সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর
সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর

  • অথবা, সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিজয় অভিযানের বিবরণ দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : সম্রাট জাহাঙ্গীর একজন প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। তার অপর নাম হলো 'নুরুদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজি'। 

তার চরিত্রে উদারতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও জ্ঞানানুরাগের মতো অপূর্ব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল 1 ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “মুঘল ইতিহাসে জাহাঙ্গীর ছিলেন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।"

→ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার : সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৫ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষমা করেন এবং যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করে দেন। 

নিম্নে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. খসরুর বিদ্রোহ দমন : সম্রাট জাহাঙ্গীর ক্ষমতা গ্রহণের পরেই যুবরাজ খসরু পাঞ্জাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাকে সাহায্য করেন হুসেন বেগ, শিখগুরু অর্জুন ও লাহোরের আব্দুর রহিম। সম্রাট জাহাঙ্গীর এ বিদ্রোহ দমনের জন্য খসরুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এতে খসরু পরাজিত হয়।

২. বাংলার বিদ্রোহ দমন : সম্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহণ করলে পূর্বশত্রুতার জের ধরে ওসমান খান ও মুসা খান মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। 

ফলে বাংলায় বিদ্রোহ দেখা দেয়। জাহাঙ্গীর এ বিদ্রোহ দমনের জন্য ইসলাম খানকে প্রেরণ করেন। ইসলাম খান ১৬১২ সালে ওসমান থাকে পরাজিত করে ও হত্যা করে আফগান শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে মুঘল প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন।

৩. কান্দাহার উদ্ধারে ব্যর্থতা : পারস্যের শাহ আব্বাস আকবরের রাজত্বকালে বহু চেষ্টা করেও কান্দাহার পুনরুদ্ধার করতে পারছিলেন না। 

অতঃপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করে ১৬১২ সালে আকস্মিকভাবে কান্দাহার অধিকার করে নেন। পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীর শত চেষ্টা করেও তা উদ্ধার করতে পারেননি।

৪. মেবার অভিযান : মেবার বিজয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সম্রাট জাহাঙ্গীর মেবার অধিকারের উদ্দেশ্যে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। 

সফল অভিযানের মাধ্যমে তিনি মেবারের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেও রাজধানী চিতোর হস্তগত করতে পারেননি। 

অতঃপর ১৬১৫ সালে যুবরাজ খুররমের নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে মেবারের অমর সিংহ মুঘল আধিপত্য স্বীকার করে নেন।

৫. নগরকোট বিজয় : শতদ্রু বা সতলুজ নদীর মোহনায় অবস্থিত দুর্ভেদ্য নগরকোট বা কাংড়া দুর্গ বিজয় জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা। 

১৬২০ সাল পর্যন্ত দুর্গটি মুঘল আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা মুর্তজা খান এ দুর্গ জয় করতে ব্যর্থ হন। 

অবশেষে যুবরাজ খুররম এক বিশাল বাহিনী নিয়ে দুর্ভেদ্য কাংড়া দুর্গ দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে অবরোধ করে রাখেন এবং ১৬২০ সালে তা জয় করতে সক্ষম হন।

৬. দাক্ষিণাত্যে অভিযান : ভারতবর্ষের প্রত্যেক শক্তিমান সম্রাটের দৃষ্টি ছিল দাক্ষিণাত্যের প্রতি। সম্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহণ করে দাক্ষিণাত্যে অভিযান পরিচালনা করেন। 

কিন্তু মাণিক অঘরের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে দাক্ষিণাত্যে অভিযান ব্যর্থ হয়। শেষে ১৬১৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর যুবরাজ খুররমকে আহমেদ নগর অভিযানে প্রেরণ করেন। 

যুবরাজ খুররম সফলতা লাভ করে আহমেদ নগর দুর্গ ও বালাঘাট অধিকার করেন। কিন্তু এ অভিযানের ফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

৭. মহব্বত খানের বিদ্রোহ ও পলায়ন : সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সেনাপতি মহব্বত খান ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেন। শাহজাদা খুররমের বিদ্রোহ দমনে তিনি যথেষ্ট দক্ষতা ও সামরিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। 

মহব্বত খান ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে মনে করে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান তাকে রাজধানী থেকে দূরবর্তী অঞ্চল বাংলায় গমনের নির্দেশ দেন। 

এ নির্দেশ মেনে নিতে না পেরে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এমনকি সম্রাট জাহাঙ্গীর ও নূরজাহানকে বন্দি করেন। 

কিন্তু নূরজাহান কৌশলে স্বামী এবং নিজেকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। মহব্বত খান অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণ ভয়ে দাক্ষিণাত্যে পলায়ন করেন।

৮. শাহজাহানের বিদ্রোহ : সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে আরেক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল শাহজাহানের বিদ্রোহ। সম্রাজ্ঞী নূরজাহান চেয়েছিলেন তার জামাতা ও সম্রাটের কনিষ্ঠ পুত্রকে মসনদে বসাতে। 

শাহজাহান তা মেনে নিতে না পেরে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কিন্তু সম্রাটের রাজকীয় বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন। পরে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করলে সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে ক্ষমা করে দেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট জাহাঙ্গীর একজন আদর্শবাদী লোক ছিলেন। তিনি একাধারে তীক্ষ্ণ মেধা, ন্যায়পরায়ণতা, স্নেহপরায়ণ, সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। 

তার চরিত্র সম্পর্কে ঈশ্বরী পাটনী বলেন, “সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল ইতিহাসের অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র। তার রাজত্বকালে সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিল। 

রাজ্যবিস্তার, বিদ্রোহ সমন, শাসনকার্য পরিচালনা এবং রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।"

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্যবিস্তার আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ