সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর |
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর
- অথবা, ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসন সংস্কার আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : তুঘলক বংশের অন্যতম পরিচিত শাসক ছিলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক। তিনি একজন উদার শাসক ছিলেন তার শাসননীতির লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যের শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন ।
এজন্য তিনি সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিহার করেন; এবং উদারতা ও সহিষ্ণুতাকে ভিত্তি করে একটি কল্যাণকর শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্মভীরু, ইসলামের নীতি ও আদর্শকে তিনি তার শাসননীতিতে প্রতিফলিত করেছিলেন।
তিনি আলেমদের রাজকার্যে নিয়োগ করেন এবং বিচারব্যবস্থায় ইসলামের অনুশাসনের প্রতিফলনের নির্দেশ দেন। প্রশ্নালোকে ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
→ ফিরোজ শাহের শাসন সংস্কার : ফিরোজ শাহ তুঘলক রণকুশলী যোদ্ধা এবং সুদক্ষ সেনাপতি ছিলেন না বটে। তবে তিনি অত্যন্ত সুবিচারক এবং উদার সুশাসক হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত লাভ করেছেন। তার শাসনব্যবস্থা ইসলামি ধর্মনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ফিরোজ শাহ তুঘলক শাসন সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন, তা উল্লেখ করা হলো-
১. জায়গীর প্রথার পুনঃপ্রবর্তন : সুলতান আলাউদ্দিন খলজি | পূর্বে জায়গীর প্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন। কিন্তু ফিরোজ শাহ তুঘলক আলাউদ্দিন খলজি কর্তৃক বিলুপ্ত জায়গীর প্রথার পুনঃপ্রবর্তন করেন।
তিনি সমগ্র প্রদেশকে কতকগুলো জায়গীরে বিভক্ত করেন। এবং জায়গীরসমূহকে জেলায় বিভক্ত করে সেগুলোর শাসনভার সুযোগ্য আমীর ওমরাহর উপর ন্যস্ত করেছিলেন।
২. কর ব্যবস্থার সংস্কার : ফিরোজ শাহ তুঘলক সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রচলিত বহু প্রকার অবৈধ ও অত্যাচারমূলক কর রহিত করেন। ফুতুহাত-ই-ফিরোজ শাহের বর্ণনা মতে, ফিরোজ শাহ ২৩ প্রকার অবৈধ কর রহিত করেন এবং কুরআনে উল্লিখিত চার প্রকার কর ধার্য করেন। যেমন-
(ক) খারাজ বা ভূমিকর,
(খ) ঘুমুস লুণ্ঠিত বা খনিজ দ্রব্যের ৫ এর ১ অংশ,
(গ) জিজিয়া বা অমুসলমানদের উপর ধার্য কর ও
(ঘ) যাকাত বা দারিদ্র্যা কর।
আর রাজকর্মচারীগণ যেন নির্ধারিত পাওনার অতিরিক্ত আদায় করতে না পারে, সেজন্য তিনি কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
৩. ঋণ মওকুফ : মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সময় দুর্ভিক্ষকালে প্রজাদেরকে দু'কোটি তঙ্কা অগ্রিম ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। সিংহাসনে আরোহণ করে ফিরোজ শাহ দুর্দশার কারণে ঋণ পরিশোধে অসমর্থ কৃষকদের ঋণদায় হতে মুক্ত করে এক নজিরবিহীন উদারতা প্রদর্শন করেন।
৪. কৃষিকার্যের উন্নতি : কৃষিকার্যের উন্নতিকল্পে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। মুলতান জলসেচ, পুরাতন খালের সংস্কার এবং নতুন খাল খননের ব্যবস্থা করেন।
“তারিখ-ই-মুবারক শাহী' গ্রন্থ নেতা ইয়াহিয়া বিন আহম্মদ-সরহিন্দীর মতে, সুলতান ৪টি খাল খননের আদেশ দেন এবং ১৫০টি কূপও খনন করার ব্যবস্থা করেছিলেন।
৫. ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি সাধন : সুলতান ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ও প্রসারের জন্য আন্তঃপ্রাদেশিক ত উঠিয়ে দেন। ফলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র অবাধ বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এতে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাস পায় এবং জনগণ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে।
৬. মুদ্রা সংস্কার মুদ্রা সংস্কার : সুলতান ফিরোজ শাহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। পূর্ববর্তী শাসকদের মুদ্রা বহাল রেখেও বিনিময় আরো সহজ করার জন্য তিনি সংমিশ্রিত তাম্র ও রৌপ্য সহযোগে আধা জিতল এবং দিখ জিতল নামে দু'প্রকার মুদ্রা বাজারে চালু করেন। এতে মানুষের অর্থনৈতিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায় এবং ধাতব মুদ্রার প্রচলন গতি ত্বরান্বিত হয়।
৭. বিচারব্যবস্থা সংস্কার : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক বিচারব্যবস্থা ও সংস্কার সাধন করেন। অত্যন্ত সুদৃষ্টি নীতির উপর ভিত্তি করে সাম্রাজ্যের বিচারকার্য পরিচালিত হতো।
শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মুফতি ও কাজিগণ বিচার করতেন। মুফতি আইনের ব্যাখ্যা করতেন এবং কাজি বিচার করতেন।
পূর্বে দুষ্কৃতকারী এবং আসামিদের হস্তপদানি বিচ্ছেদ' ও চক্ষু উৎপাদন প্রভৃতি নৃশংস শাস্তির যে প্রথা ছিল সুলতান তা বাতিল করে বিচারব্যবস্থাকে উদার মানবোচিত করেছিলেন।
৮. সামরিক বিভাগের সংস্কার : ফিরোজ শাহ তু সামন্ত নীতির ভিত্তিতে সামরিক সংগঠন পরিচালনা করেন। তিনি নিয়মিত সৈনিকদের বেতনের পরিবর্তে জায়গীর প্রদান এবং অনিয়মিতদের রাজকোষ থেকে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু যারা এ দুটির একটিও পেতো না, তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার রাজস্ব ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হতো।
৯. ক্রীতদাসের জন্য প্রতিষ্ঠান : ফিরোজ শাহের রাজত্বকাল কর প্রদানের বিনিময়ে উপঢৌকন হিসেবে প্রাপ্ত ও অন্যান্য ক্রীতদাসের সংখ্যা প্রায় ১,০০,০০০ পৌঁছেছিল।
এ বিশাল ক্রীতদাস লালন-পালন ও সুযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ফিরোজ শাহ "দিওয়ানে বন্দেকান” নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। অবশ্য এ দাস নীতি সমালোচিত হয়েছে।
১০. জনহিতকর কার্যাবলি : সুলতান ফিরোজ শাহ প্রজাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও দয়াদ্রচিত্ত ছিলেন। এর প্রমাণ আমরা কিন্তু জনহিতকর কার্যাবলির দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো ।
(ক) পৃষ্ঠবিভাগ প্রতিষ্ঠা : পূতবিভাগ প্রতিষ্ঠা করে কাজি শাহনাকে প্রধান স্থপতি এবং আব্দুল হককে তার সহকারী নিয়োগ করে সুলতান স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার নির্মিত জামে মসজিদ এবং মাদ্রাসা-ই-ফিরোজ শাহী শিল্পকলার দিক দিয়ে অত্যন্ত সুরুচিপূর্ণ ছিল।
(খ) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা : ফিরোজ শাহ দিল্লিতে সমকালীন ইতিহাসে প্রসিদ্ধ একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এটি "দারুস সোদা” নামে অভিহিত হতো। অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ বিনামূল্যে রোগীদেরকে এখান থেকে চিকিৎসা ও ঔষধপত্র সরবরাহ করতেন।
(গ) বিভিন্ন নির্মাণ কার্যসম্পন্নকরণ : ফিরোজ শাহ তুঘলক নির্মাতা হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্যার উইলসাল হেগ তাকে সম্রাট অগাস্টিনের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি ফিরোজাবাদ, ফতেহাবাদ, জৌনপুর প্রভৃতি শহর, ৪টি মসজিদ, ৩০টি প্রাসাদ, ৫টি খাল, ১৫০টি কূপ, ১০টি স্মৃতিস্তম্ব এবং ১০০টি সেতু নির্মাণ করেছেন।
(ঘ) পিতামহীসুলভ ব্যবস্থা : সুলতান ফিরোজ শাহ প্রজা সাধারণের মঙ্গলার্থে কয়েকটি প্রথার প্রবর্তন করেন। যা 'পিতামহীসুলভ ব্যবস্থা' নামে খ্যাত। এগুলো হলো-
(i) বিবাহ দপ্তর : এ দফতর হতে সাধারণত অনাথ, বিধবা ছাড়াও যে সমস্ত বিবাহযোগ্য মুসলিম বালিকাদের যৌতুকের অভাবে বিবাহ সম্পন্ন হতো না তাদেরও এককালীন অনুদান দেওয়া হতো।
(ii) চাকরি দপ্তর : বেকার, কর্মক্ষম লোকদের খুঁজে বের করে যোগ্যতানুযায়ী চাকরিতে নিযুক্তি দান ছিল এ বিভাগের দায়িত্ব। দিল্লির কোতোয়ালের উপর এই দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল।
(iii) দিওয়ান-ই-ইসতিকাপ : এ বিভাগে দায়িত্ব ছিল পূর্ববর্তী শাসকদের অন্যায় আদেশের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে বিভাগে আবেদন করত এবং অনুসন্ধানের পর আবেদন সত্য প্রমাণিত হলে এ বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো।
১১. শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা : সুলতান ফিরোজ শাহ তার রাজপ্রাসাদে জ্ঞানী, ফকিহ এবং পণ্ডিত ব্যক্তিগণকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করতেন এবং তাদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদর্শন করতেন।
সুলতান ইতিহাসের প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন এবং ইতিহাস চর্চা তার শাসনামলে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। তার আমলে জিয়াউদ্দিন বারানী ও শামস-ই-সিরাজ আফিফ “তারিখ- ই-ফিরোজ শাহী” নামক একই নামের দুটি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন।
ফুতুহাত-ই-ফিরোজ শাহী আত্মজীবনীটিও তারই পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত হয়েছিল। তার আদেশে নগর কোট দুর্গ হতে ৩০০ সংস্কৃত গ্রন্থ দালাইল-ই-ফিরোজ শাহী নামে আয়াজউদ্দিন খাযলিদ খান কর্তৃক ফারসি ভাষায় অনূদিত হয় ।
উপসংহার : উপরোল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, ফিরোজ শাহ তুঘলক ধর্মপ্রাণ, শান্তিপ্রিয়, জনদরদি এবং প্রজাবৎসল শাসক ছিলেন।
তার রাজত্বকালে জনসাধারণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করত। সুতরাং তাকে প্রজাহিতৈষী স্বৈরশাসক বলা মোটেই সংগত নয়।
এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, প্রজাগণ ফিরোজ শাহ তুঘলককে ভালোবাসতো, ভয় করত না। এজন্য তিনি প্রজাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন এবং তিনি প্রজাহিতৈষী শাসক বলে পরিচিতি লাভ করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।