ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও
ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও

ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও

  • অথবা, দিল্লি সালতানাতের বিচ্ছিন্নতাকরণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যের উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা দাও। 

উত্তর : ভূমিকা : দিল্লি সালতানাতের শাসনকার্য সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান হয়। যা দিল্লি সালতানাতের ইতিহাসকে পাল্টে দেয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। 

যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ছিল। তন্মধ্যে পরিচিত হলো, জৌনপুর সাম্রাজ্য, গুজরাট সাম্রাজ্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, বাহমনী সাম্রাজ্য, সৈয়দ বংশ ও লোদী বংশ। প্রশ্নালোকে এ সমস্ত স্বাধীন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশগুলোর উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো :

→ বিভিন্ন ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান : নিম্নে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. জৌনপুর রাজ্যের উত্থান : ফিরোজ শাহ তুঘলক তার চাচাতো ভাই ও একনিষ্ঠ সমর্থক মুহাম্মদ জুনা খান তথা মুহাম্মদ তুঘলকের স্মৃতিরক্ষা কল্পে গোমতী নদীর তীরে জৌনপুর নগর স্থাপন করেন।

১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর হতে মাহমুদ তুঘলকের আমলে খাজা জাহানের ক্ষমতা লাভ পর্যন্ত জৌনপুরের ইতিহাসে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ঘটেনি। 

১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আমলে মালিক সারওয়ার নামক জনৈক ক্ষমতাবান রাজা জৌনপুরে এক স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। সারওয়ার তার রাজ্য পশ্চিমে আলিগড় ও পূর্বে ত্রিহুত পর্যন্ত বিস্তার করেছিলেন। 

সারওয়ার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনরাজবংশ শর্কী বংশ নামে পরিচিত। ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সারওয়ারের মৃত্যু হলে দত্তক পুত্র মালিক করণফুল মোবারক শাহ শকী নাম গ্রহণ করে জৌনপুরের সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

মাত্র তিন বছর রাজত্বের পর ১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু ঘটলে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইব্রাহিম শাহ শকী সিংহাসনে আরোহণ করেন। ইব্রাহিম শরী ১৪৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন এবং ১৪৩৬ খ্রিষ্টাব্দেই মৃত্যুবরণ করেন। 

ইব্রাহিম শাহ এর মৃত্যুর পর মাহমুদ শাহ, মুহাম্মদ শাহ এবং জৌনপুরের শেষ স্বাধীন সুলতান হিসেবে হুসেন শাহ আবির্ভূত হন এবং ১৪৭৯ খ্রি. পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন।

২. গুজরাট সাম্রাজ্যের উত্থান : ১২৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজি গুজরাট অধিকার করে দিল্লি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তখন হতে এটি মুসলমান শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল।

১৪০১ খ্রিষ্টাব্দে একজন ধর্মান্তর গ্রহণকারী রাজপুতের পুত্র জাফর খাঁ সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত হলে তিনি সুলতান মুজাফ্ফর শাহ উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। 

মুজাফ্ফর শাহ মালবের শাসনকর্তাকে পরাস্ত করেন এবং “ধর” অধিকার করেন। তার পৌত্র আহমেদ শাহ সিংহাসন লাভ করেন। তাকেই স্বাধীন গুজরাটের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। 

মুজাফ্ফর শাহের পৌত্র আহমদ শাহ অত্যন্ত ক্ষমতাশালী সুলতান ছিলেন। তিনি অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থার উন্নতি এবং বিচারব্যবস্থার সংস্কার সাধন করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। 

এরপর মাহমুদ বেমারহা, দ্বিতীয় মুজাফ্ফর শাহ ও বাহাদুর শাহ শাসনকার্য পরিচালনা করেন। বাহাদুর শাহের পরবর্তী সুলতানদের স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনার ক্ষমতা ছিল না। সেই সুযোগে অভিজাতবর্গ শাসনক্ষমতা হস্তগত করেছিলেন। ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে আকবর গুজরাটকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

৩. বিজয় নগর সাম্রাজ্যের উত্থান : বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে কোনো কিছুর সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। প্রচলিত কাহিনি কিংবদন্তির উপর নির্ভর করে মোটামুটি একথা বলা যেতে পারে যে, সঙ্গম নামক অনৈক ব্যক্তির পাঁচ পুত্র তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে বিজয়নগরের সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। 

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পাঁচ ভ্রাতার মধ্যে হরিহর ও বন্ধুই ছিলেন প্রধান। মঠের বিদ্যারণ্য নামে জনৈক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এবং তাঁর ভ্রাতা বেদের বিখ্যাত ভাষাদার সারমাচর্য বিজয়নগরের ভিত্তি স্থাপনের প্রেরণা দান করেছিলেন বলে কথিত আছে। 

বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে অপর একটি কিংবদন্তিও আছে। সেই অনুযায়ী হরিহর ও বন্ধু দুই ভ্রাতা কোনো একসময়ের বরঞ্চলের কাকতীয়দের সামন্ত ছিল। 

পরে এক সময়ে বর্তমান পর্যটক রাজ্যের অন্তর্গত কাম্পিলি রাজ্যের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক যখন কাম্পিলি জয় করে নেন তখন হরিহর ও বন্ধুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। 

পরে একসময়ে উভয় ভ্রাতা তাদের শুরু বিদ্যানের উপদেশে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে পুনরায় হিন্দুধর্মে দিক্ষিত হন এবং বিজয়নগরের সাম্রাজ্যের পত্তন করেন।

৪. বাহমনী রাজ্যের উত্থান : নিরি সালতানাতের ধ্বংসস্তূপের মধ্য হতে যেসব স্বাধীন রাজ্য মাথা তুলে দাঁড়ায় বাহমনী রাজ্য তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল। হাসান নামক জনৈক ব্যক্তি “আবুল মুক্তার আলাউদ্দিন রাহমান শাহ" উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশের নাম হলো বাহমনী বংশ। আলাউদ্দিন শাহ ছিলেন বাহমনী রাজ্যের অন্যতম ন্যায়পরায়ণ, প্রজাপালক ও ধার্মিক শাসক।

৫. সৈয়দ বংশের উত্থান : ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে খিজির খানের প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ বংশের শাসনকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। 

খিজির খাঁ উত্তরাধিকার সুত্রে রাজবংশে জন্মগ্রহণ না করলেও তিনি তার প্রতিভা, যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতার দ্বারা সৈয়দ বংশের ভিত্তি রচনা করে যায়। 

তৈমুরের পুত্র শাহরুখের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করতেন এবং সময়ে সময়ে তার নিকট উপঢৌকন প্রেরণ করতেন। 

সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে তিনি আজীবন সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন। ১৪১৪ সালে লোদীকে পরাজিত করে খিজির না দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

ঐতিহাসিক কিরিমাতা বলেন, "খিজির খাঁ একজন মহান ও বিজ্ঞ শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন সর্বদা দয়ালু ও ওয়াদা রক্ষাকারী। ১৪২১ সালে তার মৃত্যুর পর জনগণ তিন দিন শোক পালন করেন। 

খিজির খাঁ পশ্চিমে মুলতান হতে জৌনপুরের সীমান্ত পর্যন্ত ভূভাগ দিল্লি সালতানাতের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসেন। পরবর্তী আলাউদ্দিন আলম শাহের শাসনামলে সৈয়দ বংশের সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দিল্লি সালতানাতের | সমাপ্তির পথে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয় যেগুলো দীর্ঘসময় ধরে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। 

এর মধ্যে প্রায় ১৮০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন বাহমনী সম্রাজ্য, ১৩৪৭-১৫২৭ পর্যন্ত। তাদের শাসন দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। 

আরো আছে খিজির খানের সৈয়দ বংশ, গুজরাট সাম্রাজ্য, বিজয়নগরের সাম্রাজ্য। সর্বোপরি এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন সাম্রাজ্যগুলো দিল্লি সালতানাতের অবসানের পথে তাদের শাসনকার্যের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং দীর্ঘদিন শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও । যদি তোমাদের আজকের ভারতে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে ধারণা দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ