সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন ।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর |
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর
- অথবা, সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজ্যবিস্তারের একটি বিবরণ বা বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে আলাউদ্দিন বাজিল একজন শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যবাদী শাসক। তিনি ১২৯৬ খ্রিষ্টাব্দ সিংহাসনে আরোহণ করে ভারতের এক বিশাল অংশ জয় করে ধীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
উচ্চাভিলার্থী সুলতান গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ন্যায় পৃথিবীব বিজেতা হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে থাকেন।
সুলতান এ ব্যাপারে কাজি আলাউল মূলকের কাছে পরামর্শ চাইলে কাজি তাকে অবাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন এবং ভারতের হিন্দু শাসনাধীন অঞ্চলগুলো জয় করার পরামর্শ দেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির রাজ্যবিজয় : ১২৯৬ খ্রিষ্টাব্দে, আলাউদ্দিন খলজির সিংহাসনে আরোহণ করেই কয়েক মাসের মধ্যে দিল্লির সালতানাতের প্রধান সমস্যা মোঙ্গল আক্রমণ সাফল্যের সাথে প্রতিহত করেন। অতঃপর রাজ্য বিজয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন। তার রাজ্য বিজয়ের প্রয়াসকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) উত্তর ভারত বিষয় ও
(খ) দক্ষিণ ভারত বিস্তা
(ক) উত্তর ভারত বিজয় : নিম্নে আলাউদ্দিন খলজির উত্তর ভারত বিজয়ের কাহিনি আলোচনা করা হলো
১. গুজরাট বিজয় : ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, আলাউদ্দিন খলজির সর্বপ্রথম অভিযান পরিচালিত হয় গুজরাট রাজা কর্ণদেবের বিরুদ্ধে। তিনি স্বীয় ভ্রাতা উলুম খান ও মন্ত্রী নসরত খানকে এ উদ্দেশ্যে ১২৯৭ সালে প্রেরণ করেন।
তারা বাঘেলা বংশীয় রাজা কর্ণসেবকে পরাজিত করেন। কন্যা দেবলাদেবীকে নিয়ে কর্ণদেব দেশ থেকে পালিয়ে যান। আর এ সুযোগে মুসলিম সেনারা অসংখ্য ধনরত্নসহ, রানী কমলাদেবীকে এবং মালিক কাফুরকে নিয়ে বিজয়ীবেশে রাজধানী দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন ।
২. কাম্বে দখল : গুজরাট বিজয় করে তার মন্ত্রী নসরত খান আলাউদ্দিন খলজির অনুমতিক্রমে তার অভিযান পরিচালনা করেন ১২৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। নসরত খান সহজে ক্যাম্বে দখল করে শিল্পির অন্তর্ভুক্ত করেন।
৩. রণমণ্ডোর বিজয় : ক্যামেকে বিজয়ের পর আলাউদ্দিন খলজি রণথয়োর দিকে নিবন্ধ করেন। রণথল্লোরে রাজপুত সর্দার হামির দেব বিদ্রোহী নব মুসলমানদের আশ্রয় দান করে সুলতানের বিরাগভাজন হন।
১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজি নসরাত খান ও গুজরাট বিজেতা উলুঘ খানের নেতৃত্বে রণথড়োর রাজা হামির বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। যুদ্ধে নসরাত খান নিহত হন এবং খলজি বাহিনী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
এ বিপর্যয়ে সুলতান স্বয়ং স্ব-সৈন্য নিয়ে রণথম্ভোর আক্রমণ করেন। দীর্ঘ এক বছর পর ১৩১১ সালে হামিদেবকে হত্যা করে রণখণ্ডোর বিজয় করেন। ভ্রাতা উলুঘ খানকে রাখস্তোরের শাসন কর্তা নিয়োগ করেন ।
৪. মালব বিষয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মালব অধিকারের নিমিত্তে মালব অভিযান প্রেরণ করেন। ফলে মালব রাজ মালব দের এর সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মালববাজ নিহত ও পরাজিত হন। সুলতান সচিব আইন মূলককে মালবের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
৫. চিতোর বিজয় : রণমড়োর বিজয়ের আলাউদ্দিন খলজি চিতোর বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন। ১৩০১ সালে সুলতান রাজধানী মেবারের চিত্তোর আক্রমণ করেন।
রাজধানী চিতোর ঘন জঙ্গল প্রভৃতি প্রকৃতি সীমারেখা পরিবেষ্টিত ও পাহাড়ে কারণে তা দখল করা খুবই দুরূহ ব্যাপার ছিল। চিতোরের রাজা রতন সিংহ ও তার দুই সেনাপত্তি গোৱা ও বাদল বীরদর্পে লড়াই করে ও শেষপর্যন্ত পরাজিত ও ধৃত হন।
আলাউদ্দিনের চিতোর অভিযানের প্রকৃত কারণ ছিল দিল্লির সন্নিকটে অবস্থিত শক্তিশালী রাজাকে করা। চিতোর বিজয় করার পর আলাউদ্দিন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খানকে চিতোরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন এবং চিতোরকে খিজিরবাদ নামকরণ করে দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন।
৬. উজ্জীয়নী, চান্দেরী, মাও এবং ধর বিজয় : ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, মালব বিজয়ের পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩০৫ সালে পুনরায় আক্রমণ করে মালবের উজ্জীয়নী, চান্দেরী, মাও এবং ধর জয় করে সমগ্র মালবকে নিজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এভাবে তার শাসন আমলে রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে।
৭. মারওয়া বিজয় : উজ্জীয়নী, চান্দেরী, মাও এবং ধর বিজয় করে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মারওয়ার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করেন।
১৩০৮ সালে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি রাজস্থানের অন্যতম রাষ্ট্র মারওয়ার রাজা শীতল দেবকে পরাজিত করে মারওয়া বিজয় করেন। অতঃপর উক্ত রাজ্যের শাসনভার | মালিক কালামউদ্দিন গুজের হাতে নাস্ত করেন।
৮. ঝালোর বিজয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ঝালোরাজ |কানোরা দেবের বিরুদ্ধে গুলে বেহেশত নামক জনৈক মহিলাকে অভিযানে প্রেরণ করেন।
কালোরাজ গুলে বেহেশত ও তার পুত্রকে পরাজিত করলে সুলতান দিল্লি থেকে আরেক দল সৈন্য প্রেরণ করলে তারা রাজা কানোরা দেবকে পরাজিত ও হত্যা করেন।
ফলে ঝালোর মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, রায়চৌধুরী এবং কে. দত্ত বলেন, "Practically the whole of Northern India feel under the dynasty of khilji imperialism, which was them emboldened fe embark on its canner of expansion in the Decan."
→ দাক্ষিণাত্য বিজয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩১১ সালের মধ্যে উত্তর ভারত বিজয় করার পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দাক্ষিণাত্যের অগণিত ধনরত্নের লোভে তা বিজয়ে আত্মনিয়োগ করেন। সে সময় দাক্ষিণাত্যে প্রধান রাজ্যে ছিল; যথা-
১. পশ্চিমে দেবগিরি যাদব রাজা ছিলেন রামচন্দ্ৰদেব।
২. পূর্বে কাকতীয় রাজ্যের রাজা প্রতাপরুদ্র দেব, তার রাজধানী রা
৩. কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণে হোয়সল রাজ্য, যার রাজা বীর বল্লাল।
৪. সুদূর দক্ষিণে পাণ্ডরাজ্য, যার রাজা মহাবর্মণ কৌলোশিখর আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের সমরনায়ক ছিলেন মালিক কাফু
১. দেবগিরি বিষয় : দেবগিরির রাজ্যের রাজা রামচন্দ্রদেব ৩ বছর ধরে প্রতিশ্রুত বাৎসরিক কর ও উপঢৌকন প্রদান বন্ধ করে দেন। ফলে ১৩০৬ সালে সুলতানের নির্দেশে মালিক কাফুর সামরিক অভিযানে যাদব রাজ্যের রাজা রামচন্দ্র দেবকে পরাজিত করেন।
কিন্তু রামচন্দ্র দেবের নিকট আশ্রিত রাজা কর্ণসেব পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তার কন্যা দেবলা দেবীকে রাজধানী এনে মহাসমারোহে সুলতানের পুত্র খিজির গানের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়।
২. বরাগল বিজয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩০৯ সালে মালিক কাফুরকে বরাঙ্গলের রাজা প্রতাপ রুদ্রদেবের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রেরণ করেন। রাজা প্রতাপ রদ্রদের দীর্ঘদীন অবরুদ্ধ থেকে নিয়মিত কর প্রদানের শর্তে সন্ধি করে নিজ রাজ্য পুনরায় ফিরে পান।
৩. দ্বারসমুদ্র বিজয় : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩১০ সালের ৮ নভেম্বর মালিক কাফুর ও খাজা হাজির নেতৃত্বে হোয়সল রাজ তৃতীয় বীর বল্লালের বিরুদ্ধে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন।
বীর বল্লাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও বশ্যতা স্বীকার করে নেন। মালিক কাফুরের সৈন্যরা প্রচুর স্বর্ণরৌপ্য ও মনিমুক্তা লাভ করে। অতঃপর ১৩১১ সালে দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
৪. পাতরাজ্য বিজয় : ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, মথুরার দুই ভাই বীর পাণ্ডে ও শুভ্র পাণ্ডের কলহের সুযোগে মালিক কাফুর পাণ্ডা রাজ্যের রাজধানী মাদুরায় যাত্রা করেন। তারা পলায়ন করলে মালিক কাফুর অতি সহজে পাণ্ডা রাজ্য জয় করে খলজি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
৫. সেতুবন্ধ ও রামেশ্বর জয় : মালিক কাফুর শেষ বারের মতো ১৩১২ সালে দাক্ষিণাত্য অভিযান পরিচালনা করে সেতুবন্ধ ও রামেশ্বর জয় করেন। তার এ বিজয়ের মাধ্যমে খলজি রামেশ্বর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
৬. মহারাষ্ট্রে মুসলিম আধিপত্য : দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র দেবের পুত্র শংকর দেব প্রতিশ্রুত কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে সুলতান মালিক কাফুরকে তথায় প্রেরণ করেন। অভিযানে শংকর দেব নিহত হলে মহারাষ্ট্রে মুসলিম আধিপত্য স্থাপিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন খলজি রাজ্যজয়ে সাম্রাজ্যবাদী নীতির অনুসরণ করেন। তিনি উচ্চাভিলাষী শাসক হিসেবে সমগ্র উত্তর ভারত ও দাক্ষিণাত্য জয় করে যে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা তাকে ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দান করেছে।
তাছাড়া সুলতান উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোকে সাম্রাজ্যভুক্ত করার পর দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোকে সাম্রাজ্যভুক্ত করে দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। ঐতিহাসিক ড. এ রায় বলেন, "The History of Muslim empire and muslim administration in india really begins with him.aaaaaa
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদী নীতি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।