সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর
সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর

সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর

  • অথবা, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল শাসকদের ইতিহাসে আওরঙ্গজেব একজন গুরুত্বপূর্ণ শাসক। তিনি ১৬৫৮ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেন। 

এগুলোর মধ্যে রাজপুত নীতি ছিল অন্যতম। সম্রাট আকবর কর্তৃক অনুসৃত রাজপুত নীতির দূরদর্শিতা, উপলব্ধি করার মতো বাস্তব রাজনৈতিক জ্ঞান সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছিল না। 

সম্রাট আওরঙ্গজেবের অদূরদর্শী ও ধর্মান্ধ নীতি রাজপুত জাতিকেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি : সম্রাট আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহণের দীর্ঘ দুই দশক পর ১৬৭৮ সালে রাজপুতদের প্রতি যে সৃষ্টি নিবন্ধ করেন তাই তার রাজপুত নীতি নামে খ্যাত। নিম্নে তার রাজপুত নীতির বিভিন্ন ঘটনাবলি তুলে ধরা হলো :

১. রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব : সম্রাট আওরঙ্গজেব সীমাহীন গুণের অধিকারী হলেও তার মধ্যে রাজনৈতিক জ্ঞানের -অভাব ছিল। রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণেই তার রাজপুত মৈত্রী নাশ হয় এবং এতে তার প্রচুর আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

২. মারওয়ার দখল : বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও মেবারের রানা যশোবন্ত সিংহকে ক্ষমা প্রদর্শন করে সম্রাট আওরঙ্গজেব জামরুনে মুঘল সামরিক ঘাঁটির অধিকর্তা নিযুক্ত করেন। 

কিন্তু ১৮৭৮ সালে যশোবন্ত মৃত্যুবরণ করলে সে সুযোগে সম্রাট তার রাজ্য দখল করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন। 

মারওয়ার রাজ্যে প্রবেশ করে মুঘল রাজকর্মচারিগণ ও সেনাবাহিনী সেখানকার দেবমন্দিরগুলো ধ্বংস করে এবং অমুসলিম প্রজাদের উপর জিজিয়া কর ধার্য করে। 

এমনকি তারা ৩৬০,০০০ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে যশোবন্ত সিংহেরই এক আত্মীয়কে যৌধপুরের সিংহাসনে বসায়।

৩. অজিত সিংহকে দিল্লিতে আশ্রয় দান : যশোবন্ত সিংহের মৃত্যুকালে তার দুই রানিই ছিলেন সন্তানসম্ভবা। কিছুদিনের মধ্যে এ দুটি শিশুর মধ্যে একটি মৃত্যুবরণ করলে অপর পুত্র অঙ্গিত সিংহকে নিয়ে বিধবা দুই রানি সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে আশ্রয় নেন এবং যশোবস্তের সিংহাসনে তার পুত্র অজিত সিংহকে অধিষ্ঠিত করানোর দাবি জানান। 

তারা এ দাবি জানালে অজিত সিংহ দিল্লির প্রাসাদে মুঘল হেরেমে প্রতিপালিত হবেন এ শর্তে সম্রাট দাবি মেনে নিতে রাজি হন।

৪. সম্রাট আওরঙ্গজেব বনাম রাজপুত বীর দুর্গাদাস : দুর্গাদাস নামক রাজপুত বীর ও অপরাপর রাজপুত নেতৃবৃন্দ আওরঙ্গজেবের শর্ত প্রত্যাখ্যান করে দিল্লি ত্যাগ করার উদ্যোগ নিলে সম্রাট অজিত সিংহ ও দু'রানিকে বন্দি করার আদেশ দেন। 

রাজপুত বীর দুর্গাদাসের বীরত্ব ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের ফলে শিশুপুত্রসহ রানিদ্বয় দিল্লি থেকে পলায়ন করতে সমর্থ হলেন। 

মারওয়ায় প্রত্যাবর্তন করে দুর্গানাস সম্রাটের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। এদিকে সম্রাট জনৈক গোয়ালার শিশুপুত্রকে অজিত সিংহ বলে চাপিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

৫. সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক পুনর্বার মারওয়ার দখল : দুর্গাদাসের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেব মারওয়ার আক্রমণ করার জন্য স্বয়ং আজমিরে উপস্থিত হন। 

পুত্র আকবরের উপর মুঘল সেনাবাহিনীর অধিনায়কত্ব অর্পণ করেন এবং তিনি আজমির থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লাগলেন। 

রাজপুত্র বাহিনী মুঘল সেনার হস্তে ১৬৭৯ সালে পরাজিত হয়। সম্রাট মারওয়ার রাজ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে প্রত্যেক অংশে একজন করে মুসলমান ফৌজদার নিযুক্ত করলেন।

৬. সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক মেবার দখল : সম্রাট কর্তৃক মারওয়ার দখলের ফলে পার্শ্ববর্তী রাজপুত রাজা মেবারের রানা রাজসিংহ শঙ্কিত হয়ে মারওয়ার রাজ্যের সাথে একতাবদ্ধ হন।

মারওয়ারের রাজপুতদের সঙ্গে মেবারের সিসোনিয়া রাজপুতদের মৈত্রীচুক্তি মুখল প্রভুত্বের পরিপন্থি হিন্দুরাজ্য স্থাপনের আন্দোলনে পরিণত হয়। 

রাষ্ট্রদ্রোহী ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব মেবারের রানা রাজসিংহের বিরুদ্ধে এক বিরাট বাহিনী প্রেরণ করেন। 

এর বিরুদ্ধে দুর্গাদাস ও রানা রাজসিংহ সামরিক জোট গঠন করলেও তারা মুঘল বাহিনীর নিকট পর্যুদস্ত হন। রাষ্ট্রদ্রোহী ও রাজসিংহ আত্মরক্ষার্থে নিজ প্রজাকাসহ পর্বতারণ্যে পলায়ন করলে আওরঙ্গজেব সহজেই ১৬৭৯ সালে মেবার দখল করেন। 

উদয়পুর ও চিতোর রাজত্ব মুঘল বাহিনী দখল করে নেন।। দু'শতাধিক দেবমন্দির মুঘল বাহিনীর হস্তে বিধ্বস্ত হলো।

৭. সম্রাট আওরঙ্গজেব ও রাজসিংহের সন্ধি স্থাপন : মুঘল বাহিনী যখন যুবরাজ আকবরের বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত তখন মেবারের পরাজিত রাজা জয়সিংহ মালব ও গুজরাট আক্রমণ করে মুঘল শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণে আকুন্ঠ নিয়োজিত হন। 

এ সময় সম্রাট আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের দিকে যুদ্ধ যাত্রা করতে হলো। ফলে তিনি জয়সিংহের সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলেন। 

জিজিয়া প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়ে সম্রাট জয়সিংহের নিকট থেকে মেবারের তিনটি জেলা লাভ করেন। 

১৬৮১ সালে সম্পাদিত এ সন্ধি অনুযায়ী মুঘল-রাজপুত দ্বন্দ্ব প্রশমিত হলেও সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাহাদুর শাহ ১৭০৯ সালে অজিত সিংহকে মেবারের রানা হিসেবে স্বীকৃতি দান করার পূর্ব পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে।

→ সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতির মূল্যায়ন : নিম্নে সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতির মূল্যায়ন করা হলো :

১. ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নয়, রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই সংঘর্ষ : পক্ষপাতদুষ্ট সমালোচকগণের মতে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের অসহিষ্ণু নীতির ফলেই রাজপুতদের সাথে মুঘলদের সংঘর্ষ বাধে কিছু ঐতিহাসিক তত্ত্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই গর্বিত রাজপুত জাতি এর বিরোধিতা করে আসছে এবং এ কারণে রাজপুত্রদের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। 

এ প্রসঙ্গে ভি. স্মিথ যথার্থই মন্তব্য করেন যে, চিতোর ও রণথম্বোর অধিকার না করে উৎসা ভারতের সার্বভৌম রাজ্যের সিংহাসনে কেউই নিরাপত্তাবোধ করতেন না। 

সুতরাং বিধর্মীদের উপর অসহিষ্ণু মনোভাবের বাহ্যিক প্রকাশ হিসেবে সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করেননি। 

তবে একথা সত্য যে, যুদ্ধাভিযানের পর বিজিত রাজ্যে মুসলিম সৈন্যগণ কিছু দেবমন্দির ধ্বংস করেছেন। কেননা এ সময় হিন্দু রাজপুত্রগণ রাজ্য ত্যাগ করায় এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পূজা করার কেউ ছিল না।

২. হিন্দুদের ধর্মান্তরিতকরণ অভিমত : স্বনামধন্য ঐতিহাসিক স্যার জে. সরকার মন্তব্য করেন যে, আওরঙ্গজেবের সময়ে হিন্দুদের বলপূর্ব ইসলামে দীক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই মারওয়ার দখল করা হয়।

অথচ বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদুনাথ সরকারের একদিকে যেমন বাস্তবতাবর্জিত অন্যদিকে পক্ষপাতদুষ্ট স্থান একমাত্র মারওয়ারই ছিল না, বরং সমগ্র ভারতবর্ষেই বলপ্রয়োগ ব্যতিরেকেই ইসলাম প্রচারিত হয়। 

উপরন্তু যশোবস্তের পুত্র অজিত সিংহ সম্রাট আওরঙ্গজেরেব দরবারে আগমন করলে সম্রাট তাকে ইসলাম গ্রহণের শর্ত আরোপ না করে বরং তার থাকার ও রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

৩. ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম করা সংক্রান্ত মন্তব্য : জে.এন. সরকার মন্তব্য করেন যে, দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত সরাসরি বাণিজ্য পথ সুগম করার জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব মারওয়ার অধিকার করেন। কারণ মারওয়ার এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। 

যদুনাথ সরকারের এ সুচিন্তিত মন্তব্য ভিত্তিহীন। কারণ ২০ বছর রাজত্ব করার পর ১৬৭৮ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব হঠাৎ মারওয়ারের মধ্যে দিয়ে পশ্চিম উপকূলে বাণিজ্য পথ খুলবেন এটি অচিন্তনীয়। 

উপরন্তু বাণিজ্যিক গুরুত্ব থাকলে ইতিপূর্বে সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান অনুরূপ ব্যবস্থা করতেন।

৪. রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানই ছিল অপরিহার্য : মূলত গর্বিত বীরযোদ্ধা রাজপুতদের অব্যাহত মুঘল বিরোধিতা প্রশমন এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য রাজপুতদের দমন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এতে কোনো ধর্মীয় বা আর্থসামাজিক কারণ অনুসন্ধান করা যুক্তিযুক্ত হবে না।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত জাতির মিত্রতার মূল্য বুঝার মতো ক্ষমতা ছিল না। তার রাজপুত নীতি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করে। 

নিজ জীবদ্দশাতেই তিনি মেবারের সাথে যুদ্ধ মিটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন এবং পরবর্তীকালে তার পুত্র বাহাদুর শাহ অজিত সিংহের দাবি মেনে নেন। 

সুতরাং বলা যায়, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি সাফল্যমণ্ডিত হয়নি। বরং উল্টো মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ