১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর
১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর

১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি বিচার কর

  • অথবা, পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি নিরূপণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ বা যুদ্ধভাব লক্ষণীয়। তবে সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি, ধরন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিটি যুদ্ধে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। 

যার ফলে যুদ্ধ প্রকৃতি বিচারে একেক প্রকৃতির হয়ে ওঠে। প্রকৃতি বিচারে যুদ্ধ কখনো অসম আবার কখনো প্রথাগত আবার কখনো বা সর্বাত্মক হয়ে থাকে। 

পলাশির যুদ্ধও এরূপ কোনো না কোনো প্রকৃতির মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে এ যুদ্ধকে কখনোই সর্বাত্মক বলা যাবে না। তার চেয়ে বরং অসম বা খণ্ড যুদ্ধ বলাই অধিকতর শ্রেয়। প্রকৃতি বিচারে এ যুদ্ধকে আবার প্রথাগত যুদ্ধও বলা যুক্তিযুক্ত।

→ পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজ কোম্পানি ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাই পলাশির যুদ্ধ নামে খ্যাত। নিম্নে এ যুদ্ধের প্রকৃতি নিরূপণ করা হলো-

১. প্রথাগত যুদ্ধ : যে যুদ্ধ পূর্ব ঘোষিত বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে সংঘটিত হয় এবং খুবই সাধারণ মানের যুদ্ধাস্ত্র; যেমন- ঢাল-তলোয়ার, কামান, ঘোড়া, হাতি প্রভৃতি সামগ্রীর উপস্থিতি থাকে তাকে প্রথাগত যুদ্ধ বলে। 

যুদ্ধের প্রকৃতি বিচারে পলাশির যুদ্ধকে নির্দ্বিধায় প্রথাগত যুদ্ধের কাতারে ধরা যায়। কেননা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুটি পক্ষ আগে থেকেই জানত যুদ্ধ আসন্ন এবং দুটি পক্ষ নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হয়ে শিবির স্থাপন করে। 

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ জুন যুদ্ধ শুরু হয়। উভয়পক্ষে অস্ত্র হিসেবে সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র যেমন- ঢাল-তলোয়ার, কামান, হস্তী, ঘোড়া প্রভৃতি সামগ্রীকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। 

দুটি পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়েছিল। এযুদ্ধে শুধু বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ যুদ্ধে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তাই প্রকৃতি বিচারে একে প্রথাগত যুদ্ধ বলাই যুক্তিযুক্ত।

২. অসম যুদ্ধ : যে যুদ্ধে বিবাদমান দুটির পক্ষের মধ্যকার শক্তির পার্থক্য সমান থাকে না এবং সার্বিকভাবে একটি পক্ষ অন্য পক্ষের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে থাকে, তখন এ দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধকে অসম যুদ্ধ বলা হয়। 

যুদ্ধের এ প্রকৃতি বিচারে পলাশির যুদ্ধকেও উক্ত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কেননা শক্তি এবং সার্বিক বিচারে নবাব সিরাজের থেকে অনেক গুণ কম ছিল। 

ইংরেজদের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩২,০০। এর মধ্যে ২১০০ ভারতীয় সিপাহী, ১০০০ ইউরোপীয় সৈন্য এবং ১০০ বন্দুকবাজ। ইংরেজদের মোট কামান ছিল ১টি। 

অন্যদিকে নবাবের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০,০০০। এর মধ্যে ১৫,০০০ অশ্বারোহী এবং ৩৫,০০০ পদাতিক বাহিনী। শক্তির এই অসমতা নিঃসন্দেহে পলাশির যুদ্ধকে অসম যুদ্ধের শ্রেণিভুক্ত করে।

৩. সর্বাত্মক যুদ্ধ কিনা : যে যুদ্ধ সমগ্ৰ অঞ্চল বা গোটা দেশ বা সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় ব্যাপক এবং প্রাণহানি ঘটে প্রচুর তাকে সর্বাত্মক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা যায়। সে হিসেবে পলাশির যুদ্ধকে কখনোই সর্বাত্মক বলা যায় না। 

কেননা এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বাংলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের আম্রকাননে। গোটা দেশের বেশিরভাগ লোক এ যুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত ছিল না। 

মাত্র দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন স্থায়ী হয়েছিল এ যুদ্ধ। তাছাড়া ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করলে দেখা যায়, ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ২০ জন সৈনা নিহত হয় আর আহত হয় ৫৩ জন। 

অন্যদিকে নবাবে পক্ষে মাত্র ৫০০ জন সৈন্য নিহত হয়। অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অতিসামান্য। তাই পলাশির যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বিচার করলে এই যুদ্ধকে বৃহৎ যুদ্ধের পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। এ প্রসঙ্গে মেলিসন যথার্থ বলেছেন, "Plassey, though decisive can never considered a great battle."

৪. গণযুদ্ধ কি-না : যে যুদ্ধ বিবাদমান দুটি পক্ষের সংঘটিত হওয়ার এক পর্যায়ে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ জনগণও সার্বিকভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তখন এ যুদ্ধকে গণযুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা যায়। সে হিসেবে পলাশির যুদ্ধকে গণযুদ্ধ বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কেননা এ যুদ্ধ শুধুমাত্র বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

এ যুদ্ধে সাধারণ জনগণের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। একজন ইংরেজ লেখক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশির যুদ্ধ যে আম্রকাননে সংঘটিত হয়েছিল সেদিন তার চারপাশে হাজার হাজার বাঙালি নরনারী শিশু জড়ো হয়েছিল যুদ্ধ দেখার জন্য। 

কেউ আমগাছের ডালে চড়ে কেউ বা দাঁড়িয়ে দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ দেখছিল। পাশে বাঙালি কৃষক নিত্যদিনের যতো জমিতে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছিল। 

কেউ বা ফসলের, ক্ষেত্রে কাজ করছিল। সেদিন এসব লোকজন চেয়ে চেয়ে দেখছিল কিভাবে নবাব সিরাজের পরাজয় ঘটছে। 

সেদিন যদি এ সমবেত জনতা একবার চিৎকার দিয়ে উঠত, আমার মনে হয় ইংরেজ সৈন্যরা ভয়ে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাত।” 

এ বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে সাধারণ জনগণ এ যুদ্ধ সম্পর্কে ছিল একেবারে অজ্ঞ। তাই এটি কোনোভাবেই গণযুদ্ধের কাতারে পড়ে না।

৫. আধুনিক যুদ্ধ কি-না : যদিও বলা হয় পলাশির যুদ্ধের পর থেকে বাংলার মধ্যযুগের অবসান ও আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল। তথাপি পলাশির যুদ্ধ ছিল সেকেল তা আধুনিক যুদ্ধ ছিল না। 

কেননা এ যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ছিল পুরাতন আমলের ন্যায়। আধুনিক কালের ন্যায় ভারী মারণাস্ত্র সেখানে ছিল না বললেই চলে। 

শুধুমাত্র কামানের উপস্থিতি ছিল আধুনিক নিদর্শন হিসেবে। বাকি সব অস্ত্রশস্ত্রই ছিল সেকেলে। সে দিক স্মরণ করলে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ আধুনিক ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীন ।

৬. খণ্ডযুদ্ধ : যে যুদ্ধ সীমিত আকারে শুধুমাত্র দুটি পক্ষের বা অংশের মধ্য সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধের প্রভাব তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা খণ্ডযুদ্ধের আওতাভুক্ত। 

সেক্ষেত্রে পলাশির যুদ্ধও এরূপ শ্রেণিভুক্ত করা যায়। কেননা এ যুদ্ধ শুধু নবাব সিরাজ ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। 

তাছাড়া নবাব সিরাজের পক্ষের মাত্র ১৫,০০০ সৈন্য এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, বাকি ৩৫,০০০ সৈন্য যুদ্ধ করা থেকে বিরত ছিল। 

এ যুদ্ধে রাজ্যের সাধারণ জনগণ এমনকি কর্মচারীরাও অংশগ্রহণ করেনি। এ যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েকদিনের এবং তা সংঘটিত হয়েছিল ভাগিরথীর তীরে এক আম্রকাননে। তাই একে খণ্ডযুদ্ধ বলা যুক্তিযুক্ত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে যে তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার গুরুত্ব ছিল ব্যাপক একথা নিঃসন্দেহ। 

কিন্তু প্রকৃতি বিচারে তা ছিল খণ্ডিত যুদ্ধ। প্রথাগত যুদ্ধের ন্যায় এ যুদ্ধের প্রকৃতি ছিল অসম ও প্রথাগত । বিবাদমান দুটি পক্ষের সৈন্য ও শক্তিমত্তার মধ্যে ছিল বিরাট পার্থক্য । সাধারণভাবে এ যুদ্ধের প্রকৃতি বিচারে একে প্রথাগত অসম যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় ৷

আর্টিকেলের শেষকথাঃ পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি নিরূপণ কর।

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি নিরূপণ কর। । যদি তোমাদের আজকের পলাশির যুদ্ধের প্রকৃতি নিরূপণ কর। পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ