জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ
জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ

জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ

  • অথবা, জৌনপুর রাজ্যের ইতিহাস আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে জৌনপুর রাজ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। যার সাথে শর্কী সালতানাতের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। 

১৩৬০ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ শাহ তুঘলক তাঁর চাচাতো ভাই ও একনিষ্ঠ সমর্থক মুহাম্মদ জুনা খান, তথা মুহাম্মদ তুঘলকের স্মৃতিরক্ষাকল্পে গোমতী নদীর তীরে জৌনপুর নগর স্থাপন করেছিলেন । 

১৩৮৮ খ্রি. ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর হতে মাহমুদ তুঘলকের আমলে খাজা জাহানের ক্ষমতা লাভ পর্যন্ত জৌনপুরের | ইতিহাসে কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। 

জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্তী সালতানাতের ইতিহাস : নিয়ে জৌনপুর রাজ্যের ইতিহাস আলোচনা করা হলো-

১. শর্কী বংশের প্রতিষ্ঠা : ফিরোজ শাহের তুঘলক তাঁর চাচাতো ভাই ও একনিষ্ঠ সম্ম ন খান তথা মুহাম্মদ তুলকের স্মৃতি রক্ষাকরে গোমতী নদীর তীরে জৌনপুর নগর স্থাপন করেন। 

১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন তুগলকের আমলে মালিক সারওয়ার নামক জনৈক ক্ষমতাবান রাজা জৌনপুরে এক স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। সারওয়ার তার রাজ্য পশ্চিমে আলিগড় ও পূর্বে নিহত পর্যন্ত বিস্তার করেছিলেন। 

খাজা জাহান তথা সারওয়ার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজবংশ শর্কী বংশ নামে পরিচিত। ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সারওয়ার মৃত্যুবরণ করেন এবং তার মৃত্যু পরবর্তীতে তাঁর দত্তক পুত্র মাণিক করণফুল মোবারক শাহ শকী নাম গ্রহণ করে জৌনপুরের সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

তিন বছর রাজত্বের পর মোবারক শাহ শর্কীর মৃত্যু ঘটে এবং ১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু ঘটলে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইব্রাহিম শাহ শকী | সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং পরবর্তীতে রাজ্য পরিচালনা করেন। ইব্রাহিম শাহ শৰ্কী ছিলেন শর্কী বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুলতান।

২. জৌনপুরের উল্লেখযোগ্য সুলতান ইব্রাহিম শর্কী : ১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলে মালিক সারওয়ার নামক রাজা জৌনপুর নামে এক স্বাধীন রাজ্য এবং একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। 

যা শর্কী বংশ নামে পরিচিত। ইব্রাহিম শর্কী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। তার রাজত্বকালে জৌনপুর রাজ্য সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। 

তাঁর আমলে জৌনপুরের যেসব মসজিদ ও হর্ম্যাদি নির্মিত হয়েছিল সেগুলোতে হিন্দু স্থাপত্য শিল্পের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অভালা মসজিদ (Atala Masjid) আজও হিন্দু স্থাপত্য প্রভাবিত মুসলিম নির্মাণ শিল্পের নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান আছে। 

সুলতান ইব্রাহিম শর্কী বাংলাদেশের রাজা মনোহরের বিরুদ্ধে অভিযানে অগ্রসর হন এবং সফল হন। ১৪০২ থেকে ১৪৩৬ সাল পর্যন্ত ইব্রাহিম শর্কী কৃতিত্বের সাথে তার শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। 

তিনি অত্যন্ত দক্ষতা এবং বিচক্ষণতার সাথে তার শাসনামলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন এবং জৌনপুরকে একটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেন। ১৪৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার শাসনকার্যের অবসান ঘটে।

৩. মাহমুদ শাহ ইব্রাহিম : শর্কীর মৃত্যুর পর তার পুত্র মাহমুদ শাহ শাসনকার্যে অবতীর্ণ হন। মাহমুদ শাহ মালব ও দিল্লির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং চুনার জেলায় অধিকাংশ অঞ্চল নিজ রাজ্যভুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। 

কিন্তু মধ্যে কালপী জয় করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। তিনি জয়ের নেশায় দিল্লির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং দিল্লির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাহলুল লোদীর হস্তে পরাজিত হয়েছিলেন। 

১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইব্রাহিম শর্কীর পুত্র মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। যদিও মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর শাসনকার্য বেশি দিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি।

৪. মুহাম্মদ শাহ : ইব্রাহিম শর্কীর মৃত্যুর পর তদ্বীয় পুত্র মাহমুদ শাহ ১৪৩৬–১৪৫৭ পর্যন্ত প্রায় ২১ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। কিন্তু ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর তদ্বীয় পুত্র মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

তিনি প্রায় ১ বছরের মতো তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু আততায়ীরা তার শাসনকার্যকে বেশি দিন স্থায়ী হতে দেয়নি। 

১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দে অল্পকালের মধ্যেই আততায়ীর হস্তে তিনি প্রাণ হারান এবং পরবর্তীতে হুসেন শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ১৪৫৮ থেকে ১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তার শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন।

৫. হুসেন শাহ এবং জৌনপুরের শেষ স্বাধীন সুলতান : মুহাম্মদ শাহের অল্পকালের শাসনকার্যের অবসানের পর হুসেন শাহ জৌনপুরের শেষ সুলতান হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

তিনি ১৪৫৮–১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর সাফল্যের সাথে তার শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। তিনি বাহলুল লোদীর সাথে মিত্রবদ্ধ হন এবং ত্রিহুতের স্বাধীন জমিদারগণকে তার আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য করেন। 

তিনি উড়িষ্যা আক্রমণ করে তথাকার হিন্দু রাজার নিকট হতে প্রভূত পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে এসেছিলেন। গোয়ালিওর দুর্গ আক্রমণে তিনি সম্পূর্ণভাবে কৃতকার্য হতে না পারলেও রাজা মানসিংহের নিকট হতে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিপূরণ তিনি আদায় করতে পেরেছিলেন। 

কিন্তু এরপর তিনি বাহলুল লোদীর সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে তাঁর সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটে এবং জৌনপুর পুনরায় দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের অধিকারভুক্ত হয়।

উপসংহার : উপরোল্লিখিত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, জৌনপুর ছিল ভারতীয় মুসলমানদের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। উত্তর ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত অংশে জৌনপুর ছিল মুসলমানদের প্রথম সুরক্ষিত স্থান। 

শর্কী দীর্ঘ শাসনামলে জৌনপুর তথা উত্তর ভারতের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। উত্তর ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত অংশে জৌনপুর ছিল মুসলমানদের প্রথম সুরক্ষিত স্থান। 

শর্কী রাজত্বের সময় এটি ছিল মুসলমানদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রস্থল। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে জৌনপুর পারস্যের শ্রেষ্ঠ নগর সিরাজের ন্যায় খ্যাতি অর্জন করেছিল। তাই একে ভারতের সিরাজও বলা হতো।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ। যদি তোমাদের আজকের জৌনপুরের স্বাধীনতা শর্কী সালতানাতের ইতিহাস লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ