সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

  • অথবা, দিল্লির সৈয়দ বংশের উত্থান আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের শাসনামলে সৈয়দ বংশের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খিজির খান। 

তিনি উত্তরাধিকারী সূত্রে রাজবংশে জন্মগ্রহণ না করলেও তিনি তার প্রতিভা, যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতার দ্বারা সৈয়দ বংশের ভিত্তি রচনা করেছিলেন যখন তিনি তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সৈয়দ বংশকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রেখেছেন, তখন তিনি এক নতুন বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতনের সঙ্গে ভারতের মুসলিম ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আছে ।

১. সৈয়দ বংশের উৎপত্তি; 

২. খিজির খাঁ;

৩. মোবারক শাহ;

৪. মুহম্মদ শাহ ও

৫. আলাউদ্দিন আলম শাহ ।

২. খিজির খাঁ : শৈশবে খিজির খাঁ সুলতানের শাসনকর্তা মালিক নাসির-উল-মুলক মনান দৌলত কর্তৃত্ব লালিতপালিত হন। পরবর্তীতে সুলতান ফিরোজ শাহ তাকে জায়গীরদার পনে নিযুক্ত করেন। 

সুলতান ফিরোজের মৃত্যুর পরে রাজনৈতিক অরাজকতার উদ্ভব হলে খিজির খাঁ মঞ্জু ইকবারের ভ্রাতা সারংখান কর্তৃক বন্দি হন। 

১৩৯৮ সালে তৈমুর লংয়ে ভারত অভিযানকালে তিনি তাকে সাহায্য করেন বিনিময়ে তৈমুর লং ভারত ত্যাগ করার প্রাক্কালে খিজির থাকে সুলতান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান।

তিনি কামপিল, পাতিওয়ালা, গোয়ালিয়, এটোয়া ও মেওয়াট প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহী জমিদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অভিযানের পরিচালনা করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, খিজির খাঁর আধিপত্য দিল্লি দোয়াব এবং পাঞ্জাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কৃতিত্ব : খিজির । বিনয়ী, দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, “তিনি ছিলেন একজন মহান ও বিজ্ঞ শাসক। ১৪২১ সালে খিজির খা মৃত্যুবরণ করেন। প্রজাগণ তার মৃত্যুতে তিন দিন শোক পালন করেছিলেন।

৩. মোবারক শাহ : খিজির খানের মৃত্যুর পর মোবারক শাহ ১৪২১ সালে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পাঞ্জাব; দোয়াব ও রোহিলা খণ্ডে আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। 

তিনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পূর্বের নিয়োগ অপরিবর্তিত রাখলেও অধিক ক্ষমতাশালী হওয়া থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে মালিক ও জায়গীরগণকে এক প্রদেশে হতে অন্য প্রদেশে বদলির ব্যবস্থা করেন।

কৃতিত্ব : মোবারক শাহ ছিলেন একজন মহানুভব ও প্রজারঞ্জক শাসক। তার পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইয়াহিয়া-বিন- আহম্মেদ “তারিখ-ই-মোবারক শাহী” নামক বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থটি রচনা করেন। 

তিনি তৈমুর লংয়ের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণের প্রভুত্ব অস্বীকার করে মিশরে বিদ্যমান খলিফার প্রতি তিনি আনুগত্য প্রকাশ করেন। স্বাধীন শাসক হিসেবে তিনি মুইজউদ্দিন মোবারক শাহ উপাধি গ্রহণ করে নিজ নামে মুদ্রাক্ষন করেন।

৪. মুহম্মদ শাহ : মোবারক শাহের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতৃষ্পুত্র মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। শাসন ক্ষমতায় থাকলেও তিনি দেশকে অভ্যন্তরীণ অনৈক্য ও রাজনৈতিক কোন্দল হতে রক্ষা করতে সক্ষম হননি। 

গোয়ালিয়র সুলতান কর প্রদান হতে বিরত থাকে। জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ শৰ্কী দিল্লির কয়েকটি পরগণা দখল করে নেয়। 

ইতোমধ্যে মালয়ের শাসনকর্তা মাহমুদ খলজি দিল্লি দখল করতে অগ্রসর হলেন। মুহাম্মদ শাহ বাহলুল লোদীর সাহায্যে ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে। মুহাম্মদ শাহ ১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

কৃতিত্ব : মোবারক শাহের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু তিনি মোবারক শাহ অথবা খিজির বানের মতো শাসনকার্য পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন।

৫. আলাউদ্দিন আলম শাহ : মুহাম্মদ শাহের ব্যর্থ শাসনের পর আলাউদ্দিন আলম শাহ উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। আলাউদ্দিন আলম শাহ মাত্র ৫ বছর শাসন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।

তিনি অত্যন্ত নিরূপায় হয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। সাম্রাজ্যের ক্রমবর্ধমান গোলযোগ, অসন্তেान ও অরাজকতা দূর করার কোনো ক্ষমতাই তার ছিল না। 

তিনি অত্যন্ত দুর্বল চিত্তের শাসক ছিলেন। তিনি ১৪৪৪ থেকে ১৪৫০ সাল পর্যন্ত শাসনকার্যে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো সফলতার গল্প প্রজাদের জন্য করে আনতে পারেননি, বরং তাঁর সিংহাসনে টিকে থাকার জন্য তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। 

তাঁর মাধ্যমে খিজির খাঁ-এর প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ বংশের পতন ঘটে। শাসকদের বিচক্ষণতার অভাব, অযোগ্যতা ও উত্তরাধিকারী বিরোধ সব মিলিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং সৈয়দ বংশের পতন হয়।

১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন আলন শাহ স্বেচ্ছায় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা বাহলুল লোদীর অনুকূলে দিল্লির মসনদ ত্যাগ করে বলায়ুনে অবসর জীবনযাপন করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনামলে সৈয়দ বংশের উত্থান এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। সৈয়দ বংশ প্রতিষ্ঠা এবং এর টিকে থাকার পিছনে খিজির খাঁ-এর অবদান অনস্বীকার্য। 

তার পরবর্তী শাসক মোবারক শাহও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মূলত এ দু'জনের শাসনামলে সৈয়দ  বংশ সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করেছিল। 

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সৈয়দ বংশের উত্থান যেমন ঘটনাবহুল ছিল, তেমনি তাদের পতনও বেদনাদায়ক ছিল। খিজির খাঁ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে এ বংশ প্রতিষ্ঠা করলেও শাসন ক্ষেত্রে তিনি তেমন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেনি। 

এ দুর্বলতাকে পুঁজি করে পরবর্তীতে দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসনামলে ষড়যন্ত্র চতুর্দিকে দানা বেঁধে উঠে যার কারণে অতি স্বল্প সময়ে ঐ বংশের পতন হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ