সুলতানের মালব বিজয় ছিল স্বাভাবিক পরিণতি। ১৩০৫ সালে সুলতান আইনুল মূলক মুলতানিকে মালব বিজয়ে প্রেরণ করেন।
তিনি একই সালের মালব রাজা রায়মল্লদেবকে পরাজিত করে মালব জয় করেন। এভাবে উত্তর ভারতে সুলতানের বিজয় ধারা অব্যাহত থাকে। তিনি পর্যায়ক্রমে উজ্জয়িনী, চান্দেরিসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করেন।
১২. উজ্জয়িনী, চান্দেরী, মান্ড ও ধর বিজয় : ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রাসান বলেন, মালব বিজয়ের সুলতান উজ্জয়িনী, চান্দেরি, ধর ও মার্চ দিল্লি সালতানের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে খলজি বংশের রাজ্যসীমা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
১৩. মারওয়া বিজয় : ১৩০৮ সালে সুলতান রাজস্থানের অন্যতম অঙ্গ মারওয়ার বিরুদ্ধে অভিযান করেন। অভিযান প্রেরণ করে রাজা শীতলদেবকে পরাজিত করে মারওয়া জয় করেন। আর উক্ত অঞ্চলের শাসনভার মালিক কালামউদ্দিনের উপর ন্যস্ত হয়।
১৪. দেবগিরি বিজয় : ১৩০৬ সালে দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে মালিক কাফুরকে প্রেরণ করলে মালিক তাকে পরাজিত করেন। তার নিকট আশ্রিত বর্ণদের পলায়ন করেন। তার কন্যা দেবলা দেবীকে খিজির খানের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়।
১৫. বরাগল বিজয় : দেবগিরির রাজ্যে পতনের পর বরাঙ্গলের রাজা প্রতাপ রুদ্রদেব এর বিরুদ্ধে মালিক কাফুরের নেতৃত্বে এক অভিযান প্রেরণ করা হয়।
প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়ে রাজকীয় বাহিনী দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রদেবের সহায়তায় ১৩১০ সালে মার্চ মাসে বাগল রাজ্য অধিকার করে নেয়। এ সময় রাজা প্রতাপ বদ্র আনুগতা প্রকাশপূর্বক সন্ধিপত্রে বার্ষিক কর প্রদানে সন্মতি হন।
১৬. দ্বারসমুদ্র বিজয় : সুলতান ১৩১০ সালের ১৮ নভেম্বর মালিক কাফুরের ও খাজা হাজীর নেতৃত্ব হোসেল রাজা তৃতীয় বীর বল্লালের বিরুদ্ধে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন।
বীর বল্লাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে যুদ্ধের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ দান ও সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। তিনি বাৎসরিক কর প্রদানে স্বীকৃত হন। মালিক কাফুরের সৈন্যরা প্রচুর স্বর্ণরৌপ্য লাভ করে।
১৭. পাতরাজ বিজয় : ১৩১১ সালে পান্ডরাজ্যে দুই ভাই ডীর পাণ্ডে ও শুভ্র পাণ্ডের রাজ্যের রাজধানী মাদুরা যাত্রা করেন। | তারা পলায়ন করলে মালিক কাফুর সহজেই মাদুরা জয় করে। অতঃপর প্রচুর ধন রত্নসহ দিল্লিতে তারা প্রত্যাবর্তন করেন।
১৮. মহারাষ্ট্রে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রের পুত্র শংকর দেব প্রতিশ্রুত কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মালিক কাফুরের নেতৃত্বে এক অভিযান প্রেরণ করেন। অভিযানে শংকর দেব নিহত হন মহারাষ্ট্রে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯. রাজস্ব সংস্কার : তার রাজস্ব সংস্কার হলো- সর্বপ্রথম ভূমি জরিপের ব্যবস্থা করেন। অভিজাত কর্মচারীদের দানকৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন।
অপ্রয়োজনীয় বৃত্তি, ভাতা ও জায়গীর বন্ধ করে দেন। মুসলমানদের শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত ধার্য করেন। অমুসলিমদের ওপর জিজিয়া ধার্য করেন। জমির উর্বরতা অনুসারে খারাজ ধার্য করেন।
২০. সামরিক সংস্কার : আলাউদ্দিনের সামরিক সংস্কার হলো জায়গীর প্রথার রহিত করে নগদ বেতন প্রদান। সৈন্যবাহিনীর প্রতারণারোধে অশ্বকে দাগ প্রদান এবং সৈন্যদের হাজিরা প্রদান করার ব্যবস্থা করেন। সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন।
২১. অর্থনৈতিক সংস্কার : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির অন্যতম কৃতিত্ব হল অর্থনৈতিক সংস্কার। তার অর্থনৈতিক সংস্কার হলো— দ্রব্য মূল্যের দাম নির্ধারণ।
খাদ্যশস্য গুদামজাতকরণ এবং প্রয়োজনের সময় সেখান থেকে সরবরাহ সুনিশ্চিতকরণ, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যশস্যের দাম নির্ধারণ ব্যবস্থায় প্রতারণা ও শঠতা প্রতিরোধে তদারক নিয়োগ ও খাদ্য মজুত নিষিদ্ধকরণ করেন।
২২. ধর্মনিরপেক্ষ শাসন : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি শাসনব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি মনে করতেন, সুলতানের ক্ষমতা শরিয়তের আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় । এজন্য শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেকে পৃথক করে ।
২৩. স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিল। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, সরাইখানা নির্মাণ করেন এবং এসবের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন একজন সুশাসক। তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
যদিও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে বলিষ্ঠতা ও নির্ভীকতার পথ বেছে নেন। প্রশাসনিক ও রাজস্বব্যবস্থার দিকে পর্যালোচনা করলে প্রজাদের কল্যাণে সময়োপযোগী শাসন নীতি প্রণয়ন ছিল তার অন্যতম কৃতিত্ব।
তার শাসনকালে উল্লেখযোগ্য হলো তার অর্থনৈতিক সংস্কার। তার এই সংস্কার ভারতীয় ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দান করেছে । তার অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।